বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির
ত্রাণকর্তা ও বাংলদেশের স্থপতি*
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়fলা প্রত্যেক
জাতির জন্য মহান সব দূত, ত্রাণকর্তা ও অগ্র-পথিক পাঠিয়েছিলেন, যুগে যুগে। এ কথা পবিত্র
কুরআনে বর্ণিত আছে। (“লি-কুল্লে কউমিন হাদ-আল কুরআন।”)। মানবাতার মুক্তি, হেদায়ত, সঠিক
পথের দিশা দান, ন্যায়ের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি, মহান আল্লাহ তায়ালার
একত্ত্ববাদকে ধারণ করার জন্য মহান সব ব্যক্তিত্ত্বকে এ ধরাধামে ভিন্ন ভিন্ন পদমর্যাদায়
সমাসীন করে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা কেহ নবী, কেহ রাসূল, কেহ পয়গাম্বর, কেহ সুশাসক, কেহ
সমরবিদ, কেহ বুদ্ধিজীবী ও কেহ আধ্যাত্নিক সাধক ছিলেন, কেহ ছিলেন বীর পুরুষ, ন্যায়-পরায়ন
শাসক প্রমুখ। মহানবীর (দ:) হাদীছ অনুযায়ী পৃথিবীতে আগমনকারী এমন মানুষের সংখ্যা ১লক্ষ
২৪ হাজার, মতান্তরে বেশি বা কম ছিরেন। আর পবিত্র
কুরআনে ২৫ জন সুনির্দিষ্ট নবী-রাসূলের কথা বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত সোলায়মান
(আ:) ও হযরত লোকমানকে (আ:) পাঠিয়েছিলেন দু‘জন বুদ্ধিজীবী হিসেবে। তিনি (আল্লাহ তায়ালা)
জুলকরনাইনকে পাঠিয়েছিলেন; একজন শক্তিশালী মানুষ, সমরবিদ, ন্যায়পরায়ণ এবং সুশাসক হিসেবে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (দ:) আল্লাহ তায়ালা সব ধরণের আধ্যাত্নিক, মানবিক ও অলৌকিক গুণাবলিতে
সমৃদ্ধ করে পাঠান, এ পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ।(“ওমা আরসলনাকা ইল্লা রাহমতুল-লিল-আ‘লামীন”-আল
কুরআন।) আল্লাহ তায়লা কুরআন শরীফে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ:)-এর পরিচিতি তুলে ধরেছেন
এভাবে যে, “মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বা দূত। তিনি প্রতিপক্ষের (আল্লাহ কায়ালাকে
অস্বীকারকারীগণের) প্রতি সীসাঢালা প্রচীরের মত অটল থাকেন। আবার তিনি সঙ্গী-সাথী বা
সাহাবীগণের প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ। তাঁকে তোমরা রুকু-সেজদা আদায় করতে দেখবে, আর তাঁকে
দেখতে পাবে, আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের অন্বেষায় সদা মত্ত।’ যাহোক, আমার এ নিবন্ধটি
যদিও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মহান সব ব্যক্তিত্ত্বের কথা উল্লেখ করে আরম্ভ করলাম, আমি
আসলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই। এক্ষেত্রে
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এবং পবিত্র কুরআন -হাদিছের কিছু উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হবে। এতে কোন
ভু-ক্রটি হয়ে থাকলে পাঠক মহল হতে মতামত পেলে শুধরে নেবো। আর মহান রাব্বুল ইজ্জতের নিকট
হতে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিশ্ববিখ্যাত ও জনপ্রিয়
সংবাদ সংস্থা বিবিসি কতৃক ২০০২ সালে পরিচালিত এক জরিপে বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ
বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান ক্ষণজন্মা বাঙালি জাতিকে একটি
স্বাধীন দেশ ও
একটি পতাকা উপহার
দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি তাই তাঁকে
নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে দেশবাসীর অবশ্যই
তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা উচিত। সাধারণ
পরিবারে জন্মগ্রহণ করে
অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন, তিনি। মহান আল্লাহ্ তায়ালা সূরা
ইনশিরাহ-তে মহানবীকে (দ:) সাধারণ এতিম অবস্থা হতে নবীগণের সর্দার বানিয়ে দেয়ার কথা
স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁকে। মহানবী (দ:) যখন প্রতিপক্ষের বা কাফির-মুনাফিকদের
অপপ্রচারকে মোকাবেলা করতে গিয়ে একটি পর্যায়ে কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন, তখন তাঁকে
আল্লাহ্ তায়ালা প্রশ্নাকারে বলেন; “আলম নশরাহ লকা, ছদরাক? ওয়া-দুয়ানা আনকা বিজরক।
ও-রফানা লকা জিকরক। অর্থাৎ আমি কী আপনার বক্ষদেশকে আপনার কল্যাণে প্রশস্ত করে দিই নি? আমি লাগব করে দিয়েছি আপনার উপর
অর্পিত দায়িত্ব ভার, যা ছিল আপনার জন্য খুবই কষ্টদায়ক। আর আমি আপনার নাম বা
সুখ্যাতি সারা মানব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি।”
বঙ্গবন্ধুকেও বাঙালি জাতির মুক্তি কামনা করতে গিয়ে জীবনের বেশির ভাগ সময়
কারাভোগ, নিত্যই নির্যাতন-নিপীড়ন, অত্যাচার-অনাচার সহ্য করতে করতে প্রাণ পর্যন্ত
বিসর্ন দিতে হলো। তাঁর কথা সারা পৃথিবীর মানুষ
আজ পদে পদে স্মরণ করছে। দেশবাসী
তথা পুরো বাঙালি জাতি তাঁকে
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জানে ও মেনে নিয়েছে। পৃথিবীর বড়
বড় নেতারা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ও করছেন। কিউবার
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ফিদেল
ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বলেছেন,
‘আমি হিমালয় দেখি নি, শেখ
মুজিবকে দেখেছি।’ এমনিভাবে আরও
অনেক দেশী-বিদেশী
রাষ্ট্র নায়ক এবং খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিক ও
গুণীজন তাঁকে নিয়ে
বিভিন্ন প্রশংসামূলক মন্তব্য করেছেন ও করছেন।
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে
বলেছেন; “বঙ্গবন্ধু শব্দটি আমি এ অর্থে ব্যবহার করি যে, তিনি একটি প্রতীক ছিলেন
তাও না। তিনি অনেকটা দেখা দিয়েছিলেন, এ এলাকার মানুষের আশা-আকাংখার মনুষ্যমূর্তি
রূপে। তাঁর মধ্যেই মানুষেরা নিজেদের আশামূর্তি দেখতো। তিনি একলা দেশ স্বাধীন করেন
নি, তবে তাঁর অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। একাত্তরের পঁচিশে মার্চের পরে তিনি
বাংলাদেশের এক হাজার মাইলের মধ্যেও ছিলেন না, তবুও সাধারণ ও একেবারে সাধারণ নয়,
এমন মানুষেররা তাঁর কথা ভেবেই অনুপ্রাণিত হতো। যদিও তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত
ছিলেন না, তবু তিনিই সব কিছুর ক্ষেত্রে আছেন বলে মনে করা হতো।” (প্রয়াত অধ্যাপক
হুমায়ূন আজাদের সাথে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি এ মন্তব্য করেন। আর
বর্ষিয়ান বৃটিশ-ভারত সিভিল সার্ভিস কর্কর্তা ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শঙ্কর
রায় বলেছেন-
‘যতকাল রবে
পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা
বহমান
ততকাল রবে
কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।’
জাতিসংঘ
মহাসচিব
উ
থান্ট: ১৯৭১ সালের
২৫শে মার্চ দিবাগত
রাত (২৬ শে
মার্চ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার
খবরটুকু ছাড়া বাঙালি
বা গোটা দুনিয়ার কাছে
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কোন
খবরই ছিল না।
এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়
ছিল ১৯৭১ সালের
অগাস্ট অবধি। দুনিয়ার কূটনীতি, গণমাধ্যম, রাষ্ট্রযন্ত্র কারো
কাছেই কোন খবর
ছিল না- বঙ্গবন্ধু কোথায়?
তিনি কি বেঁচে
আছেন? তিনি কি
কারাগারে? কোথায় সে
কারাগার? তাঁকে কি
মেরে ফেলা হয়েছে?
না! এরকমটা কেউ
ভাবতে চায়নি, কল্পনাও করতে
চায়নি।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময়
জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন
বার্মার কূটনীতিক উ
থান্ট। উ থান্ট
১৯৬১ সাল থেকে
১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের দুই
মেয়াদের মহাসচিব থাকার
পর তৃতীয় মেয়াদে
মহাসচিব হতে অপারগতা প্রকাশ
করেন। তার শরীর
স্বাস্থ্য ভাল যাচ্ছিল না।
শেষতক তিনি ১৯৭৪
সালে ফুসফুসে কর্কট
রোগে আক্রান্ত হয়ে
নিউ ইয়র্কে মারা
যান। উ থান্টের ভাগ্যের সঙ্গে
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্যের কিছুটা
মিল খুঁজে পাওয়া
যায়। ১৯৭৫ এ
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে
সামরিক জান্তার আমলে
ইতিহাসের নায়ক মহানায়কদের তুলে
ধরার পরিবর্তে আড়ালে
রাখার একটা প্রবণতা ছিল। তিনি মনে
করতেন বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখাটা
জরুরি। কেননা বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া
বিবদমান এই যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান
সম্ভব না। মুক্তিযুদ্ধের এই
নয় মাসে তার
নেয়া উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের একটি
ছিল তিনি মালয়েশিয়ার সাবেক
প্রধানমন্ত্রী
টুংকু আবদুর রহমানকে অনুরোধ
করলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের
সঙ্গে এবং ভারতের
প্রধানমন্ত্রী
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে
যোগাযোগ করে বাংলাদেশের বিষয়ে
একটা ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছাতে। এখানে
উল্লেখ্য যে, ইয়াহিয়া খান
এবং এমনকি ইন্দিরা গান্ধীর বাবা
জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে
টুংকুর আন্তরিক ও
বন্ধুত্বপূর্ণ
যোগাযোগ ছিল। টুংকু
তার যথাসাধ্য চেষ্টা
করলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদশে সফরের
উদ্যোগও নিলেন। শেষতক
ভারতের অনাগ্রহে তা
আর হয়ে উঠল
না। পরে তিনি
উ থান্টকে বিস্তারিত জানালেন। টুংকু
রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার বরাবরে
বঙ্গবন্ধুর জীবনের নিরাপত্তার অনুরোধ
জানিয়ে পত্রও লিখেছিলেন। উ
থান্টও রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া মারফত
বঙ্গবন্ধুর জীবনের ব্যাপারে উদ্বেগ
জানিয়ে কয়েকবার পত্র
লিখেন।
ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে মোটামুটি মুখে
কুলুপ এঁটে থাকতেন। কোন
খবরই সংগ্রহ করা
সম্ভব হচ্ছিল না।
এরকম অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর খবর
জানার জন্যে উ
থান্ট দুনিয়ার নানা
ভাষার সংবাদমাধ্যমও ঘাঁটাঘাঁটি করতেন।
এমন অবস্থায় লা
ফিগুরা পত্রিকার সাংবাদিক পিয়েরে
বরিস জেনারেল ইয়াহিয়ার একটি
সাক্ষাৎকার নেন। এটি
১৯৭১ সালের ২সেপ্টেম্বরে নিউ
ইয়র্ক টাইমসে ছাপা
হয়। এই সাক্ষাৎকারের একটা
জায়গায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিছু
প্রশ্ন আর উত্তর
রয়েছে। এই অংশটুকু উ
থান্ট তার স্মৃতিকথা ‘জাতিসংঘের ভাবনা’
(View from the UN) গ্রন্থে ‘বাংলাদেশের জন্ম’
(The Birth of Bangladesh) শীর্ষক প্রবন্ধে তুলে
ধরেছেন:
প্রশ্ন: কিন্তু অতীতে
আপনি শেখ মুজিব
বিষয়ে কথা বলেছেন?
তাঁর কি হয়েছে?
উত্তর: তিনি জেলে।
উত্তর: তিনি জেলে।
প্রশ্ন: কোথায়?
উত্তর: আমার ধারণা নাই। আপনাদের রাষ্ট্রপতি কী জানেন কোথায় দেশের সকল অপরাধীরা?
উত্তর: আমার ধারণা নাই। আপনাদের রাষ্ট্রপতি কী জানেন কোথায় দেশের সকল অপরাধীরা?
প্রশ্ন: কিন্তু তিনি
সর্বতো আপনার প্রধান
শত্রু।
উত্তর: তিনি আমার ব্যক্তিগত শত্রু নন। তিনি পাকিস্তানি জনগণের শত্রু। চিন্তা করবেন না পাকিস্তানের সকলেই জানে তিনি কোথায়। কিন্তু এটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করা অবান্তর। তারা কেউ জবাব দেবে না।
উত্তর: তিনি আমার ব্যক্তিগত শত্রু নন। তিনি পাকিস্তানি জনগণের শত্রু। চিন্তা করবেন না পাকিস্তানের সকলেই জানে তিনি কোথায়। কিন্তু এটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করা অবান্তর। তারা কেউ জবাব দেবে না।
প্রশ্ন: কিন্তু আন্তর্জাতিক জনমত?
উত্তর: আমার নিজের যথেষ্ঠ ন্যায়বোধ আছে। আমি বলেছিলাম যে তিনি জীবিত, আমার কথাটাই বিবেচনায় নিতে হবে। হ্যা, বঙ্গবন্ধু জীবিত ছিলেন। তিনি ফিরে এলেন ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির মহাকাব্যিক নায়ক হয়ে কেবল নয়, সাম্রাজ্য-উত্তর আন্তর্জাতিক ইতিহাসের একজন মুক্তির দূত হিসেবে।উ থান্ট এর উদ্বেগ আর উদ্যোগ দুটোই যথার্থ ছিল বঙ্গবন্ধুর মত একজন নেতার ভাগ্য নিয়ে। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক ইতিহাসে উ থান্ট আর বঙ্গবন্ধু দুজনেই আজ স্মরণীয়। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের এই দিনে তাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে উ থান্টকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। বাস্তবে ওনাদের দু‘জনের দেখা হয়নি। (প্রবাসী লেখক আনিসুর রহমানের লেখা হতে উদ্ধৃত।)
উত্তর: আমার নিজের যথেষ্ঠ ন্যায়বোধ আছে। আমি বলেছিলাম যে তিনি জীবিত, আমার কথাটাই বিবেচনায় নিতে হবে। হ্যা, বঙ্গবন্ধু জীবিত ছিলেন। তিনি ফিরে এলেন ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির মহাকাব্যিক নায়ক হয়ে কেবল নয়, সাম্রাজ্য-উত্তর আন্তর্জাতিক ইতিহাসের একজন মুক্তির দূত হিসেবে।উ থান্ট এর উদ্বেগ আর উদ্যোগ দুটোই যথার্থ ছিল বঙ্গবন্ধুর মত একজন নেতার ভাগ্য নিয়ে। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক ইতিহাসে উ থান্ট আর বঙ্গবন্ধু দুজনেই আজ স্মরণীয়। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের এই দিনে তাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে উ থান্টকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। বাস্তবে ওনাদের দু‘জনের দেখা হয়নি। (প্রবাসী লেখক আনিসুর রহমানের লেখা হতে উদ্ধৃত।)
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিগণ:
১. রাজনীতিবিদ,
স্বাধীনতার
ঘোষক,
রাষ্ট্রপতি
ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান:
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি
ছিলেন একজন তুখুর রাজনীতিবিদ যিনি
পাকিস্তান থেকে সার্বভৌম দেশ
হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য
বাঙালিদের দশকের পর
দশক ধরে চলমান দীর্ঘ সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন
যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১
সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর
দুইবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
হিসেবে এবং একবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেন। সামরিক অভ্যুত্থানে
যার প্রায় পুরো
পরিবারকে হত্যা করা
হয়।
২.নোবেল
পুরস্কার
বিজয়ী
সাহিত্যিক রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর
:
বাঙালি শেক্সপীয়ার হিসেবে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সফল
ও প্রভাবশালী লেখক। এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার
বিজয়ী। ভারত ও
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা।
|
৩.সাহিত্যিক
ও
জাতীয় কবি
কাজী নজরুল ইসলাম :
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জীবনভর সংগ্রামী ও
তেজোদিপ্ত লেখার জন্য
বিখ্যাত। রোমান্টিক এবং
ধর্মীয় (উভয় ইসলামী এবং
হিন্দু) কবিতা এবং
গানের জন্য সমান
জনপ্রিয়। ১৯৭২ সালে
বাংলাদেশের
জাতীয়
কবি স্বীকৃতি পান।
|
৪.রাজনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী
ও
গভর্নর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক:
ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রথমবারের মতো
গণতান্ত্রিকভাবে
বাঙালি জাতির নির্বাচিত নেতা
। দেশ ভাগের
পর, পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ও
গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেন।
৫. রাজনীতিবিদ নেতাজী
সুভাষ চন্দ্র বসু:
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কিংবদন্তী। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার
জন্য নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে
তোলেন। ভারতের স্বাধীনতার জন্য
সমর্থন ও সহায়তা চাইতে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করেন।
|
৬. সমাজ সংস্কারক
বেগম
রোকেয়া:
বাঙালি নারী
জাগরণের অগ্রদূত। ঐসময়ে রক্ষণশীল সামাজিক ব্যবস্থা থাকা
সত্ত্বেও, নিজে থেকেই তিনি
শিক্ষা অর্জন শুরু
করেন এবং পরবর্তীতে একজন
জনপ্রিয় লেখিকা ও
শিক্ষাবিদ হয়ে ওঠেন। শিক্ষা এবং
আত্মনির্ভরশীলতা
অর্জনে তিনি লক্ষ
লক্ষ তরুণী ও
মহিলাদের কাছে প্রেরণার উৎস।
|
৭.
বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু: বিবিসি বাংলা জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০ বাঙালির তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেটি কি মনে আছে সকলের।মনে না থাকলে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিন। রেডিও ও মাইক্রোওয়েভ অপটিক্স গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান। উদ্ভিদ বিজ্ঞানে যুগান্তকারী অবদান রাখেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা।
|
৮.রাজনীতিবিদ
মাওলানা
ভাসানী:
ব্রিটিশ ভারত,
পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সময়কালে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নিপীড়িত জনগণের জন্য
জীবনভোর সংহতি প্রকাশের জন্য
সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
|
৯. ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর:
বাংলা বর্ণমালা এবং
মুদ্রণব্যবস্থা
সংশোধন করেন। বাংলায় হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ সহ
বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারের প্রবর্তন করেন। যার
ফলস্রুতিতে তিনি তার
ছেলেকে বিধবা স্ত্রীর সাথে
বিয়ে দিয়েছিলেন।
|
১০.সমাজ সংস্কারক
রাজা
রাম মোহন রায়:
সতীদাহ প্রথা বিলোপ, বাল্যবিবাহ এবং
সম্পত্তিতে নারীদের উত্তরাধিকারের মতো
সামাজিক সংস্কারের পক্ষাবলম্বন করেন।
১১.বিপ্লবী
শহীদ তিতুমির:
জমিদার এবং
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য
বিখ্যাত। ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লা নির্মাণ ও
ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে
কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন।
|
১২. দার্শনিক
লালন
শাহ:
বাংলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং
ইতিহাসে সর্বাধিক সমাদৃত বাউল
সাধক। তাকে চীনের কনফুসিয়াসের সাথে
তুলনা করা হয়।
ঠাকুর, নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের
মতো বহু খ্যাতনামা সংস্কৃতিবানদের প্রভাবিত করেছেন।
|
১৩.
চলচ্চিত্র নির্মাতা
সত্যজিৎ
রায়:
একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার ভারতীয় দ্বিতীয় অস্কার বিজয়ী। ভারতীয় সিনেমায় নতুন
যুগের প্রবর্তন করেন। আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে সফল
লেখকদের একজন। সংগীত এবং
চিত্রাঙ্কনেও
প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
১৪. অর্থনীতিবিদ
অমর্ত্য
সেন: নোবেল পুরস্কার বিজয়ী
বিশিষ্ট ভারতীয় অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
|
১৫. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
ভাষা
শহীদগণ:
১৯৫২
সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে অন্যতম সরকারি ভাষা
হিসেবে মেনে না
নেয়ার দাবিতে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণমিছিলে গুলি
করে হত্যা করা
হয়। ১৯৯৯ সালে
ইউনেস্কোর ঘোষণার পর
দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন করা
হয়।
১৬. শিক্ষাবিদ
ড.
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ:
বাংলা ভাষার একজন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বহুভাষাবিদ ও
গবেষক ছিলেন।
১৭.ধর্ম প্রচারক
স্বামী বিবেকানন্দ:
|
১৮.
ধর্ম প্রচারক
অতিশ দীপন্কর শ্রী জ্ঞান:
একজন
বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষু। বঙ্গে বৌদ্ধধর্ম
নিয়ে আসেন এবং
তিব্বত থেকে সুমাত্রা পর্যন্ত ধর্মপ্রচারে সাহায্য করেন।
১৯. সামরিক কর্মকর্তা,
রাষ্ট্রপতি
ও মুক্তিযোদ্ধা
জিয়াউর রহমান:
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীরদের মধ্যে অন্যতম। শেখ
মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ
করেন। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি। সার্কের প্রতিষ্ঠাতা। (সূত্র: উকিপিডিয়া)
|
২০.রাজনীতিবিদ
হোসেন
শহীদ সোহরা ওয়ার্দী:
ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং
পরবর্তীকালে
পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী
হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রভাবশালী বাঙালি রাজনীতিবিদ।
|
উল্লেখিত ২০ জন বাঙালিন
শ্রেষ্ঠত্ত্ব নিয়ে কারও কারও প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু দেশ-বিদেশের সকল মানুষ
এবং সামগ্রিকভাবে বাঙালি জাতি সত্তার অধিকারি যারা, তারা সবাই তাঁদের অবদানকে
মেনে নিয়েছেন। আর তাঁদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই যে, সবার
মধ্যে শ্রেষ্ঠ তাতে কোন দ্বিমত নেই।
|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন