বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

Primary School Teachers and Needs of Training

প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ চাহিদা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
  সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
   মহেশখালী, কক্সবাজার।
বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য তাঁদের পেশাগত দক্ষতা ও মান বৃদ্ধিকল্পে বিষয় ভিত্তিকসহ বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। আর, মান-সম্মত পড়াশোনা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদেরকে পেশাগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মানোভাবাপন্ন করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই।আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড, দক্ষিন কোরিয়া, চীন, জাপানসহ যেসব দেশ প্রাথমিক শিক্ষায় সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছেছে; তারাও দীর্ঘদিন এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে।আশা করি, আগামী ৫/১০ বছরের মধ্যে আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার মান কাংখিত পর্যায়ে উন্নীত হবে। যারা এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখেন, তারা ভাল করে জানেন যে, দেশের আজকের প্রাথমিক শিক্ষা সে ৫/১০ বছর পূর্বের অবস্থানে নেই।শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এখন গৌরব করা যায়।জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কতৃক এ ক্ষেত্রের সাফল্য সম্পর্কিত প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোই এর যথার্থ প্রমাণ। যাহোক, আমার আজকের নিবন্ধটি সাজানো হয়েছ; প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণ চাহিদা নিয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মরত শিক্ষকদের জন্য প্রচলন করা হয়েছে, চাহিদা ভিত্তিক সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের। এ বিভাগে এ ধরণের প্রশিক্ষণ চালু আছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই ১৯৮৫/৮৬ সাল হতে। কিন্তু নাম এর নাম ছিল সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ। আর, আগে এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হত দু‘মাস অন্তর অন্তর। এখন এটি তিন মাস পর পর করা হয় এবং এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে নীড বেইজড সাব-ক্লাস্টার ট্রেনিং বা চাহিদা ভিত্তিক সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ। আসলে, দেশে-বিদেশে কোন প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কর্মদক্ষতা ও পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য এ ধরণের প্রশিক্ষণ চলে আসছে, অনেক দিন হতে। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মরত শিক্ষকদের জন্য এ প্রথম(২০১৩ সাল হতে) চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি অবস্থিত ৪/৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণ এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আর প্রশিক্ষক থাকেন দু‘জন; একজন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও অপরজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক।আগে এ প্রশিক্ষণের ম্যানুয়েল পাঠানো হত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে। আর এখন শিক্ষকমন্ডলী নিজেরাই নিজেদের প্রশিক্ষণ চাহিদা নির্ধারণ করবেন এবং প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল তৈরি করে তা অনুসরণ করে তাঁদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হবে।প্রত্যেক বিদালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণ নিজ নিজ বিদ্যালয় হতে প্রশিক্ষণ চাহিদা পাঠাবেন। আর উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ইউ.আর.সি ইন্স্ট্রাক্টর, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং দক্ষ শিক্ষকগণের সমন্বয়ে ইউ.আর.সি-তে সভায় মিলিত হয়ে চাহিদা ভিত্তিক সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল তৈরি করবেন ও তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হবে।এটাই আমাদের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। মহেশখালী উপজেলায় কর্মরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাঁদের যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন এমন কিছু বিষয় বেছে নিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রশিক্ষণ চাহিদা নিন্মে উল্লেখ করা হলো।
.          শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান, পেশাগত অনুশীলণ এবং পেশাগত মূল্যবোধ ও স্থাপন তথা শিক্ষক যোগ্যতাগুলো ভালভাবে আয়ত্ত্ব করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
.          পাঠ পরিকল্পনা তৈরি এবং ব্যবহার করে পাঠদান করতে জানা।
.          অধিক শিক্ষার্থী বিশিষ্ট বিদ্যালয়ে সফল পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করার কৌশল জানা।
.          প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলো ভালভাবে আয়ত্ত্ব করে তা ব্যবহারপূর্বক পাঠদান করতে জানা।
.          বিষয় ও বিষয়বস্তুর উপযোগি উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার করে পাঠদান করতে জানা।
.          ইংরেজি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
.          বিবিধ মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জানা।
.          প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন।
.          চারু-কারু ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে জানা।
.          পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস তৈরি করতে জানা।
.          কর্মরত শিক্ষকদের মাঝে পেশাজীবীসুলভ মনোবৃত্তি গড়ে তোলা বিষয়ে জানা।
.          ব্লাকবোর্ড, হোয়াইট বোর্ড, চকবোর্ড ইত্যাদির দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কে জানা।
.          তথ্য-প্রযুক্তি বা মালিটমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান করতে জানা।
.          কর্মরত শিক্ষক কম, অথচ শিক্ষার্থী বেশি; এমন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্পর্কে জানা।
.          ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
.          সময় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা লাভ করা।
.          বিষয় ও বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিখন ফল তৈরি করতে পারা।
.          পশ্চাদপদ বা অসচেতন অভিভাবকদের সন্তানদের পড়াশোনায় আকৃষ্ট করার কৌশল জানা।
.          শিক্ষকমন্ডলী, এস.এম.সি এবং জনগোষ্ঠীর মধ্যকার যোগাযোগ এবং সম্পর্ক বিষয়ে জানা।
.          সরকারি চাকুরিজীবীদের ছুটি বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা।
.          সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানা।
.          শিখণ-শেখানো ছাড়া বিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কে জানা।
.          আধুনিক বা নতুন নতুন পাঠদান পদ্ধতি বিষয়ে পারদর্শী হওয়া।
.          গণিত ও গাণিতিক সমস্যা সমাধান বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
.          সন্জীবনী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
.          বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে পাঠদান বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন।
এভাবে আরও অনেক বিষয় চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণের বিষয় বা ম্যানুয়েলের কথা শিক্ষকগণ উল্লেখ করেছেন।

পরিশেষে, বলা যায় যে, চাহিদা ভিত্তিক সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের ধারণা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন শোনালেও, এমন প্রশিক্ষণ অনেক দিন ধরে চলে আসছে।এটি একটি চমৎকার ধারণা। আসলে এটি একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও অনুসৃত পেশাগত উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ ভাবনা। খ্যাতিমান সব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের পদ্ধতি প্রয়োগ হয়ে আসছে। প্রচলিত উন্নত প্রশিক্ষণ ধারণাগুলোর মত চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি একটি বেশ কার্যকর কৌশল। আশা করা যায়, প্রাথমিক স্তরে এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ পরিচালনা অব্যাহত রাখা হলে, কর্মরত শিক্ষকগণ আরও উন্নত, দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মনসম্মত শিক্ষাদানের কারিগর রূপে শিক্ষকগণ তাঁদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন