ইসলাম
ও আধুনিকতা ভাবনা
ইসলাম ধর্ম কী আধুনিক ও উত্তর
আধুনিকতার এ যুগে অগ্রহনযোগ্য হয়ে পড়েছে? ইসলাম ও আধুনিকতা কী সাংঘর্ষিক? ইসলাম কী
আধুনিকতাকে গ্রহণ করে না? আসলে এসব প্রশ্ন বা বিতর্ককে অন্ত:সারশূন্য বলা যায়। আধুনিকতায়
বিশ্বাসীরা মনে করেb, যা ইচ্ছা তা করাই আধুনিকতা। কিন্তু ইসলামে আধুনিকতা বলতে তা বুঝায়
না। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ইসলাম কোনভাবেই আপোষ করে না। তৌহিদ, নবী-রসূলগণের ওপর বিশ্বাস,
কুরআন-সুন্নাহ্ ও শরিয়তের হুকুম-আহকাম মেনে চলা; প্রভৃতি ইসলাম
ধর্মের মূল বিষয়। আর ইসলাম আধুনিকতাকে স্বাগত জানায়। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন; ‘ আল্লাহু
জমিলুন, ইয়হুব্বুল জমিল।” অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালা স্বয়ং সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য্যকে
ভালবাসেন।” যে সব আধুনিকতা উশৃংখলতা, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অশোভন কিছুর সৃষ্টি করে
তা ইসলাম গ্রহন করে না। যাহোক, এ নিবন্ধে ইসলাম ও আধুনিকতার ধারণা বিশ্লেষণপুর্বক এ
দু‘টির মধ্যকার মিল-অমিল এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে।
ইসলামকী?
ইসলাম এক আল্লাহ্-তে বিশ্বাসের
ধর্ম। এ ধর্মের সকল শিক্ষা ও বিশ্বাস পবিত্র কুরআন শরীফে লিপিবদ্ধ আছে। ইসলাম আরবী
শব্দের মূল শব্দ ‘সলেম’। এর অর্থ হলো, শান্তি। আর ইসলাম শব্দের অর্থ হলো; বিনয়ের সাথে
(আল্লাহ্ তায়ালার নিকট) মাথা নত করা, আত্নসমর্পন করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের পরিচয়
দিয়েছেন; পবিত্র কুরআনের সূরা এখলাসসহ বিভিন্ন সূরা ও আয়াতে। সূরা এখলাসে আল্লাহ তায়ালা
তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন; বল, ‘তিনিই আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন,
সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর
সমতুল্য কেহই নেই।” আরেক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেন; “তিনি আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী,
দন্ডদাতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না।”
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ:)-এর পরিচয় দিয়ে বলেন; “মুহাম্মদ (দ:) আল্লাহ্ রসূল। তিনি
অবিশ্বাসীদের বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শীসাঢালা প্রাচীরের মত শক্তিশালী। সঙ্গী-সাথীদের
প্রতি তিনি খুবই দয়া পরবশ। তোমরা তাঁকে রুকু করতে দেখবে, সেজদা করতে দেখতে পাবে। তিনি
আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য কামনা করেন।” আর মুসলমানরা বিশ্বাস করেন; হযরত মুহাম্মদ
(দ:) আল্লাহ্ তায়ালার সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। “তিনি সারা বিশ্বের
জন্য রহমত স্বরূপ।” তাঁরা আরও বিশ্বাস করেন যে, হযরত আদম, হযরত ইব্রাহীম, হযরত নূহ,
হযরত মূসা, হযরত ঈসা (আ:) প্রমুখ আল্লাহ তায়ালার নবী ও রাসূল। পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ
বা হাদীছ, এজমা, কিয়াস ও ইজতেহাদ প্রভৃতি ইসলামী বিধি-বিধানের মূল উৎস। আর ইসলামে মূল
ভিত্তি পাঁচটি। যথা-কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। আর বর্তমান বিশ্বে ২৩ হতে ২৫
শতাংশ মানুষ মুসলমান।
আধুনিকতা কী?
আধুনিকতা বলতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের
কল্যাণে পৃথিবীর সকলসুযোগ-সুবিধা অবাধ উপভোগ করে জীবন-যাপন করা যায়, এমন এক পরিবেশ
বা অবস্থাকে বুঝায়। আঠার শতকের শিল্প বিল্পবের পর এমন পরিবেশ মানুষের জন্য সৃষ্টিহয়।
তখন হতে আধুনিকতার সূচনা। শিল্প-সাহিত্যের চর্চাকারিগণ বর্তমান সময়কে উত্তর আধুনিককাল
হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। আর এখন অনেকে বর্তমান কালকে উচ্চতর তথ্য-প্রযুক্তির যুগরূপে
উল্লেখ করে থাকেন। আর আধুনিকতার সংজ্ঞা দিতে সমাজ বিজ্ঞানীগণ নিন্মরুপে ব্যখ্যা দিয়েছেন;
‘‘আধুনিকতা একটি দার্শনিক আন্দোলন যাতে সাংস্কৃতিক প্রবণতাসমূহ এবংপ রিবর্তনগুলো ব্যাপকভাবে
এবং সূদূরপ্রসারী রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে। বিশেষত: পাশ্চাত্য সমাজে উনবিংশ শতাব্দীর
শেষার্ধ হতে বিংশশতাব্দীতে এ রূপান্তর ঘটেছে। আধুনিক শিল্পায়িত সমাজ ও দ্রুততর সময়ে
নগরের বিকাশ আধুনিকতার মূল উপাদান। এসবের পরিণতিতে ভয়াবহ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনে।
আর আধুনিকতা আলোকিত সমাজের ধারণাকে পরিত্যাগ করে। এমন কি অনেক আধুনিকতাবাদীদের মতে
এখানে ধর্মের স্থান নেই। আধুনিকতাবাদ বলতে, সাধারণভাবে সনাতনভাবে চলমান শিল্প, স্থাপত্য,
সাহিত্য, ধর্মীয় বিশ্বাস, দর্শন, সামাজিক সংগঠন, দৈনন্দিন জীবন-যাপন, এবং এমন কি বিজ্ঞানকেও
অস্বীকার করেন য়া অর্থব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা ও রানৈতিক পরিবেশকেই অর্থাৎ পরিপূর্ণ
একটি শিল্পায়িত বিশ্বকেই বুঝায়। আধুনিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্নসচেতনতা।
ইসলামে আধুনিকতা:
ইসলামে প্রথম নতুনত্ব আনয়নের
চেষ্টা করেন তৃতীয় হিজরীতে মুতাজিলা সম্প্রদায়। তাঁরা কুরআন এবংসুন্নাহকে অক্ষুন্ন
রেখে কুরআনের ব্যাখাকে তাদের ভাষায় ‘তাউয়ীল’এবং সুন্নাহ্র ব্যাখ্যাকে‘ আকল’নামে উল্লেখ
করেন। কিন্তু এটি সার্বজনীন ধারণা হিসেবে ইসলামে গ্রহনযোগ্যতা পায় নি। আধুনিকতার সূচনা
আসলে ঘটেছে, মধ্যযুগের ইউরোপে। স্পেনে যখন বিজ্ঞান চর্চা শুরু হলে, ধর্মশালাগুলোতে
যা শিক্ষা দেয়া হয় তা সত্য নয়। এতে ধীরে ধীরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ডেকে আনে। ধর্মে আধুনিকতা
রূপান্তর হলো পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ি পরিবর্তন বয়ে আনা। আর তার কোন নির্দিষ্টরূপ
নেই। ইহুদী ও খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বী আধুনিকতাবাদীরা
ব্যাখ্যা দিলেন কেন তখন ও ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা বিদ্যমান রয়েছে। ধর্মীয় যেসব বিষয় মানুষ
মেনে তা অক্ষুন্ন রেখে তারা ব্যখ্যা উৃপস্থাপন করল, বাইবেলে স্বর্গীয় ও মানবিক বিষয়ের
মিশ্ররূপ খুঁজে পাওয়া যায়। এ সময় মুসলামানরা ইউরোপে বাইবেলের অনুসারিদের দিকে পরিবর্তনগুলো
লক্ষ করছিল। তখন মুসলমানদের সামনে তিনটি বিষয় এসে উপস্থিত হয়। আর তা হলো; হয় পাশ্চাত্যকে
গ্রহন করো, নয়তো বর্জন করো অথবা ইসলামকে সংস্কার করে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে বরণ করে নাও।
যারা আধুনিকতাকে গ্রহণ করল; তারা তুরস্ক ও মিশরকে মডেল হিসেবে নিয়েছিল। তারা তুরস্ককে
অনুকরণ করে কারণ এটি ছিল বৃটিশ শাসনাধীন। আর মিশরকে মডেল মেনে ছিল তারা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের
কারণে যেটা ছিল ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র বিন্দু। এ আধুনিকতার আন্দোলনকারিরা
ইসলামকে বিচার করত ‘আকল’ পদ্ধতি অনুসরণে। এক্ষেত্রে তাঁদের কার্যক্রমে নিন্মোক্ত ক্রুটিগুলো
পরিলক্ষিত হতো;
১. যারা তা অনুধাবন করতে পারত
না, এমন বিষয় তারা প্রয়োগ করত।
২. বুদ্ধি-বিবেচনা অনুযায়ি যা
মানার তা মান, অন্যগুলো পরিহার করো।
৩. তারা কুরআন ও সুন্নাহকে মানলেও,
তা অনুসরণের ক্ষেত্রে বুদ্ধি-বিবেচনা করেই তা করত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামে
আধুনিকতা:
এখানকার আধুনিকতাবাদীরা বলে যে,
পাশ্চাত্য ও বিশ্ব বদলে গেছে। তাই ইসলামকে সভ্য করে তুলতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
আধুনিকতার প্রসার ঘটার কারণগুলো নিন্মরূপ;
১. এ ধারণাসমূহ প্রত্যাখ্যান
করার মত উপযুক্ত জ্ঞানী-গুণী মানুষ সেখানে নেই।
২.এখানে যারা আসে তারা আমেরিকান
সমাজের অংশ হয়ে যায় এবং তাদের পরিচয় মুসলিম পরিচয় বহন করে না। নৌমুসলিমরাও তাদের পুরনো
জীবন ধারা পাল্টায় না।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সাহিত্য, পন্ডিতজন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে
আধুনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে।
আবার মুসলমানদের মাঝে কুরআন-এর
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, বক্তব্য এবং অন্যান্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে তেমন দ্বি-মত নেই। কিন্তু
সুন্নাহ, শরিয়াহ, ফিক্হা, ইজমা ও ইজতিহাদের মাধ্যমে অনুসৃত বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্নমত পরিলক্ষিত
হয়। কিছু কিছু আধুনিকতাবাদী মুসলমানরা মতামত দেন যে, আধুনিকতায় বিশ্বাসীরা মানুষের
চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করে থাকে। আর তারা জেনে না জেনে তাদের মতামতের প্রসার ঘটান।
ইসলাম ও আধুনিকতা একটি তুলনামূলক
পর্যালোচনা:
ইসলাম ও আধুনিকতার মধ্যকার সম্পর্ক;
বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্নরূপে ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার আন্ত:ক্রিয়ার মধ্যে শতাব্দী
প্রাচীনকাল ধরে নিহীত। াাধুনিকতা এবং এর সাথে সম্পর্কিত ধারণা ও বিশ্বাস, সভ্যতার সৃষ্টির
আদিকাল এবং বিগত তিনশত বছরব্যাপী আধুনিকতার বিকাশকাল হতে ইসলামের সাথে মতদ্বৈততা প্রকাশ
করে আসছে। ইসলাম নিজেই আধুনিকতার রূপ নিয়েছে। কারণ অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে খ্রিস্টীয়
প্রকৃতির হওয়ায় এটাকে বর্জন করেছিল।তখন থেকেই আধুনিকতার প্রশ্নে ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছে।পশ্চিমা পন্ডিতদের পক্ষ থেকেই এ চ্যালেঞ্জ আসে।সেসব পন্ডিতজনের
অধিকাংশ যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, ইসলাম পুরোপুরি আধুনিকতাকে ধারণ করতে পারে নি।তাঁদের
মতে আধুনিকতার কতগুলো প্রবণতা রয়েছে, যেগুলো ইসলাম গ্রহণ করে না। যেমন- আধুনিক প্রতিষ্ঠানসমূহ
ও অর্থনীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সর্বোপরি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গণতন্ত্র। এ প্রেক্ষিতে
ইসলাম ও মুসলমানদেরকে আধুনিকতার সাথে অমঙ্গিতিপূর্ণ বলে পরিগণিত করা হয়। পাশ্চাত্যে
ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে, আধুনিকায়নের মাধ্যমেই ইসলামকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যেতে
পারে, যা আসলে জটিল ও বহুমুখি প্রবণতাকে ধারণ করে।তাই, আধুনিকতাবাদী পন্ডিতগণ মনে করেন
যে, ইসলাম এখনো তার আবহমানকালের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা আধুনিক জীবন-যাপন পদ্ধতি ও
যুক্তিকে খন্ডন করা যাবে এ কথা বলে যে, ইসলাম ও মুসলিমরা ইসলাম সম্মত নয়, এমন সব বিশ্বাস
ও প্রায়োগিক দিকসমূহকে মেনে নিয়ে অবশ্যই আধুনিকতাকে গ্রহণ করবে না। যাহোক, পাশ্চাত্যের
আধুনিকতাবাদীদের সাথে অনেক কিছু অসঙ্গিতিপূর্ণ হওয়া সত্বেও, আধুনিকতার সাথে ইসলামের
মানানসই সম্পর্ক গড়ে ওঠা াসম্ভব নয়।সেসাথে ইসলাম আধুনিকতার মৌলিক দিকগুলোকে কতটা গ্রহণ
করতে পারবে তা বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন। ইতিহাসের দিকে ফিরে থাকালে দেখা যায় যে,
ওসমানিয়া শাসনামলে ইসলাম ইউরোপীয় সভ্যতার সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে সামরিক বাহিনীতে
আধুনিক প্রযুক্তি, ইউরোপীয় আইন-কানুন ও শিল্প কলাকে তা গ্রহণ করে নিয়েছিল। অপরদিকে
ইউরোপও ইসলামী ভাব ধারাকে ধারণ করে নিয়েছিল।সেকালে ইসলামী সমাজগুলোতে ও ঔপনিবেশিক শক্তিশালী
অবস্থানের প্রেক্ষিতে সংস্কৃতি বিষয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা ও বাধা থাকা সত্বেও, পাশ্চাত্যের
প্রভাব-প্রতিপত্তির বিরূদ্ধে ইসলামী মৌলবাদের সরাসরি উত্থান ঘটে নি, বরং ইসলামের আধুনিকতা
ও ইসলামের সমন্বয়বাদী রূপের দৃষ্টান্ত হলো, তুরস্ক। এ দেশটিতে আধুনিকায়ন শুরু হয়েছিল।
আধুনিকায়নকে গ্রহণ করে ইসলামী মূল্যবোধ ও অনুশীলণকে সচেতন বা অবচেতনে তারা ধারণ করে
নেয়। তুরস্কের পর মুসলিম দেশগুলো যেমন-ইরান, মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপাইন
ও অন্য অনেক দেশ, বিশেষত: মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন সাধন করে
আধুনিকায়নকে গ্রহণ করে নেয়। তথাপি, অনেক মুসলিম দেশ; যেমন- সৌদি আরব, সিরিয়া, সংযুক্ত
আরব আমিরাত, জর্ডান, ব্রুনাই এখনো বাদশাহ, শেখ, সুলতান ও এক নায়করা শাসন ভার রিচালনা
করে যাচ্ছেন।মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার কারণে আধুনিকতাবাদীরা,
আধুনিকতার সাথে ব্যাপকভাবে নিবীড সম্পর্ক গড়ে তুললেও, ইসলামকে গণতান্তিক বলে গ্রহন
করে না।কিছু মুসলিম দেশে মূল্রবোধের ঘাটতি বটে, এটা ইসলামী শিক্ষা বা অসামঞ্জস্যতার
সাথে কারণে নয়।এসবের মূলে নিহীত রয়েছে; ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক
দূরত্ব, ইসলাম ধর্মগত বিশ্বাসের জন্য নয়। যদিও আধুনিক গণতন্ত্রের মতবাদের জন্ম পাশ্চাত্যে,
সেখানেও ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত খ্রিস্টান চার্চাগুলো আধুনিকতা ও গণতন্ত্রের বিরোধীতা
করায় সাদরে বরণ করা হয় নি, শুধু উনবিংশ শতকেই এটা গ্রহনযোগ্য হয়ে ওঠে।পক্ষান্তরে রাজতন্ত্র
রাজতন্ত্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছিল, সেকলে আলেমদের দ্বারা, যারা এ ব্যবস্থাকে মেনে নেন,
ইসলামী শিক্ষার আলোকে নয়, বিশৃংখলা-নৈরাজ্য হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য।এ সুযোগে মুসলিম
দেশগুলোতে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ ক্ষমতা কাঠামো গড়ে ওঠে, যেখানে ইসলামের অনুসারিরা মনোয়নের
মাধ্যমে বাদশাহী বা রাজতন্ত্র ঠিকিয়ে রেখেছে।সামা্রজ্যবাদী স্বার্থগোষ্ঠীর সেবা করে
তাদের রাজকীয় শাসন পদ্ধতিকে আরও সুসংহত করে নিয়েছে। মুসলিম রাজতন্তের সমর্থকদের মধ্যে
রয়েছে; ইউরোপ, আমেরিকা, যারা সব সময় তাদের (রাজতন্ত্রের) দুর্নীতি, ও কর্তৃত্ববাদী
শাসকদের সমর্থন দিয়ে আসছে, বিশেষত: মুসলিম দেশগুলোকে। আধুনিকতার প্রতি ইসলামের আরও
কয়েকটি প্রেক্ষিতকে বিবেচনায় নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষন করা যেতে পারে।যেমন- আধুনিক ব্যাংকিং
ও মুদ্রানীতির প্রচলন, ইসলামী সংস্থা বা সংগঠন গড়ে তোলা, প্রভৃতি।
উপসংহারে বলা যায় যে, ইসলাম ও
আধুনিকতার মধ্যকার তুলনামূলক অনুসন্ধান করা হলে, উভয়ের মূল মূল বিষয়ে খুব একটা পার্থক্য
খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে আধুনিকতা, অত্যাধুনিকতা, উশৃংখলতা, নীতি গর্হিত কিছু আচার-আচরণ,
রীতি-নীতি ও সংস্কৃতির কতিপয় চর্চাগত বিষয় আছে; যেগুলো ইসলামী শিক্ষা, অনুশীলণ, ও বিশ্বাসের
সম্পর্ণ পরিপন্থী। অতএব ছোট-খাট পার্থক্যগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে ন্যায়বিচার, শু‘রা,
মানবাধিকার, নারী অধিকার, প্রতিষ্টান, অর্থ ব্যবস্থা, আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ, বিচার
বিভাগ, বিচার বিভাগসহ গণতন্ত্র ও আধুনিকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিধায় পাশ্চাত্য ও ইসলামের
সহাবস্থান ও পরস্পরের কল্যাণমূলক বিশ্ব ব্যবস্থা সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন