শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

Is Quality Primary Education Possible?

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন কী সম্ভব?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা যে এগিয়ে যাচ্ছে, সে কথা সবাই স্বীকার করছে। দেশ-বিদেশে যেসব সংস্থা বা সংগঠন এ শিক্ষা স্তর নিয়ে কাজ করে থাকে তারা সবাই বলছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখ করার মত। কিন্তু আমরা যারা সরাসরি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এবং শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করছি; তারা এর মান নিয়ে পুরোপুরি সন্তোষ্ট কিনা বলা মুসকিল। এর অনেকগুলো দৃশ্য-অদৃশ্য কারণ রয়েছে। আর, আমরা সবাই জানি যে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে চলমান কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো, ‘সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা।’ বিগত ১৬ বছর ধরে আমি এসব নিয়ে পড়াশোনা করছি, ভাবছি এবং লিখে আসছি। আর যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের ভাবনাগুলোও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এসব ভাবনার আলোকে এ নিবন্ধটি তৈরি করার প্রয়াস চালাব।
১.শিক্ষকদের শিক্ষাদান কার্যক্রমের মান প্রশ্নাতীত নয়: বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে কর্মরত শিক্ষকগণ যে বেতন-ভাতা পান; তা একেবারে কম তা দাবি করা অন্যায্য বলে মনে করি। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষকের ভবাবখানা এমন যে, তাঁরা মূল্যায়িত হচ্ছেন না, উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই, তাঁদের দায়-দায়িত্ব পালনকালে পূর্ণ মনোনিবেশ করা তাঁর জন্য সম্ভব হয়না। তাঁদের এ ধরণের দাবি বা মনোবাসনা কতটা যৌক্তিক? যাহোক, শিক্ষকতায় আসার পর থেকেই তাঁরা এসব নিয়ে হা-হুতাশ করতে শুরু করেন, আন্দোলন করেন। কথা হলো, তাঁরা সব কিছু জেনে-শুনেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকতায় এসেছেন। সুতরাং আন্তরিকতার সাথে দরদ দিয়ে প্রথমিক শিক্ষাক্রম, যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম, পাঠ্যবই, পাঠ্য বিষয়বস্তু, পাঠদানের কলা-কৌশল, উপকরণ তৈরি, সংগ্রহ ও ব্যবহার, চাকুরি বিধি-বিধানসহ প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিস্ট যাবতীয় বিষয়গুলো ভালভাবে  অধ্যয়ন করে ও আয়ত্ত্ব করে নেয়া শিক্ষকদের জন্য অপরিহার্য। ইতোপূর্বে, তাঁরা যেসব একডেমিক যোগ্যতা অর্জন করে শিক্ষকতায় এসেছেন, তা এখানে তাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বটে, মূল চালিকা শক্তি নয়। আমার মনে হয়, প্রাথমিক শিক্ষায় কাজ করা এবং এখানে শিক্ষাদান করা সম্পূর্ণ আলাদা একটি আর্ট বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিসঞ্জাত কলা-কৌশল। সনাতন ধ্যান-ধারণা নিয়ে শ্রেণি পাঠদান এবং বিদ্যালয় গমনাগমন ও শিশুদেরকে দায়সারাভাবে উপদেশ-পরামর্শ দানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থী গড়ে তোলা অসম্ভব প্রায়। প্রাথমিক স্তরের জন্য নির্ধারিত ও ব্যবহৃত পাঠ্যবই এবং বিষয়বস্তুসমূহ প্রত্যেক শিক্ষককে নিখুঁতভাবে এবং হাতে-কলমে নিপুণ দক্ষতায় পরদর্শি হয়ে পাঠদান করতে সক্ষম হতে হবে। একজন বি.এ পাশ/এম.এ পাশ শিক্ষকের জন্য এসব তেমন কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁদের বিবেকবোধ এবং আন্তরিকতার বড়ই অভাব। আর শিক্ষক নিয়োগের সময় যাঁরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁরা আদৌ শিক্ষকতা করবেন, না অন্য  ৮/১০টি চাকুরির মত একটি চাকুরি করবেন; সে বিষয়টি নিয়োগকারি কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক নিয়োগদনের সময় আরও বিচক্ষণতার সাথে ভেবে দেখতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনা বা অন্যান্য বিবেচনার চেয়ে অন্তত শিক্ষকতায় যারা আসছেন, তাঁদের ব্যাপারে শিক্ষকতাকে তাঁরা পেশা হিসেবে কতটা দরদ দিয়ে গ্রহন করে নেবেন, সে বিবেচনাটাকে অধিকতর গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। ডি.পি-এড/সি-ইন-এডসহ পেশাগত উন্নয়নমূলক সব মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং বিষয় ভিত্ত্কি প্রশিক্ষণগুলো পরিচালনা এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণের মান নিশিতকরণে সর্বস্তরে নিবীড মনিটরিং প্রয়োজন। বর্তমানে এসব কার্যক্রম যেভাবে চলছে, তা মানোত্তীর্ণ কিনা ভেবে দেখা দরকার। বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণগুলোর মান অত্যন্ত গতানুগতিক হয়ে পড়েছে। শিক্ষকগণই শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হওয়ায়, প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করানো এবং নীতিমালাসমূহ কঠোরভাবে মেনে চলা হয় না। আর ইউ.অর.সি-গুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাগত জটিলতার কারণে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণকক্ষে ধরে রাখা এবং পূর্ণ মনোনিবেশ করানো অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত: নারী শিক্ষকদের এসব ক্ষেত্রে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া, নারী শিক্ষকদের জন্য বিদ্যালয় পরিবেশও অনেক সময় উপযোগি এবং নিরাপদ নয়। গ্রামীণ পরিমন্ডলে বিদ্যালয়গুলোর পরিবেশও অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক/শিক্ষিকা বান্ধব এবং শিশু বান্ধব নয়। বিশেষত পার্বত্য এলাকা, হাওর এলাকা, চরাঞ্চল এবং দীপাঞ্চলের পরিবেশ এখনও পড়াশোনা বান্ধব নয়। সর্বোপরি, শিক্ষকগণ পড়াশোনা মনস্ক হচ্ছেন না। শিক্ষকগণকে পড়াশোনা মনস্ক এবং তথ্য-প্রযুক্তি মনস্ক করার জন্য বিদ্যালয় ভিত্তিক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ভাবনাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের কর্তৃপক্ষকে শিক্ষকদের পেশাগতভাবে সমৃদ্ধকরণের ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা একান্ত জরূরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়টির ওপরই বার বার জোর দিতে হবে। আর এ জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি চাকুরি বিধি-বিধান এবং বিভাগীয় নীতিমালার আলোকে কঠোর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদেরকে মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষা গ্রহনের ব্যবস্থা করতে হবে। একাডেমিক তত্ত্বাবধায়ক প্রধান শিক্ষকগণকে পুরোপুরি ক্ষমতায়িত করতে হবে। যেসব শিক্ষক তাদের নির্দেশনা বা পরামর্শ অনুযায়ি কাজ করবেন না তাঁদের বিরূদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে, প্রধান শিক্ষকগণকে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন স্তরে শৈথিল্য প্রদর্শন বা কারো জন্য পক্ষপাতমূলক আচরণ গ্রহনযোগ্য হবে না, এমন কঠোর মনোভাব পেষণ করা বাঞ্চনীয় হবে। শিক্ষকদের অন্যান্য অপরাধে নমনীয়তা প্রযোজ্য হলেও, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদানে অবহেলা কোন মতেই মার্জনীয় হবে না। সর্বোপরি, শিক্ষকতায় থাকতে হলে, অবশ্যই তাঁকে মানসম্মত শিক্ষক হতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া চরবে না।

২.গণমানুষের শিক্ষা সচেতনতা: বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় ব্যাপক জনগোষ্ঠী এখনও শিক্ষা সচেতন নন। শিশুদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠানো এবং শিক্ষকদের দেয়া পড়া শেখা ও বাড়ীতে পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে, শিক্ষকগণ যতই আন্তরিক হন না কেন অভিভাবকগণের সহযোগিতা বা সচেতনতা ছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পড়াশোনা সম্ভবপর হয় না।

৩. এনসিটিবি, নেপ, পিটিআই ও ইউ.আর.সি-কে সমৃদ্ধ ও সক্রিয়করণ:  প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের জন্য পড়াশোনা তথা একাডেমিক কার্যক্রমকে মানসম্মতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতীয় হতে স্থানীয় পর্যায়ে ভূমিকা পালনকারি এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও স্বাবলম্বী এবং শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে মেধাবী, প্রতিভাবান এবং গবেষণামনস্ক জনবল নিয়োগ দান এবং অতিথি বক্তাগণকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসে উন্নত ও কার্যকর প্রশিক্ষণের আয়োজন করা প্রয়োজন। বি.পি.এ.টি.সি বা বিয়ামসহ দেশ-বিদেশের উন্নত পেশাজীবী তৈরি করতে সক্ষম, এমন প্রতিষ্টানের আদলে নেপ/পিটিআইকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বলে মনে হয়।

৪.কর্তৃপক্ষীয় সকল স্তরে একাডেমিক মনস্কতাকে প্রাধান্য দিতে হবে: প্রশাসনিক বা পরিচালনা-ব্যবস্থাপনাগত দিকগুলো প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে অনেকটা গোছালো এবং পরিচ্ছন্ন রূপ পেয়েছে বলে মনে হয়। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে সকল কাজে একটি গতিশীলতা এবং শৃংখলা-স্বচ্ছতা বিরাজমান। এখানে যে জিনিষটা বেশি বেশি অভাব বোধ করি, সেটা হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিখন-শেখানো কার্যক্রম এবং এ কাজটির নিবীড তদারকি। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে যেসব কর্মকর্তা এসব কাজ তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদেরকে অফিস কাজ এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে বিবিধ কাজে অনেক সময় দায়িত্ব পালন করতে হয় বলে নিজ নিজ মূল কাজে তাঁরা তেমন মনোনিবেশ করতে সক্ষম হন না। আবার, এ স্তরের কর্মকর্তাগণ ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন অবস্থান নিলে, উপরের স্তরের কর্মকর্তাগণ শিক্ষকদের প্রতি অনেক ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শন করেন, অভিযোগটি যথাযথভাবে আমলে নেন না। মাঠ পর্যায়ে কোন কোন কর্মকর্তার সততা-নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু সবাইকে এমন ভাবা উচিত নয়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাগণ আন্তরিক ও সক্রিয় আছেন বলেই, প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে। এ সাফল্যের অনেকটা কৃতিত্ত্ব তাঁদেরই প্রাপ্য। সর্বোপরি, শ্রেণি পাঠদান/পড়াশোনা ক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব পালনে অবহেলা/শৈথিল্য প্রদর্শনের জন্য কোন শিক্ষকের বিরূদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ পেলে কোন স্তরেই যেন নমনীয়তা প্রদর্শন করা না হয়, সে বিষয়টা ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি।

৫.শিক্ষকদের রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তি প্রদর্শন বা তদবারবাজি প্রবণতা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক প্রতিপত্তি বা শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে সিদ্ধহস্ত। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণকে হেনস্থা করা এবং কথায় কথায় ঘুস খাওয়ার অভিযোগ তোলে বিব্রত করা অথবা যখন-তখন আজে-বাজে অভিযোগে অভিযুক্ত করার প্রবণতা খুবই প্রবল। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, শিক্ষকদেরকে সরকারি চাকুরিজীবীসুলভ আচার-আচরণে অভ্যস্থ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। আর খারাপ বা কাজে-কর্মে যেসব কর্মকর্তা সুশীল, গতিশীল ও স্বচ্চ নন, কর্তৃপক্ষকে তাঁদের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। এ ধরণের কর্মকর্তাগণকে পদায়ন, বদলী এবং দায়িত্ব প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা খাতের মত (জাতির ভবিষ্যত নিস্পাপ-নির্দোষ শিশুদের শিক্ষার কাজ) এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন কর্মকর্তা একান্তই সময়ের দাবি। অপরদিকে খারাপ বা দুষ্টু প্রকৃতির শিক্ষকগণকেও নিস্কলুস ও পড়াশোনা মনস্ক করে তোলা সময়ের দাবি। শিক্ষকগণ হবেন পুরোপুরি শিক্ষকসুলভ, রাজনৈতিক কর্মীসুলভ নয়, মোটেই। রাজনীতি করবেন, রাজনীতিকগণ। শিক্ষকগণ শিক্ষকই, অন্য কিছু নয়।

৬.সকল এলাকার বিদ্যালয়গুলোর  ‍সুসম উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ: দেশের সকল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলো সমভাবে সমাধান করা হচ্ছে না। কোন কোন এলাকায় পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আসবাবপত্র স্বল্পতা এবং শিক্ষক স্বল্পতার সমস্যা সমাধান করা হয়েছে, পুরোপুরি। কোন কোন এলাকায় অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কাজও করা হয়েছে। কিন্তু কোন কোন এলাকায় এসব এখনও তীব্র সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে এসব বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা। অতএব, দেশের সকল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন কর্মকান্ড সমভাবে এগিয়ে নেয়া উচিত।

৬.প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দপ্তর-অধিদপ্তরে গতিশীলতা আননয়ন এবং বৈষম্য নিরসণ: প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাগণ; বিশেষত: উপপরিচালক মহোদয়গণ হতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পর্যন্ত সবার মাঝে কম-বেশি হতাশা এবং বঞ্চিত হওয়ার বেদনা কাজ করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি সনির্বদ্ধ অনুরোধ হলো, প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ সাফল্য পেতে চাইলে তাঁদের জন্য আরও কিছু করার কথা ভাবুন। নিয়মিত পদোন্নতি, পদায়ন এবং প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করুন। বিনিময়ে অভাবনীয় প্রতিদান পাওয়া যেতে পারে। কারণ এ বিভাগে অনেক মেধাবী, প্রতিভাবান এবং নিষ্ঠাবান মানূষ কাজ করছেন। তাঁরা কাজ করেন, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য। তাঁরা শিক্ষক-কর্মকর্তা। তাঁরা ভাল মানুষ। তাঁদের মনে কষ্ট রেখে বেশিদূর এগুনো যাবে কিনা, ভেবে দেখা প্রয়োজন।

৭. মহা হিসাব নিরীক্ষক এবং নিয়ন্ত্রক মহোদয়ের অফিস, অর্থ মন্ত্রণালয়, এবং প্রথামিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার সুসমন্বয় সাধন: জাতীয় স্কেলে বেতন-ভাতা প্রাপ্তিসহ শিক্ষকদের যাবতীয় প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাদি দ্রুততম এবং যথাসময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য উপরোক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে সুসমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ নিতান্ত সহজ-সরল এবং নিরীহ চাকুরিজীবী। তাঁদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিধি-বিধান অনুযায়ি সময়মত না পেলে, তাঁরা খুব কষ্ট পান। ফলে, একাগ্রচিত্তে ও চাকুরি সন্তুষ্টি নিয়ে অভাব-অনটনের বোঝা বহন করে শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে সক্ষম হন না, অনেকেই। তাঁদের সার্বিক দুর্ভোগসমূহের প্রভাব এসে পড়ে শ্রেনিকক্ষে পাঠদন কার্যক্রম পরিচালনা কাজে। এতে সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসে। সুতরাং উল্লেখিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংল্শিষ্ট কাজগুলোতে গতিশীলতা আনয়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসগুলোকে আরও গতিশীল এবং স্বচ্ছ করা অপরিহার্য। সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রী কতৃক প্রাথমিক বিদ্রালয়ের প্রধান শিক্ষকগণকে উন্নীত বেতন স্কেলসহ দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা প্রদান এবং তা বাস্তবায়নে সৃষ্ট জটিলতাকে এর দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

উপসংহার: উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়ে কর্মরত একজন নিন্ম স্তরের কর্মকর্তার সরেজমিনে কাজ করার উপলব্ধিজাত পর্যবেক্ষণ মাত্র। কোন প্রকার গবেষণা বা ব্যাপক পরিসরে ভাবনাজাত প্রবন্ধ নয়। প্রাথমিক শিক্ষার বিবিধ বিষয়ে সময়ে সময়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অংশিজনের সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সথে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য এলোমেলো ভাবনার ফসল, এ নিবন্ধ। আশা করি, এ ভাবনাগুলো অনেকের ভাবনার সাথে মিল হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা সবাই নিবন্ধটি পড়ে উপকৃত হবেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন