প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে উচ্চারণ চর্চা:
একটি পর্যবেক্ষণ ও করণীয়সমূহ
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
প্রাথমিক শিক্ষাস্তরেই শিশুদের ভাষা চর্চা শুরূ হয়।বাংলা
আমাদের মাতৃভাষা।মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা সহজাতভাবে আমাদের শিখন হয়ে যায়।কিন্তু
শোনা, বলা, পড়া ও লেখা; ভাষা দক্ষতার এ ৪ টি-তেই যোগ্যতা অর্জন করা সকলের জন্য
সম্ভবপর হয় না।তাই এগুলোর প্রত্যেকটিতে পরিপূর্ণতা লাভ করা অপরিহার্য।বাংলাভাষী
মানুষ হিসেবে আমরা সবাই বাংলায় কথা বলছি বটে! ক‘জনেই বা প্রমিত উচ্চারণে বলছি,
পড়ছি; সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বৈকি!আর এ প্রমিত উচ্চারণে কথা বলার দক্ষতা অর্জন
সহজ কাজ নয়্। কারণ, এ দক্ষতাটা সহজাতভাবে শেখা হয়ে ওঠে না। এটা আলাদা এক বিজ্ঞান ও
কলা।প্রাথমিক স্তর হতেই এ বিজ্ঞান আয়ত্ত্ব করতে হয় দরদ দিয়ে।তাছাড়া, শুধু বাংলা
বিষয় নয়, প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য বিষয় যেমন-প্রাথমিক বিজ্ঞান,
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, প্রাথমিক গণিত এবং ধর্ম ও নৈতিক বিষয়গুলো বাংলা ভাষায়
পঠন-পাঠন ও শিখণ কার্যক্রমের নিমিত্তে বাংলাটা ভালভাবে শিখতে হয়, প্রত্যেক
শিক্ষার্থীকে।এ স্তরে ভুল শিখলে, পরবর্তী শিক্ষাস্তর এবং বাস্তবজীবনেও তা আর শুধরানো
অনেকটা অসম্ভব।আমরা বর্তমান নিবন্ধে বাংলা উচ্চারণ শিখনে প্রথমিক শিক্ষাস্তরের
বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সমস্যাসমূহ পর্যালোচনাপূর্বক করণীসমূহ আলোকপাত করার প্রয়াস
চালাব।তবে, প্রথমেই বাংলাদেশের অগ্রণী প্রমিত বাংলা ভাষা বিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হকের প্রমিত বাংলা উচ্চারণ
বিষয়ক কিছু মতামত এখানে তুলে ধরছি।
“যে কোন ভাষাই জন্মসূত্রে ও গুরুত্ব বিচারে প্রথমত ও প্রধানত
মুখের ভাষা।কিন্তু ভাষার লিখিত রূপকে আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্ব দেয়া
হয়, উচ্চারণের দিকটি ততটাই উপেক্ষিত থেকে যায়।কিন্তু উচ্চারণ সম্পর্কে স্পষ্টতর
ধারণা না থাকলে কিংবা অস্বচ্চ ধারণা থাকলে আধুনিক কালে ভাষা শিক্ষা অসম্পূর্ণ
বিবেচিত হয়। কারণ, আধুনিক জীবনে শিক্ষিত সুশীল সমাজে বাচনিক দক্ষতা ও উৎকর্ষ বিশেষ
সামাজিক মর্যাদার অন্যতম মাসদন্ড।
বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে আলোচনা প্রথমেই আমাদের মনে রাখতে হবে,
লিখিত বাংলা মৌখিক বাংলার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।লিখিত বা মুদ্রিত ভাষার
পক্ষে ধ্বনি উচ্চারণ সম্ভব নয়। লেখায় বা চাপায় হরফের নানা চিহ্ন দেখে বিষয়বস্তু
বুঝে নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান সহায় চোখ্ কানের কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা একানে
নেই। পক্ষান্তরে মৌখিক বাষা পুরেনাপুরি ধ্বনি নির্ভর। তা আমরা চোখে দেখতে পাই
না।কানে শুনেই আমরা বক্তার বক্তব্য অনুধাবন করি। আনন্দ ও আতন্ক, বিস্ময় ও বিষাদ,
উদ্বেগ ও উল্লাস িইত্যাদি ভাবাবেগের উপর নির্ভর করে ধ্বনির উচ্চারণে স্বরের যে
তীব্রতা বা গভীরতা, লয়ের যে দ্রুততা বা মন্থরতা, স্বরস্তরের যে উচ্চতা বা নিন্মতা
হয়ে থাকে তা মৌখিক ভাষায় অনুধাবনযোগ্য। কিন্তু লিখিত ভাষায় তা ধরা পড়েনা বললেই
চলে।সেদিক থেকে ভাষার বাচনিক প্রক্রিয়া তথা উচ্চারণের দিকটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
বিশেস করে আধুনিক কালে সংগীত, আবৃত্তি, নাট্যকলা ইত্যাদি উপস্থাপনা শিল্প
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ হচ্ছে।----উচ্চারণের আলোচনায় প্রথমেই আমাদের স্পষ্ট
ধারণা থাকা দরকার, সঠিক বাংলা উচ্চারণ বলতে আমরা কী বুঝি? কারণ, লক্ষ করলে দেখা
েোবে, একই কথা দুজন লোক উচ্চারণ করলে তা ঠিক এক রকম হয় না।‘আমি এই কলেজে পড়ব না।’
কথাটার উচ্চারণ দুজনের কন্ঠে দুরকম শোনাতে পারে। আবার ভৌগোলিক অঞ্চর ভেদেও ভাষার
উচ্চারণে পার্থক্য দেখা যায়।‘আমি এই কলেজে পড়ব না’কথাটির আঞ্চলিক রূপ বিভিন্ন
উপভাষায় বিভিন্ন রকম হয়। যেমন-
চট্টগ্রামের উপভাষায়: আঁই কলজত ন পইজ্জম।
সিলেটের উপভাষায়: আমি এই কলজ ফরতাম নায়।
নোয়াখালীর উপভাষায়: আঁই এই কলেজে হইত্যান ন।
ঢাকার উপভাষায়: আমি এই কলেজে পরমু না।
ব্রাম্মণবাড়িয়ার উপভাষায়:আমি এই কলেজে পড়তাম না।
পাবনার উপভাষায়: আমি এই কলেজে পড়তাম লয়।
ঝিনাইদহের উপভাষায়: আমি এই কলেজে পড়ব না নে।
নেত্রকোনার উপভাষায়: আমি এই কলেজে হড়ব না।
বাংলা ভাষার উচ্চারণের নানা রূপ ভিন্নতা সত্বেও ভাষার যে
মৌখিক রূপটি বাঙ্গইল সমাজে কিংবা বাংলাভাষী সমস্ত অঞ্চলে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন
এবং শিক্ষিত সমাজের লিখিত ও মৌখিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত তাকে বলা হয়, মান্য চলিত ভাষা বা শিষ্ট চলিত ভাষা।
--বাংলা বর্ণমালা এসেছে সংস্কৃত বর্ণমালা হতে; অথচ সংস্কৃতের
উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য বাংলায় হুবহু নেই।বাংলা উচ্চারণরীতি গড়ে ওঠেছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য
নিয়ে।এজন্যেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বাংলার স্বকীয় ধ্বনিচরিত্র অগ্রাহ্র করে তাকে
সংস্কৃত বানানের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।বাংলা বানান সাধারণভাবে সর্বত্র
উচ্চারণকে অনুসরণ করে না।যেমন-বলি-অতো, কিন্তু লিখি-অত. বলি-ওতি, লিখি-অতি।বাংলা
উচ্চারণ ও তার লেখ্যরূপ তথা বানানের মধ্যকার অমিলের মৌলিক কারণ হলো উচ্চারিত ধ্বনি
ও বর্ণমালার মধ্যে অসংগতি।প্রচলিত বর্ণমালায় স্বরবর্ণের সংখ্যা (অ, আ, ই, ঈ, উ,ঊ, ৃ,
এ, ঐ, ও, ঔ)।কিন্তু প্রমিত বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭ টি (ই, এ, অ্যা, আ,
অ, ও, উ)।বাংলা বর্ণমালায় মৌলিক স্বরধ্বনি আছে দুটি; কিন্তু মান্য চলিত বাংলায়
কমপক্ষে ১৭ টি যৌগিক স্বরধ্বনি ( আই, এই, উই, ইত্যাদি উচ্চারিত হয়ে থাকে।বাংলা
বর্ণমালায় ব্যঞ্জণবর্ণ আছে ৩৫ টি। কিন্তু মুখের ভাষায় মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা
৩০ টি। বাংলায় কোনো কোনো ধ্বনির জন্য একাধিক ধ্বনির জন্য একাধিক বর্ণচিহ্ন রয়েছে)
যেমন:ই/ঈ,উ/ঊ, ন/ণ, শ/ষ/স)। কখনো কখনো একাধিক ধ্বনির জন্য একই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
বাংলায় এমন ধ্বনিও আছে যার কোনো লেখ্য বর্ণ চিহ্ন নেই।(যেমন-অ্যা) অনেক সময় পাশের
ধ্বনির প্রভাবে একই ধ্বনির উচ্চারণ অন্য রকম হয়ে যায়। (যেমন: বাঘঘাটা‘র উচ্চারণ
বাগঘাটা)।এছাড়া বাংলায় উচ্চারণ নির্দেশক চিহ্নের স্বল্পতার কারণেও ানেক সময় লিখিত
ভাষা দেখে যথাযথ উচ্চারণ বোঝা যায় না।
স্বরধ্বনির উচ্চারণ: স্বরতন্ত্রীর কম্পনে উৎপন্ন যে ধ্বনি
উচ্চারণে শ্বাসবায়ু মুখের মধ্যে কোথাও বাধা পায় না তাই স্বরধ্বনি। যেমন: অ,ই, উ
ইত্যাদি।
প্রতিটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে কন্ঠনালী, ঠোঁট, জিভ
ইত্যাদি বিশেষ বিশেষজাযগায় স্থির থাকে এবং শ্বাসবায়ু মুখগহ্বর থেকে বের হওয়ার সময়ে
কোথাও বাধাগ্রস্থ হয় না।পলে যতক্ষণ দম থাকে ততক্ষণ ঐ ধ্বনি একটানা উচ্চারণ করা
যায়।যেমন: উ...। প্রমিত বাংলা উচ্চারণে মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭ টি।এগুলো হলো:
অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।
স্বরধ্বনির প্রতীক বা লেখ্য রূপ হলো স্বরবর্ণ। বাংলা বর্ণমালায়
বর্তমানে ব্যবহৃত স্বরবর্ণের সংখ্যা ১১ টি।এগুলো হলো: অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, র্, এ, ঐ,
ও, ঔ।
এছাড়াও এক সময়ে বাংলা বর্ণমালায় ৯ (লি), দীর্ঘ ৯ ও দীর্ঘ র্্ৃ-এই
তিনটি স্বরবর্ণ ছিল।কিন্তু ভাষায় ব্যবহৃত হয় না বলে বাংলা বর্ণমালা থেকে এগুলো
বর্জিত হয়েছে।
প্রত্যেক স্বরবর্ণের আলাদা উচ্চারণরীতি নির্ধারিত রয়েছ।শব্দের
শুরুতে, মধ্যখানে ও শেষে স্বরবর্ণের ও ব্যঞ্জনবর্ণের ভিন্ন ভিন্ন ধ্বনি এবং
উচ্চারণ রীতি আছ। মূলত উচ্চারণ চর্চার বিষয়টি ভাষা বিজ্ঞানের একটি অবিচ্ছেদ্র অংশ।
আগেও বলেছি, এটা নিত্যই চর্চার বিষয় ও চর্চার মাধ্যমে একটা মান অর্জিত হয়।”
বাংলা প্রমিত উচ্চারণ চর্চা ও বিদ্যমান পরিস্থিতি: প্রমিত
বাংলা উচ্চারণ চর্চার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরসহ সর্বত্র খুবই নাজুক
পরিস্তিতি বিরাজ করছে।উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারি ব্যক্তিবর্গও এ ব্যাপারে
সচেতন নন। আর প্রাথমিক স্তরে বাংলা বিষয়ে পাঠদান করেন, এমন শিক্ষকদের অধিকাংশই
প্রমিত বাংলা উচ্চারণে পারদর্শী নন। সারাদেশেই একই রকম চিত্র। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে
এ বিষয়টির ওপর বিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন।সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণই এখন
প্রাথমিক সশিক্ষার লক্ষ্য। সুতরাং প্রমিত উচ্চারণ চর্চাও যেহেতু মানসম্মত ভাষা
শিক্ষার অন্যতম মাপকাটি তাই এটার ওপর আমাদেরকে বিশেষ দৃষ্টি দিতেই হবে।প্রমিত
উচ্চারণ চর্চার বিষয়টিকে দরদ দিয়ে আয়ত্ত্ব করেন এবং পারদর্শী হন, একমাত্র আবৃত্তি
সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক চর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনগুলো।সুতরাং প্রাথমিক
স্তর হতেই সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ ধরণের সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন,
প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকগণের এব্যাপারে অগ্রণী
ভূমিকা পালন করার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র মোটেই প্রীতিকর নয়।
প্রমিত বাংলা উচ্চারণ শিখনে প্রতিবন্ধকতাসমূহ: প্রাথমিক
বিদ্যালয়গুলোতে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ চর্চা বা অনুশীলণে নিন্মোক্ত
প্রতিবন্ধকতাসমূহ পরিলক্ষিত হয়।
১. বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা হয় না।
২. শিক্ষকগণ বিষয়টি যথার্থ গুরুত্বের সাথে নেন না।
৩. অভিভাবকগণ প্রমিত উচ্চারণ চর্চার বিষয়টি তাদের ছেলে-মেয়েদের
জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, তা উপলব্ধি করতে পারেন না।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রমিত
উচ্চারণ বা বাংলা ভাষাটাকে ভালভাবে শেখা বা আয়ত্ত্ব করার ব্যাপারে অতটা সচেতনতা
নেই।
৫. অধিকাংশ শিক্ষক নিজ নিজ উচ্চারণ শুদ্ধকরণে অসতর্ক এবং
শিক্ষার্থীদেরকে প্রমিত বাংলা উচ্চারণে অভ্যস্থকরণ নিয়ে উদাসীন।
৬. শ্রেণিকক্ষে সাধু ভাষায় বা প্রমিত বাংলায় কথা বলার বা
পাঠদান করার কথা থাকলেও, তা শিক্ষকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করেন না।
৭. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণ প্রমিত উচ্চারণ শিখন,
প্রমিত বানান শিখনসহ ভাষা শিখনের সূক্ষ্ণাতি-সূক্ষ্ণ বিষয়াদি আয়ত্ত্ব করে
শ্রেণিকক্ষে প্রতিফলন ঘটাতে পুরোপুরি আন্তরিক ও সচেতন নন।
৮. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অনেক বেশি এবং কোন কোন বিদ্যালয়ে
শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে, শিক্ষক কতৃক তাদেরকে কোন বিষয়ে ফলপ্রসূ পাঠদান করা
অসম্ভব প্রায়।
৯. প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আবৃত্তি চর্চাসহ সহপাঠক্রমিক
কার্যাবলির বাস্তবায়ন নিয়মিত ও যথার্থভাবে হয় না।
১০. সর্বোপরি, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ও বাস্তবায়নে
প্রাথমিক শিক্ষায় যেমন অন্যান্য অনেক দুর্বলতা রয়েছে, তেমনি প্রমিত ভাষা বা
উচ্চারণ শিখনেও শৈথিল্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ চর্চার
মানোন্নয়নে করণীয় কৌশলসমূহ:
১. বাংলা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে পাঠদানকারি প্রত্যেক শিক্ষককে
প্রমিত বাংলা ভাষা আয়ত্ত্ব করার জন্য আন্তরিক ও সক্রিয় প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
২. বাংলা বিষয়ের শিক্ষককে অবশ্যই বাংলা ভাষা শৈলী ও কাঠামো
এবং প্রমিত ভাষারীতি এবং প্রমিত উচ্চারণ সম্পর্কে একটি মান অর্জন করতে হবে এবং
শ্রেণি পাঠদান করতে হবে।
৩. বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধান এবং বাংলা উচচ্চারণ অভিধান
প্রত্যেক বিদ্যালয়ে সহায়ক পাঠ সামগ্রীর অংশ হিসেবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং নিত্য
ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৪. বাংলা প্রমিত উচ্চারণ চর্চার জন্য বাকশিল্পী খ্যাত অধ্যাপক
নরেন বিশ্বাস এবং খ্যাতিমান আবৃত্তিকারদের কবিতা আবৃত্তির অডিও-ভিডিও ক্যাসেট শোনা
ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. সপ্তাহে অন্তত একদিন সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম নিয়মিত
পরিচালনা করতে হবে।
৬. শিক্ষকদের মাঝে পাঠমনস্কতা এবং পাঠদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত
নিজ নিজ বিষয়গুলোতে বিষয়জ্ঞান, পেশাগত অনুশীলণ এবং পেশাগত মূল্যবোধ ও
দৃষ্টিভঙ্গিতে সমৃদ্ধ হতে হবে।
৭. শিক্ষকদেরকে সাংস্কৃতিক মনস্ক এবং নিয়মিত এর চর্চা করতে
অভ্যস্থ হতে হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, বাংলা ভাষা শিখনে ৪ টি ভাষা শিখনের দক্ষতার
মধ্যে শোনা ও বলার দক্ষতা ২টি শুদ্ধভাবে প্রাথমিক স্তরে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া
আবশ্যক। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর সবার সচেষ্ট হতে হবে। এটা মোটেই অবহেলার
বিষয় নয়।প্রাথমিক স্তরে ১০০ ভাগ শিশু বিদ্যালযে ভর্তির লক্ষ্য অর্জিত হয়ে
গেছে।শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও অনেকটা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
শিক্ষক স্বল্পতা, ভবন ও আসবাবপত্রের সমস্যাও ক্রমান্বয়ে সমাধান করা হচ্ছে। এখন
সংশ্লিষ্ট সবার উচিত শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে কাজ করা।