হযরত আলী (র:) মহানবীর (দ:) শক্তিশালী
একজন সাহাবী, সুশাসক, জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান
মানুষ
মোহাম্মধ শহীদুল্লাহ্*
হযরত আলী (র:) ছিলেন, মহানবী হযরত
মুহাম্মদ (দ:)-এর সন্তানতুল্য, মেয়ে জামাতা ও আপন চাচাত ভাই। হযরত মুহাম্মদ (দ:)
নবুয়ত লাভ করার পর মক্কায় ইসলাম ধর্মের প্রচারণা শুরু করেন; যুবকদের মধ্যে প্রথম
হযরত আলী (দ:), প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে হযরত আবু বকর (র:) এবং মহিলাদের মধ্যে
উম্মুল মু‘মেনীন খদিজাতুল কুবরাহ (র:) মহানবীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণপূর্বক
সার্বক্ষণিক সমর্থন ও সহযোগিতা করেন। আর মহানবীর (দ:) মক্কী জীবন ও মাদানী জীবনে
২৩ বছর (১০ বছর ও ১৩ বছর) ধরে তাঁরা ছিলেন, তাঁর নিত্য সঙ্গী। মদীনা হিজরত করার পর
পরই মা ফাতেমার সাথে হযরত আলী (র:)-এর শাদি মুবারক সম্পন্ন হয়। মহানবী (দ:) তাঁর
সাহাবীগণকে ঘোষণা দেন যে, আল্লাহ তায়ালা কতৃক আদিষ্ট হয়ে তিনি হযরত আলী (র:)-এর
সাথে প্রিয় কন্যা ফাতেমাকে (র:) বিবাহ দেন। মহানবীর (দ:) ঘনিষ্ঠ সহচর হযরত আলী
(র:); বীর সেনানী, শক্তিশালী মু‘মিন মুসলমান, জ্ঞানী, সুশাসক এবং বেহেশতের সরাসরি
সুসংবাদপ্রাপ্ত একজন সাহাবী। ইসলাম ধর্ম যে, আজ এত জন প্রিয়, শ্বাস্বত ধর্ম
বিশ্বাস ও আল্লাহ্ তায়ালা কতৃক একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে বিশ্বব্যাপী
সুপ্রতিষ্ঠিত এর পেছনে হযরত আলী(র:)-এর অনন্য ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে শিয়ারা হযরত
আলী (র:)-কে তাঁদের একচ্ছত্র ইমাম হিসেবে দাবি করছে, তা সঠিক নয়। তিনি সকল
মুসলমানের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মর্দে মুজাহিদ, ইসলামী শাসক ও ইসলাম ধর্ম প্রচারক।
তিনি মুসলমানদের কোন অনুসারি বিশেষের জন্য নয়, সমগ্র মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক।
তিনি কুরআন ও সুন্নাহ‘র অন্যতম তাফসিরকারক এবং হাদিস বিশারদ ছিলেন। স্বয়ং মহানবী
হযরত মুহাম্মদ (দ:), হযরত আলীর (র:) জ্ঞান প্রজ্ঞার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি
(মহানবী) বলেন; “আমি জ্ঞানের শহর, আর আলী সে জ্ঞানের দরজা স্বরূপ।”
হযরত আলীর (র:) জন্ম, শৈশব ও বেড়ে ওঠা:
আলী ইবনে আবু তালেব ৬০০ খ্রি: মক্কা
নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৬৬১ সালের জানুয়ারি মাসে শহীদ হন। তাঁর পিতার নাম ছিল
আবু তালেব। মহনবী হযরত মুহাম্মদ (দ:)-এর চাচা ছিলেন তিনি (আবু তালেব)। হযরত আলী
(র:) সম্পর্কসূত্রে মহানবীর চাচাত ভাই ও পরে মেয়ের জামাতা। জানা যায়, হযরত আলী
(র:)-এর জন্ম লাভের সময় তাঁর পিতা বা পরিবার ছিল মক্কার পবিত্র কাবা শরীফ দেখাশোনা
করার দায়িত্বপ্রাপ্ত মুতাওয়াল্লী। আর তাঁর (হযরত আলী) জন্ম গ্রহণকালে তাঁর মা কাবাগৃহে
প্রার্থনা করতে যান, ঠিক সে সময় তাঁর প্রসব বেদনা ওঠলে, তিনি সেখানেই অবস্থান
করেন। এসময় আলীর জন্ম হয়। আর হযরত মুহাম্মদ (দ:) সেখানে তাঁকে প্রথম দেখতে গিয়ে
কোলে তুলে নিয়েছিলেন। সে আঁতুত ঘর থেকে মহানবীর সাথে আলীর হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং
তা আমৃত্যু অক্ষুন্ন ছিল। ১০ বছর বয়সেই হযরত আলী (র:) ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন, ৬১০
সালে। মহনবী (দ:) নবুয়ত লাভের পর অন্তত ৩ বছর গোপনে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।
প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে হয়ত তা
করতে সক্ষম হতেন না। তাই, আল্লাহ তায়ালার ইশারায় মহানবী (দ:) হয়ত কৌশলগত কারণে
গোপনে ইসলাম প্রচারের কৌশল গ্রহণ করে একদল শক্তিশালী মুসলমান তৈরি করার ওপর অধিক
গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
জ্ঞানী ও বীর পুরুষ হযরত আলী (র:):
হযরত আলী (র:) ছিলেন, মহানবীর (দ:)-এর
যোগ্য শিষ্য ও সহচর। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং; মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ:)-কে কুরআন
শরীফ অবতীর্ণ করে ও ইসলামের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং এর প্রচার-প্রসার কৌশলসমূহ
শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর মে‘রাজের মাধ্যমে মহানবীকে (দ:) আরশে আজীমে আমন্ত্রণ জানিয়ে
আল্লাহ্ তায়ালা সরাসরি নবূয়তের স্বীকৃতি প্রদান করেন ও মর্যাদাসীন করেন। আর কখনো
অহীর মাধ্যমে, কখনো সরাসরি জিব্রাইল (আ:)-কে পাঠিয়ে অথবা ইলহাম বা তাবীলের মাধ্যমে
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তায়ালা এ পৃথিবীতে হযরত মুহাম্মদ (দ:)-কে সর্বশ্রেষ্ট,
মানব, নবীগণের নেতা ও বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর হযরত
আলী (র:) মহানবীর (দ:) নিত্য সাহচর্য্য পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন। তিনি (আলী) ছিলেন,
অন্যতম অহী লেখক এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাকারক।
খলিফা বা সুশাসক হিসেবে হযরত আলী(র:):
মহানবী
হযরত মুহাম্মদ (দ:)-এর পবিত্র ওফাতের পর তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু ও সাহাবী হযরত আবু বকর
(র:) ইসলামী বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত হন। দুই বছর তিনি শাসন করেন। অতপর হযরত ওমর (র:)
দশ বছর খলিফা হিসেবে শাসন করেন। তাঁর শাসনামলে পারস্য, সিরিয়া ও মিশর জয় করে পূর্ব
ও পশ্চিমে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বিস্তৃতি লাভ করে। হযরত ওমর (র:) পায়ে হেঁটে মুসলিম
সেনাবাহিনী নিয়ে জেরুজালেমে প্রবেশ করেছিলেন এবং খ্রিস্টীয় নিদর্শনাবলি সংরক্ষণের নির্দেশনা
জারি করেছিলেন। খলিফা ওমর (র:) প্রথম সরকারি কোষাগার এবং স্বতন্ত্র সরকারি হিসাব বিভাগ
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইসলামী সরকারে অনেক মৌলিক প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত্তি রচনা করেছিলেন,
তিনি। হযরত ওমর (র:)-এর পরে হযরত ওসমান (র:) খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তিনি
১২ বছর শাসন কাজ পরিচালনা করেছিলেন। তাঁর শাসনামলে ইসলামের বিস্তৃতি অব্যাহত ছিল। তিনি
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সংকলন ও সম্পাদন করে তা বিশুদ্ধ রূপদান করে সারা পৃথিবীতে পৌঁছে
দিয়েছিলেন। অত:পর খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করেন হযরত আলী (র:)। হযরত আলী (র:) উন্নত
ভাষায় সরকারি বক্তব্য বা ভাষণ দান এবং চিঠিপত্র জারিকরণের প্রথা প্রশাসন ব্যবস্থায়
চালু করেছিলেন। তাঁর শাসনকালের অবসানের পর মুসলমানদের গৌরবময় রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থারও
অবসান ঘটে। হযরত আলী (র:) ছিলেন, ইসলামের চতুর্থ খলিফা। প্রশাসক হিসেবে হযরত আলী (র:)
ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ।
পারিবারিক জীবন:
২২/২৩ বছর বয়সে হযরত আলী (র:) মদিনায়
হিজরত করেন। বলা যায়, তখন তিনি মহানবীর সার্বক্ষণিক দাফতরিক কাজগুলোতে সহযোগিতা
করে যাচ্ছিলেন। সামরিক অভিযানগুলোতেও হযরত আলী (র:) মহানবীর অধীনস্থ কমান্ডার
হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আল্লাহ্ তায়ালা এসময় হযরত আলীর (র:) সাথে মহানবীর
প্রিয় কন্যা ফাতেমাকে (র:) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিয়ে তাঁর সাথে নাড়ির
সম্পর্ককে আরও নিবীডতর করে তুলেন। মহানবী নবী (দ:) ফাতেমাতুজ-জাহরাকে বলেন; “ আমি
তোমাকে এমন একজনের সাথে পাত্রস্থ করিয়ে দিয়েছি, যে আমার পরিবার ও আমার অতি নিকটজন।
হযরত আলীর (দ:) পরিবার ছিল, মহানবীর (দ:) সদা অতি আপনজন এবং তিনি তাঁদেরকে
আহলে-বায়াত বা নবী পরিবারের সদস্য ঘোষণা করে মর্যাদাসীন করেছিলেন। পবিত্র কুরআন
শরীফেও আহলে বায়াতদের অতি মর্যাদাশীল হওয়ার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মা ফাতেমার ঘরে
হযরত আলী (র:)-এর ৪ জন সন্তান ছিলেন। তাঁদের দুই সন্তান ইমাম হাসান ও হোসেন (র:)
ছিলেন, মহানবীর (দ:) নিজ সন্তানের মত। তিনি তাঁদেরকে অত্যন্ত ভালবাসতেন ও
স্নেহ-মায়ামমতায় সিক্ত করে রাখতেন। হযরত আলী (র:) ও মা ফাতেমা (র:) দম্পতি সংসার
জীবনের শুরুতে আর্থিকভাবে খুব কষ্টে-শিষ্টে দিনাতিপাত করেছিলেন। অবশ্য অন্য
মুসলমানরাও সেসময়টায় তীব্র আর্থিক-অনটনে জীবন কাটাচ্ছিলেন। তিনি খেলাফতের শাসনভার
গ্রহণ করে মালিক আশতারকে মিশরের গভর্নর নিযুক্ত করে একটি প্রশাসনিক ও ন্যায় বিচাল
প্রতিষ্ঠা বিষয়ে নির্দেশনামূলক একট পত্র প্রেরণ করেছিলেন। এ পত্রটি এখন প্রশাসন
পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বকালের একটি সেরা দলিল।
লেখক হযরত আলী (র:):
খলিফা হযরত আলী (র:) শুধু বীর সেনানী ও
নেতা ছিলেন না, তিনি লেখকও ছিলেন। তিনি একাধারে ধর্মতত্ব, তাফসিরকারক, ক্যালিওগ্রাফার,
সংখ্যাতাত্ত্বিক, আরবী ভাষার বৈকারণিক, অলংকার শাস্ত্রের পন্ডিত ও সাহিত্যিক,
আইনবিশারদ ও ন্যায় বিচার বিষয়ক লেখক। তাঁর ভাষণ ও লেখালেখির সংকলন হিসেবে ‘নাহাজ
আল-বালাগা’ গ্রন্থটি সুপরিচিত।
হযরত আলী (র:)-এর অমর বাণীসমূহ:
হযরত আলীকে (র:) শিয়া মুসলমানরা তাঁদের
নিজস্ব সম্পদ মনে করে থাকেন। তাঁরা তাঁকে ও মা ফাতেমা (র:)-কে অতি উঁচু মর্যাদায়
সমাসীন করে অন্য খলিফাগণকে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখান। কিন্তু হযরত আলী (র:)
ছিলেন, সকল মুসলমানের বা বিশ্ব মানবের নিকট আদর্শ স্থানীয় ও অনুকরণীয় ব্যাক্তিত্ত্ব।
তাঁর উক্তি বা বাণীসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে, তা আমরা পুরোপুরি অনুধাবন করতে সক্ষম হব।
এখানে হযরত আলীর (র:) বাছাইকৃত ৩০ টি বাণী উল্লেখ করা হলো;
১. “আপনার কষ্টকর বিষয়গুলো নিয়ে অত
উদ্বিগ্ন হবেন না, এটা আপনার জন্য অন্ধকার রাতের ন্যায়, কিন্তু সেগুলোই আপনার জন্য
আরও উজ্জ্বল আলোর রূপ ধারণ করে এক সময় সর্বত্র আপনাকে আলোকিত করে তুলবে।”
২. “একজন উত্তম আত্নার মানুষকে কিছুই আহত
করতে পারে না। একজন দয়ালু হৃদয়ের অধিকারির অবস্থান মানুষের কাছে অনেক বেশি
মূল্যবান, যা সে বুঝতে পারে না।”
৩. ‘‘মানুষের জীবনে দু‘টি দিবস বা সময়কাল
থাকে; একটি আপনার পক্ষের জন্য আর অন্য দিবসটি আপনার বিপক্ষে। সুতরাং যে দিবসটিতে
আপনার ভাল সময় কাটে তা নিয়ে গৌরব করবেন না বা অতি উৎসহি হবেন না। আর যখন দিবসটি
আপনার খারাপ যাবে তখন ধৈর্য্য ধারণ করবেন, কারণ দু‘টিই আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য
আসে।”
৪. “একজন মহান ব্যাক্তির সর্বোত্তম কাজ
হলো, ক্ষমা করে দেয়া ও ভুলে যাওয়া।”
৫. “আপনি যখন দুনিয়ার কষ্টের ভারে আপনার
হাঁটু পর্যন্ত অবনত হয়ে পড়বেন, তখন আপনার প্রার্থনা করার উপযুক্ত সময় এটি।”
৬. “একজন নারী প্রবল আবেগী সুন্দর বৈশিষ্ট্যে
সৃষ্ট, যাকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন, সমাজকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য
দায়িত্বভার গ্রহণের নিমিত্তে এবং তাকে (সমাজকে) পরিপূর্ণতা দেয়ার জন্য। আল্লাহ
তায়ালা নারী সৃষ্টি করেছেন তার (আল্লাহর) আপন সৌন্দর্য্যের প্রতীক হিসেবে। আর তা তিনি
করেছেন তার (নারীর) সঙ্গী ও পরিবারের জন্য সুখ-শান্তি বয়ে আনার লক্ষ্যে।”
৭. “বিনয়ের সাথে কারও কোন আবদার-অনুরোধ
প্রত্যাখ্যান করা, তাকে অপেক্ষামান রাখার চেয়ে অনেক উত্তম।”
৮. “কারও ভাই তাঁর জন্য স্বর্ণের মত
মূল্যবান। আর তার একজন বন্ধূ হীরক খন্ডের ন্যায়। স্বর্ণ ভেঙ্গে গেলে বা ক্ষয়ে
গেলে, তাকে গলিয়ে পুনলায় ঠিক করা যায়। আর যদি হীরক খন্ড ফেটে বা ভেঙ্গে যায়, তা
কখনও পূর্বরূপ ধারণ করে না।”
৯. “যে বিশ্বকে বিশ্বাস করে, সে বিশ্ব
তাকে বিশ্বাস ঘাতকতা করে।”
১০. “ধৈর্য্য বিজয়কে সুনিশ্চিত করে।”
১১. “সৌজন্য বোধে টাকা খরচ হয় না, কিন্তু
তার জন্য কাউকে কাউকে অনেক মাসুল দিতে হয়।”
১২. “কি অদ্ভুত ব্যাপার যে, মানুষ কোন
কিছুকে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু তিনি যখন আল্লাহ্ তায়ালাকে যতই ভয় পান, তিনি
ততই তাঁর (আল্লাহ) তাঁর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত হন।”
১৩. “কারও জন্য পরনিন্দা এমন এক অপচেষ্টা
বা জিনিষ যে, যে ব্যাক্তি তার জন্য ভাল কিছু করতে পারে না, সেই তাতে লিপ্ত হয়।”
১৪. “নি:সন্দেহে নিশ্চুপ থাকা, কখনো কখনো
কারও কারও জন্য সবচেয়ে ভাল ফল বয়ে আনে।”
১৫. “একজন জ্ঞানী লোক সব সময় কম কথা বলেন,
পক্ষান্তরে কোন নির্বোধ ব্যাক্তি সদা বলতে থাকেন।”
১৬. “অতি কথন হতে সাবধান থাকুন, কারণ তাতে
ভুল হয় অনেক বেশি এবং তা অতি মাত্রায় বিরক্তি ডেকে আনে।”
১৭. “আপনি যা অপছন্দ করেন, অন্যের জন্যও
তাই করুন।”
১৮. “তৃষা না পেলে, পানির মূল্য কখনো
অনুধাবন করা যায় না, মৃত্যু বিহীন জীবনের কোন মূল্যই নেই। আর বিশ্বাস ছাড়া
বন্ধুত্ব হয় না।”
১৯. “আপনার জিহ্বাকে সংযত রাখুন, যেভাবে আপনি
স্বার্ণালংকার ও রৌপ্যের যত্ন-আত্তি নেন।”
২০. “দেহের পরিচর্যায় দরকার খাবার, আর
আত্নার পরিচর্যা হলো অন্যকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা।”
২১. “যার শত্রু থাকে, তার কোন শান্তি বা
বিশ্রাম নেই। আর যার মধ্যে মানুষের প্রতি ভালবাসা নেই, তার আছে দুর্ব্যবহার।”
২২. “আপনাকে অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে, কারণ
এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবাদত।”
২৩. “ভিক্ষা করা, কিছুই না থাকার চেয়ে
ঘৃণ্য।”
২৪. “আমাদের অনুসারিরা মৌমাছির মত পাখিদের
মাঝে বসবাস করে থাকে। কোন পক্ষিকূলই ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রাণি হওয়ায়, মৌমাছিকে
পাত্তা দেয় না। তারা এমনটা কখনো করত না, যদি তারা অনুধাবন করতে পারত যে, তারা মধূর
মত মূল্যবান জিনিষ ধারণ করে।”
২৫. “আপনাদেরকে আল্লাহ তায়ালাকে মানার
জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আপনাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ভাল কাজ করার জন্য।”
২৬. “আপনাদের শুধু আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করা উচিত। াার আপনার পাপ বা
অপরাধ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা উচিত নয়।”
২৭. “আপনি অসুস্থ বা পীড়িত হয়ে পড়লে, ভীত হবেন না। আর যতটা পারেন আশাবাদী
হোন।”
২৮. “তিনিই সবচেয়ে জ্ঞানী এবং উত্তম মানুষ, যিনি মানুষকে আল্লাহ তায়ালার
রহমত হতে হতাশ ও বিশ্বাস না হারানোর উপদেশ দেন। আর মানুষকে বলেন যে, তাকে তার কর্মের পরিণতি ও
শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার ব্যাপারে অতি নিশ্চিত ও আত্নবিশ্বাসী না হতে।”
২৯. “সততা আপনাকে শুভ কোন কিছু বা মঙ্গলময়তার দিকে নিয়ে যাবে। আর কল্যাণমূলক
কাজ আপনাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে।”
৩০. “আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত যা বলে ফেলবেন তাতে সুদক্ষ প্রমাণিত হবেন, যদি না
তা প্রকাশ করেন, একবার তা বলে ফেললে, এটার জন্য আপনি দায়ি হয়ে যাবেন। আপনার
জিহ্বাকে সংযত রাখুন, যেভাবে আনার স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সাকে সংরক্ষণ করেন। আপনার
একটি কটূ শব্দ চয়ন আপনার জন্য অপমান এবং অসম্মান বয়ে আনতে পারে।”
উপরে, আমরা ইসলামে মহান চতৃর্থ খলিফা হযরত আলী
(র:)-এর ব্যাক্তিত্ত্ব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যাক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন,
জ্ঞান-প্রজ্ঞা, শাসক হিসেবে তাঁর গুণাবলি, সৃজনশীলতা এবং সর্বোপরি একজন শ্রেষ্ঠ মু‘মিন
মুসলমান হিসেবে পরীক্ষিত বৈশিস্টাবলী, মহানবীর (দ:) হৃদয়ে স্থান পাওয়া; প্রভৃতি
দিক নিয়ে অলোচনা করেছি। তাঁকে ঘিরে বর্তমানে অনেক মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে কিছুটা
বিতর্কও রয়েছে। কিন্তু তিনি যে মহান এক ব্যাক্তিত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী-গুণি ও
মহানবীর (দ:) স্নেহধন্য একজন বীর পুরুষ ছিলেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আসুন আমরা
সবাই; পবিত্র এ রমজান মাসে হযরত আলী (র:)-এর মত মহামানব হওয়ার চেষ্টা করি। তাঁকে
সর্বত্র অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলার পন্থা অবলম্বন করি।
*সহকারি
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মহেশখালী, কক্সবাজার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন