মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭

Education and Education Philosophy

শিক্ষার ইতিকথা
(পর্ব-০১)
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্*
শিক্ষা মানে আলো। মানব সন্তানরা যা দ্বারা আলোকিত হয়, তাই শিক্ষা। আলোকিত মানুষই মানব সমাজ ও সভ্যতাকে আলোকিত করে লাখতে পারে। কৃত্রিম কোন আলোর স্থায়িত্ব এ পৃথিবীতে ক্ষণ কালের। কিন্তু মানব আলো চিরকালিন, অমর। শাব্দিক অর্থে শিক্ষা হলো; এমন একটি কাজ বা প্রক্রিয়া যার সাহায্যে জ্ঞান বিতরণ বা জ্ঞান অর্জিত হয়, যুক্তি ও বিচার-বিবেচনা বোধ জাগ্রত হয় এবং সাধারণভাবে মানুষ নিজেকে বা অন্যকে বৃদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিকশিত করে উন্নত একটি জীবন-যাপনের সন্ধান দেয়। শিক্ষা বলতে আমরা বুঝব; কোন পেশায় পারদর্শিতা অর্জনের জন্য বিশেষ কোন জ্ঞান বা দক্ষতা বিতরণ অথবা অর্জন করার কাজ বা প্রক্রিয়া। শিক্ষা শব্দটির অর্থ বুঝার জন্য আরও কয়েকটি ব্যাখ্যা বিবেচনা করা যেতে পারে; যেমন-কোন ডিগ্রী, স্তর অতিক্রমণ বা প্রাতিষ্ঠানিকতাকে অতিক্রমণ অথবা শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ গ্রহণ বা অধ্যয়নের ফলে যা অর্জিত হয়, তাই শিক্ষা। শিক্ষাদানের বিজ্ঞান বা কলা-কৌশলই হলো শিক্ষা। আর শিক্ষা শব্দটি এত ব্যাপক ও গভীর অর্থবোধক যে এটাকে বিশেষ কোন সংজ্ঞা দিয়ে প্রকাশ করা করা কঠিন। তবে, বিখ্যাত ইংরেজ কবি জন মিণ্টন প্রদত্ত্ব সংজ্ঞাটির মাধ্যমে শিক্ষার একটি পূর্ণরূপ পাওয়া যায়। আর এ সংজ্ঞাটি অনেকটা সকল বিবেচনায় ও সার্বজনিনভাবে গ্রহণযোগ্য। জন মিল্টন বলেন; ‘মন, আত্না ও দেহের সামগ্রিক বিকাশ সাধনই হলো, শিক্ষা। আর একটা ছোট্ট সংজ্ঞা হলো; ‘মানব আচরণের বাঞ্চিত পরিবর্তনই হলো শিক্ষা।’ মালয়েশিয়ার সমসাময়িককালের প্রখ্যাত দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মোহাম্মদ নকীব আল-আত্তাস বলেন; শিক্ষা হলো; “মন, দেহ ও আত্নার উন্নয়নের এমন এক স্তর যার প্রভাব প্রতিফলিত হবে আধ্যাত্নিক এবং প্রকৃতিসহ সকল মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক জীবন-যাত্রায়।” ব্যাপকার্থে শিক্ষা বলতে বুঝাবে; ‘ শিক্ষা গ্রহণ বা জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং অভ্যাস গড়ে তোলার প্রক্রিয়া।’ আর সে শিক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি হতে পারে, গল্প বলা, আলোচনা, শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ দান এবং কারো তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে। সাধারণত: শিক্ষার কাজটি ঘটে থাকে শিক্ষকের তত্ত্ববধানে অথবা স্বশিখণের মধ্যদিয়ে। শিক্ষা গ্রহণ চলতে পারে; আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকে এবং কোন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে যা কারও চিন্তা, অনুভূতি এবং কাজকে প্রতিফলিত করে। শিক্ষাদানের পদ্ধতিকে শিক্ষাদানের বিজ্ঞান বা পেডাগগি বলা হয়। শিক্ষা গ্রহণের স্তরগুলোকে সাধারণত: নিম্নরূপে বিভাজিত করা হয়। যেমন-প্রাক-স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শিক্ষা নবীশ স্তর। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এবং প্রায় সকল সরকার শিক্ষাকে মানুষের অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আবার অনেক দেশে শিক্ষা গ্রহণকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সভ্যতার আদিকাল হতে শিক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষা প্রদানের কাজ চলে আসছে। তবে প্রথম প্রথম মানুষের শিখণ-শেখানো চলত শুধু মুখে মুখে। প্রাক-সভ্যতার যুগে প্রজন্মের পর প্রজন্ম  এ পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ চলে আসছিল। প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রচলন ঘটে গ্রীক সভ্যতায়। সেখান হতে শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদানের প্রক্রিয়াটি বিকশিত হতে হতে আধুনিক ও অত্যাধুনিক এবং উচ্চতর তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যম বর্তমান শিখণ-শেখানোর যুগে এসে পৌঁছেছি আমরা। এ নিবন্ধে শিক্ষার ইতিহাস, দর্শন এবং সভ্যতার বিকাশ এবং শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বিষযগুলো পর্যালোচনাপূর্বক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষা কার্যম নিয়ে দেশ-বিদেশের প্রেক্ষাপটে আলোকপাত করার প্রয়াস চালাব। আর শিক্ষায় সৃজনশীলতার ধারণাটি বিশেষভাবে আলোকপাত করা হবে।
আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা:
গ্রীক সভ্যতায় প্লেটো এথেন্সে একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরোপে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের যাত্রা ঘটান। প্রাচীন গ্রীসের এতেন্স নগরীর পর খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ সালে মিশরের আলেক্জান্দ্রিয়ায় দ্বিতীয় শিক।সা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় শতকে বিখ্যাত আলেক্জান্দেরিয়া লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৪৭৬ ক্রিস্টব্দে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপীয় সভ্যতায় শিক্ষা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হয়। চীনের প্রাচীন দার্শনিক কন্ফুসীয় যুগের শিক্ষা চীন সমাজ এবং প্রতিবেশী কোরিয়া, জাপান এবং ভিয়েতনামে শিক্ষার প্রসার ও প্রভাব ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। কন্ফুসিয়াসের আকাংখা ছিল রাষ্ট্র তাঁর শিক্সা শিক্ষা চিন্তা ও ভাবনাগুলো বিকাশ ঘটাবেন এবং সুশাসনের কাজে তা অবদান রাখবে। আর তাঁর অনুসারিরা কন্ফুসীয় অমর শিক্ষা ভাবনা এবং বাণীগুলো লিখে রেখে পৃথিবীব্যাপী বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করে গেছেন। ফলে তাঁর শিক্ষা চিন্তা পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে তো বটেই আরব দেশগুলোতেও প্রশার ঘটেছিল। যে কারণে আমরা মহানবীর (দ:) একটি বাণীতে শিক্ষার জন্য চীন দেশে যেতে হলেও, যেতে বলা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (দ:) নিজেই মসজিদে নববীতে বসে কুরআন, সুন্নাহসহ দুনিয়ার তাবত সব বিষয়ে শিক।সা দিয়ে গেছেন। আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভিতটি শক্তিশালী হয়, স্পেনে মুসলিম শাসনামলে আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মাধ্যমে। এ ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ সকল ধরণের শিক্ষা গ্রহণের আধুনিক শিক্ষা ধারার বিকাশ ঘটে। আর উচ্চ শিক্ষা স্তরের অবাধ ও মুক্ত বুদ্ধি এবং বিশ্ব শিক্ষা চিন্তা ও চর্চার  বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রেও মুসলমানরাই মরক্কোতে সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে আধুনিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন। দ্বিতীয় আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও প্রতিষ্ঠা করেছিল মুসলমানরা। তা ছিল মিশরের আল-আজহার বিশাবিদ্যালয়। ইউরোপে  রোমান সাম্রাজ্যের পতন-এর মধ্যদিয়ে প্লেটো প্রতিষ্ঠিত একাডেমি কেন্দ্রিক উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ধারার বেশ কিছুদিন শিক্ষা গ্রহন এবং শিক্ষা প্রদানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় ধর্মশালাগুলো। এভাবে প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চলে। মধ্যযুগের সূচনাকালে গির্জাসমূহের উদ্যোগে উন্নত শিক।সার চর্চার নিমিত্তে ক্যাথেডেরাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়। খ্রিস্টান গির্জার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষঠানসমূহ চার্টার্ড স্কুল হিসেবে অভিহিত হতো। পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে গড়ে ওঠা এসব শিক্ষা প্রষ্ঠিান ছিল সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর শিক্ষকগণ ছিলেন অতি উঁচু মানের মহত্তম ব্যাক্তিত্ত্ব। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দৈহিক চর্চা, ভাষা বিজ্ঞান শিখণ, সংখ্যা শেখা ও অনুশীলণ, নৈতিক-মূল্যবোধ গড়ে তোলাসহ উচ্চ মানের মানব সম্পদ তৈরিতে অনন্য অবদান রাখেন। এসব প্রখ্যাত শিক্ষকগণের মাঝে নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের থমাস একুইনাস, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট গ্রোসেস্টেস্টি এবং সেন্ট আলবার্ট দ্যা গ্রেট প্রমুখ আধুনিক শিক্ষার থিত্তি রচনায় অনন্য অবদান রেখে গেছেন। ইসলামী খিলাফত-এর শাসনামলে ইউরোপের বিশাল অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়ার মালয়-চীন-জাপান পর্যন্ত আধুনিক এ ইসলামী শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার এবং বিকাশ ঘটে। ইউরোপের রেঁনেসাঁ আন্দোলন; জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, আর প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও সভ্যতার আলোকে শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষাদানের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৪৫০ সালের দিকে জোহানেস গুটেনবার্গ একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করে শিক্ষা ও সাহিত্যের দ্রুত প্রসার ঘটান। ইউরোপীয় সম্রাটদের যুগে দর্শন, ধর্ম শিক্ষা, চিত্রকলা এবং বিজ্ঞান শিক্ষার ধারার সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। চীন ইউরোপের মাঝে মিশনারি এবং জ্ঞানী-গুণি মানুষজন অন্যান্য সভ্যতার জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির ব্যাপক আদান-প্রদান এবং বিনিময়ের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করে শিক্ষাকে আধুনিকতার দারপ্রান্তে নিয়ে যান। এসময় ইউরোপীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুবাদের মাধ্যমে চীনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চীনের কন্ফুসীয় শিক্ষা দর্শনের প্রভাব পড়ে ইউরোপ জুড়ে। ইউরোপের এন্লাইটেন্টমেন্ট আন্দোলনের সাথে চীনা ধর্ম নিরপেক্ষতার শিক্ষার আলো পুরো ইউরোপকে আরও আলোকিতকরণে বিশাল ভূমিকা রাখে। আজ সারা পৃথিবীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানব সন্তানরা একটি নির্দিষ্ট বয়সকাল পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করার অবারিত সুযোগ পাচ্ছে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ি বাধ্যতামূলক শিক্ষার নীতির কারণে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মানব ইতিহাসে যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করবে।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান ব্যবস্থা:
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা চলে কোন নির্দিষ্ট অবকাঠোমো বা ভবনে। সাধারণত: স্কুল ভবনগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন বিষয়ে সনদধারী শিক্ষকদের দ্বারা বহুভাষিক ও জাতি-ধর্মের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে শিখণ-শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। এসব শিখণ-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষাক্রম, শিক্ষক নির্দেশিকা ও সহায়িকা, শারীরিক শিক্ষা নির্দেশিকা ব্যবহার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী আন্ত:ক্রিয়া, মূল্যায়ন, শ্রেণিকক্ষের পরিসর, শিখন-শেখানো কার্যক্রম, উপকরণ এবং মাল্টি মিডিয়া ব্যবহারসহ অনেক কিছু সম্পৃক্ত।
প্রাক-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা:
আনুষ্ঠানিক বা প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা স্তরে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করার সূচরা ঘটানোর আগে ৩ হতে ৭ বছর বয়সের নিয়ে এ স্তরের শিখণ-শেখানো চলে। বাংলাদেশে সাধারণত: ৫ বছরের উর্ধ্বে কিন্তু ৬ বছরের নিচে এমন বয়সের শিশুদের পড়াশোনার জন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি প্রচলিত রয়েছে। দেশে-দেশে এ স্তরটিকে বিগত ৪/৫ বছর আগেও বর্তমানের ন্যায় অতটা গুরুত্ব দেয়া হতো না। কিন্তু জাপানসহ উন্নত-অনুন্নত বিভিন্ন দেশে প্রি-স্কুল শিক্ষাস্তরে অভাবনীয় উপকারিতা এবং সাফল্য লক্ষ্য করে সারা বিশ্বে মূল প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পৃথকভাবে এস্তরে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষার স্তর:

সাধারণত: তিন স্তরে শিক্ষা কার্যক্রম চলে, প্রায় সব দেশেই। আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা; এই তিনটি স্তরে আমাদের দেমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা স্তর; শিক্ষার্থীদের পাঁচ হতে সাত বছরব্যাপী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপ। সাধারণত: ৬ বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন শুরু হয়, শিশুদের। কোথাও কোথাও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরকে ইলিমেন্টারী শিক্ষা স্তরও বলা হয়। বিশ্বব্যাপী ৬ হতে ১২ বছর বয়সী শিশুরাই এ স্তরে পড়াশোনা করে থাকে। জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি (সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা)-এর লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে সকল দেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার কথা ছিল। আর বর্তমানে চলছে এসজিডি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পালা। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা, সারা পৃথিবীতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা স্তর। এ স্তরকে উন্নত-অনুন্নত সব দেশই সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করার প্রয়াস চালাচ্ছে। তাঁদের সবার উপলব্দি হলো, দেশ-জাতিকে উন্নত করতে হলে প্রাথমিক স্তর হতে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদের কোমল মনে শিক্ষার তথা জ্ঞান জগতের উত্তম বীজ বপন করে দিতে হবে। অনেক দেশ আছে, যারা যেনতেনভাবে তাঁদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এতদিন চালিয়ে যাচ্ছিল। তারাও বুঝতে পারছে, প্রত্যেক দেশ-জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রগতিশীল ভাবনা-চিন্তা প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হতে সূচনা ঘটাতে হবে। সৌদি আরবসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এবং মুসলিম দেশগুলো যারা ভেবেছিল ধর্মীয় ভাবধারা সংবলিত শিক্ষা দিয়ে দেশকে-জাতিকে উন্নত করবে-এগিয়ে নিবে, তারাও শিক্ষাকে সংস্কার করে আধুনিকতার পথে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেছে।ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে শিক্ষায় পরিবর্তণ-পরিমার্জন করছে, তারা। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত-চীন-জাপান, এমন কি শ্রলংকাও অনেক আগে এ সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করে সুফল ঘরে তুলছ। বাংলাদেশ কেন এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে? তাই, বাংলাদেশ সরকারও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সংস্কার ও উন্নয়নে ইতোমধ্যে অনেক কর্মসূচি গ্রহন, বাস্তবায়ন এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। সাফল্যের পালে যোগ হচ্ছে নিত্যদিনের শিক্ষা অগ্রগতির হাওয়া। দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতন যাই হোক না কেন, শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকটি সবাইকে ভাবতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন