বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭

Diary of Primary Education



প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(১০)
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালন করা হয় প্রতি বছর, আমাদের দেশে। জুন মাসের শেষের দিকে ক্লাস্টার পর্যায় হতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিবর্গ, কর্মকর্তা, কর্মচারি, শিক্ষক, শিশুদেরকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বিষয়টা অনেকেই ভালভাবে অবহিত নন। ফলে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধমে যারা নির্বাচিত হন তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতাসমূহে অবতীর্ণ হন। আর কোথাও কোথাও এ প্রক্রিয়াটি একেবারে দায়সারাভাবে আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবারও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ/২০১৭ আয়োজনের জন্য দেশব্যাপী শ্রেষ্ঠদের বাছাই প্রকিয়া চলছে। আগামী জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি/২০১৮ মাসে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পিালনের মধ্যদিয়ে ২১টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিতদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করবেন। আজ ১৩/০৮/২০১৭খ্রি: তারিখ কক্সবাজার জেলায় বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হলো। শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ক্যাটাগরিতে আমিও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম। ২০১২ সালে রাংগামাটি জেলা, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কক্সবাজার জেলায় আমি ইতোপূর্বে ৩বার শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবার ২০১৭ সালেও হয়ত আমি তাই হব। যাহোক, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতা বিষয়ে আমার কিছু মতামত তুলে ধরার প্রয়াস চালাব।
জাতীয় শিক্ষা পদকের পটভূমি: প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সংশ্ষ্টি ব্যক্তিবর্গকে দক্ষতার মান বিচারে যথোপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদান করা অপরিহার্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৮৫ সাল হতে প্রতি বছর পুরস্কার প্রদান রা হয়ে আসছে।
লক্ষ্য: শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে আত্ননির্ভরশীল হতে সাহায্য করা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার সফল বাস্তবায়ন এবং গুণগত মানোন্নয়ন।
উদ্দেশ্য:
ক. শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা।
খ. শিশু, শিক্ষক, ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান, কর্মচারি এবং কর্মকর্তাদের মাঝে নব উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের পথ সুগম করা।
গ. শিশুদের সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে পুরস্কৃত করা।
ঘ. শ্রেষ্ঠ কাব শিশু ও শ্রেষ্ঠ কাব শিক্ষককে পদক প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের নিজ জীবন গড়তে ও সমাজ সেবামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা।
ঙ. শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, শ্রেষ্ঠ পিটিআই, শ্রেষ্ঠ পিটিআই ইন্স্ট্রাক্টর, শ্রেষ্ঠ ইউআরসি/টিআরসি ইন্স্ট্রাক্টর, শ্রেষ্ঠ সহকারি ইউআরসি/টিআরসি ইন্স্ট্রাক্টরকে পদক ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগানো।
চ. শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, শ্রেষ্ঠ এসএমসিকে পদক প্রদানের মাধ্যমে শিশুদের বিদ্যালয়ে আনয়ন, ঝরে পড়া রোধ করা, বিদ্যালয় আকর্ষণীয় করা, বিদ্যালয়ের সাথে সমাজের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা।
ছ. প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য কর্মচারিদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা।
জ. প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য শিক্ষা প্রশাসক, শিক্ষাবিদ এবং বিদ্যোৎসাহীদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা।
পদকের নাম: জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক।
জাতীয় শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা আয়োজন নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি ‍ও করণীয়সমূহ:
ক্রমিক নং
বিদ্যমান পরিস্থিতি
করণীয়সমূহ
০১
-সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিগণ বিষয়টি ভালভাবে অবহিত নন।
-বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভালভাবে প্রচার করা প্রয়োজন।
০২
-প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত সকল ক্যাটাগরির ব্যক্তি ও শিশুদেরকে বছরের শুরু থেকে প্রস্তুত করা হয় না।
-প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত সকল ক্যাটাগরির ব্যক্তি ও শিশুদেরকে বছরের শুরু থেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
০৩
-বাছাই ছক এবং ছকে উল্লেখিত পরিমাপক বা যোগ্যতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের জানা থাকে না।
-বাছাই ছক এবং ছকে উল্লেখিত পরিমাপক বা যোগ্যতা সম্পর্কে বেশ আগে হতেই সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে হবে।
০৪
-শ্রেষ্ঠত্ত্বের প্রতিযোগিতায় ইচ্ছুকগণকে বাছাই ছকগুলো আগে থেকে সরবরাহ করা হয় না।
-শ্রেষ্ঠত্ত্বের প্রতিযোগিতায় ইচ্ছুকগণকে বাছাই ছকগুলো আগে থেকে সরবরাহ করা প্রয়োজন।
০৫
-পদক নীতিমালা অনুযায়ি প্রতিযোগিতা বা বাছাই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসৃত হয় না।
-পদক নীতিমালা অনুযায়ি প্রতিযোগিতা বা বাছাই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
০৬
-প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয়, এ বিষয়টি সবাইকে জানেন না।
-প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয়, এ বিষয়টি সবাইকে জানানো প্রয়োজন।
০৭
-জাতীয় শিক্ষা পদক সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা হয়।
-জাতীয় শিক্ষা পদক সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা হতে বিরত থেকে প্রদত্ত্ব স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ইতিবাচক প্রতিযোগিতাই কাম্য।

পরিশেষে বলতে হয় যে, প্রাথমিক শিক্ষক পদকে ভূষিত কর্মকর্তা, শিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সরকার বিদেশে সফর ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ অন্যান্য অনেক স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি নেই কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। সবার উচিত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করে ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য ছিনিয়ে আনা।



প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(০৯)
মহেশখালী উপজেলা বাংলাদেশে অfর্থ-সামাজিক-ইতিহাস-ঐতিয্যগত বিবেচনায় একটি সুপরিচিত দ্বীপ উপজেলা।প্রাকৃতিক ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্রময় দ্বীপ উপজেলাটি সারাদেশে এবং হির্বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠছে। বহু প্রাচীন কাল হতে এখানকার মৎস্য (কাঁচা-শুকনা), মিষ্টি পান, লবণসহ অন্যান্য সম্পদ-উৎপাদিত পণ্য অতি জনপ্রিয়।পযর্টন স্পট হিসাবে উপজেলাস্থ আদিনাথ মন্দির ভারত উপমহাদেশে বিশ্বব্যাপি খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া, সোনাদিয়া দ্বীপ মৈনাক পাহাড়; এর সৌন্দরযে অপরূপ শোভা বধর্ন করেছে। আর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দুটি বিশাল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ, সোনাদিয় অর্থনৈতি অঞ্চল, ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী প্রকল্প, এলএনজি স্টেশন স্থাপনসহ প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিশ্ব দরবারে এর কদর বাড়িয়ে দিচ্ছে। নিবন্ধে মহেশখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে আলোকপাত করা হলো।

বতর্মান চিত্র: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন বতর্মান সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সারাদেশে যুগান্তকারি অনেক পদক্ষেপ গ্রহন বাস্তবায়ন করছে। সারাদেশে অন্যান্য স্থানের ন্যায় উপগজলায়ও প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার এবং বিকাশ ঘটেছে সরকার গৃহীত উন্নয়ন কমর্সূচিসমূহের ছোঁয়া লেগেছ। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। কিন্তু কতিপয় ক্ষেত্রে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক পদ সৃস্টি এবং নিয়োগ প্রদানের বিষয়ে পিছিয়ে আছে। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে পরযাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র এবং শিক্ষক নেই। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতা এবং ফানির্চার সংকট এত তীব্র যে, বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্ক্রম পরিচালনা করাও অসম্ভব প্রায়।পূর্বে উপজেলায় মাত্র ৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। নতুন ১৮ টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। আরও ০২ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর, সরকারের গৃহীত নতুন ১৫০০ সরকারি প্রাথমিক স্থাপন প্রকপ্লের আওতায় ০৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন কার্ক্রম সমাপ্ত প্রায়। প্রকল্পের আওতায় আরও ০৩ টি বিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে। বতর্মানে ৬৮ টি বিদ্যালয়ে শিখন-শেখানো তথা প্রাথমিক শিক্ষা কাযর্ক্রম চলছে। মহেশখালী উপজেলায় বসবাসরত লক্ষাধিক জনসংখ্যার জন্য আরও অন্তত ৫০ টি সরকারি বিদ্যালয় প্রয়োজন রয়েছে। সরকার পরিচালিত বিদ্যালয় এবং এনজিও পরিচালিত বিদ্যালযসমূহে বর্তমানে ৬৫০০০ ছাত্র/ছাত্রী পড়াশোনা করছে। আর কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৪৫০ জন। সরকার উপজেলার বিদ্যালয় গমনোপযোগি ১০০ ভাগ শিশুর ভর্তি ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যালয় গমনাগমন নিয়মিতকরণ নিশ্চিত করার জন্য মিড-ডে মিল (বিস্কুট) বিতরণ এবং অধ্যয়নরত শিশুদের ১০০ শতাংশকে উপবৃত্তি দিচ্ছে।

সমস্যাসমূহ: পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এখানকার প্রাথমিক শিক্ষা বাবস্থ্যা স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কতিপয় মারাত্নক প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে আবকাঠামোগত সমস্যা, ফার্নিচার স্বল্পতা শিক্ষক স্পল্পতা উল্লেখযোগ্য। ধলঘাটা ইউনিয়নে শিক্ষক স্বল্পতা আবকাঠামোগত সমস্যা খুবই প্রকট এবং শরইতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি বিলুপ্ত বিদ্যামান সমস্যাগুলোকে নিন্মরূপে তুলে ধরা যেতে পারে।

.অবকাঠামোগত আসাবাপত্র বা ফানির্চার স্বল্পতার কারণে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাযর্ক্রম পরিচালনা মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জাগিরাঘোনা, সরদারঘোনা, বার্মিজ, তাজিয়াকাটা, চরপাড়া, ফকিরাকাটা, মিঠাকাটা, চালিয়াতলী, সোনাদিয়া প্রভৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত এবং আসবাবপত্র স্বল্পতার সমস্যাটি অতি তীব্র।

. কর্মরত শিক্ষমন্ডলীর মধ্যে আন্তরিকতা সক্রিয়তাগত দুর্লতা কেটে যাচ্ছে, তবে তাঁদের পেশাগতভাবে আরও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবাপন্ন হতে হবে।।

. মহেশখালী উপজেলায় বিগত বছরগুলোতে একজন মাত্র কর্মকরতা কর্মরত ছিল বিধায়, একজনের পক্ষে সবদিক সুচারোভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব ছিল। ফলে, সাবির্ক ব্যবস্থাপনাগত প্রশাসনিকভাবে অত্র উপজেলা সারাদেশের অন্যান্য উপজেলাগুলোর চেয়ে কিছু কিছু দিক দিয়ে পিছিয়েপড়েছে।

. উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন এবং কর্রমরত শিক্ষকদের মাঝে দূরত্ব সৃস্টির প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবেদৃশ্যমান।

. মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তি এবং সামগ্রিকভাবে অত্র উপজেলা সম্পর্কে বিভাগীয় বিভাগ বহির্ভুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।

. সমগ্র কক্সবাজার জেলায় অত্র উপচজলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ কাজ করে। বিশেষত :এখানে কর্মরত একজন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে হত্যার কথা লোকমুখেখপ্রচলিত আছে এবং কর্চারিদেকে হয়রানি এবং অপদস্ত করার নজিরও আছে।

. মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার সরকারের কার্ক্রম বাস্তবায়নেও উপজেলার প্রতি কতৃর্পক্ষের যথাযত মনোযোগের অভাব পরিলক্ষিত হয়।

সুপারিশসমূহ: মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেশের অন্যান্য উপজেলার সাথে একাত্ন করে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিন্মোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করা যেতে পারে।

,অবকাঠামোগত এবং আসবাবপদত্রর স্বল্পতার সমস্যাসমূহ অতি শী্ঘ্রই সমাধান করা প্রয়োজন।

.কর্রমরত শিক্ষকগণকে পুরোপুরি  স্কুলমুখিকরণ, সক্রিয়করণ এবং আন্তরিক করে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন। ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহেদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগি হতে হবে।

.প্রয়োজণীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কমর্চারি পদায়ন করতে হবে,যাতে কর্মরত শিক্ষকগণের সাবির্ক সুযোগ-সুবিধাসমূহ দ্রুত সময়মত সমাধান করা যায়।

.উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কাযর্ক্রমে পুরোপুরি স্চ্ছতা এবং সেবা পরায়ন মনোভাবসহ সাবির্ক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলতে হবে।

.সরকার গৃহীত প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নমূলক সকল সুযোগ-সুবিধা অত্র উপজোয় নিষ্চিত করতে হবে।

. অত্র উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষগণের বিশেষ দৃষ্টি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।

. শুধুমাত্র মহেশখালী উপজেলার সাবির্ক প্রাথমিক শিক্ষা কাযক্রর্ম সুচারোভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ কাযর্ক্রম বা কর্সূচি গ্রহনের কথা ভাবতে হবে
উপরে, মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বিদ্যমান অবস্থা, সমস্যাসমূহ এবং সমাধানের জন্য কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে।অত্র উপজেলায় বিগত চার বছর ধরে কর্মরত থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে এবং অত্র কক্সবাজার এলাকার সন্তান হিসাবে মহেশখালী উপজেলার বিগত সময়ের ঘটনাগুলো ও সমস্যাস্যসমূহ অবহিত থাকার পরিপ্রেক্ষিতকে বিবেচনায় রেখে নিবন্ধটি রচনা করা হয়েছে। নিবন্ধটি পড়ে সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন এবং প্রাথমিক শক্ষা ব্যবস্থাপনায় সাবির্কভাবে গতি আসবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্রমাত্রা অজর্নে সহায়ক হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস




প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(০৮)
মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তি কী কখনো উজ্জ্বল হবে না? কেন এখানে কোন উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আসতে চান না? বিগত ২০/২৫ বছর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চাকুরি করা সকল অফিসার বা কর্মচারিই কী খারাপ ছিল? কেন একজন অফিসারও সম্মান নিয়ে এখানে চাকুরি করতে পারেন না? কেন তাঁদেরকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হয়েছে? কেন তাঁদেরকে অপদস্থ হয়ে এ উপজেলা হতে চওল যেতে হয়েছে?  মহেশখালী উপজেলার সর্বস্তরের শিক্ষকগণকে ভেবে দেখতে হবে, কারা আছে এর পেছনে? একজন সরকারি কম্যকর্তা বা কর্মচারি কোন একটি কর্মস্থলে তিন বছর বা কর্তৃপক্ষের সন্তষ্টি সাপেক্ষে তারও অধিক সময় চাকুরি করার কথা। তিনি স্বাভাবিকভাবে তাঁর চাকুরি করে যাবেন, এটাই তো হওয়া উচিত। কিন্তু মহেশখালী উপজেলা প্রা্থমিক শিক্ষা বিভাগে কেন কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারি চাকুরি করতে না আসতেই চলে যেতে চেষ্টা করেন? যাহোক, আজকের প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরিতে এ উপজেলার বর্তমান হালচাল তুলে ধরা হলো:
১. মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসে ০১জন উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং ০১জন সহকারি উপজেলা্ উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্মরত থাকার কথা। তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন উপজেলা সকল কাজ স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে। তাঁরা দুজনই নিয়মিত বিদ্যালয়সমূহ পরিদর্শন করছেন।
২. অফিসের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।
৩. উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কর্মরত সকল বেতন-ভাতা নিয়মিত ও সময়মত পেয়ে যাচ্ছেন।
৪. উর্ধ্বতন অফিস এবং কর্তৃপক্ষ কতৃক চাহিত সকল তথ্য প্রদান ও চিটিপত্র যথাসময়ে জবাব দেয়া হচ্ছে।
৫. উপবৃত্ত বিতরণ সংক্রান্ত রূপাল ব্যাংক শিউর ক্যাশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজসহ সকল কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
৬. ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
৭. বিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম এবং অন্যান্য সকল কাজ যথাযথভাবে চলছে।
৮. বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ যারঁ যাঁর দায়-দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
৯. চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে সম্পৃক্ত শিক্ষকগণ তাঁদের নির্ধারিত এলাকা ভিত্তিক অর্পিত দায়িত্ব প্রায় সম্পন্ন করে এনেছেন।
১০. উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক সভাগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
১১. সরকার কতৃক গৃহীত বিদ্যালয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজসহ সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডও স্বাভাবিকভাবে চলছে।
১২. জাতীয় দিবস এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আয়োজন ও পালিত হচ্ছে।
সর্বোপরি, মহেশখালী উপজেলায় সরকার কতৃক গৃহীত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সকল প্রকার কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলেছে। এরপরও কারও কারও চোখে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ নিয়ে সন্তুষ্টি নেই। কোন কাজ ব্যাহত হচ্ছে বা কোন কাজে অনিয়ম হচ্ছে এমন কোন দৃষ্টান্ত না থাকলেও খুঁত খোঁজা হচ্ছে কীভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অস্থিতিশীল করা যায় তা নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের প্রশাসন, শিক্ষকমন্ডলী, জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে এব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য বিনীত আহবান জানাচ্ছি। মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তিকে আর কেহ কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করবেন না, এটাই প্রত্যাশিত। যার যার দায়-দায়িত্ব পালন করে যান। ভাল থাকুন।



প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি
প্রাথমিক শিক্ষা এমন একটি বিষয় হওয় দাঁড়িয়েছে,যা নিয়ে সবাই ভাবেন, বলেন ও সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি গ্রামে এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। দেশের বহুল আরোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে এটি একটি। এর সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষক, অভিবাবক, শিক্ষার্থী, জন প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্মকর্তা অনেকেই। সবাই যার যার আকাংখা অনুযায়ি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলছি। সরকার এ শিক্ষাস্তরের সার্বিক উন্নয়ন এবং প্রত্যেক শিশুর মানসম্মত পড়াশোনা নিশ্চিতকরণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে যাচ্ছে। কিন্তু কোও যেন সমন্বয়হীনতার কারণে সকল কার্যক্রম একটি অভিন্ন লক্ষ্য পথে এগুতে পারছে না। আমি প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি প্রায় ১৮ বছর। মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমি আমার দায়-দায়িত্ব সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারি না, নিত্যদিনের কাজ নিয়ে। আমার প্রত্যাশা্টা হয়ত একটু বেশিই। তবে আমি আশাবাদী আমরাও একদিন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন বা সুইডেনের মত প্রাথমিক শিক্ষায় পৃথিবীতে সেরা হতে পারব। প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি শিরোনামে এখন থেকে আমি আমার নিত্যদিনের প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা এ কলামে লিখে যাব। প্রথম পর্বটি শুরু করলাম শিশু বান্ধব স্কুল নিয়ে।
চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্কুল বা শিশু বান্ধব স্কুল কী?
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী পিছিয়ে পড়া দেশ বা অঞ্চলগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত পরিবেশ বা শিশুদের উপযোগি পরিবেশে পড়াশোনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও পার্বত্য এলাকা, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার উপজেলাগুলোতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে অর্থ সহায়তা দিয়ে নিন্মোক্ত ৫ টি ক্ষেত্রের উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যথা-
১. প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের অবাধ ও সহজ অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: অর্থাৎ শিশুরা স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে ভর্তি হবে এবং নিয়মিত গমনাগমন করকেব। একাজটি অর্থাৎ বিদ্যালয় এলাকার শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি ও তাদের নিয়মিত বিদ্যালয় গমনাগমন নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিনা খরচে ভর্তি, বইপ্রাপ্তি এবং পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করেছে। সরকার উপবৃত্তি প্রদান, মিডডে মিল প্রদানসহ আরও বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি ইউনিসেফও এক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ অবাধ ও নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা করেছে।
২. শিশুদের জন্য নিরাপদ ও প্রতিবন্ধকতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ: সরকারিভাবে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ভবণ, শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ, ক্রীড়াও সাংস্কৃতিক সরঞ্জমাদি সরবরাহ, সহায়ক পাঠ সামগ্রী প্রভৃতি প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে ইউনিসেফ মেয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, পানীয় জল সরবরাহ, শৌচাগার, বাগান করা, শিশু খেলনা সামগ্রী প্রদান, শিশু পার্ক গড়ে তোলার জন্য তহবিল দিচ্ছে।
৩. কার্যকর শিখণ-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থাকরণ: সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগদান করেছে, শ্রেণিকক্ষকগুলোতে শিশুদের উপযোগি আসবাবপত্র সরকরাহ করেছে এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার কওের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থাও শিক্ষা উপকরণসহ বিবিধ সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য এক্ষেত্রে সহায়তা করে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন সকল শিশুর মানসম্মত শিখণ-শেখানো নিশ্চিত করা।
৪. স্কুলে সুশাসন নিশ্চিতকরণ: প্রতিটি স্কুলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করা এবং বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত সকল জনগোষ্ঠী এখন থেকে বিদ্যালয় পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবেন এটাই কাম্য।
৫. জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ: স্কুলগুলো সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজে বসবাসরত মানুষরাই স্কুলগুলোকে সফল করতে পারেন। তাদের বিচ্ছিন্ন বা দূরে রাখা হলে স্কুলগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না, এটা প্রমাণিত। সবার অংশগ্রহণ যত বেশি হবে সে স্কুল তত বেশি সফল হবে। এ ধারণাই সরকার এবং ইউনিসেফসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসি সবার অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত প্রয়াসেই একটি স্কুল ভালভাবে চলে।
আসুন আমরা সবাই মিলে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক একটি সফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রয়াস নিই।
প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি-০২
ষাইটমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করলাম আজ ০৩/০৮/২০১৭খ্রি: তারিখ কর্মরত ০৫ জন শিক্ষক/শিক্ষিকাকে উপস্থিত পাওয়া গেল বিদ্যালয়টির বর্তমান কার্যক্রম ভাল দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতার সমস্যা বিরাজমান প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য ০৭ জন শিক্ষক থাকার কথা, আছেন ০৫ জন ছাত্র/ছাত্রীর উপস্থিতি ৯০% মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২০ জন মত পরিদর্শন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নির্দিষ্ট ছকে উল্লেখ করা হয়েছে বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের প্রতি প্রদত্ত্ব ির্দেশনা পরামর্শসমূহ আজকের ডাইরিতে উল্লেখ করছি
. বিদ্যালয়ে শিশুবান্ধব শিশুর শিখন সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়
. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাংলা রিডিং পঠন-পাঠনে পারদর্শি করে তুলতে হবে
. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠের শিখনফল যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে বলা হয়
. ভালভাবে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করে উপকরণ ব্যবহার এবং শিক্ষর্থীকেন্দ্রিক শ্রেণি পাঠদান কার্ক্রম পরিচালনা করতে এবং শিক্ষক সংস্করণ, শিক্ষক এবং শিক্ষক নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলা হয়
. শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহার হতে বিরত থাকতে বলা হয়
. ০৬/০৮/২০১৭খ্রি: তারিখ হতে আরম্ভ হওয়া দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার জন্য সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে ভালভাবে প্রস্তুত করে তুলতে বলা হয়
. সকলকে বিদ্যালয়ের সময়সূচিসহ সরকারি চাকুরি বিধি-বিধান এবং বিভাগীয় আইন-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়
. বিদ্যালয়ের সার্বিক মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও আন্তরিক এবং সক্রিয় হয়ে দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়
. আইসিটি বা মালিইমিডিয়া ব্যবহার করে প্রত্যেক শিক্ষককে শ্রেণি পাঠদান কার্ক্রম পরিচালনায় পারদর্শি হয়ে ওঠতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে
প্রতিটি বিদ্যালয়কে আমরা কী এক একটি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার বাতি ঘরে পরিণত করতে পারি না? কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নস্থ ষাইটমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও ধারাবাহিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে ভাল করে আসছে এমন একটি বিদ্যালয় এতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি-০৩
আগামী / দিন পর হতে দেশব্যাপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে দ্বিতীয সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের আওতায় ১ম হতে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত বছরে ৩টি পরীক্ষা; যথা-প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে আর ৫ম শ্রেণিতে ১ম ২য় সাময়িক পরীক্ষা এবং বছর শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় তাছাড়া, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর পরীক্ষার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত করে তোলার জন্য /৩টি মডেল টেস্ট গ্রহন করা হয়ে থাকে বর্তমানে সারাদেশে কর্তৃপক্ষ কতৃক নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ি দ্বিতীয সাময়িক পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসসমূহ হতে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/সহকারি শিক্ষকগণ প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে বিদ্যালয়গুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন ০৬/০৭/০৮/২০১৭খ্রি:তারিখ হতে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম হতে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে কিন্তু কথা হলো; প্রত্যেক শিক্ষার্থী কী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত হতে পেরেছে? তারা কী সবাই সমানভাবে নির্ধারিত পাঠ্য বিষয়বস্তু পড়ে শেষ করতে পেরেছে? শিক্ষকগণ কী নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করেছেন সকল বিদ্যালয়ে সকল বিষয়ে? সকল শিক্ষার্থী কী প্রশ্নমালা বুঝে? ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নগুলো কী সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী পড়ে বুঝতে পারে? পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্রগুলো কী শিক্ষকগণ যথানিয়মে সময়মত মূল্যায়ন করে থাকেন? পরীক্ষাগুলোতে কী নিয়মকানুন মানা হয়? সকল বিদ্যালয়ে কী সঠিকভাবে ফলাফল তৈরি প্রকাশ করা হয়? মেধাবীরা কী সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয়? এধরণের হাজারো প্রশ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আয়োজিত সাময়িক পরীক্ষাগুলোকে ঘিরে উত্থাপন করা যায় কক্সবাজার জেলা বর্তমান মান্যবর জেলা প্রশাসক মহোদয় এপ্রিল/২০১৭ মাসে মাননীয় প্রাথমিক গণশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে, তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি বিষয়ে যে প্রশ্নপত্র ব্যবহার করা হয়, তা ৭০/৮০ ভাগ শিক্ষার্থীই পড়তে পারে না আর যে প্রশ্ন তারা পড়তে পারে না, তা নিযে পরীক্ষায় পাশ করে কীভাবে? যাহোক, আজকের প্রাথমিক শিক্ষা ডাইরিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আয়োজিত সাময়িক পরীক্ষাগুলো নিয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ পরামর্শ তুলে ধরার প্রয়াস চালাব
বর্তমান সাময়িক পরীক্ষা আয়োজনের সীমাবদ্ধতাসমূহ:
. অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সিলেবাস শেষ হয় না
. অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রশ্ন পড়ে বুঝতে পারে না এবং উত্তরপত্রে উত্তর লেখার পদ্ধতি জানে না বা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না
. প্রদত্ত উত্তর উত্তরপত্র পরিচ্ছন্ন হয় না
. হাতের লেখা পাঠযোগ্য বা মানসম্মত নয়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই
. শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন বুঝতে শিক্ষকদেরকে সহায়তা করতে হয়
. পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্রসমূহ প্রত্যেকটি যত্নসহকারে মূল্যায়ন করা হয় না, অনেক স্কুলে
. শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রগুলো যত্ন করে নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা মূল্যবোধ অনুসারে অনেক ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করেন না এবং ফলাফল তৈরি করেন না
. অপ্রিয় হলেও, সত্য কথা হলো নির্ধারিত নিয়মে এবং সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরগুলো ফলাফল রেজিস্ট্রারে উঠিয়ে তা প্রকাশ করা হয় না
. ১ম হতে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় সনাতন পদ্ধতিতে, কিন্তু ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে যোগ্যতা ভিত্তিক পদ্ধতিতে
১০. প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সকল আয়োজন যেভাবে নীতিমালা অনুসারে হয়ে থাকে, সাময়িক পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে অনেকটা গতানুগতিক পদ্ধতিতে
পরামর্শসমূহ:
. নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে
. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতি ভালভাবে আত্নস্থ করাতে হবে
. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যথাযথ মানসম্মতভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়া শেখাতে হবে এবং উত্তরপত্র ব্যবহার বা তাতে উত্তর লেখার অভ্যাস ভালভাবে রফত করাতে হবে
. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতের লেখা পরিস্কার হয় বা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ি লিখতে পারে এমন হওয়া উচিত
. শিক্ষার্থীরা নিজেরাই প্রত্যেক শ্রেণি বিষয়ে যথাযথভাবে প্রশ্ন বুঝতে উত্তর লিখতে পারদর্শি করার প্রয়াস চালাতে হবে পরীক্ষা চলাকালে তাদের উত্তর বলে দেয়া বা প্রশ্ন বুঝতে সহায়তা করা হতে শিক্ষকগণকে বিরত থাকতে হবে
. প্রতিটি শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র যত্নসহকারে যথাযথ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে হবে
. শিক্ষকগণকে সঠিক পদ্ধতিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে ক্ষেত্রে শিক্ষক হবেন, নির্মোহ, নিরপেক্ষ এবং মূল্যবোধসম্পন্ন
. নির্দেশনা অনুসারে এবং নির্দিষ্ট সময়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষ করতে হবে
. ২০১১ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রম অনুযায়ি সকল শ্রেণিতে প্রস্তাবিত যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন
১০. প্রতিটি পরীক্ষাই হওয়া উচিত পরীক্ষার মত, দায়সারা গোছের পরীক্ষা গ্রহণের কোন অর্থই হয় না সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্যাপারে অধিকতর যত্নবান এবং নিয়মনীতি মেনে চলায় আন্তরিক হতে হবে
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে সাময়িক পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা বা দুর্বলতাসমূহ আস্তে আস্তে কেটে যাবে, এটাই প্রত্যাশিত আর লেখক নিজেও এসব দুর্বলতার অংশিদার আবার শিক্ষক স্বল্পতা, এলাকা ভিত্তিক সচেতনার অভাব এবং বিদ্যালয় ভিত্তিক বিবিধ সমস্যার কারণে বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে এখানে বিশেষ কোন উপজেলা বা এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পরীক্ষা পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে না মোটামুটি সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সাময়িক পরীক্ষাগুলোর চিত্র এখানে পর্যালোচনা করা হয়েছে আমাদের সবাইকে এসব পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যায়নে আরও বেশি আন্তরিক স্বচ্ছ হতে হবে যাহোক, এখানে মূল্যায়ন বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি
মূল্যায়ন কী?
কোন বিষয়ের শিখন ফল অনুসারে শিক্ষার্থীরা কতটুকু আয়ত্ত্ব করতে পেরেছে তা নিরূপনের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ, বিচার বিশ্লেষণ প্রাপ্ত ফলঅফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াই হল মূল্যায়ন
মূল্যায়নের উদ্দেশ্যসমূহ:
-
মূল্যায়নের সার্বিক উদ্দেশ্য হল শিশুর জীবন পরিক্রমায় কাংখিত পরিবর্তন আনা
-
মূল্যায়ন শিখন-শেখানো প্রকিৃয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ যার সম অংশিদার হচ্ছে শিক্ষক শিক্ষার্থী তবে শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার ওপর বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত শুধু মূল্যায়নে নয়
-
শিক্ষা ক্ষেত্রে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরম্পরায় চলতে পারে শিক্ষক কতৃক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী কতৃক শিক্ষক যেমন
শিক্ষক:
. শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাই বা মূল্যায়ন করেন
. তাঁর নিজের শেখানো প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা যাচাই বা মূল্যায়ন করেন
. ব্যবহৃত শিক্ষাক্রমের গুণগত মান যাচাই বা মূল্যায়ন করেন
শিক্ষার্থী:
. তার নিজের শিখন অগ্রগতি মূল্যায়ন করে
. তার সহপাঠীর পারদর্শিতা মূল্যায়ন করে শিখ্ষকের শেখানো পদ্ধতি মূল্যায়ন করে
মূল্যায়নের প্রকার ধরণ:
-
মূল্যায়ন আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক, গাঠনিক বা চলমান, ধারাবাহিক এবং দুর্বলতা চিহ্নিতকরণমূলক হতে পারে আবার মূল্যায়ন বিছারের ভিত্তিতে তিন প্রকার;
. মান ভিত্তিক মূল্যায়ন, . উদ্দেশ্য ভিত্তিক মূল্যায়ন .স্ব-ভিত্তিক মূল্যায়ন
কেন মূল্যায়ন?
. শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি পরীবিক্ষণের জন্য
. শিক্ষার্থীদের সবল দুর্বল দিক চিহ্নিতকরণের জন্য
. নিরাময়মূলক কাজের পরিকল্পনা তৈরির জন্য
. শিক্ষার্থীদের শিখনে প্রেষণঅ যোগাতে
. শিক্ষার্থীদের নিজ কাজের ফলার্বন দেয়ার জন্য
. শিক্ষার্থীদের পারগতার মান যাচাইয়ের জন্য
. শিক্ষকের শেখানোর কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য
.অভিভাবকদের নিকট শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি অবহিতকরণের জন্য,
. শিক্ষার মান ণিশ্চিতকরণ প্রভৃতি
কখন মূল্যায়ন করা উচিত?
-
পাঠের শুরুতে
-
পাঠ চলাকালে
-
পাঠ শেষে
-
সপ্তাহ/মাস/সাময়িক বা বছর শেষে
-
শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কাজে নিয়োজিত থাকাবস্থায় 
কী কী মূল্যায়ন করা উচিত?
-
শিক্ষার্থীর অগ্রগতি,
-
শিক্ষাক্রমের গুণগত মান,
-
প্রক্রিয়া এবং ফলাফল,
-
জ্ঞান, দক্ষতা দৃষ্টিভঙ্গি
-
বিশেষ পারদর্শিতা/প্রজেক্ট কাজ,
-
পাঠের শিখন ফল বা যোগ্যতা,
-
শিক্ষকের শেখানোর দক্ষতা


প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি-০৪
শিক্ষার্থীদের লেখা-লেখিতে হাত পাকানোর কলা-কৌশল

ভাষা শিখনে শিক্ষার্থীদের চারটি দিকই সমানভাবে দক্ষ করে তুলতে হয়। পড়া, লেখা, শোনা ও বলা; এ চারটি দক্ষতা একটি ভাষা আয়ত্তকরণে অপরিহার্য। এ চারটি দক্ষতার মধ্যে পড়ার কথাই বেশি বেশি বলি আমরা তাদেরকে। অবশিষ্ট তিনটি দক্ষতাকে পড়ার মত সমান গুরুত্ব দিই না বললেই চলে। আবার অনেকে লেখা-পড়া্ কথাটাকে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, এখানে যেহেতু লেখার কথা আগেই বলা হয়েছে, তাই অন্যগুলোর চেয়ে লেখার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আর শোনা ও বলার কথা তো অপরিহার্য দক্ষতা হিসেবে তেমনটা ভাবা হয় না। কিন্তু শোনে বুঝতে পালেই তো কোন শিক্ষার্থী পড়তে, বলতে ও লিখতে পারবে। আর কোন কিছু শুদ্ধ করে বলতে পারাটাও কী কম গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য লেখার ক্ষেত্রে অত বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না, যতটা পরবর্তী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয়। তবে, কেহ ভাল লেখক হতে চাইলে বা সাহিত্যিক হতে চাইলে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। সাধারণত: উত্তম শিক্ষার্থীরা ভাষা দক্ষতার চারটিতেই সমান পারদর্শি হয়। আবার কোন কোন শিক্ষার্থী এ চারটিতে কোন কোনটিতে বেশ ভাল হয়, অন্য তিনটিতে কিছুটা কম দক্ষও হতে পারে। যেমন-কোন কোন শিক্ষার্থী কথা-বার্তা বলার ক্ষেত্রে খুব চমৎকার বাচন ভঙ্গিতে শুদ্ধ উচ্চারণে গুছিয়ে তা করতে পারে। কিন্তু লিখতে দিলে এলা-মেলো করে ফেলে। কোন কোন শিক্ষার্থী লিখতে দিলে নির্ভুলভাবে লিখতে পারে, কিন্তু বলতে দিলে তেমনটা পারে না। তবে প্রায় সকল শিক্ষার্থী পড়তে পারে কম বেশি। শোনে বুঝতে পারে এমন শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। সর্বোপরি, শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ধাপগুলো ধীরে ধীরে পার করে এগিয়ে গেলে বয়স, সামর্থ্যও ও অভিরুচি বা ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ি প্রায় সকলেই ভাষা জ্ঞান অর্জনে পারদর্শি হয়ে ওঠে। বিশেষত: মাতৃভাষায় পারদর্শিতা সকল শিক্ষার্থীরই মোটামুটি সহজাতভাবেই অর্জিত হয়ে যায়। কিন্তু সেটা যদি ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষা হয়ে থাকে, তবে ভিন্ন ব্যাপার। আজকের প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরিতে শিক্ষার্থীদের লিখতে পারার দক্ষতা বৃদ্ধি করার কলাকৌশলগুলো তুলে ধরা হবে।
১. ভাল লিখতে পারার শুধু বেশি বেশি পঠনই যথেষ্ট নয়: আমরা প্রায়ই বলি বা বলতে শুনি যে, ভাল লিখতে পারার জন্য ভাল পাঠক হতে হয়। আসলে সেটা পুরোপুরি সত্য নয়। ভাল লেখক হওয়ার জন্য আরও যা প্রয়োজন তা হলো; ভাষা কাঠামো ও শৈলি রফত করতে হবে। কোন বিষয় বর্ণনা করার ধরণ, শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন শৈলি এবং লেখার বিষয়টি ভালভাবে জানা থাকা, প্রভৃতি ভাল লেখক হওয়ার জন্য জরুরী, বৈ কি!
২. শিক্ষার্থীদেরকে ভাল লিখনে ভুল শুধরানোর চেয়ে কীভাবে লিখবে তা শিখিয়ে দিতে হবে: কোন শিক্ষার্থী যখন লিখে তাকে বানান বা ব্যাকরণগত ভূল নয়, তাকে সহায়তা করতে হবে বিষয়টি সে কীভাবে উপস্থাপন করবে তাতে। আমরা সাধারণত: এগুলোই বেশি করতে আগ্রহী হই বেশি। আসলে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকগণ বা অভিবাবকগণ বানান, বিরাম চিহ্ন ব্যবহার ও ব্যাকরণগত দিকগুলোর প্রতিই বেশি দৃষ্টি দেন। মূলত তাদেরকে কোন কিছু প্রকাশ বা উপস্থাপন কৌশলগুলোই বেশি বেশি শিখিয়ে দিতে হবে। অন্যগুলোতে দুর্বলতা এক সময় কেটে যাবে। কিন্তু তাদেরকে তাদের সহজাত ভঙ্গিতে লিখতে হবে।
৩.সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কী শিক্ষার্থীদের লিখন শিখনে ব্যাহত করছে? আজকের শিশুরা মোবাইল, কম্টিউটার, লেপটপ, স্মার্ট ফোন প্রভৃতি প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে, অবাধে। এতে তারা জেনে যাচ্ছে কোন কোন বিষয় কীভাবে লিখতে হয়, কীভাবে উত্তর দিতে হয়। সুতরাং আগের প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মত তারা লিখন দক্ষতা অর্জনে শুধু নির্দিষ্ট খাতা বা ডাইরি ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের জন্য তাদের হাতের কাছে থাকা সুযোগ-সুবিধাগুলো উন্মুক্ত করে দেয়াই উত্তম হবে।
৪. তৃতীয় শ্রেণির পরের শ্রেণিগুলোতেই ভাল লিখতে শিখতে গুরুত্ব দিতে হবে: সাধারণত: প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বীতীয় শ্রেণিতে তেমন বেশি লৈখা-লেখির কাজ থাকে না। এক শব্দ বা এক বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। আর ঠিক চিহ্ন দেয়া, ডান-বাম পাশ মেলানো, সত্য-মিথ্যা, হাঁ-না প্রভৃতি সাংকেতিক লিখনে পারদর্শি হলেই চলে। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণি হতে উপরের দিকে বিষয় ও লেখা-লেখির কাজ বেড়ে যায়। তাই এ শ্রেণি হতে লিখনের দক্ষতার উপর পুরো দস্তুর শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ করে তোলার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।
৫. বিষয় বুঝে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক উপস্থাপনে পারদর্শি হতে হবে: আমাদের দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা তিনটি করে মূল বিষয় পড়ে। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণি হতে মূল বিষয় নির্ধারিত আছে ছয়টি করে। ইংরেজি ছাড়া বাকি ৫টি বিষয়ই পড়তে হয় ও পরীক্ষা দিতে হয় বাংলা ভাষায়। আর ছয়টি বিষয়ের পাঠ্য বিষয়বস্তুও আগের শ্রেণি দুটির যেয়ে বিস্তৃত, ব্যাপকতর ও জটিল। বাংলা, বিজ্ঞান, সমাজ, গণিত ও ধর্ম; এ পাঁচটি বিষয়ের আলোচ্য বিষয় এবং বিষয় যোগ্যতা অর্জন অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্যই কঠিন হয়, বৈ কি! সুতরাং একজন শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পরই শিক্ষক, অভিভাবক এবং  শিক্ষার্থী সকলকে যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির উপর তৃতীয় শ্রেণি হতেই অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
৬. শব্দভান্ডার বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীদেরকে কোন কিছু লিখে দক্ষতার সাথে প্রকাশ করতে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হবে তাদের শব্দ জানার পরিধি। সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, পদান্তর, লিঙ্গান্তর, যুক্তবর্ণ, যুক্তাক্ষর, গণিত ও বিজ্ঞানের পরিভাষা প্রভৃতি শিখনে প্রচুর উৎসাহ যোগাতে হবে। সহায়ক পাঠ সামগ্রী যথা-শিশুতোষ, ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে তাদেরকে। পরিচিত যে কোন বিষয বা পাঠ্য বিষয়বস্তুর উপর বিভিন্ন ধরণের লেখার অভ্যাস করাতে হবে। পরীক্ষার প্রশ্নে উল্লেখ থাকে এমন নৈর্ব্যত্তিক, ছোট প্রশ্ন, বড় প্রশ্নসহ অনুরূপ বিবিধ বিষয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি অনুশীলণ ও চর্চা করাতে হবে শিক্ষার্থীদেরকে। এক পর্যায়ে এভাবে ভাল লেখক হয়ে ওঠবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই।
৭. ভাষাগত দক্ষতা আছে এমন শিক্ষক দিয়ে বিশেষ সহায়তা দান: সকল শিক্ষক হয়ত ভাষাগত দক্ষতায় দক্ষ হন না। বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণের মধ্যে যাঁরা ভাষা শিক্ষায় বিশেষ পারদর্শি তাঁদের সহায়তা নিতে হবে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের লিখন দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য। হতে পারে কোন শিক্ষক গণিত বা বিজ্ঞান পড়ান, কিন্তু তিনি লিখনেও দক্ষ। প্রয়োজনে এমন শিক্ষকগণকে শিক্ষার্থীদের লিখন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার দায়িত্ব দিতে হবে।
উপরোক্ত কৌশলগুলো ছাড়াও শিক্ষার্থীদেরকে লিখনে পারদর্শি করে তোলার জন্য অন্যান্য কৌশলও অবলম্বন করা যেতে পারে। যাহোক, সকল শিক্ষার্থী অন্তত: পরীক্ষার উত্তরপত্রগুলোতে তাদের লিখন দক্ষতার প্রকাশ ঘটানোর উপযোগি হবে, এটাই কাম্য।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন