শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ: একটি পর্যবেক্ষণ
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
প্রাথমিক
শিক্ষাস্তরের শিক্ষাক্রম বিস্তরেণ বিষয়ে ১০ দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে
এসেছি (৬/৬২০১৫ হতে ১৫/৬/২০১৫)। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত থাকা এবং প্রাথমিক
শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি প্রশিক্ষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম দিন প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম, শিক্ষাক্রমের কাঠামো,
পাঠ্য বই পরিচিতি, আবশ্যকীয় শিখনক্রম, বিস্তৃত শিক্ষাক্রম, শিক্ষক সংস্করণ, শিক্ষক
নির্দেশিকা, শিক্ষক সহায়িকা, প্রস্তাবিত নতুন মূল্যাযন/পরীক্ষা পদ্ধতি প্রভৃতি
বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। অতপর প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের পাঠ্য তালিকাভুক্ত
প্রত্যেকটি বিষয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় যেমন যোগ্যতা, প্রান্তিক যোগ্যতা, বিষয়
ভিত্তিক যোগ্যতা, শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগি যোগ্যতা, শিখন ফল, মূল্যায়ন
প্রক্রিয়া, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যবই, আবশ্যকীয় শিখনক্রম, শিক্ষক সংস্করণ, বিস্তৃত
শিক্ষাক্রম প্রভৃতি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।এভাবে দশদিনব্যাপী প্রশিক্ষণসূচি
সাজানো হয়েছিল।
অংশগ্রহণকারিবৃন্দ:
কক্সবাজার পিটিআই-এর ইন্স্ট্রাক্টর এবং কক্সবাজার জেলায় কর্মরত সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ইউআরসি
ইন্স্ট্রাক্টর এবং সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দ এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করেন।
প্রশিক্ষকবৃন্দ:
দুজন সম্মানিত প্রশিক্ষক যথাক্রমে ১. জনাবা কামরুন নাহার; সুপার পিটিআই, কক্সবাজার
এবং ২. জনাব মো: মুহিব উল্লাহ; ইন্স্ট্রাক্টর, থানা রিসোর্স সেন্টার, পাহাড়তলী,
চট্টগ্রাম।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম
ও বাস্তবতা: প্রাথমিক স্তরে বর্তমানে যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা
হচ্ছে। যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলতে আমরা বুঝব; প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে
বর্তমানে বাস্তবায়নাধিন যে শিক্ষাক্রম, তাকে। সাধারণত আমরা শিক্ষাক্রম বলতে বুঝি;
“একটি নির্দিষ্ট বা বিশেষ শিক্ষাস্তরের জন্য প্রনীত একটি লিখিত দলিল বা পরিকল্পনা যা
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কতৃক অনুমোদিত এবং উক্ত কর্তৃপক্ষ, এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া
তদারকি করেন।” যাহোক শিক্ষাক্রমে শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রান্তিক যোগ্যতা,
বিষয় ভিত্তিক যোগ্যতা, শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগি যোগ্যতা, বিষয়বস্তু, শিখন ফল,
মূল্যায়ন এবং ফলাবর্তন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশে ২০১১ সালে প্রাথমিক
শিক্ষাক্রমকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এ আলোকে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের যাবতীয়
কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষকদেরকে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
প্রশিক্ষণের আলোকে শিক্ষকগণ শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আবার তা
সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য প্রধান শিক্ষকগণকে একাডেমিক সুপারভিশন
বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকগণকে শিক্ষাক্রম বিস্তরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া
শুরু করা হচ্ছে।এ বিষয়ে কর্মকর্তাগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষাক্রম বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন। আশা করা যায় যে, এসকল বিষয়ে
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক ও সক্রিয় হয়ে দায়িত্ব পালন করলে
আগামীতে প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা
নিশ্চিত হবে। শিক্ষকদের সবার উচিত হবে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতার আলোকে শ্রেণি
পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা। সর্বোপরি নতুন নতুন ধ্যান-ধারণাগুলো আয়ত্ত্ব করে তাঁরা
অব্যাহতভাবে তা অনুশীলণ করবেন।
উপসংহার: বাংলাদেশের
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা এখন আর সনাতন পদ্ধতির মধ্যে নেই। আধুনিক ও যুগোপযোগি সব
বিষয় এতে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। অচিরেই শিক্ষকগণ শিক্ষক সংস্করণ
বই, শিক্ষক নির্দেশিকা, শিক্ষক সহায়িকা এবং অন্যান্য সহায়ক পাঠ্যপুস্তক হাতে পেয়ে
যাবেন। মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতির সাথেও পরিচিত হবেন, তাঁরা।প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী
পরীক্ষায় অনুসৃত যোগ্যতা ভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতির ওপর প্রায় সকল শিক্ষক প্রশিক্ষণ
পেয়েছেন। সরকারি বেতন-ভাতা, পদ মর্যাদা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে।
আসুন আমরা প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে কর্মরত সকল কর্মকর্তা আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে কাজ করি। হয়ত আমরাও একদিন
বুক ফুলিয়ে ও মাথা উঁচু করে বলতে পারব; বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ফিনল্যান্ড-দক্ষিণ
কোরিয়ার মত আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন