শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

Thinking for Teachers Interest


প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়ন ভাবনা
প্রয়োজন সর্বস্তরে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত ও আসবাবপত্রগত সমস্যার সমাধান অনেকটা হয়ে গেছে।জনগণের মাঝে শিক্ষা সচেতনতাও বেড়েছে যথেষ্ট।সরকার বড় বড় সব কর্মসুচি বাস্তবায়ন করছে, সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। আর প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে মূল চালিকা শক্তি হলেন; প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ। কিন্তু শিক্ষকদের জন্য সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাসমূহ সময়মত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে না পেলে, তাঁরা কাজ করার প্রেরণা পাবেন কী করে? তাছাড়া, এ বিভাগের কর্মকর্তাগণও বিভিন্নভাবে হতাশাগ্রস্থ। এই যে, সরকার ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল দিয়েছেন ৫ মাস হতে চলেছে; শিক্ষকগণ নানা জটিলতার কারণে সারাদেশে অধিকাংশই তা এখনও আহরণ করতে পারেন নি।আবার প্রধান শিক্ষকগণ তাঁদের প্রাপ্য নিয়ে অত্যন্ত এক জটিল আবর্তে পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন।তাঁদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা প্রদান, উন্নীত বেতন স্কেল ঘোষণা এবং জাতীয় বেতন স্কেলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ বিষয়ক সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায়, জটিলতাটি গভীল হতে গভীরতর রূপ ধারণ করেছে।দৃশ্যত; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়; এসব জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মহাহিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রকের অফিস হতে প্রয়োজনীয় ও দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত না দেয়ায় সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকগণ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।সরকারের অন্যান্য বিভাগের প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি নতুন জাতীয বেতন স্কেলে প্রাপ্য সকল সুযোগ-সুবিধা প্রায় সবাই পেয়ে গেছেন।ফলে, প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে স্বাভাবিক  কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এহেন সমস্যা পুরো জাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, নি:সন্দেহে। উদ্ভুত পরিস্থিতি অচিরেই কাটিয়ে ওঠার জন্য অর্থমন্ত্রণালয় এবং মহাহিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রকের অফিসকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
.            প্রধান শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তি বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা সংবলিত একটি পরিপত্র শীঘ্রই জারি করতে হবে।

.            প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে উন্নয়ন থাত হতে আত্নীকরণ করা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তি নিযে সৃষ্ট জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিস্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


.            সরকার বিভিন্নভাবে ও বিবিধ কৌশলে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সৃস্ট বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।

.            শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তির বাজেট বরাদ্দ যথাসময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে।নতুন জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ি বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকগণ বেতন-ভাতা পেলেও, বাজেট না থাকায় বকেয়া প্রাপ্রাদি পাবেন না, এ কেমন কথা? সরকারের অন্যান্য খাতে কর্মরত কর্মকর্তাগন সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন এবং বকেয়া প্রাপ্যাদি পেয়ে যান, তবে শিক্ষকগণ কেন পাবেন না? পেটে ক্ষিধে নিয়ে কী কাজ করতে পারে কেউ?


.            সরকার কতৃক জাতীয় বেতন স্কেল/২০১৫ ঘোষণা করার পর সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণ বিগত ৪/৫ মাস যাবত উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে দৌঁড়-ঝাঁপ করছেন। সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাওয়ার জন্যই তাঁরা এসব করছেন। সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোও অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষকগণ এখনও কাংখিত ফলাফল পাচ্ছেন না। কোথাও যেন শুভংকরের ফাঁকি রয়ে গেছে। আর শিক্ষকগণকে তাঁদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি নিয়ে ভীষণ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বিধায়, তাঁরা নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে পূর্ণ মনোযোগ দিতে সক্ষম হচ্ছেন না।

পরিশেষে বলতে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই।কিছু বিধি-বিধান, আইন-কানুন এবং বিভাগীয় ও মন্ত্রণালয়ের ওভার-লেপিং-এর কারণে দেশের প্রাথমিক শিক্ষকগণের নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা প্রাপ্তি নিয়ে সৃস্ট জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুরাহা করা প্রয়োজন।অন্যথায়, এভাবে চলতে থাকলে, পুরো বছর (২০১৬) প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্নকভাবে ব্যাহত হবে। আর এর জের বহন করতে হবে জাতিকে যুগ যুগ ধরে।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন