শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০

Engineer Zahurul Mowla: A Legendary, Family Father & Successful Personality


(৩য় পর্ব)
ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা তাঁর জীবন ধারা: ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা জীবনের একটি বড় অধ্যায় কাটিয়েছেন; দেশ-বিদেশের নানা শহর গ্রামে, নানা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহন করে, কর্মসূত্রে জীবন চর্চার তাগিদে তিনি ৭ম শ্রেণি হতে চট্টগ্রাম শহর কেন্দ্রিক পড়াশোনা বা শিক্ষা জীবন শুরু করেন বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম শহরে তিনি দীর্ঘ সময় কাটান শিক্ষা গ্রহন এবং ক্যারিয়ার গঠনের নিমিত্ত তিনি বিখ্যাত মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন এবং দাম্পত্য জীবনের কর্মজীবনের প্রথম পর্বের উল্লেখযোগ্য অংশ সেখানে কাটিয়ে দেন পরে তিনি গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীতে চাকরি করলেও পরিবার নিয়ে যান নি, সাথে করে অত:পর জনাব জহুরুল মওলা ইরাক চলে যাওয়ার সময় পরিবারসহ গমন করেন, সে দেশে তাঁর প্রথম ছেলে সন্তানের শৈশব কেটেছে ইরাকে তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইরাক ছিলেন মধ্যিখানে তিনি পরিবার দেশে এনে তিনি চট্টগ্রাম শহরেই বাসায় রেখে তাঁর সন্তানদেরকে পড়াশোনা করান তাঁর সন্তানরাও চট্টগ্রাম শহরে ভারৈা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েছে তাঁর বড় ছেলে নাসিরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, কমার্ কলেজ এবং সাইপ্রাস মালেশিয়ায় হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্টের উপর উচ্চতর পড়াশোনা করে এখন ঢাকায় চাকরি করছে জনাব জহুরুল মওলার দ্বিতীয় সন্তান কলেজিয়েট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়েছে আর তাঁর একমাত্র কন্যা সন্তানটিকে অতি যত্নে নিজের মতো করে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেন তাঁকে তিনি প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে পড়িয়েছেন, বাওয়া স্কুল বা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি সমিতি স্কুলে সেখান হতে এসএসসি পাশ করে সে মহসিন কলেজ এইচসি পাশ করে ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে বিএ (অনার্স) শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় বিয়ে হয়ে যায় বিভিন্ন প্রয়োজনে ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা ১৪/১৫ টি দেশ ভ্রমণ করেন, পড়াশোনা করতে এবং কর্মসূত্রে তিনি বেশ দাপটের সাথেই জীবন-যাপন করেছেন এবং বিচরণ করার সুযোগ পেয়েছেন দেশ-বিদেশে, এক সময় জনাব জহুরুল মওলা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েতসহ আরও কয়েকটি দেশে প্রকৌশলী হিসাবে উচ্চতর পড়াশোনা করেন এবং চাকুরি করেন এসময় তিনি আর্থিক স্বাচ্ছন্দ প্রাচুর্য্য যেমন দেখেছেন, তেমনি পেয়েছেন তিনি  উন্নত সভ্য দেশের সভ্য মানুষ এবং উন্নত সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মেলা-মেশা কাজ করার পরিবেশ এবং সংস্কৃতি তিনি ইংরেজি, উর্দু, আরবী, হিন্দি, জার্মানী, ফরাসী, ফার্সি, রুশ প্রভৃতি ভাষায় কম-বেশি পারদর্শি ছিলেন তাঁর ইংরেজি ভাষা জ্ঞান খুব গভীর তিনি তাতে বেশ দক্ষতা স্বাচ্ছন্দ্যে তা ব্যবহার করতে পারেন এক সময় তিনি ইংরেজি অবজাভার পত্রিকার নিয়মিত সিরিয়াস পাঠক ছিলেন তিনি চাইলে ইউরোপীয় বা মার্কিন কোন দেশে সেটেল হতে পারতেন কিন্তু তিনি শিকড়ের টানটি পিছনে ফেলে মা ছেটে ছোট ভাই-বোনদেরকে আত্নীয়-স্বজনকে রেখে বার বার পৈত্রিক ভিটায় ফিরে আসতে বা যেতে বাধ্য হন যথেষ্ট অর্থ-কড়ি উপার্জন করে তিনি যখন চকরিয়া সদরের ভরামুহুরী এলাকায় বাপ-দাদার পুরনো বেড়ার ঘর ছেড়ে পাকা বাড়ি করেন, তখন এসব এলাকায় পাকা ঘর করার কথাও অনেকে ভাবতে পারেন নি তিনি যেভাবে তাঁর ভাই-বোনদেরকে ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন উন্নত জীবন-যাপনের পথ সুগম করে দেন, তখন চকরিয়ার টি পরিবারই বা তা ভেবেছে বা করতে পেরেছে? তাঁর উচ্চতর মনন আকাংখা এবং ভাই-বোনদের অনেক বড় করার উচ্চাশা তাঁকে তৎকালীন সমাজ বাস্তবতায় অনেকদূর উপরে নিয়ে যেতে পারলেও, নানা পিছুটান পারিবারিক-সামাজিক এলাকাগত বৈরিতা শত্রুতা তাঁকে তাঁর পরিবারের সদস্যগণকে বার বার খোঁচট খেতে হয়েছে ছোট ভাইকে জনাব জহুরুল মওলা ক্যাডেট কলেজে পড়িয়ে এবং উন্নত-সভ্য দেশে এবং বাংলাদেশের উঁচু তলায় পৌঁছার মতো করে গড়ে তুলেছিলেন ডা: ছরওয়ার আলম বাহাদুর যদি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে যেতেন অন্তত: বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগ দিলেও তিনি আজ নিদেনপক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বা মেজর জেনারেল পর্যায়ে কর্মরত থাকতেন কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস জনাব ডা: ছরওয়ার ইউরোপীয় উন্নত শিক্ষা পরিবেশ আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির ছোঁয়া পেয়েও নিজেকে চকরিয়ার একটি ছোট্ট কুটিরে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছেন তিলে তিলে ভুগছেন, শাররিক-মানসিক যন্ত্রণায়, তিনি তিনি না পরছেন বুলগেরিয়ায় নিজ স্ত্রী-সন্তানের কাছে যেতে, না পারছেন বাংলাদেশের সামাজিক-পারিবারিক পরিমন্ডলে নিজেকে মানানসই করে নিতে তাঁর অর্জিত সচিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা প্রয়োগ করে তো তিনি নিজের মেধা-প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারছেনই না, নিজ জবিনটাকেই তাঁর জন্য ভারি বোঝার নামান্ত হয়ে পড়েছে যৌবনকালে হেলা-ফেলায় কমিউনিজমের বই-পুস্তক পড়ে পড়ে নিজের জীবনের বিপুল সম্ভাবনাকে যেন নিজেই আত্নবিনাশের আগুনে পুড়িয়ে ফেললেন, ডা: ছরওয়ার আলম বাহাদুর ছারখার করে দিলেন তিনি, নিজের ফোটানো গোলাপ ফুলের সুভাসিত জীবন এবং পরলোকগত মা-বাবা বড় ভাই ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা, মরহুম এনামুল হক, বড় বুবু আলহাজ্ব শামীম জান্নাত ছোট বুবু আলহাজ্ব সালেহা বেগমের  অশেষ স্নেহ-মায়া-মমতা এবং অর্থ-শ্রমে স্বপ্নের মানুষ হয়ে ওঠা উচ্চ মেধা, প্রতিভা এবং উচ্চতর চিকিৎসা বিদ্যায় পড়াশোনা করে অর্জিত সব কৃত্তিময় শিক্ষাজীবন অযত্নে-অবহেলায় এখন জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি হয়তো নিজেই পস্তাচ্ছেন, কষ্ট দিচ্ছেন নিজেকে পরিবারের উজ্জ্বল সব তারকারাজিকে কেহ তাঁকে চিনতে পারছেন না যে,  কত বড় মেধা প্রতিভাসম্মপন্ন সম্ভাবনার আধার হিসাবে মুফতি আব্দুল খালেকের পুত্র ধনটি গড়ে ওঠেছিলেন! মহান আল্লাহ তায়ালার কী নিয়তি খেলা যে, তিনি কাউকে আকাশচুম্বি মেধা-মেনন দিয়েও আবার কেডে নেন, বানিয়ে দেন অতি সাধারণ অবহেলার পাত্র করে একজন মানব সন্তানকে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণনা করেন যে, ‘‘তিনি যাকে ইচ্ছা হেকমত, বুদ্ধিমত্তা, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ এবং ক্ষমতা, শক্তিমত্তা দান করেন আবার চাইলে কেড়েও  নেন তিনি, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বা জাতকে চিনিয়ে দেয়ার নিমিত্তবর্তমানে ইন্জিানয়ার জহুরুল মওলা পূর্ণকালনি অবসর জীবন-যাপন করছেন একান্তই বাবা-দাদার ভিটিতে নিজ বাসভবনে তিনি এখন নানা রোগে জর্জরিত বেশ দুর্বল হয়ে আছেন, শারীরিকভাবে কিন্তু তিনি জীবন-যাপনে এখনও সফিস্টিকেটেড বলা যায় তাঁর জীবন বোধ, এবাদত-বন্দেগী, পড়াশোনা চর্চা, সংস্কৃতি বোধ, শালীন ইসলামিক পোশাক-আশাক, শৃংখলা বোধ, নিয়ম মেনে অষুধপত্র সেবন প্রভৃতি সবকিছুতে পরিমিতি বোধ নান্দনিকতার বহি:প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় পাশাপাশি, জনাব জহুরুল মওলা বয়সেও পারিবারিক সম্পদ এবং একান্ত আপনজনদের মধ্যকার নানা পারিবারিক সমস্যা জটিলতা অতি বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছেন তিনি ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, অনেকদিন ধরে তিনি একদম কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম-কানুন মেনে চলা একজন মানুষ নিজেদের পারিবারিক সম্পদের উপর তাঁরা একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন মসজিদ নিয়েই তিনি সার্বক্ষণিক সময় কাটান তদারকিতে নিয়োজিত থাকেন তাঁর সহজাত অভ্যাস হলো; তিনি দ্বীন-দুনিয়ার সকল খবর রাখেন নিত্যদিন এবং  অন্তত: / টি দৈনিক পত্রিকা পড়েন, এখনও একজন আলেমের সন্তান হিসাবে তিনি ইসলামী তাহজিব-তমুদ্দুন মেনে চলেন এবং দৈনন্দিন বা দিন-রাত ধর্মানুশীলণ-পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত এবং তাফসির চর্চা করে করে কাটান তিনি, এখন তাঁর সান্নিধ্য পেয়ে অনেকে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত আর অনেককে পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে দিয়ে বা বিবাহ-শাদি ঘটিয়ে দিয়ে  একটি দাম্পত্য জীবনের শুভ সূচনা করিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা অত্যন্ত দূরদর্শি এবং সুনিপুণ ক্ষেত্রে প্রারম্ভিকভাবে অনেকেই তাঁর অবলম্বন করা নীতি পথ পছন্দ করতে পারেন না যাঁরা তা পারেন না, তাঁদের মধ্যে তাঁর একান্ত নিকটজনও আছেন কিন্তু তাঁর বিবেক এবং ফোর্কাস্টিং ক্ষমতা অসাধারণ তিনি নিজের বেলায় বিয়ে-শাদি সম্পন্ন করার সময় হয়তো কাউকে পান নি, কিন্তু তিনি পর্যন্ত যে সব পরিবার গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, সেখানে কোনটাতেই তাঁকে দোষারোপ করা যায়, এমনটা আমি অন্তত: দেখতে পাই না উল্লেখ্য যে, দেশের প্রখ্যাত দার্শনিক ঢাকা কলেজের বর্ষিয়ান প্রফেসর সাইদুর রহমানের ভূমিকার সাথে জনাব জহুরুল মওলার একটি জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া যায় খ্যাতিমান সাংবাদিক যায় যায় দিন সাময়িকী দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান সাহেবের প্রয়াত পিতা অধ্যাপক সাইদুর রহমান অনেক অসহায় মেধাবী উচ্চ শিক্ষা গ্রহনকারী সম্ভাবনাময় মানুষের জীবন একটি ভালো পরিবার বা দাম্পত্য জীবনের  সৃজন করিয়ে দিয়ে বড়্ড় বেশি নবীর (:) সুন্নাতের কাজ উপকার করেছিলেন, তৎকালীন সময়ে (চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাটের দশকে) অধ্যাপক সাইদুর রহমান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি শিক্ষক ছিলেন আলহাজ্ব জহুরুল মওলা আজ বার্ধ্যকের শেষ প্রান্তে এসে গেছেন, অনেকটা আমি নিজেকেও তাঁর সান্নিধ্য পেয়ে অত্যন্ত ধন্য মনে করি অনেককে তিনি তাঁর মূল্যবান পরামর্শ-উপদেশ দিয়ে সুন্দর জীবনের সোপানে ছড়িয়ে দিয়েছেন, একজন বিদগ্ধ পরিবার গঠনের কারিগরের মতো আমার বড্ড আফসোস লাগে! যখন দেখি তাঁর অতি নিকটজনরা তাঁর ভূমিকা বা অবদানকে খাটো করে দেখেন আজকের সমাজ বাস্তবতায় হয়তো তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে কিছুটা ভুল-ভ্রান্তি করে ফেলেন, কিন্তু অতীতে তাঁর গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর কোনটাই তিনি দৃষ্টিকটু ভুল করেছেন, এমনটা আমার পর্যবেক্ষণে অন্তত: ধরা পড়ে না স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছোট ছোট জন শিশুকে উপযুক্ত করে ক্যাডেট কলেজে পড়ানোর মতো দূরদর্শিতা ত্যাগী মানস চকরিয়া-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম তথা সমগ্র দেশের জন মানুষের ছিল, তা আমার জানা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর, খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারে সমাসীন . আতিউর রহমানের মতো স্কুল ত্যাগি মানুষকে জন শিক্ষকের উদ্যোগে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার সুয়োগ পেয়েছিলেন, দেশে তা দূরবীণ দিয়ে দেখলেও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, সন্দেহ হয় জনাব জহুরুল মওলা তাই করতে পেরেছিলেন আর তিনি তাঁর ছোট দুজন বোনকেও মনের মতো করে পাত্রস্থ করে দিয়ে সুখি জীবন-যাপন করার পথটি সুগম করে দেন তিনি যা করেছেন করতে পারেন নি, তা নিয়ে হয়তো পুরোপুরি পরিতৃপ্ত নন, তিনি কিন্তু মানুষ দেখছে, মরহুম মুফতি আব্দুল খালেকের সন্তান-সন্ততিগণ কীভাবে এতদূর এগিয়ে এসেছেন এর নেপথ্যেই বা  কে ছিলেন
ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলার সফলতা-ব্যর্থতা: মানুষ হিসেবে তিনি খুব বাস্তববাদী এবং হিসেবী তিনি তাঁর পরিকল্পনা বা ছক অনুযায়ী কাজ করতে অভ্যস্থ তাঁর নির্ধারিত সীমা-রেখার বা বৃত্তের বাইরে তিনি সহজে বের হতে পারেন না, চানও না আবার পারেনও কখনও কখনও তিনি তা করতে তিনি এক সময় মায়ের চাওয়া-পাওয়া এবং ভাই-বোনদের প্রতি খুব সদয় এবং উদার ছিলেন এমনটা বোঝা যায় পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখতেও সদা সতর্ক ছিলেন এবং এখনও আছেন কিন্তু অনেক সময় নিজের পরিকল্পিত বা তৈরি করা পরিমনডলের বাইরে তিনি যেতে পারেন না বলে, অন্যরা তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যান বড়জন হিসাবে তাঁর খবরদারি বা নেতৃত্ব-কতৃত্ব অনেক সময় তাঁর ছোটজনরা মেনে নিতে পারেন না তবে তাঁরা তাঁকে বাদ দিয়েও খুব একটা অটল থাকতে সক্ষম হন না তিনি তাঁর কালের অন্যতম অগ্রসর চিন্তার মানুষ পরের প্রজন্ম তাঁর সাথে একমত হতে না পারলে, কখনও কখনও তিনি মনোক্ষুন্ন হয়ে পড়েন পরিবারের ওপর তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব বজায় রাখতে গিয়ে তিনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল করেছেন, যার ক্ষতি হয়তো কখনও পোষে নেয়া যাবে না আবার তিনি নিজে থেকে অনেক সময় তা সহজ করে বা শুধরেও নেন, এমনটাও অনেক ক্ষেত্রে ঘটেছে তিনি তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে মায়া-মমতা-আদর-সোহাগে ভরে দেন তবে তাদের ব্যাপারে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে এমনভাবে রিজিড় থাকেন যে, তাতে উভয় পক্ষকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যদিয়ে যেতে হয়  ক্ষেত্র বিশেষে খুব কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় সাম্প্রতিক কিছু বিষয় তিনি সিদ্ধান্ত নিতে বা বুঝতে প্রথমে আমলে না নিয়ে ভুল করায়, এখন খুব কষ্টকর সংকট মোকাবেলা করছেন আমি নিজেও সরাসরি বিষয়টির সাথে এক পর্যায়ে সম্পৃক্ত হয়ে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি চেষ্টা করেছি, মনে-প্রাণে বিষয়টি সমাধানের পথ বের করে করতে কিন্তু তা এমন জটিল আকার ধারণ করেছে যে, এখন সেটি পরিবারের একান্ত আপনজনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে তৃতীয় পক্ষই মজা লুটছে  হয়তো এক সময় সমস্যাটিও কেটে যাবে ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে, যাবে, বৈ কি!
হাফেজ মাওলানা মুখতার আহমদ: তিনি একজন দ্বীনদার, পরহেজগার এবং তাকওয়া ওয়ালা আলেম তাঁর মতো খুলিসিয়ত সম্পন্ন মানুষ আলেম এখন খুব কম দেখতে পাওয়া যায় তিনি সারাজীবন কাটালেন, চট্টগ্রাম শহরে একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থিত বহদ্দার মসজিদে ইমামতি খতমে-কুরআন এবং খতমে-বোখারী শরীফ পড়া প্রভৃতি  ধর্মীয় মুসলমানদের ইমান-আকিদা পরিশুদ্ধকরণের কাজ করে করে তাঁর প্রথম সন্তানগণ মেয়ে হওয়ায়, অনেকে তাঁকে ভালভাবে নিতেন না কিন্তু অসীম ধৈর্য্য এবং দৃঢ় ইমানী জোষ নিয়ে তাঁর প্রত্যেকটি কন্যা সন্তানকে উপযুক্ত করে তুলেছেন, হাফেজ মওলানা মুখতার আহমদ মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত-বরকত এবং মা-বাবার দোয়ায় তাঁর কন্যাগণ অত্যন্ত মেধাবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বিবিধ সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত তাঁর শেষ দুটি ছেলে সন্তান এখনও আপরিণত এবং স্কুল-কলেজে পড়ছে তাঁর মেয়ে জামাইগণ সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত এবং উচ্চতর পড়াশোনা করা মানুষ তাঁদের মধ্যে বড়জন স্নাতকোত্তর পাশ এবং বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন দ্বিতীয়জন একজন কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার, তৃতীয়জন বুয়েট হতে পাশ করা ইন্জিনিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিইচডি গবেষণারত স্ব-স্ত্রীক হাফেজ মুখতার সাহেবের চতুর্থ কন্যার স্বামী একজন চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা এবং একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাঁর পঞ্চম কন্যাটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি সম্মান শ্রেণির (সাইকোলজি) ছাত্রী তাঁর আরেকটি মেয়ে চট্টগ্রাম শহরে বিয়ে দিয়েছেন মুফতি মরহুম আব্দুল খালেকের দ্বিতীয় সন্তানটিকে তিনি তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি আলেম বানিয়েছিলেন আর তিনি তাঁর (মরহুম খালেক) পরিবারের দ্বীনি চেরাগে মতো জীবন-যাপন করে যাচ্ছেন এবং পরিবারের সকল সদস্যের মাঝে ইমানী চেতনা বা পূর্ব পুরুষগণের ওলেমা-মাশায়েখ ধারার স্মারক হয়ে আছেন
মরহুম মো: এনামুল হক: তিনি শেষ সময়টিতে শারীরিক-মানসিক অনেক যন্ত্রণা পোহিয়ে পরলোক যাত্রা করেন, ২০১৮ সালে জনাব আলহাজ্ব জহুরুল মওলা, পরিবারের বাইরে থেকে দেশে-বিদেশে আয়-রোজগার করে করে মা-ভাই-বোনদের জন্য যা কিছু পাঠাতেন, তা সুষ্ঠু ব্যবহার সুব্যবস্থাপনা করতেন মরহুম মুফতি খালেকের তৃতীয় সন্তানটি তিনি এক সময় ব্যাংকার ছিলেন এবং পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-এর রাজনীতি করেছেন চকরিয়া উপজেলা পৌরসভা এলাকায় ছাত্র জীবন হতেই তিনি ছাত্র লীগ, যুব লীগ এবং চকরিয়া উপজেলা পৌরসভা আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা কর্মী হিসাবে কাজ করেন তিনি একটি এনজিও পরিচালনা, ঠিকাদারি এবং ক্লিনিক ব্যবসায় করেন, দীর্ঘদিন তাঁদের মমতাময়ী মরহুম মা আলহাজ্ব মাজেদা বেগমের ছায়ায় ছায়ায় থেকে মরহুম এনামূল হক জনাব জহুরুল মওলার সাথে কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে পরিবারের ছোট ছোট ভাই-বোনদের সুখে-দু:খে সব সময় পাশে থেকেছেন, তিনি তাঁদের গড়ে ওঠা এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখ-স্বচ্ছন্দ্য উপভোগ করার এক অনবদ্য অংশিদার ছিলেন, তিনি মরহুম এনামুল হক তাঁদের ভাই-বোনদের সবার ছোটজন শহীদ লে: কর্নেল আবু মুসা মো: আইয়ুব কাইসারের লিগ্যাল গার্জিয়ান এবং বন্ধু সুলভ ছিলেন বিডিআর হত্যাকান্ডের খবর পেয়েই তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় ভাইটি তাঁর পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়ার  জন্য রাজধানী ডাকার উদ্দেশ্যে উল্কা বেগে ছুটে যান আর শহীদ লে: কর্নেল কাইসারের মরদেহ সাথে নিয়ে এসে চকরিয়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহীত করেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল শামীম আহমদ চৌধুরী মহোদয়ও এতে উপস্থিত ছিলেন ক্ষেত্রে অবশ্য মরহুম মুফতি খালেকের দ্বিতীয় কন্যার জীবনসঙ্গী আলহাজ্ব জনাব নুরুল ইসলামও ঢাকা হতে তাঁদের সঙ্গী হয়েছিলেন তাঁদেরকে সর্বাত্নক সাহায্য-সহযোগিতা করেন
আলহাজ্ব সালেহা বেগম তাঁর জীবনসঙ্গী আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম: দম্পতিও মুফতি মরহুম আব্দুল খালেক পরিবারের বিকাশ এবং উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা এখনও তাঁর (বাবা-মায়ের বা শ্বশুর-শাশুড়ি) পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সুখে-দু:খে পাশে থাকেন তাঁদের সন্তানগণ অধিকাংশই প্রবাসী হওয়ায়, বয়সেও তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ছেলে-মেয়েদের নিকট গমনাগমনে ব্যস্ত সময় কাটান জনাব আলহাজ্ব সালেহা বেগম এবং তাঁর স্বামী অত্যন্ত্ব দায়িত্বশীল এবং কর্তব্যপরায়ন ধর্ম ভীরু মুফতি খালেকের ছোট সন্তান ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার সময় তাঁরা তাঁদের খরচাদি যোগানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়তা করেন তাঁরা দুজনে নিজ সন্তানদেরকে যেমন আলোকিত করে তুলেছেন, তাঁদের সকল আত্নীয়-স্বজদেরও তাঁরা সব সময় এগিয়ে দিয়েছেন দিচ্ছেন এখনও, তাঁরা ইন্জিনিয়ার জহুরুল মওলা মা-বাবা মরহুম মুফতি খালেক আলহাজ্ব মাজেদা বেগম দম্পতির সন্তানগণকে তাঁদের শৈশব-কৈশোর জীবনে পড়াশোনা-কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গাইড করেছেন, ভিত্তি রচনা করে দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর পরের জনরাও সে ক্ষেত্রে কম অবদান রাখেন নি এবং এখনও তা অব্যাহত রেখেছেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন