মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০১৫

Primary education of Chakaria

চকরিয়ায় একটি গণ-পাঠাগার চাই
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।

প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক স্যারের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করে লেখাটি শুরু করা যেতে পারে। তিনি বলেন,“কোন জনপথ বা দেশ-জাতি কতটা অগ্রসর বা উন্নত তা পরিমাপের জন্য দু‘টি জিনিষ বিবেচনা করা যেতে পারে। একটি হলো; লাইব্রেরীগুলোতে রাখা বইপত্রের মান। আর, একটি হলো; বাজারে বিক্রির জন্য রাখা জিনিষপত্র।লাইব্রেরীগুলোতে যদি কালোত্তীর্ণ বা উচ্চ মার্গীয় বইপত্র পাওয়া যায় এবং বাজারে যদি সব ধরণের মানসম্মত পণ্য ও তাজা বা সতেজ-সজীব জিনিষপত্র পাওয়া যায়, তবে বুঝতে হবে, সে এলাকার মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় ও সভ্যতার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে।” অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন, বাঙ্গালী জাতির অন্যতম এবজন শ্রেষ্ঠ সন্তান।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সেখানেই দীর্ঘ ত্রিশ/চল্লিশ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে জাতীয় অধ্যাপকের পদে সমাসীন করে মহিম্মানিত করেছিলেন।ষাটের দশকে যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে, ভবিষ্যত বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতির স্বদেশ ও বিশ্ব দরবারে অবস্থান, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান, অর্থনীতি, সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা প্রভৃতি সম্পর্কে যাঁরা মতামত ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন; অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন, তাঁদের  মধ্যে অন্যতম।তাঁর মত আরও ‍ছিলেন; অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্রাপক নীলিমা ইব্রাহীম, সচিব রুহুল কুদ্দুছ, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।যাহোক, লিখছিলাম চকরিয়া উপজেলা সদরে একটি গণ-পাঠাগার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার কথা।এখানে(গণ পাঠাগারে) আরও থাকতে পারে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন ও ব্যবহার শিক্ষার কেন্দ্র। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা এবং দীর্ঘ ১৬ বছর চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান এবং সেখানে ১০ বছরের সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা ও সরকারি চাকুরির সুবাধে ১৫ বছর ধরে আমি সিলেট, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং বর্তমান ককসবাজার জেলায় অবস্থান করছি।সব সময় পড়াশোনা কেন্দ্রিক কাজ করেছি এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি।দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান বেশ কিছু লেখকের লেখা পড়েছি ও চর্চা করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। যাঁরা আমাকে চিনেন, তাঁদের সাথে প্রায়ই এসব বিষয়ে আমার কথা-বার্তা হয়। পাশাপাশি, আমি বিগত ৭/৮ বছর ধরে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন এবং এর প্রয়োগ করে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষকদের মাঝে এসব নিয়ে কাজ করছি, শিখছি এবং শিখাচ্ছি।সর্বোপরি, জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করার আনন্দই আলাদা।যাঁরা একবার এ আনন্দ পেয়েছেন, তাঁর এসব হতে দূরে থাকতে পারেন না।আর সে উপলব্ধি হতেই আমাদের চকরিয়া সদরে অন্য অনেক কিছু থাকলেও, একটি গণ-পাঠাগার ভীষণ প্রয়োজন বোধ করি।তাছাড়া, বই-পুস্তকের ব্যবসায় লিপ্ত লাইব্রেরীগুলোতেও ভাল বইপত্র চকরিয়ায় পাওয়ায় দুস্কর।কিন্তু চকরিয়ায় এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ৮/১০টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, সিনিয়ার মাদ্রাসা এবং বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল লেখকের পাঠ্য বই এবং সহায়ক বইপত্রের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, চকরিয়া সদরে।অথচ চকরিয়ার কৃতি সন্তানরা সরকারি-বেসরকারি অনেক উচ্চতর ও গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন।তাঁরা প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, চকরিয়ার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শেষে চট্টগ্রাম-ঢাকা শহরে পড়াশোনা করে। কিন্তু সব মানুষের সন্তানরা তো আর চকরিয়ার বাইরে পড়াশোনা করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ও তথ্য-প্রযুক্তির বিশাল ক্ষেত্রে বিচরণ করে নিজেদেরকে যোগ্য ও দক্ষ প্রজন্ম ‍হিসেবে  গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে, তরূণ প্রজন্মের মাধ্যে বৃটশ আমলে কলাকাতয় সাংবাতিকতা করেছেন এমন ব্যক্তিত্ব আব্দুর রশিদ ছিদ্দিকী, খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, রাজনীতিবিদও সমাজ সেবক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক চৌধুলী, ফিরোজ উকিল, অধ্যাপক শফিউল আলম, ড. নুরুল মোস্তাফা, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, বিজ্ঞানী আনোয়ার হোসেন, ব্যাংকার নুরুল আলম, যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত অবস্থায় পরলোকগমনকারি মন্জুর এলাহী ও নুরুল আমিন, অধ্যাপক শমশের উদ্দিন, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ, ডা: শফিকুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব:) রুহুল আলম চৌধুরী, ডা: মাহবুব কামাল, ডা: জামাল উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ ইব্রাহিম, শহীদ লে: কর্ণেল আবু মুসা মো: আইয়ুব কায়সার প্রমুখের মত বড় মাপের ব্যক্তিত্ব; চকরিয়ায় আর তেমন একটা আসছেন না। আরও অনেক নাম না জানা চকরিয়ার কৃতি সন্তান আছেন ও ছিলেন। কিন্তু চকরিয়ার মত একটি সমৃদ্ধ উপজেলায় এ সংখ্যা নগন্য। আরও অনেক আলোকিত মানুষ চকরিয়ায় প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি একটি শিক্ষিত, রুচিশীল এবং অগ্রসর জনগোষ্ঠী। হাজারে হাজারে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ তরুণ প্রজন্ম এখানে থাকা দরকার।আর বড় মাপের মানুষ তৈরি করার জন্য চাই, ভাল ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং গণ-পাঠাগারের মত শিক্ষার আলোর মশালবাহী প্রতিষ্ঠান।বৃটিশ শাসনামল, পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আমলেও চকরিয়ায় অনেক কৃতি সন্তান ছিলেন ও আছেন। যাঁরা দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান ও ভূমিকা পালন করে গেছেন।চকরিয়ায় বর্তমান প্রজন্মের মাঝে প্রতিষ্ঠিত ও নেতৃস্থানীয় বড় মাপের মানুষের সংখ্যা মোটেই উল্লেখযোগ্য নয়। অথচ চকরিয়া বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিবেচনায় একটি সমৃদ্ধ ও খুবই সম্ভাবনাময় উপজেলা।।উন্নয়ন অর্থনীতির সংজ্ঞার আলোকে গ্রোথ-সেন্টার। এখানে প্রচুর ধান উৎপাদন হয়, লবণ উৎপাদন হয় ও তামাক জাত পণ্য উৎপাদন হয়।চকরিয়ার মৎস্য সম্পদের জগৎ জোড়ে খ্যাতি রয়েছে।আছে, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বনজ সম্পদ।তাছাড়া, চকরিয়া সদর এখন ব্যবসায়-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কমতি নেই এবং অত্যাধুনিক সব শপিং কম্লেক্স গড়ে ওঠেছে, অনেক।যার আকর্ষণে মহেশখালী-কুতুবদিয়া, লামা-আলীকদম, লোহাগাড়া, ঈদগাহ-রামুর মানুষজনও এখানে কেনা-কাটায় প্রবল ভীড় জমায়। শুধু অভাব দেখি, জ্ঞান-বিজ্ঞান-তথ্য-প্রযুক্তি এবং উন্নত ও মানসম্মত শিক্ষা-দীক্ষার কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠান। এ অভাব পূরণে একটি গণ-পাঠাগার অনেক খানি ভূমিকা পালন করবে বলে, আমার বিশ্বাস।চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় এবং উপজেলা নিবাংহী অফিসার মহোদয় ও স্থানীয় সচেতন-শিক্ষিত এবং বিত্তশালী জনগোষ্ঠী আন্তরিকভাবে চাইলে, এ ধরণের সফল উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা আদৌ অসম্ভব নয়। খুবই সম্ভব। আর, মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাল কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চকরিয়ায় থাকলেও, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও খ্যাতি অর্জন করতে পারছে না। এদিকে, কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন। ময়মনসিং, কুমিল্লা, হাটহাজারী প্রভৃতি এলাকা শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ এগিয়ে গেছে। বিশেষত তথ্য-প্রযুক্তি এবং বিবিধ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, এসব এলাকায়। কিন্তু, কক্সবাজার জেলায় এর বড়ই অভাব দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চকরিয়া উপজেলা নেতৃস্থানীয় অবস্থান দখল করে নিতে পারে।গড়ে তোলা যেতে পারে, শত শত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারিগরী শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্র। এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে পারলে, একটি বিশাল দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে এবং দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান সব সরকারি-বেসরকারি প্রদিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়তে পারবে, তারা। আয় করতে সক্ষম হবে হাজার ডলার।আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কম্পিউটার অপারেটর জাতীয় পদে কুমিল্লা অঞ্চলের কর্মীরাই অফিস-আদালতগুলো দখল করে আছে, বেশি। তারা পারলে, আমরা কক্সবাজারবাসী কেন পারব না?



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন