শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭

Sir Syed Ahmad Khan

স্যার সৈয়দ আহমদ খান:
শিক্ষাবিদ, সংস্কারক ও দার্শনিক
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্*
স্যার সৈয়দ আহমদ ছিলেন, বৃটিশ শাসনামলে ভারতীয় মুসলমানদের অগ্রদূত। তিনি সৈয়দ আহমদ নামে বেশি পরিচিত। বৃটিশ-ভারতে উনবিংশ শতাব্দীতে অগ্রগন্য মুসলিম চিন্তাবিদ, সংস্কারক, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ। আদালতে চাকুরি করতে করতে তিনি কুরআন এবং বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। পরে, তিনি বৃটেনের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সৈয়দ আহমদ ১৮৩৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে চাকুরি নেন। আর ১৮৬৭ সালে তিনি বিচারক নিযুক্ত হন এবং ১৮৭৬ সালে চাকুরি হতে অবসর গ্রহণ করেন। ১৭৫৭ সালে বৃটিশরা ক্ষমতা দখল করার সময় তিনি বৃটিশ শাসনের প্রতি অনুগত থাকেন। তিনি মুসলমান সমাজের শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হন। সৈয়দ আহমদ খান পাশ্চাত্য ধারায়  আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে, সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশ এবং মুসলামানদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে  বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি ১৮৫৯ সালে মুরাদাবাদে গুলশান স্কুল, ১৯৬৩ সালে গাজীপুরে ভিক্টোরিয়া স্কুল এবং ১৮৬৪ সালে মুসলমানদের জন্য সাইন্টিফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৫ সালে স্যার সৈয়দ আহমদ খান দক্ষিন এশিয়ার প্রথম মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ‘মোহাডোন এঙ্গলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ’ স্থাপন করেন। জীবদ্দশায় তিনি মুসলমানদের প্রতি বৃটিশ রাজের আনুগত্য বজায় রাখতে অত্যন্ত জোরালোভাবে আহবান জানান। সৈয়দ আহমদ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি পাকিস্তান-ভারতে মুসলমানদের মাঝে  প্রভাব গভীর সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। আর তাঁকে দ্বি-জাতি তত্ত্বের জনক মনে করা হয়। বিশেষত: পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর মুখ্য ভূমিকা ছিল। এ ক্ষেত্রে তিনি আল্লামা ইকবাল এবং জিন্নাহকে সক্রিয় সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছিলেন। ইসলামের যুক্তিবাদী ধারা অনুসরণ, উদারাবাদ চালুকরণ, কুরআনের সাথে বিজ্ঞান ও আধুনিকতার  গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন প্রভৃতি নিয়ে সৈয়দ আহমদ খানের ভাবনা-চিন্তা বিশ্বব্যাপী ইসলামী সংস্কার সাধনে ব্যাপক প্রভাব-বলয় সৃষ্টি করে।

সৈয়দ সৈয়দ আহমদের শৈশবকাল:
স্যার সৈয়দ আহমদ খান তৎকালিন মুগল সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লীতে ১৮১৭ সালে ১৭ অক্টোবর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষ সৌদি আরব হতে এসেছে বলে জানা যায়। মুগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে তাঁর পরিবার ভারতে আগমন করে। তখন হতে মুগল রাজ শাসনে তাঁর পরিবারের সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর নানা খাজা ফরিদুদ্দিন ছিলেন, বাদশাহ আকবরের মন্ত্রী্। তাঁর দাদা সৈয়দ হাদী জওয়াদ বিন ইমামুদ্দিন বাদশাহ আলম গীরের সরকারে উচ্চ পদে সমাসীন ছিলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ খানের পিতা মোহাম্মদ বিন হাদী খান বাদশাহ আকবরের ব্যাক্তিগত বন্ধু ও উপদেষ্টা ছিলেন। তার শৈশব কাটে মুসলিম শাসনামলের অবসানকালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং বৃটিশ শাসন যখন ভারত উপমহাদেশে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছিল, তখন স্যার ষৈয়দ আহমদ খান এবং তাঁর বড় ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ বিন মুত্তকী খান বেড়ে উঠছিলেন। তাঁর মা আজিজুন্নেসা কঠোর নিয়ম-শৃংখলার মধ্যে তাঁদেরকে লালন-পালন করেন। তাঁদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্যার সৈয়দের বাবা-মা সর্বাত্নক আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান। ছোট বেলায় স্যার সৈয়দকে কুরআন শিক্ষা দেয়া হয়। আর ভাল শিক্ষক দিয়ে উর্দু, ফার্সি, আরবী ভাষা এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো তাঁকে পড়ানো হয়েছিল। স্যার সৈয়দ শাহাবী, রুমী ও গালিবসহ বিখ্যাত সব মুসলিম পন্ডিতদের কবিতা ও রচনাবলী অধ্যয়ন করেন। পাশাপাশি, তাঁকে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং ইসলামী আইনশাস্ত্র বিষয়েও শিক্ষা দেয়া হয়। তাছাড়া, স্যার সৈয়দ শারিরীক কসরত, শরীর চর্চা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও অংশ গ্রহণ করতেন এবং তিনি এসব কাজে চৌকশ ছিলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করার জন্য ভর্তি হলেও, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তা সম্পন্ন করতে পারেন নি। ১৮৩৮ সালে তাঁর পিতার পরলোকগমনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে বিশেষ আভিজাত্য নিয়ে কাটান। তাঁর আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাক্তিগতভাবে অধ্যয়ন ও চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। পরে তাঁর বড় ভাইয়ের সাথে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে আরম্ভ করেন। এসময় তিনি মুগল রোজ দরবারে কাজ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

কর্মজীবন:
ধীরে ধীরে মুগল রাজনৈতিক ক্ষমতা চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে স্যার সৈয়দ আহমদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে একটি চাকুরিতে প্রবেশ করেন। তিনি বড় কোন পদে চাকুরির সুযোগ পান নি। কারণ সেসব পদ বৃটিশদের জন্য সীমিত ছিল। তাই তিনি আগ্রার আদালতে সেরেস্তাদার পদে যোগদান করেন। ১৮৪০ সালে তাঁকে মুন্সী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৮৫৮ সালে তাঁকে মুরাদাবাদ আদালতে একটি উচ্চতর পদ দেয়া হয়। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত সব সাহিত্যকমৃ শুরু করেন। আদালতে কর্মকালিন সময়ে উপর মহলে সুসম্পর্ক থাকায়, স্যার সৈয়দ আহমদ বৃটিশ ঔপনিবেশিক রাজনীতি সমপর্কে নিবীড জ্ঞানার্জনের সুযোগ পান। ১৮৫৭ সালের ১০ মে, মুগল শাসনের অবসানকালে স্যার সৈয়দ আহমদ বিজনর আদালতে চীফ এ্যাসেসমেন্ট অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুগল সেনা বাহিনী এবং বৃটিশ বাহিনীর মধ্যে উত্তর ভারতে তীব্র লড়াই চলছিল। বিপুল সংখ্যক বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়। ক্ষমতার মূল মূল কেন্দ্র; যথা-দিল্লী, আগ্রা, লখনৌ এবং কানপুর মারাত্নকভাবে বিপর্যস্থ হয়। স্যার সৈয়দ আহমদ নিজেও আহত হন। আর দীর্ঘ আটশ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। তিনি ও তাঁর সমসাময়িক মুসলমানগণ মুগলদের এ পতনকে মুসলিম সমাজের পরাজয় হিসেবে নেন। এসময় তাঁর বেশকজন নিকটাত্নীয়-স্বজন মৃত্যুবরণ করেন। আর তাঁর মাকে উত্থার করতে পারলেও, ঘটনা পরম্পরায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বেঙ্গলে নবাব আব্দূল লতিফ কতৃক ‘দ্যা মোহামেডান লিটারারী সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম সমাজে সামাজিক সংস্কার শুরু করেন। এসময় তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজটি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। তিনি অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং ভারতীয় মুসলিম সমাজে প্রচলিত কু-প্রবণতাসমূহ চরম অপছন্দ করতেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, পাশ্চাত্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বিজ্ঞানকে বরণ করে না নিলে মুলমানরা উন্নতি লাভ করতে পারবে না। কালক্রমে স্যার সৈয়দ আহমদ প্রগতিশীল আধুনিকতাকে গ্রহণ করা এবং ইসলাম ও খ্রিষ্টানদেরে মাঝে আন্ত:ধর্মীয় নিবীড সম্পর্ক স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
স্যার সৈয়দ আহমদ খানের রচনাবলি:
স্যার সৈয়দ আহমদ খানের পড়াশোনা, অধ্যয়ন ও চর্চা ছিল ব্যাপক ও অত্যন্ত গভীর। তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ ছিল আইনে আকবরী নামক বিশাল গ্রন্থ রচনা, সম্পাদন এবং পরিমার্জন। গ্রন্থটি যেমন অত্যন্ত কঠিন এবং গবেষণামূলক। তিনি কাজটি শেষ করে তাঁর গুরু স্থানীয় প্রখ্যাত কবি মির্জা গালিব-এর তাঁর গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দেয়ার অনুরোধ জানান। বড় আশা-ভরসা নিয়ে মির্জা গালিবের কাছে গিয়ে স্যার সৈয়দ হতাশ হন। মির্জা গালিব ফারসী ভাষায় ছোট্ট একটি কবিতা লিখে দেন, আইন-ই-আকবরীর ভূমিকা না লিখে। স্যার সৈয়দ আহমদ ছোট্ট একটি পদে চাকুরি করলেও, তিনি ২৩ বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করেন। এসময় তিনি প্রায় ৬০০০ পৃষ্ঠা রচনা করেন। তিনি মূলত: উর্দু ভাষায় লিখতেন। তিনি ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির মাধ্যমে তাঁর লেখক জীবন শুরু হয়। তিনি মধ্যযুগ হতে দিল্লীর শাসন কাল পর্যন্ত সরকারি কার্যক্রমের দলিল-দস্তাবেজ সংকলন, সম্পাদন ও পরিমার্জন করে ১৮৪২ সালে ‘আসার-উস-সানাডিড’ নামে একটি রচনা করেন। এ গ্রন্থটি তাঁকে সংস্কৃতি বিষয়ক পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়। অত:পর তিনি, জিলা-উল-কুলুব বি জিক-রিল মাহবুব এবং তুহফা-ই-হাসান এবং তাহসিল ফি জার-ই-সাকিল নামে পর পর তিনটি বই লিখেন, ১৮৪৪ সালে। এসব বইয়ে তিনি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিষয়াবলি আলোচনা করেন। ১৮৫২ সালে, তিনি নামিকা দর বয়ান মাসালা তাসাউর-ই-শায়খ এবং সিলসিলাতুল-মুলক নামে আরও দুটি বই লিখেন। তিনি বাইলের ওপরও গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন। পরে তা আর শেষ করতে পারেন নি, তিনি। স্যার সৈয়দ আহমদ মহানবী (দ:) এর জীবনী নিয়ে অনেকগুলো ধারাবাহিক প্রবন্ধ রচনা করেন। ইতিহাস, রাজনীতি, পুরাতত্ত্ব, সাংবাদিকতা, সাহিত্য, ধর্ম এবং বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর ব্যাপক পড়াশোনা এবং তিনি এসব বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারি ছিলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ ১৮৭৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৮৮৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

উপসংহার: সরকারি কোন দায়িত্বে থেকে বড় মাপের লেখক ও মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ কম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী; প্রভৃতি পেশার মানুষেরা যেভাবে উন্মুক্তভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারেন, চাকুরিজীবীগণ তা অনেক ক্ষেত্রে পারেন না। আবার লেখা-লেখির গুণগত এবং মানগত বিষয়ও দু‘শ্রেণির লেখকদের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণ করে দেয়। সরকারি দায়িত্বে থাকা লেখকগণ অন্দর মহলের মানুষ। তাঁরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্জাত বিষয় এবং তথ্য ব্যবহার করেন। আর স্বাধীন লেখকগণ গবেষণা ও দ্বিতীয়-তৃতীয়সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্য তাঁদের লেখালেখিতে ব্যবহার করে থাকেন। দু‘পক্ষেরই কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছ। আর স্যার সৈয়দ আহমদ সরকারি দায়িত্বে থেকেই অনেকটা লেখা-লেখি করেছেন, তাঁর রচনাবলিতে সরকারি ভাষ্যের প্রবণতা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি যে, বড় মাপের একজন মানুষ ছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষত: মুসলামানদেরকে আধুনিকতার পথ দেখানোর ক্ষেত্রে বোধহয় বৃটিশ-ভারতে স্যার সৈয়দ আহমদ অনন্য অবদান রেখে গেছেন।
*সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মহেশখালিী, কক্সবাজার।

Tareq Fatah and Islam

তারেক ফাতাহ জ্ঞানী মুসলিম:
তিনি কী ইসলাম বিরোধী?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ*

তারেক ফাতাহ কানাডা প্রবাসী মুসলিম বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, বিশ্লেষক এবং পন্ডিত ব্যাক্তি। তিনি ধর্মরিপেক্ষতায় বিশ্বাসী, মানবাধিকার কর্মী ও উদারপন্থী ব্যাক্তিত্ত্ব হিসেবে সুপরিচিত। তবে তিনি এখন কট্টর ভারতপন্থী এবং খুব বেশি পাকিস্তান বিরোধী হয়ে ওঠেছেন। তারেক ফাতাহ পাকিস্তানের করাচীতে ১৯৪৯ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং সেখানকার মুসলিম সংগঠন মুসলিম কানাডীয়ান কংগ্রেস নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ধর্ম ও রাষ্টের আলাদা ভূমিকা চান, শরিয়াহ আইনের বিরোধী এবং উদারতাবাদ, ইসলামের প্রগতিশীল রূপ দেয়ার পক্ষে ব্যাপক প্রচারনায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কট্টরপন্থী মুসলমানরা তাঁর কর্মকান্ড এবং বক্তৃতা-বিবৃতির তীব্র  বিরোধীতা করছে।
তারেক ফাতাহ‘র জীবন ও শিক্ষা:
১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির সময় তার পরিবার ভারতের মুব্বাই হতে পাকিস্তানের করাচীতে বসতি স্থাপন করে। তিনি ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে বামপন্থী ছাত্র ছাত্র নেতা ছিলেন। তারেক ফাতাহ করাচী বিশ্ববিদ্যালয হতে জৈব রসায়ন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিী অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে করাচী সান পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। আর তিনি পাকিস্তান টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেন, এক সময়। পাকিস্তানের সামরিক শাসনামলে তারেক ফাতাহ দু‘বার কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের শাসন চলাকালে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় এবং পাকিস্তানের সাংবাদিকতা জগতে তাঁকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করে সৌদি আরব চলে যান। পরে, ১৯৭৮ সালে সেখান হতে কানাডায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেন। নিজের পরিচিতি তুলে ধরে তারেক ফাতাহ বলেন; “আমি ভারতীয়, জন্মেছি পাকিস্তানে পাঞ্জাবী মুসলিম পরিবারে। আর বসতি গড়েছি কানাডায় অভিবাসী হিসেবে। সচেতন মুসলমান আমি। মার্ক্সবাদে দীক্ষা নিয়েছি আমি যৌবনে। আমি সালমান রুশদীর অভিহিত মধ্যরাতের শিশুদের একজন। আমাদেরকে বৃহত একটি সভ্যতা হতে ছিটকে পড়ে অভিবাসী জীবন বেছে নিতে হয়েছে। আর মহাসমুদ্রে সাঁতার কেটে কেটে আমাদেরকে কূলে ভিড়তে হয়েছে।” তাঁর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে তারেক ফাতাহ বলেন, “আমি লেখালেখি করি মুসলমান হিসেবে, যাদের পূর্বপুরুষ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আমার ধর্ম ইসলামের উৎস হলো ইহুদীবাদ। আবার আমার পাঞ্জাবী সংস্কৃতি শিখদের সাথে একাত্ন হয়ে আছে। এই যে, আমি বহু সংস্কৃতিকে ধারণ করে আছি, তা সত্বেও ইসলামপন্থীরা দাবি করে আমার বহুত্ববাদী পরিচয় প্রত্যাখান না করলে, আমি মুসলিম দাবি করতে পারব না।”
রাজনীতিক ও মানবাধিকার কর্মী ফাতাহ:
তিনি কানাডার অন্টারিও নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সাথে সম্পৃক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বব রাইয়ের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। দলটির প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৯৫ সালে আঞ্চলিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। অত:পর তিনি হাওয়ার্ড হ্যাম্পটন নামক আরেক রাজনীতিকের পক্ষে কাজ করেন। এনডিপি ছেড়ে তারেক ফাতাহ অত:পর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কানাডায় (এলডিপি) যোগদান করেন এবং বব রাইকে সমর্থন করেন। যাহোক, বিশ্বাসগত কারণে তিনি বার বার দল বদল করেন। এক পর্যায়ে তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচারে নামেন এবং মুসলিমদেরকে কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ না দেয়ার দাবি তুলেন।
সংবাদকর্মী ও ইসলামের সমালোচক হিসেবে তারেক ফাতাহ:
১৯৯৬ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি কানাডার সিটিএস এবং ভিশন টিভি-তে চলমান ঘটনা প্রবাহ এবং মুসলিম সম্প্রদায় বিষয়ক সাপ্তাহিক একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন। ২০০৩ সালে তাঁর  মহিলা সহযোগি ইরশাদ মাঞ্জির সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইরশাদ মঞ্জিও ইসলামী বিষয়ের একজন লেখিকা। তিনি ‘দ্যা ট্রাবল উইথ ইসলাম’ বইয়ের লেখক। ইরশাদ মঞ্জি বইটি লেখার ক্ষেত্রে তারেক ফাতাহর অবদানের কথা স্বীকার করেন। ফাতাহ বইটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, বইটিতে মুসলমানদের কথা বলা হয় নি, বলা হয়েছে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারিদেরকে নিরাপদ বোধ করার পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ২০০৭ সালে ম্যাকলিন সাময়িকীতে কানাডার সবচেয়ে পরিচিত এবং শ্রদ্ধেয় ৫০ জন ব্যাক্তিত্ত্বের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে তারেক ফাতাহ‘র নামও স্থান পায়। তিনি এভাবে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান এবং টকশো উপস্থাপন ও আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। তারেক ফাতাহ টরেন্টো সান পত্রিকায় কলাম লিখেন। তিনি টাইম ম্যাগাজিন, টরেন্টো স্টার, ন্যাশনাল পোস্ট এবং গ্লোব এন্ড মেইল নামক পত্রিকায়ও তাঁর মতামত-ভাষ্য ইত্যাদি লিখেন। তিনি বর্তমানে ‘ফাতাহ কি ফতোয়া’ শিরোনামে ভারতের জি নিউজ চ্যানেলে একটি টক শো‘র আয়োজন করছেন। অনুষ্ঠানটিতে মুসলামানদের বিষয়সহ বিবিধ বিষয়ে প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের তীব্রভাবে সমালোচনা করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস হতে চালু হওয়া এ অনুষ্ঠানটির প্রবল বিরোধীতা করছে মুসলামানরা। তিনি সুযোগ পেলেই পাকিস্তানকে তুলোধুনা করে ছাড়েন। তারেক ফাতাহ ইসরাইল রাষ্ট্রের সমর্থক। তিনি ইরাক দখলের বিরুদ্ধে  অবস্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেছিলেন। তারেক ফাতাহ কুরআনের বিরুদ্ধে বলেন না। তিনি ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য ৮ম ও ৯ব শতাব্দীর ইসলামিক স্কলাদেরকে দায়ি করে থাকেন। আর তিনি মুসলিম জঙ্গী সৃষ্টি করার পেছনে সৌদি আরব এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নিআইএ-কে দায়ি করেন। তারেক ফাতাহ‘র মতে ইসলামকে সংস্কার করার প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন তা হলো; মুসলমানদেরকে আধুনিকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে মেনে নিতে হবে। তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণার ঘোর বিরোধী। তিনি একটি বই লিখে ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধীতা করেন। তারেক ফাতাহ তাঁর ধর্ম ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ব্যাপারে বলেন, তিনি ধর্ম নিরেপক্ষ ও উদারতাবাদে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলিম রাজনীতি এবং এর নেতাদের নিয়ে গৌরব করার মত কিছু নেই। ‘আমার ধর্ম আমাকে সত্য বলার সাহস যোগায় এবং সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে বলে’ তিনি এমনভাবে নিজেকে তুলে ধরার প্রয়াস চালান। তিনি বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য মুসলমানদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। আমি চাই, মুসলমানরা আধুনিকতার চর্চা করুক। তাদের মধ্য থেকে গড়ে ওঠুক দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী; যেমনটা ঘড়ে ওঠেছিল বাগদাদে যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠায় অন্দোলনের সময় ’
ভারতীয় মুসলমানদের তারেক ফাতাহ সম্পর্কে মতামত:
তারেক ফাতাহ চমৎকার যুক্তি দিয়ে ও সাহসিকতার সাথে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেণ। কিন্তু তিনি এমন একটা ভাব নেন যে, তিনি যেন ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে নতুন কিছু বলছেন। আসলে তাঁর মতামতের কোন মূল্য মুসলমানদের কাছে নেই। ইসলাম ধর্ম তার জায়গায় আছে। ডা: জাকের নায়ক যেমন ইসলাম সম্পর্কে বিমূর্ত কথা-বার্তা বলে সাধারণ মুসলমানদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন, ঠিক তেমনি তারেক ফাতাহও ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবলিলায় নানা কথা-বার্তা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। আসলে তারা দু‘জনই প্রচার-প্রপাগান্ডার এ যুগে নিজস্ব মাহাত্ন্য জাহির করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। তারেক ফাতাহ তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদী, ভিএস নাইপল, আইয়ান হিরসী আলী প্রমুখের মত পাশ্চাত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, ইসলাম ও মুসলমানদের আক্রমণ করে। তিনি মুসলমান হিসেবে কুরআনকে স্বীকার করেন ও মানেন বলে দাবি করেন, কিন্তু সুন্নাহ, খেলাফতের শাসন, শরিয়াহ, ফিকহা এসব মানেন না, বলে তা প্রত্যাখ্যান করে থাকেন।

উপসংহার: তারেক ফাতাহ‘র মত অতীতে অনেকে মুসলমান হয়েও ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। নিজেদেরে দাবি করেছেন, যুক্তিবাদী, মার্ক্সবাদী, উদারতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ; প্রভৃতি। ইসলামী খেলাফতের প্রথম দিকে মু‘তাজিলা সম্প্রদায়ের অনুসারিরা ইসলামী বিশ্বাসের উৎসসমূহ; যেমন-কুরআন, সুন্নাহ, এজমা, কিয়াছ, ইজতিহাদ প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্নতর ব্যাখ্যা উপস্থাপন এবং তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসলাম এবং মুসলমানরা সহজাত ধারায় এগিয়েছে, প্রচার-প্রসার ঘটেছে। বর্তমানেও হাজার হাজার মানুষ ইসলামকে বরণ করে নিচ্ছে ভালবেসে ও নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে। এঁদের মধ্যে আছেন, অনেক বড় মাপের অধ্যাপক, ধর্মগুরু, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংবাদকর্মীসহ বিবিধ পেশার ও ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ। ইসলামের ক্ষতি করতে পারবে না, কেহই। যত বাধা-বিপত্তি আসুক ,ইসলাম ও মুসলমানরা সাময়িক ভুলভ্রান্তিতে জড়ালেও, তা নিজস্ব গতিতে চলবে, চলছে। ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের বিতর্কিত কোন মতামত-অবস্থান একে প্রভাবিত করতে পারবে না।

*সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মহেশখালী, কক্সবাজার।

Islam and Modernism

ইসলাম ও আধুনিকতা ভাবনা
ইসলাম ধর্ম কী আধুনিক ও উত্তর আধুনিকতার এ যুগে অগ্রহনযোগ্য হয়ে পড়েছে? ইসলাম ও আধুনিকতা কী সাংঘর্ষিক? ইসলাম কী আধুনিকতাকে গ্রহণ করেনা? আসলে এসব প্রশ্ন বা বিতর্ককে অন্ত:সারশূন্য বলা যায়। আধুনিকতায় বিশ্বাসীরা মনে করে, যা ইচ্ছা তা করাই আধুনিকতা। কিন্তু ইসলামে আধুনিকতা বলতে তা বুঝায় না। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ইসলাম কোনভাবেই আপোষ করে না। তৌহিদ, নবী-রসূলগণের ওপর বিশ্বাস, কুরআন-সুন্নাহ্ ও শরিয়তের হুকুম-আহকাম মেনে চলা; প্রভৃতি ইসলাম ধর্মের মূল বিষয়। আর ইসলাম আধুনিকতাকে স্বাগত জানায়। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন; ‘ আল্লাহু জমিলুন, ইয়হুব্বুল জমিল।” অর্থাৎ আল্লাহ্তায়ালা স্বয়ং সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য্যকে ভালবাসেন।” যেসব আধুনিকতা উশৃংখলতা, অশ্লিলতা, বেহায়পনা, অশোভন কিছুর সৃষ্টি করে তা ইসলাম গ্রহন করে না। যাহোক, এ নিবন্ধে ইসলাম ও আধুনিকতার ধারণা বিশ্লেষণপুর্বক এ দু‘টির মধ্যকার মিল-অমিল এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে।
ইসলামকী?
ইসলাম এক আল্লাহ্-তে বিশ্বাসের ধর্ম। এ ধর্মের সকল শিক্ষা ও বিশ্বাস পবিত্র কুরআন শরীফে লিপিবদ্ধ আছে। ইসলাম আরবী শব্দের মূল শব্দ সলেম। এর অর্থ হলো, শান্তি। আর ইসলাম শব্দের অর্থ হলো; বিনয়ের সাথে (আল্লাহ্ তায়ালার নিকট) মাথা নত করা, আত্নসমর্পন করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন পবিত্র কুরআনের সূরা এখলাসসহ বিভিন্ন স্থানে ও আয়াতে। সূরা এখলাসে আল্লাহ তায়ালা তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন; বল, ‘তিনিই আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।” আরেক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেন; “তিনি আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, দন্ডদাতা। আল্লাহ নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না।” মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ:)-এর পরিচয় দিয়ে বলেন; “মুহাম্মদ (দ:) আল্লাহ্র রসূল। তিনি অবিশ্বাসীদের বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শীসাঢালা প্রাচীরের মত শক্তিশালী। সঙ্গী-সাথীদের প্রতি খুবই দয়া পরবশ। তোমরা তাঁকে রুকু করতে দেখবে, সেজদা করতে দেখতে পাবে। তিনি আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য কামনা করেন।” আর মুসলমানরা বিশ্বাস করেন; হযরত মুহাম্মদ (দ:) আল্লাহ্ তায়ালার সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। “তিনি সারা বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ।” তাঁরা আরও বিশ্বাস করেন যে, হযরত আদম, হযরত ইব্রাহীম, হযরত নূহ, হযরত মূসা, হযরত ঈসা (আ:) প্রমুখ আল্লাহ তায়ালার নবী ও রাসূল। পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ বা হাদীছ, এজমা, কিয়াস ও ইজতেহাদ প্রভৃতি ইসলামী বিধি-বিধানের মূল উৎস। আর ইসলামে মূল ভিত্তি পাঁচটি। যথা-কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। আর বর্তমান বিশ্বে ২৩ হতে ২৫ শতাংশ মানুষ মুসলমান।
আধুনিকতা কী?
আধুনিকতা বলতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবীর সকলসুযোগ-সুবিধা অবাধ উপভোগ করে জীবন-যাপন করা যায়, এমন এক পরিবেশ বা অবস্থাকে বুঝায়। আঠার শতকের শিল্প বিল্পবের পর এমন পরিবেশ মানুষের জন্য সৃষ্টিহয়। তখন হতে আধুনিকতার সূচনা। শিল্প-সাহিত্যের চর্চাকারিগণ বর্তমান সময়কে উত্তর আধুনিককাল হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। আর এখন অনেকে বর্তমান কালকে উচ্চতর তথ্য-প্রযুক্তির যুগরূপে উল্লেখ করে থাকেন। আর আধুনিকতার সংজ্ঞা দিতে সমাজ বিজ্ঞানীগণ নিন্মরুপে ব্যখ্যা দিয়েছেন; ‘‘আধুনিকতা একটি দার্শনিক আন্দোলন যাতে সাংস্কৃতিক প্রবণতাসমূহ এবংপ রিবর্তনগুলো ব্যাপকভাবে এবং সূদূরপ্রসারী রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে। বিশেষত: পাশ্চাত্য সমাজে উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ হতে বিংশশতাব্দীতে এ রূপান্তর ঘটেছে। আধুনিক শিল্পায়িত সমাজ ও দ্রুততর সময়ে নগরের বিকাশ আধুনিকতার মূল উপাদান। এসবের পরিণতিতে ভয়াবহ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনে। আর আধুনিকতা আলোকিত সমাজের ধারণাকে পরিত্যাগ করে। এমন কি অনেক আধুনিকতাবাদীদের মতে এখানে ধর্মের স্থান নেই। আধুনিকতাবাদ বলতে, সাধারণভাবে সনাতনভাবে চলমান শিল্প, স্থাপত্য, সাহিত্য, ধর্মীয় বিশ্বাস, দর্শন, সামাজিক সংগঠন, দৈনন্দিন জীবন-যাপন, এবং এমন কি বিজ্ঞানকেও অস্বীকার করেন য়া অর্থব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা ও রানৈতিক পরিবেশকেই অর্থাৎ পরিপূর্ণ একটি শিল্পায়িত বিশ্বকেই বুঝায়। আধুনিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্নসচেতনতা।
ইসলামে আধুনিকতা:
ইসলামে প্রথম নতুনত্ব আনয়নের চেষ্টা করেন তৃতীয় হিজরীতে মুতাজিলা সম্প্রদায়। তাঁরা কুরআন এবংসুন্নাহকে অক্ষুন্ন রেখে কুরআনের ব্যাখাকে তাদের ভাষায় ‘তাউয়ীল’এবং সুন্নাহ্র ব্যাখ্যাকে‘ আকল’নামে উল্লেখ করেন। কিন্তু এটি সার্বজনীন ধারণা হিসেবে ইসলামে গ্রহনযোগ্যতা পায় নি। আধুনিকতার সূচনা আসলে ঘটেছে, মধ্যযুগের ইউরোপে। স্পেনে যখন বিজ্ঞান চর্চা শুরু হলে, ধর্মশালাগুলোতে যা শিক্ষা দেয়া হয় তা সত্য নয়। এতে ধীরে ধীরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ডেকে আনে। ধর্মে আধুনিকতা রূপান্তর হলো পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ি পরিবর্তন বয়ে আনা। আর তার কোন নির্দিষ্টরূপ নেই।  ইহুদী ও খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বী আধুনিকতাবাদীরা ব্যাখ্যা দিলেন কেন তখন ও ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা বিদ্যমান রয়েছে। ধর্মীয় যেসব বিষয় মানুষ মেনে তা অক্ষুন্ন রেখে তারা ব্যখ্যা উৃপস্থাপন করল, বাইবেলে স্বর্গীয় ও মানবিক বিষয়ের মিশ্ররূপ খুঁজে পাওয়া যায়। এ সময় মুসলামানরা ইউরোপে বাইবেলের অনুসারিদের দিকে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করছিল। তখন মুসলমানদের সামনে তিনটি বিষয় এসে উপস্থিত হয়। আর তা হলো; হয় পাশ্চাত্যকে গ্রহন করো, নয়তো বর্জন করো অথবা ইসলামকে সংস্কার করে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে বরণ করে নাও। যারা আধুনিকতাকে গ্রহণ করল; তারা তুরস্ক ও মিশরকে মডেল হিসেবে নিয়েছিল। তারা তুরস্ককে অনুকরণ করে কারণ এটি ছিল বৃটিশ শাসনাধীন। আর মিশরকে মডেল মেনে ছিল তারা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে যেটা ছিল ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র বিন্দু। এ আধুনিকতার আন্দোলনকারিরা ইসলামকে বিচার করত ‘আকল’ পদ্ধতি অনুসরণে। এক্ষেত্রে তাঁদের কার্যক্রমে নিন্মোক্ত ক্রুটিগুলো পরিলক্ষিত হতো;
১. যারা তা অনুধাবন করতে পারত না, এমন বিষয় তারা প্রয়োগ করত।
২. বুদ্ধি-বিবেচনা অনুযায়ি যা মানার তা মান, অন্যগুলো পরিহার করো।
৩. তারা কুরআন ও সুন্নাহকে মানলেও, তা অনুসরণের ক্ষেত্রে বুদ্ধি-বিবেচনা করেই তা করত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামে আধুনিকতা:
এখানকার আধুনিকতাবাদীরা বলে যে, পাশ্চাত্য ও বিশ্ব বদলে গেছে। তাই ইসলামকে সভ্য করে তুলতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিকতার প্রসার  ঘটার কারণগুলো নিন্মরূপ;
১. এ ধারণাসমূহ প্রত্যাখ্যান করার মত উপযুক্ত জ্ঞানী-গুণী মানুষ সেখানে নেই।
২.এখানে যারা আসে তারা আমেরিকান সমাজের অংশ হয়ে যায় এবং তাদের পরিচয় মুসলিম পরিচয় বহন করে না। নৌমুসলিমরাও তাদের পুরনো জীবন ধারা পাল্টায় না।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সাহিত্য, পন্ডিতজন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে।
আবার মুসলমানদের মাঝে কুরআন-এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, বক্তব্য এবং অন্যান্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে তেমন দ্বি-মত নেই। কিন্তু সুন্নাহ, শরিয়াহ, ফিক্হা, ইজমা ও ইজতিহাদের মাধ্যমে অনুসৃত বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্নমত পরিলক্ষিত হয়। কিছু কিছু আধুনিকতাবাদী মুসলমানরা মতামত দেন যে, আধুনিকতায় বিশ্বাসীরা মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করে থাকে। আর তারা জেনে না জেনে তাদের মতামতের প্রসার ঘটান।
ইসলাম ও আধুনিকতা একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা:
Bmjvg I AvaywbKZvi m¤úK©, wewfbœ ch©v‡q I wewfbœiƒ‡c Bmjvg I cvðv‡Z¨i ga¨Kvi AvšÍwK&ªqvi g‡a¨ kZvãx cÖvPxbKvj a‡i wbnxZ| AvaywbKZv Ges Gi mv‡_ m¤úwK©Z aviYv& I wek¦vm, m„wói mf¨Zvi Avw`Kvj Ges weMZ wZbkZ eQie¨vcx AvaywbKZvi weKvkKvj n‡Z Bmjv‡gi mv‡_ gZ‰ØZv cÖKvk K‡i Avm‡Q| Bmjvg wb‡RB AvaywbKZvq iƒc wb‡q e‡m‡Q, KviY Aóv`kI  Dbwesk kZvãx‡Z, L„óxq cÖK…wZi nIqvq gymwjg mf¨Zv GUv‡K eR©b K‡iwQj|ZLb †_‡KB AvaywbKZvi cÖ‡kœ Bmjvg, `xN©w`b a‡i AvaywbKZvi cÖ‡kœ P¨v‡j‡Äi †gvKv‡ejv K‡i Avm‡Q| cwðgv cwÐZ‡`i cÿ †_‡KB GB P¨v‡jÄ Av‡m, †mme cwЇZi AwaKvsk GL‡bv hyw³ cÖ`k©b K‡ib †h, Bmjvg AvRI cy‡ivcywi AvaywbKZv‡K aviY Ki‡Z cv‡iwb| Zuv‡`i g‡Z AvaywbKZvi KwZcq cÖeYZv i‡q‡Q, †h¸‡jv Bmjvg MÖnb K‡ibv|‡hgbt AvaywbK cÖwZôvbmg~n I A_©bxwZ, ag©wbi‡cÿZv Ges m‡e©vcwi, me‡P‡q ¸iæZ¡c~Y© n‡jv MYZš¿|GB †cÖwÿ‡Z Bmjvg I gymjgvb‡`i‡K AvaywbKZvi mv‡_ Am½wZc~Y© e‡j we‡ePbv Kiv nq|GLv‡b Bmjvg mwZ¨B AvaywbKZvi mv‡_ AgvbvbmB wKbv Zv ch©‡eÿY Kiv n‡q‡Q| cvðv‡Z¨ e¨vcKfv‡e g‡b Kiv nq †h, AvaywbKvq‡bi gva¨‡gB Bmjvg‡K GKgvÎ MÖnb‡hvM¨ K‡i †Zvjv †h‡Z cv‡i, hv Avm‡j RwUj I eûgywL cÖeYZv‡K aviY K‡i| ZvB AvaywbKZvev`x cwÛZMY e‡jb †h, Bmjvg GL‡bv Zvi AvengvbKv‡ji g‡a¨ NyicvK Lv‡”P, hv AvaywbK Rxeb hvcb c×wZ I hyw³‡K LÛb Kiv hv‡e GB K_v e‡j †h. Bmjvg I gymwjgiv Bmjvgm¤§Z bq, Ggb me wek¦vm I cÖ‡qvMmg~n‡K †g‡b wb‡q Aek¨B AvaywbKZv‡K MÖnb Ki‡ebv| hv‡nvK, cvðv‡Z¨i AvaywKZvevw`‡`i mv‡_ A‡bK wKQz Am½wZc~Y© nIqv m‡Z¡I, AvaywbKZvi mv‡_ Bmjv‡gi gvbvbmB m¤úK© M‡o IVv A‡hŠw³K bq| †mBmv‡_ Bmjvg, AvaywbKZvi †gŠwjK w`K¸‡jv‡K KZUv MÖnb Ki‡Z cvi‡e, Zv we‡kølY K‡i †`Lv cÖ‡qvRb| BwZnv‡mi w`‡K wd‡i _vKv‡j †`Lv hvq †h, Imgvwbqv kvmbvg‡j, Bmjvg; BD‡ivcxq mf¨Zvi ms¯ú‡k© Avmvi mv‡_ mv‡_, mvgwiK evwnbx‡Z AvaywK cÖhyw³,BD‡ivcxq AvBb-Kvbyb I wkíKjv‡K MÖnb K‡i wb‡qwQj| Aciw`‡K, BD‡ivcI Bmjvgx fveaviv‡K aviY K‡i wb‡qwQj| †mB mg‡q Bmjvgx mgvR¸‡jv‡Z I Jcwb‡ewkK kw³kvjx Ae¯’v‡bi ‡cÖwÿ‡Z,ms¯‹…wZ wel‡q A‡bK cÖwZeÜKZv I evav _vKv m‡Z¡I,cvðv‡Z¨i Avwa‡K¨i weiƒ‡× Bmjvgx †gŠjev‡`i mivmwi DÌvb N‡Uwb, eis Bmjv‡gi AvaywbKZv I Bmjv‡gi mgwš^Z iƒ‡ci my¯úô `„óvšÍ n‡jv,Zzi¯‹| G‡`kwU†Z cÖ_g AvaywbKvqb cÖwµqv Avi¤¢ n‡qwQj|AvaywbKvqb‡K MÖnb K‡i, Bmjvgx g~j¨‡eva I Abykxjb‡K m‡PZb ev Ae‡PZbfv‡e Zviv aviY K‡i †bq| Zzi‡¯‹i ci, gymwjg †`k¸‡jv †hgb Bivb, wgki, RW©vb,mshy³ Avie AvwgivZ wdjcvBb I Ab¨ A‡bK †`k, we‡klZ ga¨cÖv‡P¨,ivR‰bwZK e¨e¯’vq †gŠwjK cwieZ©b mvab K‡i AvaywbKvqb‡K MÖnb K‡i| Z_vwc A‡bK Bmjvgx †`k †hgb †mŠw` Avie,wmwiqv, mshy³ Avie AvwgivZ, RW©vb I eªæbvB GL‡bv ev`kvn,‡kL,myjZvb I GKbvqKiv kvmb KvR cwiPvjbv Ki‡Qb| gymwjg we‡k¦i AwKvsk †`k MYZš¿ cÖwZôvq e¨_©Zvi Kvi‡Y, AvaywbKZvev`xiv, AvaywbKZvi mv‡_ e¨vcKfv‡e wbexW m¤úK© ¯’vcb K‡i Pj‡jI Bmjvg‡K MYZvwš¿K e‡j MÖnb K‡ibbv| wKQz gymwjg †`‡k g~j¨‡ev‡ai NvUwZ Av‡Q e‡U, GUv Av‡`Š Bmjvgx wkÿv ev AmvgÄm¨Zvi Kvi‡Y bq| Gm‡e g~‡j wbnxZ i‡q‡Q; &&GŠwZnvwmK,ivR‰bwZK,A_©‰bwZK I mvs¯‹…wZK `~iZ¡,Bmjvg ag©MZ wek¦v‡mi Rb¨ bq| hw`I AvaywbK MYZvwš¿K gZev‡`i Rb¥ cvðv‡Z¨, †mLv‡bI 18k kZvãx ch©šÍ L„óvb PvP©¸‡jv AvaywbKZv I MYZ‡š¿i we‡ivwaZv Kivq mv`‡i eiY Kiv nqwb, ïay Dbwesk kZ‡KB cwðgv mgv‡R GUv MÖnb‡hvM¨ n‡q I‡V| cÿvšÍ‡i ivRZš¿ e¨e¯’v M‡p I‡VwQj, †mK‡j Av‡jg‡`i Øviv, hviv GB e¨e¯’v‡K †g‡b †bb, Bmjvgx wkÿvi Av‡jv‡K bq, ïay ˆbivR¨, wek„sLjv †_‡K iÿv cvIqvi Rb¨| GB my‡hv‡M, gymwjg †`k¸‡jv‡Z GKwU KZ…Z¡civqb ÿgZv KvVv‡gv M‡o I‡V, †hLv‡b Bmjv‡gi Abymvixiv g‡bvbq‡bi gva¨‡g ev`kvnx ev ivRZš¿ wVwK‡q †i‡L‡Q| mv¤ªR¨ev`x ¯^v_©‡Mvôxi †mev K‡i Zv‡`i ivRKxq kvmb c×wZ‡K AviI mymsnZ K‡i wb‡q‡Q,gymwjg ivRZ‡š¿i mg_©K‡`i g‡a¨ i‡q‡Q, cÖ_gZ BD‡ivc,Av‡gwiKv, hviv memgq Zv‡`i(ivRZ‡š¿i) `ybx©wZ I KZ©„Z¡ev`x kvmK‡`i mg_©b w`‡q Avm‡Q, we‡klZ gymwjg †`k¸‡jv‡K| d‡j †mme †`‡ki gvby‡li MYZš¿ I RbwcÖq miKv‡ii AvLvsKv‡K, KZ…Z¡civqb kvmK‡`i wbôzi nv‡Z `gb Kiv n‡q‡Q,hviv Bmjvg‡K MYZš¿ MÖn‡bi AbygwZ w`‡q‡Q| Dc‡iv³ we‡kølY QvovI, cweÎ KziAvb gwR‡`i evYx ch©‡eÿY Ki‡jI, †`Lv hvq, †Kvb GKbvqKZš¿ ev KZ…Z¡evw`Zv‡K wbiæZmvwnZ Kiv n‡q‡Q| cweÎ KziAv‡bi gg©vbymv‡i g~jZ kw³ cÖ‡qv‡Mi gva¨‡g †Kvb kvmb ÿgZv MÖnb ev AR©b‡K Aby‡gv`b K‡ibv|AvaywbK MYZ‡š¿i †PZbv I KziAv‡bi wb‡`©kbv, Òcivgk© K‡i KvR Ki (ïiv) K_vwU cy‡ivcywi mgv_©K| mgmvgwqK we‡k¦, ïiv (civgk© mfv) -‡K MYZvwš¿K cÖwµqv I MYZvwš¿K cÖwZôbmg~‡ni MVb cÖwµqvi mv‡_ Zzjbxq, hv‡Z wbe©vvPb Acwinvh©| GKBfv‡e ÔwRnv`Õ cÖcÂUv (Bmjv‡gi Rb¨ eo ai‡Yi hy× ev cÖ‡Póv ) AvaywbKvqb I gymwjg mgv‡Ri ms¯‹v‡ii Rb¨ cÖ‡hvR¨ n‡Z cv‡i| GLv‡b ¯§iY Kiv †h‡Z cv‡i †h, wR¡nv‡`i bxwZ; gymwjg mgv‡R ms¯‹vig~jK Kvh©µ‡gi m~Pbv NwU‡qwQj Ges Jcwb‡ewkK kvm‡bi weiæ‡× gyw³i msMÖv‡gi cÖavb gva¨g wn‡m‡e cÖ‡qvM Kiv n‡qwQj| djkÖæªwZ‡Z KwgDwb÷ Av`k©ev‡`i b¨vq Bmjvgx gZev`I Av‡›`vj‡bi iƒc aviY K‡i, hv GKwU AvaywbK cÖeYZv| Avi `yf©vM¨µ‡g, mgmvgwqK mwnsmZv †gvKv‡ejvq wRnv‡`i Av`‡j Bmjvgx Av‡›`vj‡bi m~Pbv N‡U| AvaywbKZvi cÖwZ Bmjv‡gi wbwe©‡iva Ae¯’vb; AviI K‡qKwU †cÖwÿZ‡K we‡ePbvq wb‡q Mfxifv‡e we‡kølY Kiv †h‡Z cv‡i| †hgb- AvaywbK e¨vswKs I gy`ªvbxwZi cÖPjb, Bmjvgx ms¯’v ev msMVb M‡o †Zvjv cÖf…wZ| Bmjvgx m‡¤§jb ms¯’v(I AvB wm), Aviejx‡Mi g‡Zv ms¯’vi K_v D‡jøL Kiv †h‡Z cv‡i| cwi‡k‡l ejv hvq, Bmjvg I AvaywbKZvi Zzjbvg~jK AbymÜvb Kiv n‡j g~j g~j wel‡q Lye GKUv cv_©K¨ Lyu‡R cvIhv hvqbv| Z‡e AvaywbKZv, AZ¨vaywbKZv, Dk„sLjZv,bxwZMwn©Z wKQz AvPvi-AvPiY, ixwZbxwZ,I ms¯‹……wZi KwZcq PP©vMZ welq Av‡Q †h¸‡jv; Bmjvgx wkÿv,Abykxjb I wek¦v‡mi m¤ú~Y© cwicš’x| AZGe, †QvULvU cv_©K¨¸‡jv ¸iæZ¡ bv w`‡q, b¨vqwePvi, ïÔiv, gvbevwaKvi, bvix AwaKvi, cÖwôvb, A_©e¨e¯’vcbv, AvBb mfv, wbe©vnx wefvM, wePvi wefvMmn MYZš¿ I AvaywbKZvi Rb¨ ¸iæZ¡c~Y© weavq cvðvZ¨ I Bmjv‡gi mnve¯’vb I ci¯ú‡ii cwicyiK Kj¨vbg~jK wek¦e¨e¯’v m¤¢e|





রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭





তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

( ২০০৯ সনের ২০ নং আইন )

[এপ্রিল , ২০০৯]



     
তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।


       যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক বাক-স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; এবং

       যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; এবং

       যেহেতু জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে, দুর্নীতি হ্রাস পাইবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে; এবং

       যেহেতু সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন প্রয়োজনীয়;

       সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-





প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক




সংক্ষিপ্ত শিরোনাম প্রবর্তন

১।() এই আইন তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ নামে অভিহিত হইবে।

() এই আইনের -

() ধারা , ২৪ এবং ২৫ ব্যতিত অন্যান্য ধারা ২০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে; এবং

() , ২৪ এবং ২৫ ধারা ১লা জুলাই, ২০০৯ তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।
















সংজ্ঞা

২। -বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী না হইলে, এই আইনে -

() "আপীল কর্তৃপক্ষ" অর্থ -

() কোন তথ্য প্রদান ইউনিটের ক্ষেত্রে উক্ত ইউনিটের অব্যবহিত উর্ধ্বতন কার্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান; অথবা

() কোন তথ্য প্রদান ইউনিটের উর্ধ্বতন কার্যালয় না থাকিলে, উক্ত তথ্য প্রদান ইউনিটের প্রশাসনিক প্রধান;

() "কর্তৃপক্ষ" অর্থ -

() গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সৃষ্ট কোন সংস্থা;

() গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫() অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত কার্য বিধিমালার অধীন গঠিত সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়;

() কোন আইন দ্বারা বা উহার অধীন গঠিত কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;

() সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত বা সরকারী তহবিল হইতে সাহায্যপুষ্ট কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;

() বিদেশী সাহায্যপুষ্ট কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;

() সরকারের পক্ষে অথবা সরকার বা সরকারী কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক সরকারী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান; বা

() সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;

() "কর্মকর্তা" অর্থে কর্মচারীও অন্তর্ভুক্ত হইবে;

() "তথ্য প্রদান ইউনিট" অর্থ :-

() সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়ের সহিত সংযুক্ত বা অধীনস্থ কোন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়;

() কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়;

() "তথ্য কমিশন" অর্থ ধারা ১১ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত তথ্য কমিশন;

() "তথ্য" অর্থে কোন কর্তৃপক্ষের গঠন, কাঠামো দাপ্তরিক কর্মকান্ড সংক্রান্ত যে কোন স্মারক, বই, নকশা, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, লগ বহি, আদেশ, বিজ্ঞপ্তি, দলিল, নমুনা, পত্র, প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, প্রকল্প প্রস্তাব, আলোকচিত্র, অডিও, ভিডিও, অংকিতচিত্র, ফিল্ম, ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত যে কোন ইনস্ট্রুমেন্ট, যান্ত্রিকভাবে পাঠযোগ্য দলিলাদি এবং ভৌতিক গঠন বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে অন্য যে কোন তথ্যবহ বস্তু বা উহাদের প্রতিলিপিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে :

তবে শর্ত থাকে যে, দাপ্তরিক নোট সিট বা নোট সিটের প্রতিলিপি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না;

() "তথ্য অধিকার" অর্থ কোন কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার;

() "তফসিল" অর্থ এই আইনের তফসিল;

() "তৃতীয় পক্ষ" অর্থ তথ্য প্রাপ্তির জন্য অনুরোধকারী বা তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অনুরোধকৃত তথ্যের সহিত জড়িত অন্য কোন পৰ;

() "দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা" অর্থ ধারা ১০ এর অধীন নিযুক্ত কর্মকর্তা;

() "নির্ধারিত" অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;

() "প্রবিধান" অর্থ ধারা ৩৪ এর অধীন প্রণীত কোন প্রবিধান;

() "বাছাই কমিটি" অর্থ ধারা ১৪ এর অধীন গঠিত বাছাই কমিটি;

() "বিধি" অর্থ ধারা ৩৩ এর অধীন প্রণীত কোন বিধি।
















আইনের প্রাধান্য

৩৷ প্রচলিত অন্য কোন আইনের -

() তথ্য প্রদান সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলী দ্বারা ক্ষুণ্ন হইবে না; এবং

() তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে৷











দ্বিতীয় অধ্যায়
তথ্য অধিকার, তথ্য সংরক্ষণ, প্রকাশ প্রাপ্তি




তথ্য অধিকার

৪৷ এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷
















তথ্য সংরক্ষণ

৫৷ () এই আইনের অধীন তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার যাবতীয় তথ্যের ক্যাটালগ এবং ইনডেক্স প্রস্তুত করিয়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিবে৷
() প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ যেই সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণের উপযুক্ত বলিয়া মনে করিবে সেই সকল তথ্য, যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে, কম্পিউটারে সংরক্ষণ করিবে এবং তথ্য লাভের সুবিধার্থে সমগ্র দেশে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উহার সংযোগ স্থাপন করিবে৷

() তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবে৷
















তথ্য প্রকাশ

৬। () প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকান্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয়, এইরূপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ প্রচার করিবে।

() উপ-ধারা () এর অধীন তথ্য প্রকাশ প্রচারের ক্ষেত্রে কোন কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য গোপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে সঙ্কুচিত করিতে পারিবে না।

() প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করিবে যাহাতে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা :-

() কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামোর বিবরণ, কার্যক্রম, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের দায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিবরণ বা পদ্ধতি;

() কর্তৃপক্ষের সকল নিয়ম-কানুন, আইন, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, প্রজ্ঞাপন, নির্দেশনা, ম্যানুয়্যাল, ইত্যাদির তালিকাসহ উহার নিকট রক্ষিত তথ্যসমূহের শ্রেণী- বিন্যাস;

() কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে কোন ব্যক্তি যে সকল শর্তে লাইসেন্স, পারমিট, অনুদান, বরাদ্দ, সম্মতি, অনুমোদন বা অন্য কোন প্রকার সুবিধা গ্রহণ করিতে পারিবেন উহার বিবরণ এবং উক্তরূপ শর্তের কারণে তাহার সহিত কোন প্রকার লেনদেন বা চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজন হইলে সেই সকল শর্তের বিবরণ;

() নাগরিকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার জন্য প্রদত্ত সুবিধাদির বিবরণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী, ঠিকানা এবং, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর -মেইল ঠিকানা।

() কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কোন নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে সকল নীতি সিদ্ধান্ত প্রকাশ করিবে এবং, প্রয়োজনে, সকল নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমর্থনে যুক্তি কারণ ব্যাখ্যা করিবে।

() এই ধারার অধীন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদন বিনামূল্যে সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য সহজলভ্য করিতে হইবে এবং উহার কপি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয়ের জন্য মজুদ রাখিতে হইবে।

() কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত সকল প্রকাশনা জনগণের নিকট উপযুক্ত মূল্যে সহজলভ্য করিতে হইবে।

() কর্তৃপক্ষ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অথবা অন্য কোন পন্থায় প্রচার বা প্রকাশ করিবে।

() তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য প্রকাশ, প্রচার প্রাপ্তির জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবে।
















কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়

৭৷ এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলীতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন কর্তৃপক্ষ কোন নাগরিককে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে না, যথাঃ -
() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() পররাষ্ট্রনীতির কোন বিষয় যাহার দ্বারা বিদেশী রাষ্ট্রের অথবা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা বা আঞ্চলিক কোন জোট বা সংগঠনের সহিত বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() কোন বিদেশী সরকারের নিকট হইতে প্রাপ্ত কোন গোপনীয় তথ্য;

() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন তৃতীয় পক্ষের বুদ্ধিবৃত্তিক সস্পদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে এইরূপ বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক অন্তর্নিহিত গোপনীয়তা বিষয়ক, কপিরাইট বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (Intellectual Property Right) সম্পর্কিত তথ্য;

() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থাকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করিতে পারে এইরূপ নিম্নোক্ত তথ্য, যথাঃ
() আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট আবগারী আইন, বাজেট বা করহার পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য;

() মুদ্রার বিনিময় সুদের হার পরিবর্তনজনিত কোন আগাম তথ্য;

() ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা তদারকি সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য;


() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হইতে পারে বা অপরাধ বৃদ্ধি পাইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইতে পারে বা বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচার কার্য ব্যাহত হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তার জন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক গোপনে প্রদত্ত কোন তথ্য;

() আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয় এবং যাহা প্রকাশে আদালত বা ট্রাইবুনালের নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে অথবা যাহার প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল এইরূপ তথ্য;

() তদন্তাধীন কোন বিষয় যাহার প্রকাশ তদন্ত কাজে বিঘ্ন ঘটাইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() কোন অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেফতার শাস্তিকে প্রভাবিত করিতে পারে এইরূপ তথ্য;

() আইন অনুসারে কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে এইরূপ তথ্য;

() কৌশলগত বাণিজ্যিক কারণে গোপন রাখা বাঞ্ছনীয় এইরূপ কারিগরী বা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ কোন তথ্য;

() কোন ক্রয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হইবার পূর্বে বা উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ক্রয় বা উহার কার্যক্রম সংক্রান্ত কোন তথ্য ;

() জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিকার হানির কারণ হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

() কোন ব্যক্তির আইন দ্বারা সংরক্ষিত গোপনীয় তথ্য;

() পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বর সম্পর্কিত আগাম তথ্য;

() মন্ত্রিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপনীয় সার-সংক্ষেপসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি এবং উক্তরূপ বৈঠকের আলোচনা সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোন তথ্যঃ

তবে শর্ত থাকে যে, মনিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবার পর অনুরূপ সিদ্ধান্তের কারণ এবং যে সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করিয়া সিদ্ধান্তটি গৃহীত হইয়াছে উহা প্রকাশ করা যাইবে৷

আরো শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীন তথ্য প্রদান স্থগিত রাখিবার ক্ষেত্রে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।
















তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ

৮৷ () কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন তথ্য প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট তথ্য চাহিয়া লিখিতভাবে বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম বা -মেইলে অনুরোধ করিতে পারিবেন৷

() উপ-ধারা () উল্লিখিত অনুরোধে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের উল্লেখ থাকিতে হইবে, যথাঃ-
() অনুরোধকারীর নাম, ঠিকানা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্সের নম্বর এবং -মেইল ঠিকানা;

() যে তথ্যের জন্য অনুরোধ করা হইয়াছে উহার নির্ভুল এবং স্পষ্ট বর্ণনা;

() অনুরোধকৃত তথ্যের অবস্থান নির্ণয়ের সুবিধার্থে অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলী; এবং

() কোন পদ্ধতিতে তথ্য পাইতে আগ্রহী উহার বর্ণনা অর্থাৎ পরিদর্শন করা, অনুলিপি নেওয়া, নোট নেওয়া বা অন্য কোন অনুমোদিত পদ্ধতি৷


() এই ধারার অধীন তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুদ্রিত ফরমে বা, ক্ষেত্রমত, নির্ধারিত ফরমেটে হইতে হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, ফরম মুদ্রিত বা সহজলভ্য না হইলে কিংবা ফরমেট নির্ধারিত না হইলে, উপ-ধারা () উল্লিখিত তথ্যাবলী সন্নিবেশ করিয়া সাদা কাগজে বা, ক্ষেত্রমত, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা -মেইলেও তথ্য প্রাপ্তির জন্য অনুরোধ করা যাইবে৷

() উপ-ধারা () এর অধীন তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুরোধকারীকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উক্ত তথ্যের জন্য নির্ধারিত যুক্তিসংগত মূল্য পরিশোধ করিতে হইবে৷

() সরকার, তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফিস এবং, প্রয়োজনে, তথ্যের মূল্য নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে এবং, ক্ষেত্রমত, কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-শ্রেণীকে কিংবা যে কোন শ্রেণীর তথ্যকে উক্ত মূল্য প্রদান হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে৷

() প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ, তথ্য কমিশনের নির্দেশনা অনুসরণে, বিনামূল্যে যে সকল তথ্য সরবরাহ করা হইবে উহার একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া প্রকাশ প্রচার করিবে৷
















তথ্য প্রদান পদ্ধতি

৯৷ () দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধারা এর উপ-ধারা () এর অধীন অনুরোধ প্রাপ্তির তারিখ হইতে অনধিক ২০ (বিশ) কার্য দিবসের মধ্যে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন৷

() উপ-ধারা () যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অনুরোধকৃত তথ্যের সহিত একাধিক তথ্য প্রদান ইউনিট বা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকিলে অনধিক ৩০ (ত্রিশ) কার্য দিবসের মধ্যে উক্ত অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিতে হইবে৷

() উপ-ধারা () () যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন কারণে তথ্য প্রদানে অপারগ হইলে অপারগতার কারণ উল্লেখ করিয়া আবেদন প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্য দিবসের মধ্যে তিনি উহা অনুরোধকারীকে অবহিত করিবেন৷

() উপ-ধারা () এবং () যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধারা এর উপ-ধারা () এর অধীন অনুরোধকৃত তথ্য কোন ব্যক্তির জীবন-মৃত্যু, গ্রেফতার এবং কারাগার হইতে মুক্তি সম্পর্কিত হইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুরোধ প্রাপ্তির ২৪ (চব্বিশ) ঘন্টার মধ্যে উক্ত বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করিবেন৷

() উপ-ধারা (), () বা () উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য সরবরাহ করিতে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যর্থ হইলে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে৷

() কোন অনুরোধকৃত তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট সরবরাহের জন্য মজুদ থাকিলে তিনি উক্ত তথ্যের যুক্তিসংগত মূল্য নির্ধারণ করিবেন এবং উক্ত মূল্য অনধিক (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে পরিশোধ করিবার জন্য অনুরোধকারীকে অবহিত করিবেন৷

() উপ-ধারা () এর অধীন মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের প্রকৃত ব্যয় যেমন- তথ্যের মুদ্রিত মূল্য, ইলেক্ট্রনিক ফরমেট এর মূল্য কিংবা ফটোকপি বা প্রিন্ট আউট সংক্রান্ত যে ব্যয় হইবে উহা হইতে অধিক মূল্য নির্ধারণ করা যাইবে না৷

() ধারা এর উপ-ধারা () এর অধীন অনুরোধকৃত তথ্য প্রদান করা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট যথাযথ বিবেচিত হইলে এবং যেক্ষেত্রে উক্ত তথ্য তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক সরবরাহ করা হইয়াছে কিংবা উক্ত তথ্যে তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে এবং তৃতীয় পক্ষ উহা গোপনীয় তথ্য হিসাবে গণ্য করিয়াছে সেইক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ অনুরোধ প্রাপ্তির (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে তৃতীয় পক্ষকে উহার লিখিত বা মৌখিক মতামত চাহিয়া নোটিশ প্রদান করিবেন এবং তৃতীয় পক্ষ এইরূপ নোটিশের প্রেক্ষিতে কোন মতামত প্রদান করিলে উহা বিবেচনায় লইয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুরোধকারীকে তথ্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন৷

() ধারা যাহা কিছুই থাকুক না কেন, তথ্য প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, এইরূপ তথ্যের সহিত সম্পর্কযুক্ত হইবার কারণে কোন অনুরোধ সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করা যাইবে না এবং অনুরোধের যতটুকু অংশ প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং যতটুকু অংশ যৌক্তিকভাবে পৃথক করা সম্ভব, ততটুকু অংশ অনুরোধকারীকে সরবরাহ করিতে হইবে৷

(১০) কোন ইন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কোন রেকর্ড বা উহার অংশবিশেষ জানাইবার প্রয়োজন হইলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তথ্য লাভে সহায়তা প্রদান করিবেন এবং পরিদর্শনের জন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তাহা প্রদান করাও এই সহায়তার অন্তর্ভুক্ত বলিয়া গণ্য হইবে৷











তৃতীয় অধ্যায়
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা




দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

১০। () এই আইন কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে বিদ্যমান প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ, এই আইন জারীর ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

() এই আইন কার্যকর হইবার পর প্রতিষ্ঠিত কোন কর্তৃপৰ, উক্তরূপ কর্তৃপৰ প্রতিষ্ঠিত হইবার ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

() এই আইন কার্যকর হইবার পর কোন কর্তৃপক্ষ উহার কোন কার্যালয় সৃষ্টি করিলে, উক্তরূপ কার্যালয় সৃষ্টির তারিখ হইতে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কার্যালয় তথা নবসৃষ্ট তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

() প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (), () () এর অধীন নিয়োগকৃত প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী, ঠিকানা এবং, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর -মেইল ঠিকানা উক্তরূপ নিয়োগ প্রদানের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।

() এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অন্য যে কোন কর্মকর্তার সহায়তা চাহিতে পারিবেন এবং কোন কর্মকর্তার নিকট হইতে এইরূপ সহায়তা চাওয়া হইলে তিনি উক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেন।

() কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উপ-ধারা () এর অধীন অন্য কোন কর্মকর্তার সহায়তা চাওয়া হইলে এবং এইরূপ সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতার জন্য আইনের কোন বিধান লংঘিত হইলে সেই ক্ষেত্রে এই আইনের অধীন দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে ক্ষেত্রে উক্ত অন্য কর্মকর্তাও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়া গণ্য হইবেন।











চতুর্থ অধ্যায়
তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি




তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা

১১। () এই আইন কার্যকর হইবার পর, অনধিক ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এবং উহার বিধান অনুসারে তথ্য কমিশন নামে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হইবে।

() তথ্য কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, উহার স্থাবর অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার এবং হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহার নামে ইহা মামলা দায়ের করিতে পরিবে বা ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।

() তথ্য কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে এবং কমিশন, প্রয়োজনে, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে উহার শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
















তথ্য কমিশন গঠন

১২৷ () প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্য (দুই) জন তথ্য কমিশনার সমন্বয়ে তথ্য কমিশন গঠিত হইবে, যাহাদের মধ্যে অন্যূন (এক) জন মহিলা হইবেন৷

() প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের প্রধান নির্বাহী হইবেন৷

() তথ্য কমিশনের কোন পদে শূন্যতা বা উহা গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে তথ্য কমিশনের কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোন প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না৷
















তথ্য কমিশনের ক্ষমতা কার্যাবলী

১৩৷ () কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে কোন অভিযোগ দায়ের করিলে তথ্য কমিশন, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, উক্ত অভিযোগ গ্রহণ, উহার অনুসন্ধান এবং নিষ্পত্তি করিতে পারিবে, যথাঃ-

() কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না করা কিংবা তথ্যের জন্য অনুরোধপত্র গ্রহণ না করা ;

() কোন তথ্য চাহিয়া প্রত্যাখ্যাত হইলে;

() তথ্যের জন্য অনুরোধ করিয়া, এই আইনে উল্লিখিত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে কোন জবাব বা তথ্য প্রাপ্ত না হইলে;

() কোন তথ্যের এমন অংকের মূল্য দাবী করা হইলে, বা প্রদানে বাধ্য করা হইলে, যাহা তাহার বিবেচনায় যৌক্তিক নয়;

() অনুরোধের প্রেক্ষিতে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা হইলে বা যে তথ্য প্রদান করা হইয়াছে উহা ভ্রান্ত বিভ্রান্তিকর বলিয়া মনে হইলে;

() এই আইনের অধীন তথ্যের জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন বা তথ্য প্রাপ্তি সম্পর্কিত অন্য যে কোন বিষয়৷

() তথ্য কমিশন স্ব-প্রণোদিত হইয়া অথবা কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করিতে পারিবে৷

() নিম্নলিখিত বিষয়ে Code of Civil Procedure, 1908 (Act V of 1908) এর অধীন একটি দেওয়ানী আদালত যে ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে তথ্য কমিশন বা, ক্ষেত্রমত, প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারও এই ধারার অধীন সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন, যথাঃ-
() কোন ব্যক্তিকে তথ্য কমিশনে হাজির করিবার জন্য সমন জারী করা এবং শপথপূর্বক মৌখিক বা লিখিত প্রমাণ, দলিল বা অন্য কোন কিছু হাজির করিতে বাধ্য করা;

() তথ্য যাচাই পরিদর্শন করা;

() হলফনামাসহ প্রমাণ গ্রহণ করা;

() কোন অফিসের কোন তথ্য আনয়ন করা;

() কোন সাক্ষী বা দলিল তলব করিয়া সমন জারী করা; এবং

() এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য যে কোন বিষয়৷

() অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোন অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তথ্য কমিশন বা, ক্ষেত্রমত, প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনার কোন কর্তৃপক্ষের নিকট রক্ষিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট যে কোন তথ্য সরেজমিনে পরীক্ষা করিতে পারিবেন৷

() তথ্য কমিশনের কার্যাবলী হইবে নিম্নরূপ, যথাঃ-

() কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রকাশ, প্রচার প্রাপ্তির বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান;

() কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে অনুরোধের পদ্ধতি নির্ধারণ , ক্ষেত্রমত, তথ্যের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ;

() নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিমালা এবং নির্দেশনা প্রণয়ন প্রকাশ;

() তথ্য অধিকার সংরক্ষণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বা আপাততঃ বলবত্অন্য কোন আইনের অধীন স্বীকৃত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা করা এবং উহার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য অসুবিধাসমূহ চিহ্নিত করিয়া উহা দূরীকরণার্থে সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

() নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের বিষয়ে বাধাসমূহ চিহ্নিত করা এবং যথাযথ প্রতিকারের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

() তথ্য অধিকার বিষয়ক চুক্তিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলাদির উপর গবেষণা করা এবং উহা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

() নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্য অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলের সহিত বিদ্যমান আইনের সাদৃশ্যতা পরীক্ষা করা এবং বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে উহা দূরীকরণার্থে সরকার বা, ক্ষেত্রমত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান;

() তথ্য অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক দলিল অনুসমর্থন বা উহাতে স্বাক্ষর প্রদানে সরকারকে পরামর্শ প্রদান;

() তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের বিষয়ে গবেষণা করা এবং শিক্ষা পেশাগত প্রতিষ্ঠানকে উক্তরূপ গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা প্রদান;

() সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্যে তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রচার এবং প্রকাশনা অন্যান্য উপায়ে তথ্য অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ;

() তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রণয়নের ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ সহযোগিতা প্রদান;

() তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মরত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সহায়তা প্রদান;

() তথ্য অধিকার বিষয়ে গবেষণা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বা ওয়ার্কশপের আয়োজন এবং অনুরূপ অন্যবিধ ব্যবস্থার মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রচার;

() তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে কারিগরী অন্যান্য সহায়তা প্রদান;

() তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল স্থাপন; এবং

() তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বাস্তবায়নের বিষয়ে অন্য কোন আইনে গৃহীত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা করা৷
















বাছাই কমিটি

১৪৷ () প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত (পাঁচ) জন সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হইবে, যথাঃ -
() প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি উহার সভাপতিও হইবেন;

() মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার;

() সংসদ কার্যকর থাকাকালীন অবস্থায় স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারী দলের একজন এবং বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য;

() সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকগণের মধ্য হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি৷


() তথ্য মন্ত্রণালয় উপ-ধারা () এর অধীন বাছাই কমিটি গঠনে এবং উক্ত বাছাই কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবে৷

() অন্যূন (তিন) জন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হইবে৷

() বাছাই কমিটি, প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনার নিয়োগের নিমিত্ত রাষ্ট্রপতির নিকট, সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করিবে৷

() বাছাই কমিটিতে ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের অধিকার থাকিবে৷

() বাছাই কমিটি উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে৷

() শুধুমাত্র কোন সদস্যপদে শূন্যতা বা বাছাই কমিটি গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে, উহার কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোন প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না৷
















প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনারগণের নিয়োগ, মেয়াদ, পদত্যাগ, ইত্যাদি

১৫৷ () রাষ্ট্রপতি, বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে, প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্যান্য তথ্য কমিশনারগণকে নিয়োগ করিবেন৷

() ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর অপেক্ষা অধিক বয়স্ক কোন ব্যক্তি প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনার পদে নিয়োগ লাভের বা অধিষ্ঠিত থাকিবার যোগ্য হইবেন না৷

() প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনারগণ নিয়োগ লাভের তারিখ হইতে (পাঁচ) বৎসর কিংবা ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত, যেইটি আগে ঘটে, স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন৷

() প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণ একই পদে পুনরায় নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না, তবে কোন তথ্য কমিশনার প্রধান তথ্য কমিশনার পদে নিয়োগ লাভের অযোগ্য হইবেন না৷

() আইন, বিচার, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা বা জনপ্রশাসনে ব্যাপক জ্ঞান অভিজ্ঞতার অধিকারী ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণ, এই ধারার বিধানাবলী সাপেক্ষে, নিযুক্ত হইবেন৷

() প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে যে কোনো সময় স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন৷

() প্রধান তথ্য কমিশনারের পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান তথ্য কমিশনার তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, নবনিযুক্ত প্রধান তথ্য কমিশনার তাঁহার পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান তথ্য কমিশনার পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতম তথ্য কমিশনার প্রধান তথ্য কমিশনার পদের দায়িত্ব পালন করিবেন৷
















প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনারগণের অপসারণ

১৬৷ () সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারক যেরূপ কারণ পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ কারণ পদ্ধতি ব্যতীত প্রধান তথ্য কমিশনার বা কোন তথ্য কমিশনারকে অপসারণ করা যাইবে না৷

() উপ-ধারা () যাহা কিছুই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান তথ্য কমিশনার বা অন্য কোন তথ্য কমিশনারকে তাহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবেন, যদি তিনি -
() কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হন; বা

() পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বীয় দায়িত্ব বহির্ভূত অন্য কোন পদে নিয়োজিত হন; বা

() কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হন; বা

() নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন৷
















তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক সুবিধাদি

১৭৷ প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক, ভাতা, অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে৷
















তথ্য কমিশনের সভা

১৮। () এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, তথ্য কমিশন উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

() প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে তথ্য কমিশনারগণের মধ্যে যিনি তথ্য কমিশনার হিসাবে জ্যেষ্ঠতম তিনি সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

() প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণের মধ্যে যে কোন (এক) জনের উপস্থিতিতে তথ্য কমিশনের সভার কোরাম গঠিত হইবে।

() তথ্য কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্যান্য তথ্য কমিশনারগণের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং ভোটের সমতা ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের অধিকার থাকিবে।











পঞ্চম অধ্যায়
তথ্য কমিশনের আর্থিক বিষয়াদি




তথ্য কমিশন তহবিল

১৯৷ () এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে তথ্য কমিশন তহবিল নামে একটি তহবিল গঠিত হইবে৷

() তথ্য কমিশন তহবিল এর পরিচালনা প্রশাসন, এই ধারা এবং বিধির বিধান সাপেক্ষে, তথ্য কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে৷

() তথ্য কমিশন তহবিল হইতে প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনারগণের এবং সচিব অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা চাকুরীর শর্তাবলী অনুসারে প্রদেয় অর্থ প্রদান করা হইবে এবং তথ্য কমিশনের প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হইবে৷

() তথ্য কমিশন তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হইবে, যথাঃ -

() সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বাৎসরিক অনুদান;

() সরকারের সম্মতিক্রমে কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান৷
















বাজেট

২০৷ তথ্য কমিশন প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরবর্তী অর্থ-বৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ফরমে অনুমোদনের জন্য সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থ-বৎসরে সরকারের নিকট হইতে তথ্য কমিশনের কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে৷
















তথ্য কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা

২১৷ () সরকার প্রতি অর্থ-বৎসরে তথ্য কমিশনের ব্যয়ের জন্য, উহার চাহিদা বিবেচনায়, উহার অনুকূলে নির্দিষ্টকৃত অর্থ বরাদ্দ করিবে এবং অনুমোদিত নির্ধারিত খাতে উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ হইতে ব্যয় করিবার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা তথ্য কমিশনের জন্য আবশ্যক হইবে না৷

() এই ধারার বিধান দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৮ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মহা-হিসাব নিরীক্ষকের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হইয়াছে বলিয়া ব্যাখ্যা করা যাইবে না৷
















হিসাব রক্ষণ নিরীক্ষা

২২৷ () তথ্য কমিশন যথাযথভাবে উহার হিসাব রক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে৷

() বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা-হিসাব নিরীক্ষক নামে অভিহিত, প্রতি বৎসর তথ্য কমিশনের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা রিপোর্টের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার তথ্য কমিশনের নিকট পেশ করিবেন৷

() উপ-ধারা () মোতাবেক হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা-হিসাব নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি তথ্য কমিশনের সকল রেকর্ড, দলিল দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারগণ বা যে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন৷











ষষ্ঠ অধ্যায়
তথ্য কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারী




তথ্য কমিশনের সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী

২৩৷ () তথ্য কমিশনের একজন সচিব থাকিবেন৷

() এই আইনের অধীন তথ্য কমিশন উহার কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় সংখ্যক অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে৷

() সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন, ভাতা চাকুরীর শর্তাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে৷

() সরকার, তথ্য কমিশনের অনুরোধক্রমে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীকে কমিশনে প্রেষণে নিয়োগ করিতে পারিবে৷











সপ্তম অধ্যায়
আপীল, অভিযোগ, ইত্যাদি




আপীল, নিস্পত্তি ইত্যাদি

২৪৷ () কোন ব্যক্তি ধারা এর উপ-ধারা (), () বা () নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য লাভে ব্যর্থ হইলে কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোন সিদ্ধান্তে সংক্ষুদ্ধ হইলে উক্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার, বা ক্ষেত্রমত, সিদ্ধান্ত লাভ করিবার পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করিতে পারিবেন৷

() আপীল কর্তৃপক্ষ যদি এই মর্মে সন্তষ্ট হন যে, আপীলকারী যুক্তিসংগত কারণে উপ-ধারা () নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপীল দায়ের করিতে পারেন নাই, তাহা হইলে তিনি উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও আপীল আবেদন গ্রহণ করিতে পারিবেন৷

() আপীল কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা () বা () এর অধীন আপীল আবেদন প্রাপ্তির পরবর্তী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে-
() আপীল আবেদনকারীকে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিবেন; অথবা

() তদ্ বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য না হইলে আপীল আবেদনটি খারিজ করিয়া দিবেন৷


() উপ-ধারা () এর অধীন তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশিত হইলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ নির্দেশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে ধারা এর, ক্ষেত্রমত, উপ-ধারা (), () বা () নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আপীল আবেদনকারীকে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন৷
















অভিযোগ দায়ের, নিস্পত্তি ইত্যাদি

২৫৷ () কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবে, যথাঃ-
() ধারা ১৩ এর উপ-ধারা () উল্লিখিত কারণে তথ্য প্রাপ্ত না হইলে;

() ধারা ২৪ এর এর অধীন প্রদত্ত আপীলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হইলে;

() ধারা ২৪ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য প্রাপ্তি বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য প্রদান সংক্রান সিদ্ধান্ত প্রাপ্ত না হইলে৷


() উপ-ধারা () এর দফা () তে উল্লিখিত বিষয়ে যে কোন সময় এবং দফা () () তে উল্লিখিত বিষয়ে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত প্রদানের তারিখ বা, ক্ষেত্রমত, সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন৷

() তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, অভিযোগকারী যুক্তিসংগত কারণে উপ-ধারা () নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অভিযোগ দায়ের করিতে পারেন নাই, তাহা হইলে তথ্য কমিশন উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযোগ গ্রহণ করিতে পারিবেন৷

() কোন অভিযোগের ভিত্তিতে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই আইনের বিধানাবলী অনুসরণে করণীয় কোন কার্য করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন বা করণীয় নয় এমন কার্য করিয়াছেন তাহা হইলে তথ্য কমিশন এই ধারার অধীন উক্ত কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে৷

() উপ-ধারা () এর অধীন অভিযোগ প্রাপ্তির পর কিংবা উপ-ধারা () এর অধীন কোন কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন হইলে প্রধান তথ্য কমিশনার উক্ত অভিযোগটি স্বয়ং অনুসন্ধান করিবেন অথবা অনুসন্ধানের জন্য অন্য কোন তথ্য কমিশনারকে দায়িত্ব প্রদান করিবেন৷

() উপ-ধারা () উল্লিখিত দায়িত্ব গ্রহণ বা প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের অনুসন্ধান সম্পন্ন করিয়া প্রধান তথ্য কমিশনার বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত কার্যপত্র প্রস্তুত করিবেন৷

() উপ-ধারা () উল্লিখিত সিদ্ধান্ত কার্যপত্র তথ্য কমিশনের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করিতে হইবে এবং তথ্য কমিশন উহার সভায় আলোচনাক্রমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে৷

() এই ধারায় উল্লিখিত কোন অভিযোগের অনুসন্ধানকালে যে কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় সেই কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে, তাহার সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ প্রদান করিতে হইবে৷

() কোন অভিযোগের বিষয়বস্তুর সহিত তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকিলে তথ্য কমিশন উক্ত তৃতীয় পক্ষকেও বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগ প্রদান করিবে৷

(১০) উপ-ধারা () এর অধীন প্রাপ্ত অভিযোগ তথ্য কমিশন সাধারণভাবে ৪৫ (পয়ঁতাল্লিশ) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করিবে, তবে, ক্ষেত্র বিশেষে, স্বাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ বা তদন্ত সম্পাদন ইত্যাদি কারণে বর্ধিত সময়ের প্রয়োজন হইলে উক্ত বর্ধিত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পন্ন করা যাইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, অভিযোগ নিষ্পত্তি সময়সীমা, বর্ধিত সময়সহ, কোনক্রমেই সর্বমোট ৭৫ (পঁচাত্তর) দিনের অধিক হইবে না৷

(১১) এই ধারার অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্য কমিশনের নিম্নরূপ ক্ষমতা থাকিবে, যথাঃ-
() কোন কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা যাহা এই আইনের বিধান মোতাবেক গ্রহণ করা প্রয়োজন, যথাঃ-
() অনুরোধকৃত তথ্য সুনির্দিষ্ট পন্থায় প্রদান;

() দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ;

() বিশেষ কোন তথ্য বা বিশেষ ধরনের তথ্যাবলী প্রকাশ ;

() তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা প্রকাশের ক্ষেত্রে উক্ত কর্তৃপক্ষের পালনীয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন;

() কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের তথ্য অধিকার বিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ;

() কোন ক্ষতি বা অন্য কোন প্রকার দুর্ভোগের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান;

() এই আইনে বর্ণিত কোন জরিমানা আরোপ করা;

() কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা;

() অভিযোগ খারিজ করা;

() কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নূতনভাবে তথ্যের শ্রেণীবদ্ধকরণ;

() তথ্যের প্রকৃতি, শ্রেণীবিন্যাসকরণ, সংরক্ষণ, প্রকাশ সরবরাহ সংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ে এই আইনের আলোকে ব্যাখ্যা প্রদান;



(১২) এই ধারার অধীন প্রদত্ত তথ্য কমিশনের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক হইবে৷

(১৩) তথ্য কমিশন ইহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে৷

(১৪) তথ্য কমিশন প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে অভিযোগ নিষ্পত্তির অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে৷
















প্রতিনিধিত্ব

২৬৷ কোন অভিযোগের পক্ষসমূহ তথ্য কমিশনের সামনে ব্যক্তিগতভাবে বা আইনজীবীর মাধ্যমে তাহাদের বক্তব্য উপস্থাপন করিতে পারিবেন
















জরিমানা, ইত্যাদি

২৭৷ () কোন অভিযোগ নিষ্পত্তির সূত্রে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশনের যদি এই মর্মে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা -

() কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিয়াছেন;

() এই আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুরোধকারীকে তথ্য প্রদান করিতে কিংবা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন;
() অসদুদ্দেশ্যে তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন;

() যে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ করা হইয়াছিল তাহা প্রদান না করিয়া ভুল, অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বা বিকৃত তথ্য প্রদান করিয়াছেন;

() কোন তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছেন-

তাহা হইলে তথ্য কমিশন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্তরূপ কার্যের তারিখ হইতে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে, এবং এইরূপ জরিমানা কোনক্রমেই ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার অধিক হইবে না৷

() উপ-ধারা () এর অধীন জরিমানা আরোপের পূর্বে তথ্য কমিশন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগ প্রদান করিবে৷

() তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তষ্ট হয় যে, নাগরিকের তথ্য প্রাপ্তিতে উপ-ধারা () বর্ণিত কার্য করিয়া কোন কর্মকর্তা বিঘ্ন সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা হইলে তথ্য কমিশন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, উপ-ধারা () উল্লিখিত জরিমানা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এহেন কার্যকে অসদাচরণ গণ্য করিয়া তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে সুপারিশ করিতে পারিবে এবং এই বিষয়ে গৃহীত সর্বশেষ ব্যবস্থা তথ্য কমিশনকে অবহিত করিবার জন্য উক্ত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করিতে পারিবে৷

() এই ধারার অধীন পরিশোধযোগ্য কোন জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না হইলে তাহা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট হইতে Public Demands Recovery Act, 1913 (Act IX of 1913) এর বিধান অনুযায়ী বকেয়া ভূমি রাজস্ব যে পদ্ধতিতে আদায় করা হয় সেই পদ্ধতিতে আদায়যোগ্য হইবে৷
















Limitation Act, 1908এর প্রয়োগ

২৮৷ এই আইনের অধীন আপীল বা অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে Limitation Act, 1908 (Act IX of 1908) এর বিধানাবলী, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, যতদূর সম্ভব, প্রযোজ্য হইবে৷
















মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা

২৯৷ এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া গণ্য কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে, এই আইনে উল্লিখিত আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনের নিকট অভিযোগ দায়ের ব্যতীত, কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না৷











অষ্টম অধ্যায়
বিবিধ




তথ্য কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন

৩০৷ () প্রতি বৎসরের ৩১ মার্চ এর মধ্যে তথ্য কমিশন উহার পূর্ববর্তী বৎসরের কার্যাবলী সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবে৷

() উপ-ধারা () উল্লিখিত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট বৎসরের নিম্নলিখিত তথ্য সন্নিবেশিত থাকিবে, যথাঃ
() কর্তৃপক্ষওয়ারী তথ্য সরবরাহের জন্য প্রাপ্ত অনুরোধের সংখ্যা;

() অনুরোধকারীকে অনুরোধকৃত তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সংখ্যা এবং এই আইনের যে সকল বিধানের আওতায় উক্ত সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হইয়াছে উহার বিবরণ;

() দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপীলের সংখ্যা এবং উক্ত আপীলের ফলাফল;

() কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উহার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিবরণ;

() কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এই আইনের অধীন সংগৃহীত উপযুক্ত মূল্যের পরিমাণ;

() এই আইন এর বিধানাবলী বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ;


() নাগরিকের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সহিত সম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রাপ্ত সংস্কার প্রস্তাব;

() তথ্য কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা;

() তথ্য কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ;

() তথ্য কমিশন কর্তৃক আরোপিত দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা উহার বিবরণ;

() তথ্য কমিশন কর্তৃক আরোপিত আদায়কৃত জরিমানার মোট পরিমাণ;

() তথ্য কমিশন কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনা প্রবিধানমালা;

() তথ্য কমিশনের আয়-ব্যয়ের হিসাব;

() তথ্য কমিশনের বিবেচনায় প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন এইরূপ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়;
() এই আইনের বিধানাবলী প্রতিপালনে কোন কর্তৃপক্ষের অনীহা পরিলক্ষিত হইলে উক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ৷


() উপ-ধারা () এর অধীন প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর রাষ্ট্রপতি উহা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করিবেন৷

() উপ-ধারা () এর অধীন রাষ্ট্রপতির নিকট পেশকৃত প্রতিবেদন তথ্য কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওয়েবসাইটে প্রকাশ প্রচার করিবে৷

() এই ধারার অধীন প্রতিবেদন প্রণয়নের প্রয়োজনে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ তথ্য কমিশনকে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সরবরাহসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদান করিবে৷
















সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ

৩১৷ এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধির অধীন সরল বিশ্বাসে তথ্য প্রকাশ করা হইয়াছে বা করিবার উদ্দেশ্য ছিল বলিয়া বিবেচিত, কোন কার্যের জন্য কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে তিনি তথ্য কমিশন, প্রধান তথ্য কমিশনার, তথ্য কমিশনারগণ বা তথ্য কমিশনের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী, বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোন আইনগত কার্যধারা রুজু করা যাইবে না৷
















কতিপয় সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য নহে

৩২। () এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, তফসিলে উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যে নিয়োজিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হইবে না।

() উপ-ধারা () যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য দুর্নীতি বা মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার সহিত জড়িত থাকিলে উক্ত ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হইবে না।

() উপ-ধারা () উল্লিখিত তথ্য প্রাপ্তির জন্য কোন অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, তথ্য কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করিয়া, অনুরোধ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে অনুরোধকারীকে উক্ত তথ্য প্রদান করিবে।

() তফসিলে উলিস্নখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের সংখ্যার হ্রাস বা বৃদ্ধির প্রয়োজনে সরকার তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে, সময় সময়, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে।
















বিধি প্রণয়ন ক্ষমতা

৩৩৷ এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে সরকার, তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে৷
















প্রবিধান প্রণয়ন ক্ষমতা

৩৪৷ এই আইনের উদ্দেশ্যেপূরণকল্পে তথ্য কমিশন, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে৷
















অস্পষ্টতা দূরীকরণ

৩৫৷ এই আইনের কোন বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোন অস্পষ্টতা দেখা দিলে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অস্পষ্টতা অপসারণ করিতে পারিবে৷
















ইংরেজীতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ

৩৬৷ () এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, প্রয়োজনবোধে, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই অধ্যাদেশের ইংরেজীতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশ করিতে পারিবে৷

() বাংলা ইংরেজী পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে৷
















রহিতকরণ হেফাজত

৩৭। () এতদ্দ্বারা তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ, ২০০৮ (২০০৮ সনের ৫০ নং অধ্যাদেশ) রহিত করা হইল।

() উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিতকৃত অধ্যাদেশ এর অধীন কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন ব্যবস্থা এই আইনের অধীন কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।



















Copyright © 2010, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs