রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭

Primary Education from country to country

প্রাথমিক শিক্ষা:দেশে-দেশে
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা, সারা পৃথিবীতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা স্তর। এ স্তরকে উন্নত-অনুন্নত সব দেশই সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করার প্রয়াস চালাচ্ছে। তাঁদের সবার উপলব্দি হলো, দেশ-জাতিকে উন্নত করতে হলে প্রাথমিক স্তর হতে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদের কোমল মনে শিক্ষার তথা জ্ঞান জগতের উত্তম বীজ বপন করে দিতে হবে। অনেক দেশ আছে, যারা যেনতেনভাবে তাঁদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এতদিন চালিয়ে যাচ্ছিল। তারাও বুঝতে পারছে, প্রত্যেক দেশ-জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রগতিশীল ভাবনা-চিন্তা প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হতে সূচনা ঘটাতে হবে।সৌদি আরবসহ সমগ্র  মধ্যপ্রাচ্য এবং মুসলিম দেশগুলো যারা ভেবেছিল ধর্মীয় ভাবধারা সংবলিত শিক্ষা দিয়ে দেশকে-জাতিকে উন্নত করবে-এগিয়ে নিবে, তারাও শিক্ষাকে সংস্কার করে আধুনিকতার পথে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেছে।ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে শিক্ষায় পরিবর্তণ-পরিমার্জন করছে, তারা। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত-চীন-জাপান, এমন কি শ্রলংকাও অনেক আগে এ সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করে সুফল ঘরে তুলছ। বাংলাদেশ কেন এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে? তাই, বাংলাদেশ সরকারও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সংস্কার ও উন্নয়নে ইতোমধ্যে অনেক কর্মসূচি গ্রহন, বাস্তবায়ন এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। সাফল্যের পালে যোগ হচ্ছে নিত্যদিনের শিক্ষা অগ্রগতির হাওয়া।দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতন যাই হোক না কেন, শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকটি সবাইকে ভাবতে হবে।প্রথমেই বিশ্ব ব্যাংক কতৃক তৈরিকৃত প্রাথমিক শিক্ষায় বিশ্বব্যাপী শিশু ভর্তির পরিসংখ্যান সংবলিত ২০১২ সালের একটি চিত্র দেখব।
ক্রমিক নং
অঞ্চলের নাম
ভর্তির হার
০১
আরব বিশ্ব
১০১%
০২
ক্যারিবীয় দেশগুলো
৯৭%
০৩
ইউরোপীয় ও বাল্টিক দেশসমূহ
১০০%
০৪
পুর্ব এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা
১১৮%
০৫
ইউরো এলাকা
১০৩%
০৬
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
১০৩%
০৭
ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়া
৯৯%
০৮
যুদ্ধবিধ্বস্থ এলাকা
১০২%
০৯
ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় দেশসমূহ
১০৯%
১০
স্বল্পোন্নত দেশসমূহ
১০৬%
১১
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা
১১০%
১২
ও.ই.সি.ডি সদস্যভুক্ত দেশগুলো
১০২%
১৩
অন্যান্য ক্ষুদ্র দেশসমূহ
১১১%
১৪
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশসমূহ
১১৮%
১৫
ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ
১০৯%
১৬
দক্ষিণ এশিয়া
১১১%
১৭
সাব-সাহারাভুক্ত আফ্রিকা
১০০%
১৮
বিশ্বব্যাপী ভর্তি
১০৮%

উন্নত দেশগুলোর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা: বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি বুঝার জন্য আমরা উন্নত বিশ্বের প্রাথমিক শিক্ষার দিকে এক পলক দৃষ্টি দেব।এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্ত রাজ্য, ফ্রান্স, জার্মান, জাপান, ইতালী, চীন, ভারত, মিশর, মালেশিয়া, সৌদি আরব, এবং শ্রীলংকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করব।অতপর বালাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তাদের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরব।
মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র: মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে সাধারণত ৮ বছর বয়সকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সময়কে প্রাথমিক শিক্ষা বা ইলিমেন্টারি শিক্ষা স্তর হিসাবে বিবেচনা করা হয়।আর ৫ বছর বয়সে শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অনানুষ্ঠানিকভাবে বা বাধ্যতাশূলক নয, এমন অবস্থায় পড়াশোনা করে থাকে।প্রাক-প্রাথমিকের ০১ বছরকালকে প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয় না, এটাকে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা হিসাবে ধরা হয়।আর পরের বছরগুলোকে প্রথম গ্রেড, দ্বিতীয় গ্রেড ও পরবর্তী গ্রেড এভাবে তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিগুলো সাজানো হয়ে থাকে।পঞ্চম গ্রেডকে প্রাথমিক শিক্ষার চূড়ান্ত ধাপ বা শ্রেণিরূপে বিবেচনা করা হয়। আর এ ধাপের নির্ধারিত বয়স হলো ১১ বছর। সাধারণত কিছু সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। প্রথম তিন হতে পাঁচ বছরের শিক্ষাকে শিশুদের জন্য তাঁদের শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বর্পূর্ণ শিক্ষা কাল হিসেবে ধরা হয়। ৫ হতে ১১ বছরের এ শিশু শিক্ষা কালে শিশু মনে শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিবিকাশজাত এবং আবেগিক বিকাশ; আর সেই সাথে অনুসন্ধিৎসু করে তোলা, চরিত্র গঠন, ব্যব্কিত্ব বিকাশ, জ্ঞান, ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দক্ষতাগুলোকে মজবুত করার প্রয়াস চালানো হয়। পাশাপাশি স্বাষ্থ্য শিক্ষাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। সংগীত শিক্ষাও কম গুরুত্ব পায় না, এ সময়।
যুক্ত রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা: মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সংগে বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যবস্থার সাথে অনেকটা মিল আছে। আর আমাদের দেশে জাতীয় শিক্ষা নীতি/২০১০-এ বর্ণিত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের অনুরূপ ব্যবস্থা রয়েছে, যুক্ত রাজ্যে।যুক্তরাজ্যের প্রত্যেক রাজ্যে অনেকটা প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রাথমিক শিক্ষায় কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।সাধারণভাবে সব রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষাসহ পাঁচ স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় মিল রয়েছে। তাদের প্রাথমিক শিক্ষা বা বিদ্যালয় শিক্ষা ৫ বছর হতে ১৮ বছর কালব্যাপী।আর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অনানুষ্ঠানিকভাবে চলে। অনেক অভিভাবক এ স্তরের শিক্ষা, গৃহেই দিয়ে থাকে। পাঠ্য তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোও যুক্ত রাজ্যে অনেকটা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মত। তবে ভাষাগত উৎকষর্তাসহ সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান উন্নত ও জটিল বিষয়গুলো অধিকতর কঠিন এবং কঠিন বিষয়গুলোও পাঠ্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।এক কথায় সব সাহিত্য এবং বিষয় শিশুতোষ ভাষায় পাঠ দান করা হয় এবং উন্নত ও প্রাসংগিক সব উপকরণ ব্যবহার করে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ফ্রান্সের প্রাথমিক শিক্ষা: ফ্রান্সের প্রাথমিক শিক্ষার স্তরও অনেকটা বাংলাদেমের মত। তবে প্রাক-প্রাথমিক স্তরকে তারা তিনটি ভাগে ভাগ করে শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য তৈরি করে তোলে তারা।তাদের বয়স ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক স্তরগলো হলো ২-৩ বছরে পেটিট, ৩-৫ বছরে মঈনী সেকশন এবং গ্রান্ডে সেকশনে ৫-৬ বছরের শিশুরা পড়াশোনা করে থাকে। এ স্তরগুলোর পড়াশোনা ঘরে বা শিক্ষকের নিকট চলে, ধাইয়ের নিকট বা অনানুষ্ঠানিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করা হয়ে থাকে প্রক-প্রাথমিক শিক্ষা।আর ৬ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শ্রেণি হতে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা ঘটে। আর শেষ বয়স হলো ১১ বছর ও পঞ্ম শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করে সাধারণত ১১ বছরে।
জার্মানের প্রাথমিক শিক্ষা:কিন্ডারগার্টেন জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জার্মানে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এ দেশেও নার্সারি, প্লে-গ্রুপ, কে.জি, কে.জি- ওয়ান, কেজি-টু এভাবে কেজি স্কুল সিস্টেমে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পড়াশোনা চলে। আর কে.জি শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্ভাবক ফ্রবেল যেহেতু এ দেশেরই নাগরিক, তাই হয়তো তাদের শিক্ষায় এ পদ্ধতির প্রভাব এবং অনুসরণ করা হয়ে থাকে।প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক শ্রেণির পাঠ্য তালিকাভুক্ত বিষয় ও পাঠ্য বিষয়বস্তুও অনেকটা বাংলাদেশের মত।তবে তারাও বৃটিশদের মত উন্নত শিশুতোষ সাহিত্য-সংস্কৃতি শিক্ষা দিয়ে থাকে শিশুদের।
চীনের প্রাথমিক শিক্ষা:চীনের মত এত বৃহত দেশে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার প্রশংসনীয়।১৯৪৯ সালে এ দেশে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশু ভর্তর হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এখন শতভাগ। সাধারণত ৭ বছর বয়সী শিশুরা এ স্তরে শিশুরা ভর্তি হয, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ৬ বছর বয়সে। ৩ বছর বযসে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।  আর তাদের দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশেষ শিক্ষার। দুর্বল শিশুদেরকে মোটামুটি করার জন্য যতটুকু ততটুকু তাদেরকে উপযুক্ত করার জন্য প্রয়াস চালানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে তাদের পাঠ্যপুস্তক হিসাবে নির্বাচিত বিষয়গুলোও আমাদের দেশের মত।
জাপানের প্রাথমিক শিক্ষা:জাপানে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর প্রথম হতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। তারা যে কোন বিষয় পড়তে পারা, শারীরিক কসরত, অধ্যাবসায় ও শৃংখলাকে মূল পাঠ্য বিষয়ের পাশাপাশি অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।তাদের আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর আগে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা স্তর আছে। তাদের শ্রেণিতে ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ৩১ জনের বেশি নয়।৬ বছর বয়সেই তাদের শিশুদের আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার যাত্রা ঘটে।আর তাদের পুরো প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত সরকারিভাবে। আমার মনে হয় বতর্মানে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাই সবচেয়ে সুপরিকল্পিত এবং দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা এটাকে।
ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা:ভারত ও চীনের মত বড় দেশ হিসাবে তাদের প্রাথমিক শিক্ষার বহর বিশাল এবং মানসম্মত করে তুলেছে। তবে তাদের ২৬ টি রাজ্যের রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচলনা করা হয়ে থাকে। তাদের সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা এগিয়ে চলেছে। আবার মিশনারি শিক্ষা ব্যবস্থার সংখ্যাও কম নয়, ভারতে। পাঠ্য বিষয়বস্তু এবং প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বয়সের পরিধিও ৬ বছর হতে ১২ বছর। তারাও ব্রিটিশ প্রাথমিক শিক্ষার মত শিশুদের উন্নত ও সমৃদ্ধ সব বিষয় পড়ানোর ব্যবস্থা করেছে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে। পাঠ্য বইগুলোর মান অনেক উঁচু এবং ভাষাও উচ্চমার্গীয়।তাদের পড়াশোনা এবং পদ্ধতি, পাঠ দান পদ্ধতি পুরোটাই মাল্টিমিডিযা নির্ভর। তবে কিছু কিছু দিক দিয়ে এবং অঞ্চলগত কারণে তাদের কিছু এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার মান কাংখিত পর্যায়ের নয়।নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্থ সেনের এক বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে মেয়ে শিশুর ভর্তি এখনও বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ।
মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোর প্রাথমিক শিক্ষা: মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মিশর ও ইরাক প্রাথমিক শিক্ষাসহ সব শিক্ষা স্তরে কিছুটা আধুনিকতা এনেছে। ইরানেও নিজস্বতা ঠিক রেখে অত্যাধুনিক সব বিষয়সহ প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হতে জ্ঞান-বিজ্ঞান জগতের সব কিছু শিশুদেরকে শেখানোর প্রযাস চালানোপ হয়। আর বয়স এবং পাঠ্য বিষয়গুলো এসব দেশে অনেকটা বাংলাদেশের মতই।কিন্তু সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতে মুখস্থকরণ পদ্ধতি এবং আরবী ভাষা ও ইসলামী শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ জোর দেয়া । জ্ঞান-বিজ্ঞান বা প্রগতিশীল ধারার শিক্ষার ভাবনা তারা এখনও তেমন একটা অনুসরণ করে না। তবে ইদানিং তারা শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন এবং জ্ঞান-প্রযুক্তির প্রভাব প্রসার করার বিষয়ে ভাবছে। তাদের উচ্চ শিক্ষা স্তরে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এক কথায় বলা যায় আরব বিশ্ব শিশুদের মানসম্মত আধুনিক শিক্ষা দেযার ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন নয়। তারা সেকলে শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ এক কালে এ আরব বিশ্ব জ্ঞান চর্চায় সারা প্রথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।ইবনে সিনা, আল-খাওয়ারিজীমী, ইবনে খলদুন, ইমাম গাজ্জালী, আল-খিন্দি, আল-জাবের, ইবনে হাইয়ান, শেখ শাদী, আল্লামা রুমী, মহাকবি হাফিজ, আল-কেমী, ওমর খৈয়ামসহ অনেকেই জ্ঞান জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন।ইবনে সিনাকে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসাবেই বেশি চিনি।তার প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা নিয়ে একটি পুস্তিকা পড়ে আমার মনে হয়েছে তাঁর ভাবনাগুলোই পাশ্চাত্য জগত অনুসরণ করছে।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা: বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। ৫ বছর বযসের শিশুরা প্রাক-প্রাথকি শিক্ষা শ্রেণিতে ভর্ত হয়ে থাকে। আবার ৬ বছর বয়স হতে ১০ বছরের উর্ধ্ব বয়সের শিশুরা ১ম হতে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে থাকে।তাদের পাঠ্য বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা। আর শারীরিক শিক্ষা, সংগীত, চারু-কারু ইত্যাদি বিষয় এবং সহপাঠক্রমিক অন্যন্য বিষয়গুলো প্রাথমিক স্তরে শিখে থাকে। পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তারা একটি কেন্দ্র পরীক্ষায় অংশগ্রহনের মধ্যদিয়ে এ স্তরের শিক্ষা সমাপন করে থাকে এবং একটি সনদ লাভ করে থাকে।অতপর মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে প্রবেশ করে থাকে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি/২০১০-এর আলোকে হয়ত আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা স্তর ধীরে ধীরে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
মানগত তুলনামূলক চিত্র: আমাদের দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রায়ই অভিযোগের আংগুল উঁচিয়ে বলেন যে, শিক্ষার মান পড়ে গেছে। মানসম্মত শিক্ষা; প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হতে উচ্চ শিক্ষাস্তর কোথাও হচ্ছে না এমন অভিযোগ অনেকের।শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাথে সাথে প্রশ্ন আসে মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষার পরিবেশ, অবকাঠামো, মানুষের শিক্ষা সচেতনতা, দারিদ্র্য এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবের কথা। আমরা যা প্রত্যাশা করছি তা হয়ত অনেক দূরে। উন্নত দেশগুলোর মত মানসম্মত, শিক্ষিত, দক্ষ, যোগ্য ও যুগোপযোগি মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হলে আরও অনেক কাজ করতে হবে আমাদের দেশে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা এবং পদ মর্যাদা বৃদ্ধিসহ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার বাধা-প্রতিবন্ধকতাগুলো আগে অপসারণ করতে হবে।প্রত্যেক বিদ্যালয়ে কর্ম পরিবেশ ও শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নারী শিক্ষকদের নির্বিগ্নে কর্মস্থলে গমানাগমন এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাকুরি বিধি-বিধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। উপরের স্তরের সুযোগ-সুবিধার চাইতে মাঠ পর্যায়ে কমর্রত শিক্ষক-কর্মকর্তাগণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন এবং নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে হবে, বেশি বেশি।এক পর্যায়ে হয়তো আমরা যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলছি, তা পুরোপুরি না হলেও অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছতে পারব।

উপসংহার: উপরে আমরা কিছু উন্নত এবং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তর নিয়ে একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছি।পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সাথে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের মিল রয়েছে। বিশেষত শিশুর বয়স ও পাঠ্য বিষয়ভুক্ত বিষয়গুলো এবং পাঠদানের কলা-কৌশলগুলো অনেকটা অভিন্ন। স্বাস্থ্য সচেতনতা, কর্মমুখিতা, অধ্যাবসায়, শারীরিক শিক্ষা, উন্নত পাঠ্যসূচিসহ কিছু কিছু বিষয়ে অমিল থাকলেও অন্যসব বিষয়ে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভর্তির হার এবং বিদ্যালয় গমনাগমন, ছেলে-মেয়ে সমতা, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর শিখন-শেখানো, এসব দিকও আমাদের দেশের চিত্র খারাপ নয়।কিন্তু ভারতের ৮ম শ্রেণি পাশ একজন কর্মীর সাথে আমাদের এম.এ পাশ-বি.এ পাশ লোকেরা বহিবির্শ্বে গিয়ে কাজ করার সময় পাল্লা দিতে পারে না এটা কেমন করে হয়? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্য বিষয়বস্তুকে হয়তো ধীরে ধীরে আরেকটু কাঠিন্যের দিকে নিয়ে যেতে হবে। হিসাব-কিতাব, গাণিতিক সমস্যা সমাধান এবং ইংরেজি ভাষা শিখন-শেখানোর প্রক্রিয়াটিকে মনে হয় আরও জোর দিতে হবে এবং বিয়বস্তুকে আরেকটু ভারী ও সহজবোধ্য করার দিকে মনোযোগ দিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জন করানোর উপর বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন