ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা:
জীবন্ত এক
কিংবদন্তী-পরিবার কর্তা ও সফল মানুষ
তিনি চকরিয়ার কৃতি সন্তান। তিনি যা পেরেছেন, এ ধরাধামে খুব কম মানুষই তা পেরেছেন। পাকিস্তানের পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধ হতে ষাট,
সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত সক্রিয় জীবন-যাপন করেছেন। অত:পর তিনি ২০০৩ সালের শেষের দিকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ হিসেবে পায়ে ঘা হওয়ায়, একটি পা (ডান পা) হারালেন। সেসময় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসকগণ অনেক চেষ্টা করেন পা‘টা না কেটে উন্নত চিকৎসা দিতে, তাঁকে। সে এক পা নিয়েই তিনি এখনও জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত, সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর ২ ছেলে সন্তান এবং একমাত্র কন্যাটিও। তিনি নিজে উন্নত জীবনের সোপান ধরে এগিয়েছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি পিতার রেখে যাওয়া পুরো একটি পরিবারকেও। আবার সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন ও যাবে তাঁর উত্তরসূরিরাও। তাঁর পুরো নাম মো:
জহুরুল মওলা। একজন দ্বীনদার আলেম ও নিষ্ঠাবান-মেধাবী আলেম পিতার সন্তান, তিনি। তাঁর মরহুম পিতাই তাঁকে ৭ম শ্রেণিতে চকরিয়া পাইলট হাইস্কুলে পড়ার সময় চট্টগ্রাম শহরের বিখ্যাত মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনের সিঁড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ছিলেন। তাই তাঁর পিতার রেখে যাওয়া এত বড় একটি জাহাজকে উন্নত জীবনের পানে এগিয়ে নিতে পেরেছেন, তিনি। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এ জীবন্ত কিংবদন্তী তুল্য মানুষটির জীবনী রচনার কাজটি তাঁর জীবদ্দশায়ই আমি লিখতে মনস্থ করেছি। এ ক্ষেত্রে তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যবর্গের অকাতরে সহযোগিতা কামনা করবো। আশাকরি তাঁর সুযোগ্য সন্তানগণ এবং আত্নীয়-পরিবার-পরিজনগণ আমাকে তথ্য দিয়ে, ভুল শুধরে দিয়ে সাহায্য করবেন। আমি তাঁর ভাগনী জামাই এবং স্নেহধন্য ক্ষুদ্র একজন মানুষ হিসাবে এ প্রয়াসটি শুরু করবো,
নিজে যতটা জানি তাঁর সম্পর্কে তাই দিয়ে। প্রথমেই তাঁর মরহুম পিতা মাওলানা আব্দুল খালেকের পরিচয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি। মুফতি মরহুম খালেক ১৯০৭ সালে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভা এলাকার ভরামুহুরী গ্রামে মুসলিম সম্ভ্রান্ত এক আলেম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন নাম করা আলেম। তার পিতার নাম ছিল,
মাওলানা আশরাফ আলী। মাওলানা খালেক ১৯৩১ সালে চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা হতে ফাজিল পাশ করেন। ফাজিল পাশ করেই তিনি,
প্রথমে গর্জনিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। অত:পর ১৯৩২ সাল হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত একটানা ২৯ বছর তিনি চকরিয়ার সাহারবিল আনোয়ারুর উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পরে, মওহুম মাওলানা খালেক ১৯৬০ সাল হতে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কাকারা তাজুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষ তিনি,
১৯৬২ সাল হতে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩ বছর চট্টগ্রামের হালি শহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন বলে জানা যায়। শিক্ষক হিসাবে তিনি (মুফতি খালেক) ছিলেন, অত্যন্ত সময়নিষ্ঠ ও দক্ষ পাঠদানকারী মাদ্রাসা শিক্ষক। সাহারবিল মাদ্রাসায় দীর্ঘ সময় শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকাকালে তিনি বিনা পয়সায় অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের কুরআন, হাদীছ, ফিকহা শাস্ত্র, আরবী ভাষা ও ব্যাকরণসহ যাবতীয় ইসলামিক নানা জটিল-কঠিন বিষয় সহজ করে বুঝে নিতে সহায়তা করতে পারতেন। তিনি পাঠদান করতেন অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং সহজবোধ্য ভাষায়। তিনি তাঁদেরকে ভালো ভালো আলেম হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করতেন। তাঁর গড়ে তোলা অনেক আলেম-ওলেমা আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। পুরো্ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশ-বিদেশের সর্বত্র তাঁর ছাত্ররা নানা পেশায় যুক্ত থেকে সমাজে ও ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। আর মুফতি খালেক মাদ্রাসায় পাঠ্য তালিকাভুক্ত সব বিষয়ে অত্যন্ত প্রখর জ্ঞান রাখতেন। পরিচিত ছিলেন তিনি মুফতি খালেক হিসাবে। ফিকহা শাস্ত্রের উপর এবং উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন বিষয়ক ফরায়েজের জ্ঞান ও ব্যবহারিরক দিকগুলোর সূক্ষ্নাতিসূক্ষ্ন বিষয়গুলোতে তিন অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি আরবী,
উর্দু, ফার্সি এবং মাতৃভাষা বাংলা ভাষায় সমান পারদর্শি ছিলেন। আর চট্টগ্রাম শহরে পড়াশোনা করা ও চকরিয়া সদরের বাসিন্দা হওয়ায় তিনি আলেম হলেও আধুনিক জীবন বোধ এবং নিজ সন্তানদেরকে আধুনিক ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করান। আবার তিনি তাঁর দ্বিতীয় সন্তানকেও ভালো কুরআনে হাফেজ ও আলেম হিসাবে গড়ে তুলেন। ১৯৬৫ সালে ২৩ মার্চ খ্রি: তারিখে, এ মহান আলেম ও জ্ঞান সাধক ইন্তেকাল করেন। মরহুম মাদ্রাসা শিক্ষক এবং মুফতি খালেকের জ্যেষ্ঠ সন্তান হলেন; আজকের বয়োবৃদ্ধ আলহাজ্ব জহুরুল মওলা। বাবার রেখে যাওয়া ছোট ছোট ভাই-বোনদের সবাইকে তিনি মানুষের মতো মানুষ করেন। মরহুম খালেকের ৫ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তান। তাঁর বাবা যখন (১৯৬৫ সালে) মারা যান জনাব জহুরুল মওলাই তখন একমাত্র পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বা আয়-ইনকামের উৎস ছিলেন, পরিবারে। সীমিত পারিবারিক সম্পদ এবং তাঁর চাকুরির বেতন-ভাতার টাকা দিয়ে তিনি বাবার পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর সকল ভাই-বোন এবং পরবর্তী প্রজন্ম যথেষ্ট মেধাবী ও প্রতিভাবান। তাঁর মরহুম আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষক পিতার পরিবারকে একবারে সাধারণ থেকে অসাধারণ ও সুপ্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন, তিনি আজ সমগ্র দেশে। তাঁর প্রতিভা ও দূরদর্শিতা সত্যিই অতুলনীয়। আমি নিজেও তাঁর মত একজন সুযোগ্য মেন্টরের মেন্টরিংয়ে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। মরহুম মুফতী আব্দুল খালেকের সহধর্মীনী মরহুম আলহাজ্ব মাজেদা বেগম। আর তাঁদের সন্তানগণ হলেন;
(১) জনাব আলহাজ্ব জহুরুল মওলা,
(২) জনাব আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুখতার আহমদ,
(৩) মরহুম মো:
এনামূল হক, (৪)
জনাব আলহাজ্ব শামীম জান্নাত, (৫)
জনাব আলহাজ্ব সালেহা বেগম, (৬)
জনাব ডা: ছরওয়ার আলম বাহাদুর এবং (৭)
শহীদ লে: কর্নেল আবু মুসা মো: আইয়ুব কাইসার। তাঁদের মা মরহুম আলহাজ্ব মাজেদা বেগম ছিলেন, অত্যন্ত বিদূষী, প্রাজ্ঞ এবং তাপসী রমণী। মরহুম মুফতি আব্দুল খালেক ও তাঁর সহধর্মীনী মরহুম মাজেদা বেগম পরম মায়া-মমতা-স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত করে করে বড় করছিলেন, তাঁদের ৭ সন্তানকে। কিন্তু ১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন, মাওলানা আব্দুল খালেক। অবশেষে তিনি ১৯৬৫ সালে পরলোক গমন করেন। ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলার বাবার পরিবার গঠনের সংগ্রাম। তিনি মা মাজেদা বেগম এবং তাঁর মরহুম পিতা মুফতি আব্দুল খালেকের অশেষ আশীর্বাদপ্রাপ্ত এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অপরিসীম রহমত-বরকতে ধন্য হয়ে বড় ছেলে সন্তান হিসাবে একে একে সকল ভাই-বোনকে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে সর্বাত্নক ভূমিকা পালন করেন এবং অনন্য অবদান রাখেন। তাঁর অবদান পরিবারের সকল সদস্যগণের মধ্যে কেহ অস্বীকার করেন না। আর তিনিও বাবা-মায়ের সন্তানগণের জন্য যা করেছেন সারাজীবন, তার জন্য অত্যন্ত পরিতৃপ্ত। আবার এ নিয়ে তাঁর মধ্যে কিছুটা আত্নস্লাঘাও আছে। যাহোক, সপ্তম শ্রেণি হতেই তাঁর বাবা-মা,
চট্টগ্রাম শহরের নামকরা মুসলি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে জনাব জহুরুল মওলাকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়ে উন্নত জীবনের সোপানে উঠিয়ে দেন। মুসলিম হাই স্কুল হতে এবজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করে এবং বিখ্যাত চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করেন, তিনি। উভয় পরীক্ষায় তিনি ভাল ফলাফল করেন এবং বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় স্থান পান। নানা সীমাবদ্ধতায় তাঁর বুয়েটে পড়াশোনা করা সম্ভব না হওয়ায়, জনাব জহুরুল মওলা চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজে সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি পড়াশোনা চালানো এবং পরিবারের খরচাদি যোগানোর কাজটি ছাত্রাবস্থায়ই করতে বাধ্য হন। চট্টগ্রাম শহরে থেকে তিনি পড়াশোনা করা ও পরিবার চালাতে গিয়ে খন্ডডকালিন অনেক কাজ করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি একজন প্রকৌশলী হিসাবে চট্টগ্রাম ড্রাইডক ইয়ার্ডে সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। অত:পর তিনি গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীতে চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি, তিনি সুইজারল্যান্ড এবং তৎকালীন পশ্চিম জার্মানীতে উচ্চতর পড়াশোনা করেন। আবার সাধারণ শিক্ষা ধারায় সিএসপি/বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহনের নিমিত্ত তিনি স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম উন্নত দেশ ইরাক চলে যান। সে দেশে তিনি সপরিবারে বেশ কিছুদিন ছিলেন। এসময় বেশ অর্থকড়ি উপার্জন করেন, জনাব জহুরুল মওলা। ছোট ভাই-বোন সবাইকে তিনি ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করান। তাঁর পিঠাপিঠি ছোট ভাই জনাব হাফেজ মাওলানা মুখতার আহমদ কুরআনে হাফেজ ও চট্টগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসা হতে কামিল পাশ এবং সাধারণ শিক্ষা ধারায় স্নাতক পাশ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট এলাকার বহদ্দার মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। তাঁর তৃতীয় ভাই মরহুম মো: মরহুম মো: এনামুল হক ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কমার্স গ্রাজুয়েট ছিলেন। তিনি (মরহুম এনামুর হক)
প্রথম জীবনে ব্যাংকার ছিলেন। পরে তিনি চকরিয়া থানা রাস্তার মাথায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০১৯ সালে তিনি পরলোক গমন করেন। মরহুম খালেক দম্পতির চতুর্থ সন্তান মেয়ে ও তাঁর নাম আলহাজ্ব শামীম জান্নাত। তাঁকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল সাহারবিল আব্দুল সিকদারের ছোট ছেলে মরহুম মাস্টার মো:
আজিজুর রহমানের সাথে। তাঁর জীবনসঙ্গী আলহাজ্ব আজিজুর রহমান ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে পরলোক গমন করেন। তিনি তাঁর ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখেই আছেন। তাঁর পরের জনও বাবা-মায়ের সন্তানদের মধ্যে (পঞ্চম সন্তান) মেয়ে। তাঁর নাম আলহাজ্ব সালেহা বেগম। সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক ব্যাংকার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব নুরুল ইসলাম জনাব সালেহা বেগমের জীবনসঙ্গী। তাঁদের (সালেহা দম্পতির) ৪ সন্তান। আরা তারা সবাই আজ দেশ-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। মরহুম মুফতি খালেক ও মরহুম মাজেদা বেগম দম্পতির ষষ্ঠ সন্তান জনাব ছরওয়ার আলম। তিনি বুলগেরিয়া সোফিয়া মেডিকেল একাডেমী হতে পাশ করা একজন চিকিৎসক। আর জনাব জহুরুল মওলারদের সবচেয়ে আদরের ছোট ভাইটি ছিলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডে নিহত শহীদ লে:
কর্নেল আবু মুসা মো: আইয়ুব কাইসার। জনাব জহুরুল মওলা মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়ে তাঁর ছোট ৬ ভাই-বোনকে গড়ে তুলে ছিলেন নিজের মত করে। তাঁরা সবাই স্ব স্ব মহিমায় মহিমান্বিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা তাঁর ছোট দুই ভাইকে পড়াশোনা করান অত্যাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত এ প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা তাঁর দুভাই হলেন যথাক্রমে জনাব ডা: ছরওয়ার আলম বাহাদুর এবং মরহুম আবু মুসা মো: আইয়ুব কাইসার। দুজনে খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। একজন হন ডাক্তার ও অপরজন সেনাবাহিনীর ইন্জিনিয়ারিং কোরের সিভিল ইন্জিনিয়ার ও লে:
কর্নেল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাঁদের সবার ছোট ভাইটি ২০০৯ সালের ২৫মে ফেব্রুয়ারি খ্রি: তারিখে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যাকান্ডে নিষ্ঠুরভাবে শহীদ হন। বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া জনাব জহুরুল মওলার স্মৃতিতে তাঁর মায়ের সান্নিধ্য-স্নেহমায়া-মমতায় ভরা আশীর্বাদ এবং ছোট ভাই-বোনদের বড় হয়ে উঠা, পড়াশোনা করা, জীবন-যাপন এবং বিশেষত: পরলোকগত দুই ভাই (মরহুম এনামুল হক এবং শহীদ কাইসার) আজ দীদিপ্যমান। তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ন। নিত্যই তিনি কুরআন-হাদীছ চর্চা করেন এবং সংবাদপত্র পড়েন ও তাঁর উত্তরসূরিদের সন্তান, নাতি-পুতিদের নিয়ে হেসে-খেলে দিনাতিপাত করছেন তিনি এখন ভরামুহুরিস্থ নিজ বাস ভবনে। পারিবারিক সম্পদের উপর তিনি চকরিয়া থানার মুখ এলাকায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। আর সে মসজিদের সন্মুখ ভাগে তাঁর মরহম বাবা-মা এবং দুভাই এনাম ও কাইসার শায়িত আছেন। সে কবরে শায়িত আছেন তাঁর মরহুম দাদা মাওলানা আশরাফ আলী ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষগণ। জনাব জহুরুল মওলা আবার শুধু নিজ পরিবার বা ভাই-বোনদেরকে শুধু আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেন নি,
তিনি অনেককে জীবনসঙ্গীনী খুঁজে দিয়ে উন্নত পারিবারিক জীবনের সূচনা ঘটিয়েও দিয়েছেন তাঁর ক্ষুদ্র জীবনে। তাঁর পড়াশোনা, চিন্তা-ভাবনা এবং সামাজিক-পারিবারিক সুহৃদ-বন্ধু-বান্ধব-সহচরগণের মধ্যে দেশ-বিদেশের অনেকেই আছেন,
অনেক বড় মাপের মানুষ। তিনি তাঁর জীবনসঙ্গীনী হিসাবে বেঁচে নেন চকরিয়া-বাঁশখালীর মনু মিজ্জি এবং মকছুদ মিয়া পরিবারের সদস্য মরহুম সুলতান মিয়ার দ্বিতীয় কন্যা উম্মে হাবিবাকে। পরিবারিক জীবনে তিনি অত্যন্ত সুখি বলা যায়। তাঁদের ২ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তান। দুই ছেলে পড়াশোনা শেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরে চাকরি করছে ও বিবাহিত। আর তাঁদের একমাত্র সন্তান সবনম সায়েমা তুহিন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশো করে বিবাহিত। তাঁর জীবনসঙ্গী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা ও লে: কর্নেল পদ মর্যাদার। তাঁর নাম আসিফ ইকবাল। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির গর্বিত সন্তান। জনাব আসিফ ইকবাল কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে ২৪ বেঙ্গলের সি.ও এবং সপরিবারে তথায় বসবাস করেন।
শৈশব, কৈশোর ও যৌবনে জহুরুল মওলা: আলহাজ্ব জহুরুল মওলার শিশু বয়স কেটেছে, একান্ত মা-বাবা ও আত্নীয়-স্বজনের স্নেহ-মায়া-মমতায় ভরা পারিবারিক পরিবেশে, চকরিয়া সদরের ভরামুহুরী গ্রামের বাড়িতে। তাঁদের বাড়ির অনতি দুরেই ছিল তাঁর নানাবাড়ির আত্নীয়-স্বজন, (হাজিয়ান, মাস্টারপাড়ার ও লামার চিরিংগায়)। মামা-খালা,
মামাত ভাই-বোন, জ্যেঠতত ভাই-বোন,
ফুফাত ভাই-বোন সবার আদরের ও প্রিয় ছিলেন, তিনি। তাঁর একমাত্র জেটো মরহুম মাওলানা ও মাস্টার নূর হোসাইন। তিনিও তাঁকে বিশেষ সেন্হ করতেন। তাঁর সন্তানরাও সবাই মেধাবী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। আর ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা
সাহেবের মা তো ছিলেন, খুব মায়াবী ও স্নেহময়ী। তাঁদের মা আমার নানী শ্বাশুড়ি, য়ার স্নেহ-মায়া-মমতার পরশ আমাকেও খুব মোহিত করেছে, মুগ্ধ করেছে। তিনি যতদিন বেঁচেছিরেন তাঁর অকাতরে দোয়া ও স্নেহ আমি পেয়েছি। জহুরুল মওলা সাহেব এমন এক মায়ের ও আত্নীয় পরিমন্ডলে স্নেহের ছায়ায় বড় হতে থাকেন। সময় হয়ে যায়, তাঁর পাঠশালা বা স্কুলে যাওয়ার। তাঁর মাদ্রাসা শিক্ষক পিতা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন,
নিকটস্থ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শৈশব হতেই তিনি পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। সাধারণত: থানা সদর এলাকার বা স্টেশন এলাকার শিশুরা দূরন্ত হয়,
দুষ্ঠু হয় ও পড়াশোনায় অমনোযোগি হয়। কিন্তু শিক্ষক বাবার কঠোর শাসন জনাব জহুরুল মওলাকে সেসব দুষ্ঠু প্রকৃতির শিশুদের মিছিলে যোগ দিতে দেয় নি। সে সময়কার একটি ঘটনা আমি জেনেছি। আর তা হলো; দুস্টুমী করা বা পড়তে না বসায় তাকে তাঁর বাবা প্রহার করেন, একদিন। তিনি নাকি মায়ের কাছে তা বলতে বলতে কান্না করছিলেন। সেটা দেখে তাঁর মা তাকে কোন রকম প্রশ্রয় না দিয়ে তার মুখে আগুনের শিখা লাগিয়ে দিয়ে ভয় দেখান, যাতে বাবার বিরুদ্ধেকোন অজুহাত না দেখায় এবং পড়াশোনায় অমনোযোগি না হন। এভাবে জনাব জহুরুল মওলা ষষ্ট শ্রেণি পযন্ত কঠোর শাসন ও মায়া-মমতায় ভরা একটি পরিবেশে বড় হতে হতে চকরিয়া পাইলট হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পর তাঁর বাবা সিদ্ধান্ত নেন,
তাঁকে চট্টগ্রাম শহরের বিখ্যাত মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন। সেভাবে তাঁকে সে বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। তাঁকে তাঁর বাবা যখন চট্টগ্রাম শহরে পড়তে পাঠাতে যাচ্ছিলেন, সে সময়কার জনৈক ইলিশিয়া জমিদার পরিবারের জমিদার সদস্য নাকি মরহুম মুফতি খালেককে নাকি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলভীর সন্তান চট্টগ্রাম শহরে পড়াশোর খরচ যোগাবেন কী করে? কথাটা তিনি বলেছিলেন, অনেকটা শ্লেষ করে যে, সীমিত আয়ের মানুষের সন্তান কী করে শহরে পড়তে যাবে’। একথাটা মাওলানা খালেককে খুব কষ্ট দিয়েছিল। আর তাই তিনি তা শুনে মনোকষ্ট পেয়ে কান্না করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে জমিদারের স্লিজিংয়ে সেদিন মুফতি খালেক তাঁর বড় সন্তান আজকের ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলাকে শহরে পড়তে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। তিনি তাঁকে শহরে পড়িয়েই ছেড়েছিলেন। এখানে স্মর্তব্য যে, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ জহির রায়হান ও শহীদুল্লাহ কায়সারগণের কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার প্রখ্যাত আলেম ও শিক্ষক। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ রেহেমান সোবহানের দাদাও ছিলেন কলকাতা মাদ্রাসার শিক্ষক। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাবাও ছিলেন, ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার নাম করা শিক্ষক। বরইতলী খতিবে আজমের ছেলে কাইসারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে জজ হয়েছেন। আধুনিক মনস্ক আলেমগণ এভাবে তাঁদের সন্তানদেরকে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করিয়ে বড় হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার এমন নজির আমাদের এলাকায় চুনতিসহ অনেক আছে। আর জমিদার শ্রেণির মানুষেরা সেকালে মনে করতেন এ দুনিয়াটি তাদেরই দখলে। পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবারের কথা এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। বাঙালি ঘরের সন্তানেরা মধ্যবিত্তই হোক, আর নিম্ন মধ্যবিত্তই হোক অথবা হোক না মৌলভী-মিয়াজি পরিবারের সন্তান, জমিদারি মানস ভেঙ্গে-চুরে দিয়ে তারাই আজ দেশ-সমাজ শাসন করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অতি সাধারণ ঘরের মেধাবী সন্তানরাই বেশিরভাগ বড় বড় পদে সমাসীন হচ্ছেন। বৃটিশ-পাক আভিজাত্যকে পেছনে ঠেলে দিয়ে আজ আমলা-জজ-ব্যারিস্টার হতে পারছেন, সে সব সাধারণ বাঙালি সন্তানরাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন সমাজ ও রাস্ট্রেরই স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর আজীবনের সংগ্রামে-আন্দোলনে, দাবি-দাওয়ায় এমন দর্শনই প্রকাশিত হচ্ছে আজ। তিনি যেমন ছিলেন, আদালতের একজন সাধারণ সেরেস্তাদের সন্তান, তাই তিনিও চাইতেন তেমনি বাংলার কৃষক ঘরের সন্তানরাই হবে সোনার বাংলার সোনার মানুষ। দেখতে পাচ্ছি আজ তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কাজের বুয়ার ছেলেরা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পান দোকানির মেয়ে ম্যাজিস্টেট হচ্ছে, সাধারণ পরিবারের সন্তানরা জজ হচ্ছে। মুফতি খালেকের সন্তান লে:
কর্নেল হয়েছেন, ইন্জিনিয়ার-ডাক্তার হয়েছেন। পাক শাসনে কী এসব কল্পনাও করা গেছে? না মাওলানা খালেক ক্ষুদ্র মানুষ মাদাসা শিক্ষক মৌলভী হয়ে সে স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে জহুরুল মওলাকে ৭ম শ্রেণিতেই চট্টগ্রাম শহরে মুসলিম হাইস্কুলে পাঠিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নই আজকের জহুরুল মওলা, শহীদ লে: কর্নেল কাইসার প্রমুখকে সৃস্টি করেছে। আর মিয়া-জমিদার পরিবারকে চোখে দেখা যায় না বা খুঁজেই পাওয়া দুস্কর।
পড়াশোনা: চকরিয়া উপজেলাস্থ সদর এলাকার ভরামুহুরী গ্রামে তাঁর পরিবার বসাবাস করেন বিধায় তিনি নিকটস্থ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা করেন। ৬ষ্ট শ্রেনি পড়েন তিনি চকরিয়া পাইলট হাই স্কুল। সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পর তাঁকে চট্টগ্রাম শহরের মুসলিম হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। মেুসলিম হাইস্কুল হতে তিনি এসএসসি পাম করেন। আর চট্টগ্রাম কলেজ হতে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজ হতে সিভিল ইন্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে জনাব জহুরুল মওলা তৎকালিন পশ্চিম জার্মান এবং সুইজারল্যান্ডে উচ্চতর পড়াশোনা করেন। এইচএসসি পাশ করার পর বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মেধা তালিকায় স্থান পেলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি সেসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন নি। কিন্তু তাঁর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন এবং পড়াশোনা করার নেশা বা আকাংখা সব সময় ছিল। তাই তিনি বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য আবেদন করতেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি চাকরিরত অবস্থায় জার্মান ও সুইজারল্যান্ডে কোর্স করেন। তাঁর উচ্চত পড়াশোনার অন্বেষা এবং অধ্যয়ন-চর্চা এখনও তাঁর মধ্যে আছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তিনি আগের মত শারীরিকভাবে অতটা সবল নন। পারিবারিক বিরোধ মেটানো ও কোর্ট-কাচারি করতে গিয়ে তিনি ক্লানিত দিনাতিপাত করছেন।
কর্মজীবনে জনাব জহুরুল মওলা: তাঁর জীবন যুদ্ধ এবং পরিবার রক্ষা ও সবাইকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম তাঁকে শুরু করতে হয়েছিল সেই যৌবনে পা দেয়ার আগেই, ছাত্রাবস্থা হতে। খন্ডকালিন বিবিধ কাজ করতে হয়েছে, তাঁকে। এক পর্যায়ে তাঁকে চাকরি করতে হয়েছে আন্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া নামক চট্টগ্রাম শহর কেন্দ্রিক সুন্নি আলেমগণ এবং তাঁদের পীর ছিরোকোটির পৃষ্ঠপোষণে নিয়োজিত সংগঠনের পরিচালকের আফিসে। পরে তিনি একজন প্রকৗশলী হিসাবে চট্টগ্রাম ড্রাইডক ইয়ার্ডে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। অত:পর তিনি গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীতে চাকরি করেন। পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য ইরাক চলে যান। সেদেশে তিনি পরিবারসহ বসাবাস করেন। ১৯৯০ সালে ইরাক-কুয়েত যদ্ধ শুরু হলে তিনি দেমে ফিরে আসেন। তিনি দেশে অবস্থান করে পারিবারিক-সামাজিক-আত্নীয় পরিমন্ডলে থেকে জীবন-যাপন করছেন।
পরিবার ও পরিবারের দায়িত্ব পালন: বাবা-মা‘ই সাধারণত: নিজ সন্তানদেরকে মানুষ করা বা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সবকিছু করে থাকেন। আবার পরিবারের বড় ছেলে বা বড়রাই ছোটদেরকে দেখাশোনা করেন। জনাব জহুরুল মওলা বাবার শূন্যতা অনেকটা পূরণ করে করেই পরিবারের সকল সদস্যকে এগিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পরিবার-পরিজন লালন-পালন এবং ছোট ভাই-বোন-আত্নীয়-স্বজনদের দায়-দায়িত্ব পালন বিষয়ে কুরআন-হাদীছের আলোকে এবং মনীষীগণের ভাবনা এখানে আলোকপাত করতে চাই। পিতা মাতা পরিবার: ইসলাম মানব সমাজের ইহকাল ও পরকালের সফলতা এবং উন্নতির পথ দেখিয়ে দিয়েছে। আর ইসলাম হচ্ছে দায়িত্ব পালনের নাম,
অর্থাৎ যার যার অধিকার তাকে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়াই হলো একজন মুসলিমের কাজ। এই অধিকার দুই ধরনের—এক. আল্লাহর হক বা অধিকার, দ্বিতীয় হলো বান্দার হক। এই দুটি হক বা অধিকার সঠিকভাবে তার প্রাপককে পৌঁছে দেওয়াই হলো ইসলাম ও শরিয়ত। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও তাদের দেখভাল করা আল্লাহ তাআলার একটি বিধান এবং কোরআন-হাদিসে এটার উপর অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। এমন কয়েকটি কুরআনের আয়াত ও হাদিসে এখানে উদ্ধৃত করছি;
১. ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার অসিলা দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে
আত্মীয়তার অধিকার প্রার্থনা করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১)
২. ‘আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অন্যের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর
কিতাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৭৫)
৩. ‘হে ইমানদার গন তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবারবর্গকে দোজকের আগুন থেকে বাচাও’- আল কুরআন
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার রিজিকের প্রশস্ততা ও হায়াত বৃদ্ধি চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। - (বুখারি : হাদিস ২০৬৭)
৫. মাতা পিতাকে কষ্ট দিবে না। তারা যদি তোমাকে তোমার সন্তান সন্ততি ও বিষয় সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় তবুও। - আল হাদিস
৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি : হাদিস ৫৯৮৪)
পরিবার-পরিজনের ব্যয় নির্বাহের ফজিলত: নিজের
ও পরিবারের ভরণ-পোষণ ও
খরচ বহনের বিষয়টি আমাদের কাছে শুধু একটি পার্থিব বিষয় মনে হলেও ,এটি একটি ধর্মীয়
দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআন ও হাদিসে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে এ বিষয়টিকে কোনো অংশে কম
গুরুত্ব দেয়া হয় নি। নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করাও একজন
মুসলিমের উপর ফরজ দায়িত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হালাল রিজিকের
সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম একটি ফরজ’ (আল মুজামুল
কাবির, হাদিস
নং- ৯৯৯৩)। অন্য এক
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের
সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি,
যা সে তার পরিবারের জন্য ব্যয় করে।’ (মুসলিম : হাদিস নং-৯৯৪) অপর একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি
তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে
সদকার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি
: হাদিস নং-৪০০৬)
কবি-সাহিত্যিক
ও মনীষীগণের মতামত:
২. একটি কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়, তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও বংশ দগ্ধ হয়- চাণক্য
৩. একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়, তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়-
চাণক্য
৪. একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুণী পুত্র বরং ভাল। একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না।- চাণক্য
১৯৬৫ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর হতেই জনাব আলহাজ্ব জহুরুল মওলা অনেকটা ছোট ভাই-বোনকে পড়াশোনা করানো ও পরিবার গঠনের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তিনি যখন যেভাবে পারেন, তাঁর মায়ের পূর্ণ আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব পালন করেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গী হয়ে ক্রমান্বয়ে তাঁর ছোটজনরাও পরিবারের বিকাশে যথেষ্ট বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলার মূখ্য ও সামনে থেকে নেতৃত্বদান করার ফলেই মুফতি খালেক পরিবার তথা তাঁর সন্তান-সন্ততিগণ আজ সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন