রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি

প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(১৫)
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কাজ করছেন যাঁরা, তাঁরা তাঁদের কাজের স্বীকৃতি পান খুব কমই। এ না পাওয়ার হাজারো বেদনার মাঝে, একটুখানি হলেও কাজের স্বীকৃতি পেলে গৌরব বোধ হয় বৈ কি! প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মহেশখালী উপজেলায় জাতীয় শিক্ষা পদক/২০১৭ সালে বাছাইয়ে আমরা ০৪ জন শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হই। এ চারজন হলেন; ১. শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী হন, মহেশখালী উপজেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয়, শিক্ষা জগতের অগ্রদূত এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা চৌধুরী, ২. শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ক্যাটাগরীতে আদিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাবু ব্রজ গোপাল ঘোষ, ৩. শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ক্যাটাগরীতে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ এবং ৪. প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মচারি ক্যাটাগরীতে বাবু রাখাল চন্দ্র মজুমদার। ২৩/০৮/২০১৭খ্রি: তারিখ মহেশখালী উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির পক্ষ হতে তাঁদেরকে সংবর্ধিত করা হয়। উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত এ সংবর্ধনা সভায় সভাপতির আসন অলংকৃত করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মো: তাজরুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব ছালেহ আহমদ, সাংবাদিকবৃন্দ, মহেশখালীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকমন্ডলী, সহকারি শিক্ষকবৃন্দসহ অনেকেই এ মহতি সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব আবুল কালাম প্রধান অতিথির ভাষণে এ সংবর্ধনা সভা মহেশখালী উপজেলার প্রা্থমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কার্যক্রমে গতিশীলতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে উল্লেখ করে বলেন, জেলা পর্যায়ে মহেশখালী উপজেলা হতে ৪টি ক্যাটাগরীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন কম প্রাপ্তি নয়। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি মহেশখালী উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ এবং ব্যাপক প্রসার ঘটানোর জন্য যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিক ও সক্রিয় প্রচেষ্টা চালানোর আহবান জানান। সংবর্ধিত শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তিত্ত্ব ও বর্ষিয়য়ান রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা চৌধুরী বিগত চল্লিশ/পঞ্চাশ বছর ধরে মহেশখালী উপজেলায় শিক্ষার অগ্রযাত্রায় প্রতিটি শিক্ষা স্তরে তাঁর প্রাণপন অবদানের কথা স্মরণ করে সবার প্রতি এগিয়ে আসার আহবান জানান। শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকায় তিনি পুরো মহেশখালী উপজেলাবাসীর প্রতি শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে এর লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে কাজ করতে হবে বলে জানান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুন্সিরডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক সমিতির আহবায়ক জনাব মো: সাঈদ আল করিম। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব ছালেহ আহমদ, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মো: তাজরুল ইসলাম, মহেশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মো: গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, কেরুণতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব সুভাষ চন্দ্র দত্ত, উত্তর নলবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মো: সাইফুল ইসলাম, আদিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জনাব সাজেদা বেগম প্রমুখ এতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় বক্তাগণ, আগামী ২৯/০৮/২০১৭ তারিখ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের বাছাই প্রক্রিয়ায়ও কক্সবাজার জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্নকারিগণ সাফল্য অব্যাহত রাখবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য যে, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালন করা হয় প্রতি বছর, আমাদের দেশে। জুন মাসের শেষের দিকে ক্লাস্টার পর্যায় হতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিবর্গ, কর্মকর্তা, কর্মচারি, শিক্ষক, শিশুদেরকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বিষয়টা অনেকেই ভালভাবে অবহিত নন। ফলে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধমে যারা নির্বাচিত হন তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতাসমূহে অবতীর্ণ হন। আর কোথাও কোথাও এ প্রক্রিয়াটি একেবারে দায়সারাভাবে আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবারও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ/২০১৭ আয়োজনের জন্য দেশব্যাপী শ্রেষ্ঠদের বাছাই প্রকিয়া চলছে। আগামী জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি/২০১৮ মাসে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পিালনের মধ্যদিয়ে ২১টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিতদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করবেন। আজ ১৩/০৮/২০১৭খ্রি: তারিখ কক্সবাজার জেলায় বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হলো। শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ক্যাটাগরিতে আমিও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম। ২০১২ সালে রাংগামাটি জেলা, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কক্সবাজার জেলায় আমি ইতোপূর্বে ৩বার শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবার ২০১৭ সালে ৪র্থ বারের মত শ্রেষ্ঠ হলাম। আমি মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষায় সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।




প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(১৩)
মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী ইউনিয়নভুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সার্বিক বিবেচনায় ধারাবাহিকভাবে সাফল্য প্রদর্শন করে আসছে। বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, উপবৃত্তি সুবিধাভোগীদের তথ্য, জরিপ, ভর্তি, বইয়ের চাহিদা প্রদান এবং বই গ্রহনসহ বিবিধ তথ্য প্রদানে এ ইউনিয়নের প্রধান শিক্ষকগণ সব সময় সচেষ্ট ও আন্তরিক। সময়ে সময়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কতৃক চাহিত জরুরী তথ্যাদি প্রদান এবং চাকুরি বিধি-বিধান ও বিভাগীয় চিঠিপত্র, পরিপত্র, নির্দেশনাদি, প্রজ্ঞাপনসমূহ মেনে চলার ক্ষেত্রেও তারা বেশ আন্তরিক। সময় মেনে বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচলনা, শিক্ষকগণের বিদ্যালয় গমনাগমন, শ্রেণিপাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থীদের ভালভাবে প্রস্তুত করে তোলা, ধারাবাহিকভাবে ভাল ফলাফল করা, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থীকে শ্রেণি ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা এবং শিখনফল অর্জন করানো, মানসম্মত পড়াশোনায় পারদর্শি শিক্ষার্থী গড়ে তোলা, চাকুরি বিধি-বিধান এবং বিভাগীয় আদেশ-নির্দেশসমূহ মেনে চলার ক্ষেত্রে মাতারবাড়ি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর একটি স্বাতন্ত্র্ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। পুরো উপজেলার সকল বিদ্যালয় এক একটি সফল প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় ভাল করুক এটাই কাম্য। বিগত বছরগুলোতে মাতারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় মহেশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাতারবাড়ি পুরানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহেশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোন্দকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ফকিরাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফকিরাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মুষ্টিমেয় কিছু বিদ্যালয় ধারাবহিকভাবে সার্বিক বিবেচনায় ভাল করে আসছে। উপজেলার মোট ৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ধীরে ধীরে সাফল্যের দিকে এগুচ্ছে। সম্প্রতি পরিচালিত বিদ্যালয় গ্রেডিংকে সামনে রেখে সকল বিদ্যালয় সকল সূচকের বিবেচনায় আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যে হয়ত একটি মানে উন্নীত হবে। অতি সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে মাগুরা জেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আদলে গড়ে তোলার জন্য।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব  মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ হলো:
১. ডিজিটাল প্রক্সিমিটি কার্ডের মাধ্যমে হাজিরা প্রদান ব্যবস্থাকরণ,
২. সীমানা প্রাচীর ও শ্রেণিকক্ষে দেয়ালচিত্র অংকন।
৩. মাঠে ভৌগোলিক মানচিত্র তৈরি ও স্থাপন।
৪. আকর্ষণীয় ও নীতিমালা অনুসরণে প্রাত্যহিক সমাবেশ আয়োজন এবং শপথ পাঠ।
৫. অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা করে তাদের জন্য আনন্দ পাঠাগার স্থাপন।
৬. বিদ্যালয়ের আকর্ষণীয় একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গানো।
৭. বিদ্যালয়ের দেয়ালে বিখ্যাত ব্যক্তিগণের উক্তি লিখন।
৮. মহানুভবতার দেয়াল বা দানবাক্স স্থাপন।
৯. শিশুদের আলোকিত আচরণের উল্লেখযোগ্য দৃশ্য বা ছবি টাঙ্গানো।
১০. শিক্ষক ইউনিফর্ম চালু করতে হবে।
১১. মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ও শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
১২. শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
১৩. সততার দোকান চালু করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
১৪. ‘এই দিনে’ শীর্ষক স্মরণীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের ঘটনাগুলো লিখে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. নদী বা ফুলের নামে শিশুদের দল গঠন করতে হবে।
১৬. বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জীবনী সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. ডিজিটাল বা অন-লাইন সার্ভিস পয়েন্ট চালু করতে হবে।
১৮. প্রত্যেক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ চালু করতে হবে।
১৯. ডিজিটাল ঘন্টা বাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
২০. মিড-ডে মিল চালু করা ব্যবস্থা করতে হবে।




প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(১০)
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালন করা হয় প্রতি বছর, আমাদের দেশে। জুন মাসের শেষের দিকে ক্লাস্টার পর্যায় হতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিবর্গ, কর্মকর্তা, কর্মচারি, শিক্ষক, শিশুদেরকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বিষয়টা অনেকেই ভালভাবে অবহিত নন। ফলে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধমে যারা নির্বাচিত হন তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতাসমূহে অবতীর্ণ হন। আর কোথাও কোথাও এ প্রক্রিয়াটি একেবারে দায়সারাভাবে আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবারও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ/২০১৭ আয়োজনের জন্য দেশব্যাপী শ্রেষ্ঠদের বাছাই প্রকিয়া চলছে। আগামী জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি/২০১৮ মাসে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পিালনের মধ্যদিয়ে ২১টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিতদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করবেন। আজ ১৩/০৮/২০১৭খ্রি: তারিখ কক্সবাজার জেলায় বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হলো। শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ক্যাটাগরিতে আমিও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম। ২০১২ সালে রাংগামাটি জেলা, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কক্সবাজার জেলায় আমি ইতোপূর্বে ৩বার শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবার ২০১৭ সালেও হয়ত আমি তাই হব। যাহোক, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতা বিষয়ে আমার কিছু মতামত তুলে ধরার প্রয়াস চালাব।
জাতীয় শিক্ষা পদকের পটভূমি: প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সংশ্ষ্টি ব্যক্তিবর্গকে দক্ষতার মান বিচারে যথোপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদান করা অপরিহার্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৮৫ সাল হতে প্রতি বছর পুরস্কার প্রদান রা হয়ে আসছে।
লক্ষ্য: শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে আত্ননির্ভরশীল হতে সাহায্য করা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার সফল বাস্তবায়ন এবং গুণগত মানোন্নয়ন।
উদ্দেশ্য:
ক. শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা।
খ. শিশু, শিক্ষক, ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান, কর্মচারি এবং কর্মকর্তাদের মাঝে নব উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের পথ সুগম করা।
গ. শিশুদের সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে পুরস্কৃত করা।
ঘ. শ্রেষ্ঠ কাব শিশু ও শ্রেষ্ঠ কাব শিক্ষককে পদক প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের নিজ জীবন গড়তে ও সমাজ সেবামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা।
ঙ. শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শ্রেষ্ঠ সহকারি উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, শ্রেষ্ঠ পিটিআই, শ্রেষ্ঠ পিটিআই ইন্স্ট্রাক্টর, শ্রেষ্ঠ ইউআরসি/টিআরসি ইন্স্ট্রাক্টর, শ্রেষ্ঠ সহকারি ইউআরসি/টিআরসি ইন্স্ট্রাক্টরকে পদক ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগানো।
চ. শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, শ্রেষ্ঠ এসএমসিকে পদক প্রদানের মাধ্যমে শিশুদের বিদ্যালয়ে আনয়ন, ঝরে পড়া রোধ করা, বিদ্যালয় আকর্ষণীয় করা, বিদ্যালয়ের সাথে সমাজের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা।
ছ. প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য কর্মচারিদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা।
জ. প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য শিক্ষা প্রশাসক, শিক্ষাবিদ এবং বিদ্যোৎসাহীদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা।
পদকের নাম: জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক।
জাতীয় শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা আয়োজন নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি ‍ও করণীয়সমূহ:
ক্রমিক নং
বিদ্যমান পরিস্থিতি
করণীয়সমূহ
০১
-সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিগণ বিষয়টি ভালভাবে অবহিত নন।
-বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভালভাবে প্রচার করা প্রয়োজন।
০২
-প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত সকল ক্যাটাগরির ব্যক্তি ও শিশুদেরকে বছরের শুরু থেকে প্রস্তুত করা হয় না।
-প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত সকল ক্যাটাগরির ব্যক্তি ও শিশুদেরকে বছরের শুরু থেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
০৩
-বাছাই ছক এবং ছকে উল্লেখিত পরিমাপক বা যোগ্যতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের জানা থাকে না।
-বাছাই ছক এবং ছকে উল্লেখিত পরিমাপক বা যোগ্যতা সম্পর্কে বেশ আগে হতেই সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে হবে।
০৪
-শ্রেষ্ঠত্ত্বের প্রতিযোগিতায় ইচ্ছুকগণকে বাছাই ছকগুলো আগে থেকে সরবরাহ করা হয় না।
-শ্রেষ্ঠত্ত্বের প্রতিযোগিতায় ইচ্ছুকগণকে বাছাই ছকগুলো আগে থেকে সরবরাহ করা প্রয়োজন।
০৫
-পদক নীতিমালা অনুযায়ি প্রতিযোগিতা বা বাছাই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসৃত হয় না।
-পদক নীতিমালা অনুযায়ি প্রতিযোগিতা বা বাছাই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
০৬
-প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয়, এ বিষয়টি সবাইকে জানেন না।
-প্রাথমিক শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয়, এ বিষয়টি সবাইকে জানানো প্রয়োজন।
০৭
-জাতীয় শিক্ষা পদক সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা হয়।
-জাতীয় শিক্ষা পদক সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা হতে বিরত থেকে প্রদত্ত্ব স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ইতিবাচক প্রতিযোগিতাই কাম্য।

পরিশেষে বলতে হয় যে, প্রাথমিক শিক্ষক পদকে ভূষিত কর্মকর্তা, শিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সরকার বিদেশে সফর ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ অন্যান্য অনেক স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি নেই কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। সবার উচিত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করে ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য ছিনিয়ে আনা।



প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(০৯)
মহেশখালী উপজেলা বাংলাদেশে অfর্থ-সামাজিক-ইতিহাস-ঐতিয্যগত বিবেচনায় একটি সুপরিচিত দ্বীপ উপজেলা।প্রাকৃতিক ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্রময় দ্বীপ উপজেলাটি সারাদেশে এবং হির্বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠছে। বহু প্রাচীন কাল হতে এখানকার মৎস্য (কাঁচা-শুকনা), মিষ্টি পান, লবণসহ অন্যান্য সম্পদ-উৎপাদিত পণ্য অতি জনপ্রিয়।পযর্টন স্পট হিসাবে উপজেলাস্থ আদিনাথ মন্দির ভারত উপমহাদেশে বিশ্বব্যাপি খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া, সোনাদিয়া দ্বীপ মৈনাক পাহাড়; এর সৌন্দরযে অপরূপ শোভা বধর্ন করেছে। আর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দুটি বিশাল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ, সোনাদিয় অর্থনৈতি অঞ্চল, ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী প্রকল্প, এলএনজি স্টেশন স্থাপনসহ প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিশ্ব দরবারে এর কদর বাড়িয়ে দিচ্ছে। নিবন্ধে মহেশখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে আলোকপাত করা হলো।

বতর্মান চিত্র: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন বতর্মান সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সারাদেশে যুগান্তকারি অনেক পদক্ষেপ গ্রহন বাস্তবায়ন করছে। সারাদেশে অন্যান্য স্থানের ন্যায় উপগজলায়ও প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার এবং বিকাশ ঘটেছে সরকার গৃহীত উন্নয়ন কমর্সূচিসমূহের ছোঁয়া লেগেছ। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। কিন্তু কতিপয় ক্ষেত্রে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক পদ সৃস্টি এবং নিয়োগ প্রদানের বিষয়ে পিছিয়ে আছে। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে পরযাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র এবং শিক্ষক নেই। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতা এবং ফানির্চার সংকট এত তীব্র যে, বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্ক্রম পরিচালনা করাও অসম্ভব প্রায়।পূর্বে উপজেলায় মাত্র ৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। নতুন ১৮ টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। আরও ০২ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর, সরকারের গৃহীত নতুন ১৫০০ সরকারি প্রাথমিক স্থাপন প্রকপ্লের আওতায় ০৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন কার্ক্রম সমাপ্ত প্রায়। প্রকল্পের আওতায় আরও ০৩ টি বিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে। বতর্মানে ৬৮ টি বিদ্যালয়ে শিখন-শেখানো তথা প্রাথমিক শিক্ষা কাযর্ক্রম চলছে। মহেশখালী উপজেলায় বসবাসরত লক্ষাধিক জনসংখ্যার জন্য আরও অন্তত ৫০ টি সরকারি বিদ্যালয় প্রয়োজন রয়েছে। সরকার পরিচালিত বিদ্যালয় এবং এনজিও পরিচালিত বিদ্যালযসমূহে বর্তমানে ৬৫০০০ ছাত্র/ছাত্রী পড়াশোনা করছে। আর কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৪৫০ জন। সরকার উপজেলার বিদ্যালয় গমনোপযোগি ১০০ ভাগ শিশুর ভর্তি ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যালয় গমনাগমন নিয়মিতকরণ নিশ্চিত করার জন্য মিড-ডে মিল (বিস্কুট) বিতরণ এবং অধ্যয়নরত শিশুদের ১০০ শতাংশকে উপবৃত্তি দিচ্ছে।

সমস্যাসমূহ: পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এখানকার প্রাথমিক শিক্ষা বাবস্থ্যা স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কতিপয় মারাত্নক প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে আবকাঠামোগত সমস্যা, ফার্নিচার স্বল্পতা শিক্ষক স্পল্পতা উল্লেখযোগ্য। ধলঘাটা ইউনিয়নে শিক্ষক স্বল্পতা আবকাঠামোগত সমস্যা খুবই প্রকট এবং শরইতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি বিলুপ্ত বিদ্যামান সমস্যাগুলোকে নিন্মরূপে তুলে ধরা যেতে পারে।

.অবকাঠামোগত আসাবাপত্র বা ফানির্চার স্বল্পতার কারণে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাযর্ক্রম পরিচালনা মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জাগিরাঘোনা, সরদারঘোনা, বার্মিজ, তাজিয়াকাটা, চরপাড়া, ফকিরাকাটা, মিঠাকাটা, চালিয়াতলী, সোনাদিয়া প্রভৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত এবং আসবাবপত্র স্বল্পতার সমস্যাটি অতি তীব্র।

. কর্মরত শিক্ষমন্ডলীর মধ্যে আন্তরিকতা সক্রিয়তাগত দুর্লতা কেটে যাচ্ছে, তবে তাঁদের পেশাগতভাবে আরও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবাপন্ন হতে হবে।।

. মহেশখালী উপজেলায় বিগত বছরগুলোতে একজন মাত্র কর্মকরতা কর্মরত ছিল বিধায়, একজনের পক্ষে সবদিক সুচারোভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব ছিল। ফলে, সাবির্ক ব্যবস্থাপনাগত প্রশাসনিকভাবে অত্র উপজেলা সারাদেশের অন্যান্য উপজেলাগুলোর চেয়ে কিছু কিছু দিক দিয়ে পিছিয়েপড়েছে।

. উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন এবং কর্রমরত শিক্ষকদের মাঝে দূরত্ব সৃস্টির প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবেদৃশ্যমান।

. মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তি এবং সামগ্রিকভাবে অত্র উপজেলা সম্পর্কে বিভাগীয় বিভাগ বহির্ভুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।

. সমগ্র কক্সবাজার জেলায় অত্র উপচজলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ কাজ করে। বিশেষত :এখানে কর্মরত একজন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে হত্যার কথা লোকমুখেখপ্রচলিত আছে এবং কর্চারিদেকে হয়রানি এবং অপদস্ত করার নজিরও আছে।

. মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার সরকারের কার্ক্রম বাস্তবায়নেও উপজেলার প্রতি কতৃর্পক্ষের যথাযত মনোযোগের অভাব পরিলক্ষিত হয়।

সুপারিশসমূহ: মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেশের অন্যান্য উপজেলার সাথে একাত্ন করে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিন্মোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করা যেতে পারে।

,অবকাঠামোগত এবং আসবাবপদত্রর স্বল্পতার সমস্যাসমূহ অতি শী্ঘ্রই সমাধান করা প্রয়োজন।

.কর্রমরত শিক্ষকগণকে পুরোপুরি  স্কুলমুখিকরণ, সক্রিয়করণ এবং আন্তরিক করে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন। ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহেদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগি হতে হবে।

.প্রয়োজণীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কমর্চারি পদায়ন করতে হবে,যাতে কর্মরত শিক্ষকগণের সাবির্ক সুযোগ-সুবিধাসমূহ দ্রুত সময়মত সমাধান করা যায়।

.উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কাযর্ক্রমে পুরোপুরি স্চ্ছতা এবং সেবা পরায়ন মনোভাবসহ সাবির্ক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলতে হবে।

.সরকার গৃহীত প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নমূলক সকল সুযোগ-সুবিধা অত্র উপজোয় নিষ্চিত করতে হবে।

. অত্র উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষগণের বিশেষ দৃষ্টি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।

. শুধুমাত্র মহেশখালী উপজেলার সাবির্ক প্রাথমিক শিক্ষা কাযক্রর্ম সুচারোভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ কাযর্ক্রম বা কর্সূচি গ্রহনের কথা ভাবতে হবে
উপরে, মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বিদ্যমান অবস্থা, সমস্যাসমূহ এবং সমাধানের জন্য কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে।অত্র উপজেলায় বিগত চার বছর ধরে কর্মরত থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে এবং অত্র কক্সবাজার এলাকার সন্তান হিসাবে মহেশখালী উপজেলার বিগত সময়ের ঘটনাগুলো ও সমস্যাস্যসমূহ অবহিত থাকার পরিপ্রেক্ষিতকে বিবেচনায় রেখে নিবন্ধটি রচনা করা হয়েছে। নিবন্ধটি পড়ে সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন এবং প্রাথমিক শক্ষা ব্যবস্থাপনায় সাবির্কভাবে গতি আসবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্রমাত্রা অজর্নে সহায়ক হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস




প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি(০৮)
মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তি কী কখনো উজ্জ্বল হবে না? কেন এখানে কোন উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আসতে চান না? বিগত ২০/২৫ বছর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চাকুরি করা সকল অফিসার বা কর্মচারিই কী খারাপ ছিল? কেন একজন অফিসারও সম্মান নিয়ে এখানে চাকুরি করতে পারেন না? কেন তাঁদেরকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে? কেন তাঁদেরকে অপদস্থ হয়ে এ উপজেলা হতে চলে যেতে হয়েছে?  মহেশখালী উপজেলার সর্বস্তরের শিক্ষকগণকে ভেবে দেখতে হবে, কারা আছে এর পেছনে? একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারি কোন একটি কর্মস্থলে তিন বছর বা কর্তৃপক্ষের সন্তষ্টি সাপেক্ষে তারও অধিক সময় চাকুরি করার কথা। তিনি স্বাভাবিকভাবে তাঁর চাকুরি করে যাবেন, এটাই তো হওয়া উচিত। কিন্তু মহেশখালী উপজেলা প্রা্থমিক শিক্ষা বিভাগে কেন কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারি চাকুরি করতে না আসতেই চলে যেতে চেষ্টা করেন? যাহোক, আজকের প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরিতে এ উপজেলার বর্তমান হালচাল তুলে ধরা হলো:
১. মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসে ০১জন উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং ০১জন সহকারি উপজেলা্ উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্মরত থাকার কথা। তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন উপজেলা সকল কাজ স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে। তাঁরা দুজনই নিয়মিত বিদ্যালয়সমূহ পরিদর্শন করছেন।
২. অফিসের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।
৩. উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কর্মরত সকল বেতন-ভাতা নিয়মিত ও সময়মত পেয়ে যাচ্ছেন।
৪. উর্ধ্বতন অফিস এবং কর্তৃপক্ষ কতৃক চাহিত সকল তথ্য প্রদান ও চিটিপত্র যথাসময়ে জবাব দেয়া হচ্ছে।
৫. উপবৃত্ত বিতরণ সংক্রান্ত রূপাল ব্যাংক শিউর ক্যাশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজসহ সকল কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
৬. ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
৭. বিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম এবং অন্যান্য সকল কাজ যথাযথভাবে চলছে।
৮. বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ যারঁ যাঁর দায়-দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
৯. চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে সম্পৃক্ত শিক্ষকগণ তাঁদের নির্ধারিত এলাকা ভিত্তিক অর্পিত দায়িত্ব প্রায় সম্পন্ন করে এনেছেন।
১০. উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক সভাগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
১১. সরকার কতৃক গৃহীত বিদ্যালয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজসহ সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডও স্বাভাবিকভাবে চলছে।
১২. জাতীয় দিবস এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আয়োজন ও পালিত হচ্ছে।
সর্বোপরি, মহেশখালী উপজেলায় সরকার কতৃক গৃহীত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সকল প্রকার কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলেছে। এরপরও কারও কারও চোখে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ নিয়ে সন্তুষ্টি নেই। কোন কাজ ব্যাহত হচ্ছে বা কোন কাজে অনিয়ম হচ্ছে এমন কোন দৃষ্টান্ত না থাকলেও খুঁত খোঁজা হচ্ছে কীভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অস্থিতিশীল করা যায় তা নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের প্রশাসন, শিক্ষকমন্ডলী, জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে এব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য বিনীত আহবান জানাচ্ছি। মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তিকে আর কেহ কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করবেন না, এটাই প্রত্যাশিত। যার যার দায়-দায়িত্ব পালন করে যান। ভাল থাকুন।



প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি
প্রাথমিক শিক্ষা এমন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে,যা নিয়ে সবাই ভাবেন, বলেন ও সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি গ্রামে এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। দেশের বহুল আরোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে এটি একটি। এর সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষক, অভিবাবক, শিক্ষার্থী, জন প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্মকর্তা অনেকেই। সবাই যার যার আকাংখা অনুযায়ি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলছি। সরকার এ শিক্ষাস্তরের সার্বিক উন্নয়ন এবং প্রত্যেক শিশুর মানসম্মত পড়াশোনা নিশ্চিতকরণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে যাচ্ছে। কিন্তু কোও যেন সমন্বয়হীনতার কারণে সকল কার্যক্রম একটি অভিন্ন লক্ষ্য পথে এগুতে পারছে না। আমি প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি প্রায় ১৮ বছর। মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমি আমার দায়-দায়িত্ব সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারি না, নিত্যদিনের কাজ নিয়ে। আমার প্রত্যাশা্টা হয়ত একটু বেশিই। তবে আমি আশাবাদী আমরাও একদিন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন বা সুইডেনের মত প্রাথমিক শিক্ষায় পৃথিবীতে সেরা হতে পারব। প্রাথমিক শিক্ষার ডাইরি শিরোনামে এখন থেকে আমি আমার নিত্যদিনের প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা এ কলামে লিখে যাব। প্রথম পর্বটি শুরু করলাম শিশু বান্ধব স্কুল নিয়ে।
চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্কুল বা শিশু বান্ধব স্কুল কী?
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী পিছিয়ে পড়া দেশ বা অঞ্চলগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত পরিবেশ বা শিশুদের উপযোগি পরিবেশে পড়াশোনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও পার্বত্য এলাকা, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার উপজেলাগুলোতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে অর্থ সহায়তা দিয়ে নিন্মোক্ত ৫ টি ক্ষেত্রের উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যথা-
১. প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের অবাধ ও সহজ অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: অর্থাৎ শিশুরা স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে ভর্তি হবে এবং নিয়মিত গমনাগমন করকেব। একাজটি অর্থাৎ বিদ্যালয় এলাকার শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি ও তাদের নিয়মিত বিদ্যালয় গমনাগমন নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিনা খরচে ভর্তি, বইপ্রাপ্তি এবং পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করেছে। সরকার উপবৃত্তি প্রদান, মিডডে মিল প্রদানসহ আরও বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি ইউনিসেফও এক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ অবাধ ও নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা করেছে।
২. শিশুদের জন্য নিরাপদ ও প্রতিবন্ধকতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ: সরকারিভাবে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ভবণ, শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ, ক্রীড়াও সাংস্কৃতিক সরঞ্জমাদি সরবরাহ, সহায়ক পাঠ সামগ্রী প্রভৃতি প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে ইউনিসেফ মেয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, পানীয় জল সরবরাহ, শৌচাগার, বাগান করা, শিশু খেলনা সামগ্রী প্রদান, শিশু পার্ক গড়ে তোলার জন্য তহবিল দিচ্ছে।
৩. কার্যকর শিখণ-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থাকরণ: সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগদান করেছে, শ্রেণিকক্ষকগুলোতে শিশুদের উপযোগি আসবাবপত্র সরকরাহ করেছে এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার কওের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থাও শিক্ষা উপকরণসহ বিবিধ সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য এক্ষেত্রে সহায়তা করে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন সকল শিশুর মানসম্মত শিখণ-শেখানো নিশ্চিত করা।
৪. স্কুলে সুশাসন নিশ্চিতকরণ: প্রতিটি স্কুলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করা এবং বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত সকল জনগোষ্ঠী এখন থেকে বিদ্যালয় পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবেন এটাই কাম্য।
৫. জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ: স্কুলগুলো সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজে বসবাসরত মানুষরাই স্কুলগুলোকে সফল করতে পারেন। তাদের বিচ্ছিন্ন বা দূরে রাখা হলে স্কুলগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না, এটা প্রমাণিত। সবার অংশগ্রহণ যত বেশি হবে সে স্কুল তত বেশি সফল হবে। এ ধারণাই সরকার এবং ইউনিসেফসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসি সবার অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত প্রয়াসেই একটি স্কুল ভালভাবে চলে।

আসুন আমরা সবাই মিলে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক একটি সফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রয়াস নিই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন