(Part-11)
শত্রুমিত্র চিনতে ভুল করেছেন বঙ্গবন্ধু : পঁচাত্তরের ১৫
আগস্ট নিজ বাড়িতে
সপরিবারে খুন হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ নামে
রাষ্ট্রটির গঠনের পেছনে,
বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার
বিকাশে প্রধান ভূমিকা
রেখেছেন এই নেতা।
তাঁর সেই ভূমিকাটি বুঝতে
হলে কিছু ঐতিহাসিক বাস্তবতাও আলোচনায় চলে
আসে। ১৯৪৭ সালে
পাকিস্তান সৃষ্টির পর
থেকেই বাঙালির মধ্যে
স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী চেতনার
বিকাশ হতে শুরু
করে। তারপর চব্বিশ
বছরে, মানে প্রায়
দুই যুগ ধরে
বাঙালি নানা আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা
জাতিসত্তা হিসেবে চেনাতে
শুরু করে। এরই
পথ ধরে উনিশশ’
একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। বাঙালির স্বাধিকার-চেতনা
গড়ে ওঠা থেকে
শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ– পুরোটা
সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন
প্রধান জননেতা। দু’যুগের প্রতিটি আন্দোলনে তিনি
বড় ভূমিকা রেখেছেন। একদিনে তো
কোনও নেতা তৈরি
হন না। হঠাৎ
করে জনতার মনে
জায়গা করে নেয়া
যায় না। জননেতা
তৈরি হন ধীরে
ধীরেই। সময়ের গতিতে
নিজের কাজের মাধ্যমেই নেতা
সাধারণের আস্থাভাজন হয়ে
ওঠেন। বঙ্গবন্ধুও সেভাবেই জননেতা
হয়েছেন।
একটি জাতির বিকাশের পেছনে
অবদান রেখে জাতির
জনক হিসেবে জনগণের
ভালোবাসা পেয়েছেন। ১৯৪০ সালের
লাহোর প্রস্তাবে মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে
একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের
কথা ছিল। বাংলার
মুসলমানেরাও তাই তখন
পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৪৬
সালে এসে দেখা
গেল, মুসলিম লীগের
নেতারা একটিমাত্র রাষ্ট্রের কথা
বলছেন। বাংলার মুসলমানরা এই
প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে
পারলেও, ১৯৪৭ সালে
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির বিষয়টিকে স্বাগতই জানিয়েছিলেন। কারণ,
একটি রাষ্ট্র গঠনের
পরপরই সে রাষ্ট্র ভেঙ্গে
দেওয়া যায় না।
দুই যুগে জাতি
হিসেবে নানা বঞ্চনা
ও নিপীড়নের শিকার
হওয়ার পরই তো
জাতি হিসেবে আমাদের
আত্মমর্যাদাবোধ
তৈরি হয়েছে।এই
পথে আসতে প্রতিটি আন্দোলনেই বঙ্গবন্ধু অন্যতম
সংগঠক। ভাষা আন্দোলনে যুক্ত
ছিলেন ১৯৪৭ সাল
থেকে। ভাষা আন্দোলনের পরপরই
পঞ্চাশের দশকে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মাধ্যমে তখনকার
পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির রাজনৈতিক চেতনার
বিকাশ হতে শুরু
করে। বঙ্গবন্ধু এই
নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। মন্ত্রীত্ব পেয়েছিলেন। ষাটের
দশকে কিন্তু প্রতিটি আন্দোলনের প্রধান
সংগঠক বঙ্গবন্ধু। বাষট্টির শিক্ষা
আন্দোলন, ছেষট্টিতে ছয়
দফা দাবিতে আন্দোলন, ’৬৮-’৬৯ এর
গণআন্দোলন– সব জায়গাতেই এই
ক্যারিশমাটিক নেতার বিপুল
উপস্থিতি। আসলে বঙ্গবন্ধুর আলটিমেট লক্ষ্যই ছিল,
বাঙালির জন্য আলাদা
সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন।
এ জন্যই তিনি
চল্লিশ-পঞ্চাশেরর দশকে
মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে
যুক্ত ছিলেন। কারণ
তিনি কখনও জনবিচ্ছিন্ন হতে
চাননি। জনতার কাছাকাছি থেকে
তাদের মনের কথা
বুঝতে চেয়েছেন। তাদের
বোধের জগতেও নাড়া
দিয়েছেন সে ভাবেই।আবার এই
একই চিন্তা থেকেই
তিনি সমসাময়িক অন্য
নেতাদের চেয়ে এগিয়ে
গেছেন কয়েক ধাপ।
মনে আছে, ১৯৬৯
সালের ডিসেম্বরে সোহরাওয়ার্দীর প্রথম
মৃত্যুবার্ষিকীর
জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি
সরাসরি ঘোষণা করলেন,
‘এখন থেকে আমাদের
দেশের নাম আর
পূর্ব পাকিস্তান নয়,
হবে বাংলাদেশ।’ এই
ঘোষণা দেওয়ার মতো
সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা একমাত্র তাঁরই
ছিল। তিনি জানতেন
জনগণের ভালোবাসা তাঁর
সঙ্গে আছে। আমাদের
স্বাধিকার-আন্দোলন কিন্তু
বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সমর্থন
পায়নি শুরু থেকেই।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন,
মধ্যপ্রাচ্যের
আরব দেশগুলো– বিপক্ষে ছিল
সবাই। মধ্যপ্রাচ্যে শুধু
সাদ্দাম হোসেনের ইরাক
ছিল আমাদের পক্ষে।
তাই আমাদের স্বাধীনতা-অর্জন
এক অসম্ভব পাহাড়
ডিঙানোরও গল্প। ওই
সাহসী লোকটির সাহসী
উচ্চারণগুলোর মূল্য আজ
এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা
বুঝতে পারব না।
বুঝতে হলে ফিরতে
হবে সেই সময়ের
প্রেক্ষাপটে। বঙ্গবন্ধু নিজে
স্পষ্ট ছিলেন, তারপরও
বাঙালির স্বাধিকার-অর্জনের জন্য
সরাসরি বিদ্রোহের দিকে
এগুতে চাননি। এগিয়েছেন ধীরে
ধীরে। স্বতন্ত্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি, স্বায়ত্তশাসন, অধিকতর
স্বায়ত্তশাসন– এভাবে আন্দোলনকে বেগবান
করেছেন।এক হিসেবে
তিনি ছিলেন বাঙালির পুঞ্জীভূত আবেগের
একটি সমন্বিত রূপ।
যে চেতনা মানুষের গভীরে
যুক্ত ছিল- তাকে
আকার দিয়ে, ভাষা
দিয়ে নির্মাণ করেছেন
তিনি।পেছন ফিরে
তাকালে এখনও বঙ্গবন্ধুর মধ্যেকার মহত্তম
গুণগুলোর দেখা পাই
তার প্রতিটি কাজে।
সাহসী, ক্যারিশমাটিক, দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক এক
নেতা ছিলেন তিনি।
তাঁর মধ্যে ছিল
মানুষের জন্য অপরিসীম মমতা।
বড় নেতাদের বেশিরভাগই সাধারণের সঙ্গে
সহজে মিশতে পারেন
না। বঙ্গবন্ধু ব্যতিক্রম। তাঁর
বাসায় যেভাবে সাধারণের যাতায়াত ছিল,
আর কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের বাসায়
কি এ ভাবে
যাতায়াত সম্ভব? সদ্যপ্রয়াত লেখক
হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’
উপন্যাসের কিছু অংশ
পড়েছি। সেখানে দেখলাম,
হুমায়ূন খুব সুন্দরভাবে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের এই
দিকগুলো তুলে ধরেছেন। বাস্তবেও তিনি
ছিলেন এমনই। তাই বলে
তাঁর কি কোনও
দোষ ছিল না?
ছিল। আত্মতুষ্টি আর
অতি-আত্মবিশ্বাস তাঁর
ক্ষতি করেছে। এ
দুটি সমস্যা না
থাকলে তিনি শত্রুমিত্র চিনতে
পারতেন। শেষদিকে তাঁর
খুব কাছের লোক
হয়ে উঠেছিলেন খন্দকার মুশতাক। তিনি
সবসময় বঙ্গবন্ধুর কাছে
তাজউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বলতেন।
একই কাজ করতেন
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ
মনি। বঙ্গবন্ধু বুঝতে
ভুল করেছিলেন। আর
সে জন্যই তো
একসময় তাজউদ্দিন আহমেদকে দূরে
সরিয়ে দিলেন। খন্দকার মুশতাকের মতো
নেতারা, যারা বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে
বড় শত্রু ছিলেন,
তারা তাঁর দুর্বলতার সুযোগটাই নিয়েছেন। অতি-আত্মবিশ্বাস থেকে
বঙ্গবন্ধু নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারেও ছিলেন
উদাসীন। তাই তাঁর
বাড়িটিতে কোনও রকম
প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেননি
তিনি। আর ছিলেন
অদূরদর্শী। তাই সম্ভাব্য বিদ্রোহের ব্যাপারেও ছিলেন
উদাসীন।উনিশশ’ পঁচাত্তরের ১৫
ই আগস্ট এক
মহান রাষ্ট্রনায়ককে হারালাম আমরা।
তাঁকে সপরিবারে হত্যা
করার মাধ্যমে এ
দেশে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধির চেতনার
বিপক্ষের শক্তি সংগঠিত
হতে চেষ্টা করেছিল। সুখের
বিষয়, সেই শক্তিকে আমরা
পরাজিত করেছি। বঙ্গবন্ধু এখন
আবার অপন আলোয়
ভাস্বর। (ইতিহাসবিদ
অধ্যাপক সালাহ উদ্দিন আহমদ)
পবিত্র কুরআনে মহানবীর (দ:) ব্যাক্তিত্ত্ব বর্ণনায় ব্যবহৃত
দুটি শব্দের আলোকে ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ
বাব্বুল ইজ্জতকে অস্বীকারকারীগণের প্রতি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ:) ছিলেন, ‘খুবই
কঠোর বা শীষাঢালা প্রাচীরের মত অটল’। আর এটিকে জোরালোভাবে প্রকাশ করার নিমিত্ত
আরবী শব্দ সুপারলেটিভ ডিগ্রী হিসেবে ‘আশিদ্-দাউ’ প্রয়োগ করা হয়েছে। আবার মহানবীকে
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তিনি অতি দয়াপরবশ বা আরবী শব্দ ‘রুহমামায়ু’। আমরা দেখতে
পাই যে, মহাবীর শত্রু বা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকারকারীদের মধ্যে যাঁরা ছিলেন;
যেমন-আবু জেহেল, আবু লাহাব, ওতবা, শায়েবা প্রমুখ। আবার ইসলাম ধর্ম গ্রহনকারী আবু
সুফিয়ান, উমাইয়া, উবাই ইবনে কা‘ব, ইয়াজিদ প্রমুখ ছিলেন, অনেকটা ঘরের শত্রু
বিভীষণের মত। অপরদিকে, মহানবীর (দ:) খুবই
ঘনিষ্ঠজন ছিলেন; হযরত খদিজাতুল কুবরাহ (র:), হযরত আবু বকর (র:), হযরত ওমর (র:),
হযরত ওসমান (র:), হযরত আলী (র:), মা ফাতেমা (র:), মা আয়েশা (র:) প্রমুখ। মহানবী
(দ:) বিশ্বব্যাপী ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর চতুর্পাশের উপরোক্ত
শত্রু-মিত্রগণের মাঝে থেকেই। আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গী-সাথী এবং শত্রুগণকে আমরা ইতিহাসবিদ সালাহ
উদ্দির আহমদের অতি মূল্যবান লেখাটি হতে আমরা চিনতে পাই। তিনিও বাংলাদেশ নামক
রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা করে একটি উন্নত দেশ ও মর্যাদাশীল জাতির ভিত্তি রচনা করে দেন,
সেসব মানুষদের মাঝে থেকেই এবং তাঁদেরকে ঐক্যমতে রেখেই। জীবদ্দশায় যেমন বঙ্গবন্ধু
তাঁদেরকে মেরে ফেলে বা দূরে সরিয়ে দিয়ে যেতে পারেন নি। তেমনি মহানবীও (দ:) সকল
আল্লাহ বিরোধী তাগুতী শক্তিকে বিনাশ করে ইসলামের ঝান্ডা প্রতিষ্ঠা করেন নি।
করেছেন, সরাসরি মহান আল্লাহ তায়ালার মদদে ও তাঁর কুদরতির হাতের সহায়তায়। সূরা
মায়েদায় বিদায় হজ্বের ভাষণের প্রাক্কালে মহানবীর (দ:) অবতীর্ণ আয়াত “আল-এয়াইমা
আকমলতু লকুম দ্বীনুকুম, ওয়ারদিলকুমুল ইসলামা দ্বীনা, অর্থাৎ আজকের দিনে আমি
আপনাদের জন্য আপনাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আর তা হলো ইসলাম ধর্ম। জাতির
জনকের সাথে ছিলো আপামর বাঙালি জনমানুষ ও বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তা অর্জনে বিশ্বাসী
ও সহানুভূতিশীল সমগ্র বিশ্ববাসী। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালাও সহায়
ছিলেন। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় ‘ইন-শাহ-আল্লাহ্’ কথাটি উচ্চারণ করতেন।
অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তায়ালার সাহায্য-সহযোগিতা চাইতেন তিনি, কায়ো মনোবাক্যে।
বিখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের সাথে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় (পাক কারাগার হতে
স্বাধীন বাংলাদেশে লন্ডন হয়ে ফেরার প্রাক্কালে) তিনি দবি করেছিলেন যে, তিনি একজন
মুসলমান এবং মুসলমানরা একবারই মৃত্যুবরণ করেন। তিনি পাক কারাগারে তাঁকে মেরে ফেলার
ভয় করেছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ডেভিড ফ্রস্টকে বঙ্গবন্ধু তাই বলেছিলেন।
বিশ্ব নেতাগণের চোখে বঙ্গবন্ধু: বঙ্গবন্ধু
স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে যেসব বিশ্ব নেতৃত্ব তাঁর ভূয়সী প্রশঙসা করে মনতব্য
করেছেন, তা এখানে তুলে ধরা হলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি:
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মূল্যায়ন হচ্ছে, একজন বড় মানবতাবাদী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সব মানুষের সমতা ও সুযোগের পক্ষে ছিলেন।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মূল্যায়ন হচ্ছে, একজন বড় মানবতাবাদী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সব মানুষের সমতা ও সুযোগের পক্ষে ছিলেন।
প্রণব মুখার্জি:
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বঙ্গবন্ধুকে সাহসী নেতা আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘আই স্যালুট দ্য ব্রেভ লিডার অব অল টাইমস।’ একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মদাতাকে এভাবে হত্যা করায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
জেনারেল গুরবক্স সিং সিহোটা:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দেশটির অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল গুরবক্স সিং সিহোটা মন্তব্য খাতায় লিখেছেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় যোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে স্মরণ করা হবে।
ভুটানের প্রধামনমন্ত্রী লোটে শেরিং:
‘প্রিয় শেখ মুজিব, মানুষ বলে তুমি মৃত। কিন্তু আমি অনুভব করি তুমি আজও আমাদের চারপাশে। আমি খুশির সঙ্গে জানাতে চাই যে তোমার স্বপ্ন আজ তোমার মেয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা পূরণ হয়েছে। তুমি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছ। তুমি কেবল বঙ্গবন্ধু নও, ভুটানেরও বন্ধু।’ভুটানের কুইন মাদার বা রাজমাতা শেরিং পেম ওয়াংচুক মন্তব্য করেন, খুবই চমৎকার। একজন মহান ও দূরদর্শী নেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুটানের সাবেক রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুকের তৃতীয় স্ত্রী শেরিং পেম ওয়াংচুক এখানে আসেন।
‘প্রিয় শেখ মুজিব, মানুষ বলে তুমি মৃত। কিন্তু আমি অনুভব করি তুমি আজও আমাদের চারপাশে। আমি খুশির সঙ্গে জানাতে চাই যে তোমার স্বপ্ন আজ তোমার মেয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা পূরণ হয়েছে। তুমি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছ। তুমি কেবল বঙ্গবন্ধু নও, ভুটানেরও বন্ধু।’ভুটানের কুইন মাদার বা রাজমাতা শেরিং পেম ওয়াংচুক মন্তব্য করেন, খুবই চমৎকার। একজন মহান ও দূরদর্শী নেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুটানের সাবেক রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুকের তৃতীয় স্ত্রী শেরিং পেম ওয়াংচুক এখানে আসেন।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা:
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বঙ্গবন্ধুকে এই অঞ্চলের মহান নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর ত্যাগ বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে যাবে। এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পূরণের অংশীদার হতে পেরে শ্রীলঙ্কা গর্বিত। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে এ মন্তব্য করেন, তিনি।
চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা:
১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখে তিনি লিখে গেছেন, এ এক গভীর মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা। এমন একজন মহৎ মানুষকে নিছক বুলেটবিদ্ধ করে হত্যা করা হলো। তবে তাঁর অর্জনের স্মৃতি এ দেশে বেঁচে থাকবে। তাঁর অনুসারী এবং কন্যা যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উচ্চতায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন, এমন প্রত্যাশা রেখে গেছেন চন্দ্রিকা।
শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংসদের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া: তিনি এসেছিলেন ২০১৬ সালের ৪ জুন। জাতির জনকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, পরবর্তী প্রজন্ম চিরতরে তাঁর নাম স্মরণ করবে।
নানা ভাষায় শ্রদ্ধা:
বিশ্বনেতাদের অনেকেই নিজের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। জাপানি, চীনা, আরবি, হিন্দি, উর্দুসহ নানা ভাষায় তাঁরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন।জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো তারো জাপানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গেছেন। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট, কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মিসরের শিক্ষামন্ত্রী, নাইজেরিয়ার শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের অনুভূতির কথা লিখে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর এবং সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় লেখা বিশ্বনেতাদের মন্তব্য বাংলায় অনুবাদ করার চিন্তা করছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। এ ছাড়া এগুলোর একটি সংকলন প্রকাশ করা হবে।
বিশ্বনেতাদের অনেকেই নিজের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। জাপানি, চীনা, আরবি, হিন্দি, উর্দুসহ নানা ভাষায় তাঁরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন।জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো তারো জাপানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গেছেন। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট, কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মিসরের শিক্ষামন্ত্রী, নাইজেরিয়ার শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের অনুভূতির কথা লিখে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর এবং সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় লেখা বিশ্বনেতাদের মন্তব্য বাংলায় অনুবাদ করার চিন্তা করছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। এ ছাড়া এগুলোর একটি সংকলন প্রকাশ করা হবে।
তিন ধরনের মন্তব্য খাতা:
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে তিন ধরনের মন্তব্য খাতা রাখা হয়। একটি ভিভিআইপিদের জন্য, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের জন্য এই খাতা সংরক্ষিত থাকে। আরেকটি খাতা আছে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য, যেটি ভিআইপি খাতা নামে পরিচিত। আর সাধারণ মানুষের জন্য রয়েছে আরেক ধরনের মন্তব্য খাতা। কয়েক দিন পরপর এই খাতার শত শত পৃষ্ঠা ভরে যায়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সমৃতি জাদুঘরের কিউরেটর জনাব নজরুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সাধারণ মানুষের নেতা ছিলেন, তা জাদুঘর পরিদর্শনকারীর সংখ্যা এবং মন্তব্য খাতায় লেখা অতিসাধারণ মানুষের বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে তিন ধরনের মন্তব্য খাতা রাখা হয়। একটি ভিভিআইপিদের জন্য, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের জন্য এই খাতা সংরক্ষিত থাকে। আরেকটি খাতা আছে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য, যেটি ভিআইপি খাতা নামে পরিচিত। আর সাধারণ মানুষের জন্য রয়েছে আরেক ধরনের মন্তব্য খাতা। কয়েক দিন পরপর এই খাতার শত শত পৃষ্ঠা ভরে যায়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সমৃতি জাদুঘরের কিউরেটর জনাব নজরুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সাধারণ মানুষের নেতা ছিলেন, তা জাদুঘর পরিদর্শনকারীর সংখ্যা এবং মন্তব্য খাতায় লেখা অতিসাধারণ মানুষের বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়।
অনুপ্রেরণার বাতিঘর:
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দেয়ালে বুলেটের চিহ্ন এবং বঙ্গবন্ধু যে সিঁড়িতে গুলির আঘাতে পড়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থান দেখে বিশ্বনেতাদের অনেকেই মর্মাহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাদুঘর পরিদর্শন করে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই মৃত্যুর ৪০ বছরের বেশি সময় পরও শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা করা হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে এসে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো মন্তব্য বইয়ে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানবজাতির জন্য ছিলেন অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দেয়ালে বুলেটের চিহ্ন এবং বঙ্গবন্ধু যে সিঁড়িতে গুলির আঘাতে পড়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থান দেখে বিশ্বনেতাদের অনেকেই মর্মাহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাদুঘর পরিদর্শন করে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই মৃত্যুর ৪০ বছরের বেশি সময় পরও শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা করা হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে এসে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো মন্তব্য বইয়ে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানবজাতির জন্য ছিলেন অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
সাধারণ জীবনযাপনে মুগ্ধতা:
সৌদি আরবের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী খালেদ আল ওতাইবি বঙ্গবন্ধুর সাদাসিধে জীবনযাপনের বিষয়টি জেনে মুগ্ধ হন। ২০১৭ সালের আগস্টে এসে খালেদ লিখেছেন, ‘জাতির পিতা ছিলেন একজন দুর্দান্ত অনুপ্রাণিত মানুষ, যিনি তাঁর জনগণের সংগ্রামের প্রতীক। তাঁর পরিবারকে দেখলাম এবং তাঁদের জীবনযাপনের পদ্ধতি আমাকে এই ধারণা দিল যে তাঁরা সাধারণ জীবন যাপন করতেন।’ ঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর কাজী আফরিন জাহান জানান, প্রায় সবাই একই প্রশ্ন করেন, কেন এমন অরক্ষিত স্থানে বা সাধারণ বাড়িতে একজন প্রধানমন্ত্রী বসবাস করতেন। বিশ্বনেতারা যখন বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান দেখেন, শিশু রাসেলকে হত্যার বর্ণনা শোনেন, তখন শিউরে ওঠেন।
সৌদি আরবের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী খালেদ আল ওতাইবি বঙ্গবন্ধুর সাদাসিধে জীবনযাপনের বিষয়টি জেনে মুগ্ধ হন। ২০১৭ সালের আগস্টে এসে খালেদ লিখেছেন, ‘জাতির পিতা ছিলেন একজন দুর্দান্ত অনুপ্রাণিত মানুষ, যিনি তাঁর জনগণের সংগ্রামের প্রতীক। তাঁর পরিবারকে দেখলাম এবং তাঁদের জীবনযাপনের পদ্ধতি আমাকে এই ধারণা দিল যে তাঁরা সাধারণ জীবন যাপন করতেন।’ ঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর কাজী আফরিন জাহান জানান, প্রায় সবাই একই প্রশ্ন করেন, কেন এমন অরক্ষিত স্থানে বা সাধারণ বাড়িতে একজন প্রধানমন্ত্রী বসবাস করতেন। বিশ্বনেতারা যখন বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান দেখেন, শিশু রাসেলকে হত্যার বর্ণনা শোনেন, তখন শিউরে ওঠেন।
৩২ নম্বর বাড়ি, রাজনীতির বাতিঘর:
বাংলাদেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পরিচয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি। সেই বাড়ি বাঙালির তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবার এই বাড়িতে নিহত হন। ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল বাড়িটিকে ট্রাস্টের অধীনে দেওয়া হয়, এরপর বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পরিচয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি। সেই বাড়ি বাঙালির তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবার এই বাড়িতে নিহত হন। ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল বাড়িটিকে ট্রাস্টের অধীনে দেওয়া হয়, এরপর বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
জাদুঘরের ভিভিআইপি খাতায় বাংলায় লেখা একটিমাত্র মন্তব্য, আর তা লিখেছেন বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট জাদুঘর পরিদর্শন করে আবদুল হামিদ লিখেছেন, ‘মুক্তিসংগ্রামে যেমন এ বাড়িটি বাঙালির দিকনির্দেশনার উৎস ছিল, তেমনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরও নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।’ (কঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনকারি বিশ্বনেতাদের চোখে (বঙ্গবন্ধু ২৮ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার রিপোর্ট, শরিফুজ্জামান):
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত জুলকরনাইন:
আমি
এখানে মহান বীর পুরুষ ও ন্যায়-পরায়ন শাসক জুলকরনাইনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও
কীর্তিগাথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে শহীদ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ
তুলে ধরার প্রয়াস চালাব। পবিত্র কুরআন
শরীফে জুলকরনাইন চরিত্রটির বর্ণনা এসেছে। কুরআনে (সূরা আম্বিয়া-৯৫ ও ৯৬ নং
আয়াত) তাঁর কথা কুরআনে উল্লেখ থাকায়,
তাঁকে অনেকে মহান আল্লাহ প্রেরিত রাসূল বা নবী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে বেশির
ভাগ আলেম-ওলামার মতে তিনি নবী নন, বরং একজন বীর পুরুষ এবং ন্যায়-পরায়ন শাসকে
প্রতিভু ছিলেন। অনেকে আবার গ্রীক দেশ বিজেতা ও সেনা নায়ক আলেকজান্ডার দ্যা
গ্রেট-এর কথা জুলকরনাইন নামে আল্লাহ তায়লা উল্লেখ করেছেন, এমন মতামত ব্যক্ত করে
থাকেন। সেটাও কুরআন-হাদীছের আলোকে ব্যাখ্যা করে আলেম-ওলেমাগণ সত্য নয়, বলে মনে
করেন। স্রষ্টা এ জুলকরনাইনকে প্রবল শক্তিমত্তা ও সুশাসকের গুণাবলি দান করে এ পৃথিবীতে
পাঠিয়েছিলেন বলে বিচেনা করা হয়। তিনি তাঁর রাজ্যকে পৃথিবীব্যাপি (পূর্বপ্রান্ত হতে
পশ্চিমপ্রান্ত) সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন’
এমন নীতিতে তাঁর শাসন ব্যবস্থাকে রাজ্যের সর্বত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তিনি।
কিন্তু তিনি এক সময় এমন একটা জনপদ (পৃথিবীর পশ্চিমপ্রান্তে) আবিস্কার করলেন যে,
যেখানে তাঁর শাসন ব্যবস্থার সুফল মানুষের নিকট পৌঁছে নি। সেখানে ইয়াজুজ-মাজুজ
নামের দু‘জন দস্যু প্রকৃতির লোক অত্যাচার-অনাচার করে সাধারণ মানুষকে অতীষ্ঠ করে
তুলেছিল। এক পর্যায়ে সেখানকার নির্যাতিত-নিপীড়িত ষেরা জুলকরনাইনের সাহায্য কমনা
করল। তাদের কথায় তিনি (জুলকরনাইন) কিছুটা দু:শ্চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং ভাবতে লাগলেন
কীভাবে তাঁদেরকে সুশাসন ও শান্তি-শৃংখলা দিয়ে ইয়াজুজ-মাজুজের কবল মুক্ত করা যায়।
উক্ত জনপদের মানুষেরা জুলকরনাইনকে টাকার বিনিময়ে বা যে কোন কিছুর বিনিময়ে
শান্তি-শৃংখলা এনে দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। তিনি টাকা দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করে তাদের জন্য ভাল কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। শেষ পর্যন্ত জুলকরনাইন,
ইয়াজুজ-মাজুজ যে গোহা পথ দিয়ে উক্ত জনপদে গমনাগমন করতেন সেখানে লোহা ও দস্তা
ব্যবহার করে এমন একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিলেন যে, তারা (ইয়াজুজ-মাজুজ) আর কখনো
সেই জনপদে প্রবেশ করতে পারে নি। সাধারণ মানুষের ওপর তাদের দস্যুপনা,
চুরি-ডাকাতি-অত্যাচার-অনাচার-শোষণ-বঞ্চনা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো, সে প্রাচীর
নির্মাণ করে দেয়ার পর। তারা নাকি শেষ জামানায় দাজ্জালের আগমন ঘটলে, আবার সে জনপদে
আসবে এবং দাজ্জালকে হত্যা করে পৃথিবী শাসন করবে। বঙ্গবন্ধু যেন আমাদেরে এ বঙ্গ
জনপদের জুলকরনাইন। বৃটিশ শিক্ষাবিদ মেকলে বাঙালি মনীষী এবং রাজনীতিক চিন্তাবিগণের
ভাবনা-চিন্তা-প্রতিবাদ মুখরতা উপলব্দি করে মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘হুয়াট বেঙ্গল
টিংকস টুডে, হোল ইন্ডিয়া এন্ড আদারস টিংক দ্যাট লেটার”। বঙ্গবন্ধু যা ভেবেছিলেন ও
করেছিলেন তা এর সুফল-কুফল এ বঙ্গ জনপদ তো বটেই পুরো ভারত উপমহাদেশ এখন তাই দেখতে
পাচ্ছে। পশ্চিম বঙ্গের মমতা ব্যানার্জি এবং আমাদের বাংলাদেশ সরকারের মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু‘জনই এ বঙ্গ জনপদে মানুষকে যেভাবে আগলে রাখছেন, তাতে
আমি বঙ্গবন্ধুর ছায়া-কায়া দেখতে পাই। মহান আল্লাহ্ তায়াল নিকট বিনীত প্রার্থনা
জানাই, এতদাঞ্চলের মানুষের শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা এ দু‘জনের হাতেই আরও কিছুদিন
রেখে দেন। এ মুহুর্তে তাঁদের বিকল্প আমি এ ক্ষুদ্র মানুষটি আর দেখছি না।
তুর্কি-বৃটিশ-পাক দু:শাসনের কবল হতে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জুলকরনাইন যখন
পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন এত শক্তিশালী মিডিয়া এবং কূটনীতি-রাজনীতি ও খারাপ মানুষ
সারা বিশ্বেই ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশী অনেক শত্রু-মিত্র এবং
সামা্রজ্যবাদীদের সব ধরণের কূটচাল মোকাবেলা করে করেই আমাদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশ
উপহার দিয়ে যান জীবনবাজি রেখে। টুঙ্গি পাড়ার খোকা হতে তিনি বঙ্গবন্ধুতে পরিণত
হয়েছিলেন, আমাদেরকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়ে। বৃটিশ-পাকিস্তানের
গোলামির জিঞ্জির হতে বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলেন যিনি, তিনি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ যেন ইয়াজুজ-মাজুজের কবল হতে সাধারণ
মানুষকে জুলকরনাইনের মুক্তি দানের মত। যতদিন এ বাংলা থাকবে, বাঙ্গালী থাকবে; আর
কেহ আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না, বন্দী করতে শিকলে, অন্তত: তাঁর সুযোগ্য দু‘জন
উত্তরসূরি শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জি যতদিন দুই বঙ্গের দায়িত্বে থাকবেন
ততদিন। এখানে বলে রাখা ভাল যে, বঙ্গবন্ধুর
জীবনী আলোচনা বা তাঁর সাথে জুলকরনাইনের দৃষ্টান্ত দেয়ায় হয়ত অনেকে মনক্ষুন্ন হবেন।
কিন্তু সবাইকে পরামর্শ দেব; আপনারা বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনী ও কারাগারের রোজ নামচা বই
দু‘টি পড়ুন। তাঁর পূর্ব পুরুষ এবং পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। তাঁর
পূর্ব পুরুষ ছিল পীর বংশীয় এবং ধর্মপরায়ন। গোলাম আজমের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর মা নাকি
খুব তাপসী রমণী ছিলেন। তরুণ বঙ্গবন্ধু
১৯৪৭ সালে কলকাতার দাঙ্গা চলাকালে যেভাবে নিজের জীবনবাজি রেখে
হিন্দু-মুসলমানের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি মুসলামানদেরেকে
বাঁচানোর জন্য যেভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, তা জেনে অবাক না হয়ে পারবেন না। আর
বুঝতে পারবেন, তাঁর মুসলমানিত্য কত শক্তিশালী ছিল। তাঁর মত এমন ভূমিকা তখন কোন
আলেম-ওলেমাও রেখেছেন বলে জানা যায় না। অবাক করার মত ব্যাপার যে, তিনি তখন একজন
কলেজ ছাত্র ছিলেন মাত্র। জাতির জনক তাঁর অর্ধেক জীবন কাটিয়েছেন, কারাগারে। তাঁর
শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় বয়স বিসর্জন দান এবং শেষ পর্যন্ত সপরিবারে শহীদ হয়ে
আমাদের জন্য তাঁর পুরো জীবনটাই উৎসর্গ করে গেলেন। শহীদ হয়েছিলেন তাঁর পরিবারের অতি
আপনজন, সদস্যগণ, বঙ্গমাতা ও প্রাণপ্রিয় সন্তানরা। এমন মহান পুরুষ ক‘জনই বা এসেছেন,
এ মহাবিশ্বে, এ বাংলায়! তিনি স্বপ্ন দেখে ছেড়ে দেন নি, কোন কিছুই। তিনি দেশকে
স্বাধীন করেই হাল ছেড়ে দেন নি, একটুও। তিনি বিধ্বস্থ এ নবীন বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক
রাষ্ট্রে পরিণত করতে ও এ দেশকে শিক্ষা-দীক্ষায়-সভ্যতায় সমৃদ্ধ করার জন্য
সুদূরপ্রসারি স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দেশের জন্য অতি উত্তম একটি পরিকল্পনা তৈরি
করেছিলেন, তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের পরিকল্পনা দলিলগুলো অধ্যয়ন করে দেখলে বুঝতে
পারবেন যে কেহ যে, তাঁর দেশ ভাবনা কত গভীর ছিল। জাতির জনক দেশের সকল প্রাথমিক
বিদ্যালয় (প্রায় ৩৮০০০টি) ও ৩/৪ লক্ষ শিক্ষককে এক ঘোষণায় (০১/০৭/১৯৭৩ খ্রি: তারিখ)
সরকারিকরণ করেছিলেন। সে সময় তিনি অবশ্যই জানতেন, সাবাধনি দেশের প্রাথমিক
বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত সমস্যা, যোগ্য শিক্ষককমন্ডলীর অভাবের কথা, আসবাবপত্রের
স্বল্পতার কথা, কক্ষ স্বল্পতার কথা এবং বৃটিশ-পাক আমলে সৃষ্ট অগোচালো-অনিয়িন্ত্রিত
ও বিশৃংখল দায়সারা গোছের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। তিনি এও জানতেন যে,
শিক্ষকদের অনেকেই লুঙ্গি পরিহিত, দুর্বল, আন্ডার মেট্রিক, গুরু ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং
কাঁচা শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারী ও আনকোরা-আইনুল্লাহ ধাঁচের। আর তাঁর ভাবনায় ছিল
যে, প্রাথমিক শিক্ষার অগোছালো ভাবটি একদিন অবশ্যই কেটে যাবে। তখন পৃথিবীর লোকজন
অবাক বিস্ময়ে থাকিয়ে থেকে বলবেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা তো বেশ এগিয়েছে!
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায় যে,
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাত এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতের সাফল্য ভারতের চেয়ে ভাল,
বিশেষত নারী শিক্ষায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এখন অনেক যোগ্য, উচ্চ শিক্ষিত
এবং সুদক্ষ। আমরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কতৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রাথমিক
শিক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে তাই দেখছি, এখন। আর জাতির জনকের দূরদর্শিতার
বহি:প্রকাশ ও বাস্তব নিদর্শন এটাই। প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমরা
যাঁরা এখন কর্মরত তাঁদের দিকে এক পলক থাকান, এখানে দেখতে পাবেন গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিভাগে কর্মরত কর্মতর্তা-কর্মচারিগণের
চেয়ে আমরা কোনভাবেই অযোগ্য-অথর্ব নই। বিসিএস প্রশাসনসহ সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার, গেজেটেড,
নন-গেজেটেড ও সাধরণ কর্মকর্তা কর্মচারিগণের তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন এবং
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা সবাই কম যোগ্যতাসম্পন্ন নন
মোটেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন