বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

How to ask questions; Some techniques

প্রশ্ন করতে কী শিখতে বা শিখাতে হয়?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
  সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
                             মহেশখালী, কক্সবাজার।
প্রশ্ন কী? এটা কী বুঝার কোন বিষয়? না মানব আচরণের সহজাত একটি অভ্যাস, এটি।মানব শিশু কৌতূহলী হয়, অনুসন্ধিৎসূ হয়। সর্বোপরি, প্রশ্ন করে করে শেখা বা জানা, শিশুদের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রশ্ন করতে শেখাও একটি বিজ্ঞান। বিষয়টি হয়ত অনেকে হাস্যকর মনে করতে পারেন। আসলে যে প্রশ্ন যাকে করা হয়, তার মাথায় যদি তা ঝড় না তুলে, তাঁকে না ভাবায় বা গভীরে যেতে না হয়, তা শিখণ-শেখানোতে তেমন কোন কাজে আসে না; এমনটাই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীগণের অভিমত। বিশেষত বর্তমান কালের শিক্ষাবিদগণ মনে করেন, শিক্ষার্থীদের প্রশ্নকরণেই তাদের শিখণের বা শিখণফল অর্জনের প্রধানতম উপায় নিহীত থাকে। আমরা এখন মুখস্থকরণ, উত্তর তৈরিকরণ ও পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে গদ গদ করে মুখস্থ উত্তর লিখে দিয়ে ভাল ফলাফল করা ভাল শিক্ষার্থী প্রমাণের যুগে নেই। এখন আমরা যোগ্যতা ভিত্তিক শিখণ-শেখানো এবং যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়নের যুগে বসবাস করছি।সুতরাং লিখতে পারলেই যোগ্যতা অর্জন বা সৃজনশীল হওয়ার প্রধনতম মাপকাঠি বলে বিবেচনা করা হয় না, এখন। প্রশ্ন করতে জানবেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরীক্ষা পরিচালনাকারি কর্তৃপক্ষ; এটাই আজকের দাবি। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে যোগ্যতা ভিত্তিক পাঠ্য বই ব্যবহার, পঠন-পাঠন এবং শিখণ-শেখানো পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৫০ ভাগ প্রশ্ন যোগ্যতা ভিত্তিক হবে এবং মূল্যায়ন করা হবে এর আলোকে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে ১০০ ভাগ প্রশ্ন যোগ্যতা ভিত্তিক হবে। আর ক্রমান্বয়ে ১ম হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত, সকল শ্রেণিতে যোগ্যতা ভিত্তিক পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। অতএব, সবাইকে এ পদ্ধতি ভালভাবে রফত করে নিতে হবে। একটি উত্তম প্রশ্ন, শিক্ষার্থীদের মনকে উন্মুক্ত করে দিতে পারে, বিষয়বস্তু বুঝতে ও উত্তর পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তা। শিক্ষকগণকে, শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তদানে সক্ষম হতে হবে। আর তাদের ভাল প্রশ্নকরণের অবাধ সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা যদি সক্রেটিসের পদ্ধতি স্মরণ করি, তাহলে দেখতে পাব যে, তিনি তাঁর অনুসারিদেরে অবাধ প্রশ্ন করার সুযোগ দিতেন এবং বিচেনায় নিতেন যে, প্রশ্নগুলো কতটা চিন্তার উদ্রেগ করে ও ভাবায়। তিনি অনুসারিদের প্রশ্ন করতেও শিখিয়ে দিতেন। সক্রেটিস প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মাধ্যমে পৃথিবীর তাবত সব জটিল-কঠিন বিষয় বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে গেছেন। যাহোক, আমরা এ নিবন্ধে শিক্ষার্থীদের উত্তম প্রশ্ন করতে এবং শিক্ষকদের এ কৌশলটি আয়ত্ত করে শিক্ষার্থীদের শেখাণোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোকপাত করব।আর প্রাথমিক শিক্ষায় যেহেতু বেন্জামিন ব্লুমের ডোমেইন অনুসারে যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তাই তাঁর ভাবনা আলোকেই বিষয়টি আলোচনা করা হবে।
১. বেন্জামিন ব্লুমের টেক্সোনমি অনুসারে প্রশ্নকরণ পদ্ধতি: প্রশ্নকরণের পদ্ধতি বিষয়বস্তু, অনুসন্ধান অথবা অন্যান্য শিখণ প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় রেখে ব্লুমের টেক্সোনমি একটি অভীক্ষা পত্র বা প্রশ্নপত্র তৈরির মডেল হিসেবে অনুসরণ করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনায় ব্লুমের পদ্ধতিটি অনুসরণ করে অভীক্ষা তৈরি করে, তা ব্যবহার করে পরীক্ষা গ্রহন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে কর্মরত শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আর বিগত ২০১২ সাল হতে এ পদ্ধতিটি অনসৃত হয়ে আসছে। বেন্জামিন ব্লুমের প্রদর্শিত পদ্ধতিতে ৬ টি জ্ঞানমূলক উপ-ক্ষেত্রের আলোকে প্রশ্নগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। এগুলো এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো;
১. জ্ঞানমূলক: সাধারণত কোন তথ্য জানার জন্য বা পূর্বে জানা কোন জিনিষ জানার জন্য এ ধরণের প্রশ্ন করা হয়। আর প্রশ্নগুলোর উত্তরে হাঁ বা না হয়। পরিচিতি দেয়া, সংজ্ঞা দেয়া, তালিকা করা, চিহ্নিত করা, নাম বলা, বানান করা, স্মরণ করা, বর্ণনা করা, স্থানের নাম বলা, তারিখ বা সময় বলা, ব্যক্তির নাম, বস্তুর নাম জানতে চাওয়ার জন্য জ্ঞানমূলক প্রশ্ন করা হয়। যেমন-ঢাকা কোন দেশের রাজধানী?
কে, কী, কোথায়, কখন, কীভাবে, বর্ণনা কর, সেটা কী; এসব ডব্লিউ এইচ প্রশ্ন চিহ্ন ব্যবহার করে সাধারণত জ্ঞানমূলক প্রশ্ন করা হয়।                                                                                                                                                                                                                                                                                 
২. অনুধাবনমূলক: কোন পাঠ্যংশে সরাসরি তথ্য বা উত্তর দেয়া নেই, চিন্তা করে ভেবে-চিন্তে উত্তর দিতে বের করতে হয়, এমন সব প্রশ্ন অনুধাবনমূলক হয়। রূপান্তর করা, ব্যাখ্যা করা, সাজানো, পুণরায় বলা, সারমর্ম তৈরি করা, নিজের ভাষায় পুণরায় বলা, পুণরায় লেখা,                                                                                                                                                           অনুবাদ করা, ভাষান্তর করা, চিন্তা করা, কারণ খোঁজা প্রভৃতি কিয়া পদ; এধরণের প্রশ্নে থাকে।যেমন-ঢাকার ঘাস সাদা কেন?
৩. প্রয়োগমূলক: শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট পাঠ্য বিষয়বস্তুতে পড়েছে বা জেনেছে এমন বিষয়কে বাস্তব উদাহারনের সহোয্যে প্রকাশ করতে পারার দক্ষতা এটি। প্রয়োগ করা, সমাপন করা, গঠন করা, আকাঁ, খোঁজে বের করা, উদাহারণ দেয়া, সমাধান করা, ব্যবহার করা, তুলনা করা, মিল করা, সমাধান বের করা; এধরণের ক্রিয়া পদ দিয়ে প্রয়োগমূলক প্রশ্ন করা হয়, যা সরাসরি পাঠ্যাংশে থাকেনা। যেমন- বনজ ও ফলজ গাছের শ্রেণিকরণ কর।
. বিশ্লেষণমূলক: কোন জিনিষ বা বিষয়কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে মূল জিনিষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার প্রক্রিয়া হলো বিশ্লেষণমুলক প্রশ্ন। শ্রেনীকরণ, আলাদাকরণ, বাদ দেয়া, পার্থক্য নির্ণয় করা, সুনির্দিষ্ট করা, পরীক্ষা করা, সামন্জস্য খোঁজা প্রভৃতি বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নে পাওয়া যায়। যেমন-৫টি কলার দাম ১০ টাকা হলে, ৫ টি কলার দাম কত?
৫. সংশ্লেষণমূলক: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত কোন জিনিষকে একত্রীকরণ করা ও তাতের মধ্যকার সম্পর্ক খোঁজা এধরণের প্রশ্নের বৈশিষ্ট্য। এধরণের প্রশ্নে পরিবর্তন কর, সংযুক্ত কর, নির্মাণ কর, সৃষ্টি কর, নকশা কর, গঠন কর, পরিকল্পনা কর, ভবিষ্যত বাণী কর, ভান বর, পুণর্বিন্যাস কর, দৃশ্যমান কর পরামর্শ দাও; প্রভৃতি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা য়ে এতে।যেমন-প্রদত্ত সুত্র ব্যবহার করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা কর।
৬. মূল্যায়নমূলক: সাধারণত কোন ব্যক্তি বা জিনিষের সাথে অন্য ব্যক্তি বা জিনিষের তুলনামূলক মিল-অমিল খোঁজা; এধরণের প্রশ্নে পরিলক্ষিত হয়।বাছাই কর, তুলনা কর, সমাপন কর, সিদ্ধান্ত নাও, বিচার কর, বাছাই কর সমর্থন কর; প্রভৃতি ক্রিয়া পদ প্রয়োগ করে এতে প্রশ্ন করা হয়। যেমন-নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়া এবং সুফিয়া কামালের মধ্যে কার অবদান বেশি?

সাধারণত মনে করা হয় যে, উপরোক্ত ৬টি ধাপ অনুসরণ করে একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হলে সহজ থেকে কঠিন, আবার কঠিন থেকে সহজ; সব ধরণের মানসম্মত প্রশ্ন এতে চলে আসে। আর শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা পরিমাপে পুরপূর্ণতা লাভ করে। শিক্ষার্থীদের সকল ধরণের যোগ্যতা বা শিখণ ফল অর্জনের মাত্রা মূল্যায়ন যথাযথ হয়।
২. সক্রেটিসের প্রশ্নকরণ পদ্ধতি: সক্রেটিসের পদ্ধতিতে মূলত শিক্ষার্থীদের দলীয় ভিত্তিতে প্রশ্ন করে করে শেখার প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। এটাকে সক্রেটিসের সংলাপ বা সেমিনার পদ্ধতিও বলা হয়।এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের দল গঠন করে দিয়ে তারা নিজেদের মাঝে প্রশ্ন করবে, শিক্ষককে প্রশ্ন করবে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করবে;    এভাবে শিখণ-শেখানো চলবে। মূল্যায়ন চলবে। পাঠ্য বইয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু বা পাঠ্যাংশ হতে পড়তে পড়তে প্রশ্ন বের করবে এবং উত্তর বের করবে। পরিশেষে সঠিক ও যথার্থ উত্তর খুঁজে নেবে।সক্রেটিসের এ পদ্ধতিতে শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের মধ্য দিয়ে তত্ত্ব গঠন, পুণরাবৃত্তি এবং সত্যটা বেরিয়ে আসে। এটি একটি অনুসন্ধানমূলক শিখণ পদ্ধতিও।
৩. পাইয়েডিয়া সেমিনার পদ্ধতি: এটা অনেকটা সক্রেটিসের পদ্ধতির মত। এতে সাধারণত পুরো একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে, সহপাঠী শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করতে করতে শিখণফল অর্জন করবে।মূল্যায়নও চলবে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদেরকে তাত্ত্বিক বা জটিল কোন বিষয়ে ভাবতে ও সহযোগিতামূলক শিখণকে উৎসাহিত করা হয়। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা খূব কম থাকে, ১০ শতাংশ মাত্র।
৪. প্রশ্ন গেম পদ্ধতি: বিভিন্ন রকম ধাঁধা বা পপ্রশ্ন গেম দিয়ে শিশুদের শেখানোর পদ্ধতি এটি। বলা যায়, কুইজ পদ্ধতি এটি।এতে শিশুদের মনে প্রশ্নের উদ্রেগ করার প্রকিয়াকে দৃষ্টিপাত করা হয়। সমস্যা-সমাধানমূলক শিখণ চলাকালে এটা প্রয়োগ করা হয়। বিকল্প সৃজনশীল উত্তর বের করে আনতে এটা সবচেয়ে কার্যকর। কোন শিখণের পুণরাবৃত্তি, ভাবনার কাঠামোগত রূপদান এবং সৃজনশীল হয়ে ওঠতে শিশুদের জন্য প্রশ্ন গেম সহায়ক হয়।
৫. টিচ-থট পদ্ধতি: টিচ-থট নামক একটি মার্কিন জনপ্রিয় শিক্ষামূলক ওয়েভসাইট, প্রশ্নকরণের এ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছে।
-কোন জিনিষ কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে কার্য়কর-ভানামূলক চিন্তার প্রকাশ।
-ভাবুকগণ কীভাবে কোন জিনিষকে অন্য কিছুর সাথে সম্পৃক্ত করেন, তা হনে নিজস্ব অনুভূতির জন্ম দেয়া।
-কোন জিনিষকে সৃজনশীল ভাবনায় পরিণত করার প্রক্রিয়া বা সনাতন নয় এমন কোন কিছুর অন্তর্নীহিতার্থ অর্থ নিয়ে ভাবা।
-কোন কিছুর একক অংশকে অংশ বিশেষ দিয়ে বিবেচনা করা।
-কোন জিনিষ কীভাবে অন্য জিনিষকে সম্পর্কিত করে নেয়, তার মধ্যকার আন্তনির্ভরতাকে নিরীক্ষাকরণ।
-পুরো জিনিষটাকে ভাবনায় নিয়ে এসে প্রাসঙ্গিকভাবে বিবেচনা করা।
৬. কোয়েশ্চন ফরমেশন বা প্রশ্ন গঠন পদ্ধতি: এটা এমন এক প্রশ্নকরণ পদ্ধতি, যেটা কোন শিখণবস্তুকে কেন্দ্র করে মস্তিস্কে ঝড় তোলার প্রক্রিয়ায় প্রশ্নকরণ ও শিখণ প্রচেষ্টা। শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্ন জাগ্রত হয়, তাদের প্রশ্ন তৈরি করেন এবং কৌশল ঠিক করে প্রশ্ন করে করে শিখে। ফলে, তাদের জ্ঞানমূলক ভাবনা, সৃষ্টি তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এতে। এধরণের প্রশ্নের প্রক্রিয়াট নিন্মরূপ হতে পারে;
.          নিজে প্রশ্ন নিজে তৈরি করা।
.          প্রশ্নটিকে উন্নত রূপদান।
.          প্রশ্নগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ।
প্রথম ধাপে উক্ত ৩টি কৌশল অনুসৃত হবে। শিক্ষার্থীদের মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেগ হবে। আর যত প্রশ্ন তাদের মনে আসবে, তত প্রশ্ন করবে। আলোচনাও চলতে থাকবে, সেটা বিবেচনায় নেয়া বা প্রশ্নের উত্তর সাথে সাথে দেয়া হবে না। আর প্রত্যেক প্রশ্ন লিখে রাখা হবে। যে কোন বক্তব্যকে প্রশ্নে পরিণত করা হবে।প্রশ্নগুলোকে শ্রেণিকরণ করে বদ্ধ অথবা উন্মুক্ত প্রশ্নরূপে বেছে নেয়া হবে। বদ্ধ প্রশ্নগুলোর উত্তর হাঁ বা না দিয়ে দেয়া যেতে পারে। উন্মুক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তরদানে সময় প্রয়োজন হবে।
৭.ইউরিভার্সেল কোয়েশ্চন স্টেম্স বা সার্বজনীন প্রশ্ন স্টেম: বেন্জামিন ব্লুমের প্রশ্ন তৈরি পদ্ধতিতে প্রদর্শিত বাক্যাংশ এবং প্রশ্নাংশ ব্যবহার করে প্রশ্ন তৈরিতে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পায়, বেশ।আসলে এটি প্রথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।উপরের স্তরের জন্য তেমন কার্যকর নয়।

৮.বেসিক কোয়েশ্চন স্টেম বা মৌলিক প্রশ্নাংশের উদাহারণ;

-কলম ও পেন্সিল; এ দু‘য়ের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কী?তুমি কোনটি পছন্দ কর?

–কেন তুমি ভাল বইকে পছন্দ কর, খারাপ বই কেন তোমার পড়তে ইচ্ছে হয় না?

–নিয়মিত বিদ্যালয়ে না গেলে তোমার পড়াশোনায় কীভাবে ক্ষতি হয়?

–কলম দিয়ে কীভাবে লিখতে হয়?

–তোমার জীবনে সবচেয়ে কোন জিনিষটি গুরুত্বপূর্ণ?

– তোমার নিকট কোন বিষয়টি সবচেয়ে সহজ বা কোনটি বেশি কঠিন মনে হয়?

–কোন বিষয়টি  তুমি সহজে বুঝতে পার? কেন পার, কারণ উল্লেখ কর।

–তুমি কখন বিদ্যালয়ে যাও? কেন যাও?

উপরোক্ত ৮ টি কৌশলে প্রশ্ন করা হলে তা হয় শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রশ্ন।আর এধরণের প্রশ্নকরণ প্রক্রিয়া সার্বজনীনভাবে চলে আসছে।
৯. শ্রেণি পাঠদান চলাকালে প্রশ্নকরণ:শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখণ-শেখানো চলাকালে সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং পাঠ্য বিষয়বস্তু ও পাঠ্যংশ সম্পর্কিত বা অনুরূপ বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কৌশলে প্রশ্ন করা হবে। প্রশ্ন করবে শিক্ষার্থী শিক্ষককে। আবার শিক্ষক, শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করবেন। শিক্ষার্থীরা পরস্পরে পরস্পরকে প্রশ্ন করবে। উদ্দেশ্য থাকবে, শুধু মূল্যাযন করা নয়, শিখণ ফল অর্জন করাও।সাধারণ একটি দৃশ্য এটি, শ্রেণিকক্ষে যা সবসময় চলে।তবে সাধারণকে অসাধারণ করে তোলাই মূল বিবেচ্য বিষয়, বৈ কি!কিন্তু কখনও কখনও যখন বিষয় বা শিখণ ফল যখন হয়, গভীর ভাবনামূলক, অনুসন্ধানমূলক এবং বুঝতে হয় এমন, তখন প্রশ্ন করার সময় শিক্ষকের বা শিক্ষার্থীর কৌশলী হওয়ার প্রসংগটি চলে আসে। শিক্ষার্থীদেরকে নির্বীগ্নে ও অবাধে প্রশ্ন করতে দিলেই কোন কিছুর গভীরে যাওয়ার সুযোগ সৃস্টি হয়।আর সহজাতভাবেই শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করে ও শিখে থাকে । শুধু শিক্ষক লক্ষ্য রাখবেন, প্রশ্নগুলো তাদের শিখণ ফল অর্জনে কতটা সহায়ক হচ্ছে। অনেক সময় প্রশ্ন করতে পারাটা উত্তর দেয়ার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।আর যেহেতু এটা শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক একটি শিখণ পদ্ধতি এটাকে যত্নসহকারে এবং কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা উচিত।  

 যাহোক, এভাবে প্রশ্ন বা অভীক্ষা পদ বা অভীক্ষাপত্র তৈরির অনেক পদ্ধতি অনুসরণের ব্যাপারে শিক্ষাবিদগণ মতামত ব্যক্ত করেছেন।েএখানে সংক্ষেপে প্রশ্ন করা বা অভীক্ষা পদ এবং অভীক্ষাপত্র/প্রশ্নপত্র তৈরিকরণ নিয়ে বিবিধ পদ্ধতি এবং উত্তম প্রশ্ন করার কলা-কৌশলসমূহ আলোচনা করা হলো।আশা করি, প্রশ্ন তৈরি বা শিখণ-শেখানোর অংশ হিসেবে প্রশ্নকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা লাভবান হবেন। 

Is a Teacher Artist or thinks like so

শিক্ষকতা কী শিল্পকলা, না শিক্ষকতার
 কাজ একজন শিল্পীর মত ভাবা?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
                             মহেশখালী, কক্সবাজার।
শিল্পীর কাজ হলো, ভাবনা, রং ও তুলি দিয়ে ছবি এঁকে সেই ছবিতে সৌন্দর্য্য বা নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলা। আর শিক্ষকের কাজ হলো, একজন মানব শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হতে ভূমিকা রাখা। শিল্পী, তাঁর ভাবনাকে রং ও তুলি দিয়ে আঁকতে আঁকতে নতুন কিছু সৃজন করেন, চিত্র বা ছবি আঁকা-আঁকি করেন। আর শিক্ষক, কাদা মাটির জিনিষ তৈরির ন্যায় একজন মানব শিশুকে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, মানবিক, আবেগিক, নৈতিক, আধ্যাত্নিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন করে তাদের দেশাত্ববোধে, বিজ্ঞান মনস্কতায় এবং সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ করে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করেন।শিল্পী তাঁর সৃস্টির মাধ্যমে যে কারও ভাবনা ও নান্দনিক বোধের জগতকে পুলকিত করেন। আর শিক্ষক, মানব শিশুর সুপ্ত প্রতিভা ও মানবসুলভ সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলোকে সুশোভিত করে পরিপূর্ণ মানব হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন এবং এতে শ্রেষ্ঠ আনন্দ লাভ করেন। যাহোক, আমরা এখানে চিত্র শিল্পী এবং শিক্ষকের মধ্যকার মিল-অমিলগুলো অনুসন্ধান করার প্রয়াস চালাব।আর শিক্ষকগণ কীভাবে শিল্পীর মত হতে পারেন, তা নিরীক্ষা করা হবে।সভ্যতার আদিকাল হতে শিক্ষকতার কাজটি বিকশিত ও উন্নত হতে হতে অত্যাধুনিক রূপ লাভ করেছে। আজকের যুগের শিক্ষকগণ সভ্যতার কৃষি যুগ, শিল্পায়নের যুগ হতে উত্তরণ ঘটিয়ে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে শিক্ষকতা অত্যাধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে। শিক্ষকগণ এসব ভেবে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়েন। তাঁরা তাঁদের পূর্বসূরিদের শিখণ-শেখানো ও শিক্ষাদানের কথা মনে করলে বা ভাবলে, হয়ত হেসে ওঠবেন। আজকের যুগের শিক্ষকগণ যখন শ্রেণিতে পাঠদান করেন তথ্য-প্রযুক্তিত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে ও তা প্রয়োগ করে, সে মুহুর্তকে যদি আমরা ৫/১০ বছর পূর্বেকার সনাতন পাঠদানের কথা ভাবি, মনে হবে অভাবনীয় সব পরিবর্তন শিক্ষকতায় ঘটে গেছে। আর আজকের যুগের শিল্পীরা যদি আমাদের দেশের খ্যাদিমান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চোধুরী, মূর্তজা বশীরের মত শিল্পীর তুলি ও রং ব্যবহার করে ছবি এঁকে কীভাবে জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেনে, তা ভাবেন, তবে কূল-কিনারা খুঁজে পাবেন না। শিল্প জগতেও তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আঁকা-আঁকি কাজে অভাবনীয় অনেক কিছু ঘটে গেছে। বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন; তাঁরা কী শিল্পকলা শিখাবেন, না শিক্ষার্থীদেরকে শিল্পীর মত ভাবতে শিখাবেন? তাঁরা কী ইতিহাস শিখাবেন অথবা তাঁরা কী একজন ঐতিহাসিকের মত ভাবতে শি্খাবেন? যদি এমন জবাব হয় যে, একটি ছাড়া অন্যটি অপূর্ণ থেকে যাবে অথবা যদি সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া বা তা অনুসরণ করা হয়; তবে, কোনটাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে? একবিংশ শতকের শিক্ষকদের শিক্ষাদানে বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিখণ-শেখানো হতে শিক্ষাদান অভ্যস, প্রক্রিয়া এবং ভাবনার প্রয়োগমূলক পদ্ধতিতে পরিণত করার কথা ভাবা হচ্ছে। সাধারণত; শিক্ষকগণ একাডেমিক উচ্চতর যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। অতপর বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান কাজে লিপ্ত হন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পেশাগত দক্ষতা অর্জন এবং প্রত্যক্ষ কাজ করার মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক হয়ে ওঠেন। এভাবে কাজ করতে করতে শিক্ষকতায় পটু হতে থাকেন। হয়ে ওঠেন শিশুদের নিকট মডেল, শ্রদ্ধেয়, বিশ্বস্থ এবং সর্বোপরি মানুষ গড়ার দক্ষ কারিগর। যতদিন তিনি শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকবেন, ততদিন তিনি মানুষ তৈরি তথা মানব সম্পদ গড়ে তোলায় ভূমিকা পালন করে যাবেন। তিনি নিত্যই শ্রেণিতে সৃজনশীলতার বহি:প্রকাশ ঘটান। সুতরাং, তিনি একজন শিক্ষক ও শিল্পী। কিন্তু শিল্পীরা শুধু শিল্পীই হন, শিক্ষক হন না। হতে পারেন না।শিক্ষক হন, সক্রেটিসের মত, রবীন্দ্রনাথের মত অথবা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মত মানুষেরা।আর শিল্পীগণ হলেন, লিও নার্দো দ্যা ভিঞ্চি, ভেন গগ, বোদলেয়ার, জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসানের মত মানুষেরা। শিল্পীদের তিনটি অভ্যাস থাকে, সেগুলো হলো; তাঁরা বৈচিত্রতায় আনন্দ পান, নতুন ধারণার জন্ম দেন এবং বহু বিষয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে একক সত্তায় রূপ দেন। শিল্পী কাজ করেন, একা একা। তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে নিজ গুণে শিল্পী হয়ে ওঠেন। প্রকৃতি ‍ও পৃথিবীর যাবতীয় সৃস্টিকে তাঁদের আঁকা-আঁকির বিষয়বস্ততে পরিণত করেন। নিজস্ব ভাবনা ও সৃজন ক্ষমতা দিয়ে তাঁরা কোন সাধারণ বিষয়কে ছবিতে/চিত্রে অসাধারণত্বের রূপ দেন। মানুষ তা দেখে উপভোগ করেন, আনন্দ পান, শোরুমে-ড্রইংরুমে প্রদর্শন করেন ও সংরক্ষণ করেন। তাঁর কাজটি অনেকটা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর সে ছবি মোনালিসার ছবির মত যদি হয়, তবে তা অমর হয়ে রয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে তা উপভোগ করতে থাকে, মানুষ। কিন্তু শিক্ষক গড়েন মানুষ, যারা সব কিছুর নিয়ন্তা হয়, এ পৃথিবীতে। যারা একবার শিক্ষকের নিকট পড়তে যান, তারা হন, উন্নত মানব। আর সেই মানব নতুন নতুন মানব গড়েন। হন, দেশ-দুনিয়ার হর্তা-কর্তা। হন শিক্ষক। শিক্ষকতা ও শিল্পীর কাজ দু‘টিই মহৎ প্রচেষ্টা। শিল্পীর সৃষ্টিতে মানুষ আনন্দ পায় যেমন, শিখেও অনেক কিছু। শিক্ষকেরও একটি শিল্পবোধ এবং সৃজনসৃশীল মন থাকা চাই। সনাতন পদ্ধতির শিক্ষকতা বোধ হয় তেমন আনন্দদায়ক বা উপভোগ্য হয় না।তাই শিল্পীকেও একজন শিক্ষক বলা যায়। শিল্পী নান্দনিকতার শিক্ষক, আনন্দ-বিনোদন বিলানোর শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষক হলেন, মানব শিশুকে পূর্ণাঙ্গ ও নান্দনিক বোধ সম্পন্ন মানুষ তৈরি করেন। সে অর্থে বলা যায়, দু‘জনই শিক্ষক। আবার শিল্পী শিক্ষকের পরিপুরকও বটে। কারণ শিল্পীর অনেক সৃষ্টি শিক্ষকরে জন্য শিখণ-শেখানোর উপকরণ বা শিখণ-শেখানোর বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এগুলোর ব্যবহারে শিক্ষকের শেখানো এবং শিক্ষার্থীদের শিখণ ফলপ্রসূ হয়। অতএব, পরস্পরের নিকট হতে উভয়ের শেখার আছে।

পরিশেষে বলতে হয়, শিক্ষককে শিল্পীর মত হতে সচেষ্ট থাকতে হবে। আবার শিল্পীর মনে শিক্ষকসুলভ ভাবনাও স্থান পাবে। এটাই প্রত্যাশিত।                                                    

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

Primary Education in Bangladesh: What I think

Primary Education: What I think (Part-1v)
Mohammad Shahidullah
AUEO, Moheshkhali
                               Coxsbazar.
A large volume of Quality Primary Education activities have been being going on in full swing in Bangladesh. In fact, all the countries of the world have been giving due emphasis on Education For All and ensuring quality primary education. Along with, other developed and developing countries of the world, we have been implementing the pledges and commitments, given to the International agreement done with the UNO and other organizations. In this article, I would like to discuss and offer some suggestions to popularize the age-old Primary Schools and Quality Primary Education Programs, on going throughout Bangladesh. A number of officers, teachers and staffs, have been working hard for ensuring quality primary education for the future generation, ages from 5+---10+ children in our country. But our activities are not being visible and can’t draw the attention of the mass community. But why? It lacks proper steps and active initiatives. Most of the people of the country don’t know that Bangladesh primary education system is now no longer in such an old age, but gone far in this high-tech world. A few number of Private or Kindergarten Schools, those offer primary education to the students of the same age of primary schools have become very much popular, working with limited students and localities. The Activities of these types of schools have been being focused much more than the government primary schools, those have been working harder and largely than them. Perhaps, we are not aware of that this is the age of publicity and advertisement. For this, we are lagged behind. We can follow the techniques given below for upholding proudly the vast activities of government run primary schools and their successful activities.
1. All schools should be conscious of making public their attractive teaching-learning activities and producing good students.
2. All the head teachers of the good primary schools should take some initiatives offering attractive education packages and they should publish their previous excellent records of good results as well as scholarships. They also should make public the good records of their former students.
3. Name and fame of the good teachesr should be upheld to the community and the guardians.
4. Primary Schools should be made attractive, both internally and externally.
5. Child-friendly and joyful learning environment should be ensured in all the primary schools.
6. Dress-up and get-up of the students should be made attractive and smart enough.
7. Co-curricular activities, cubing and cultural programs should be geared up.
8. Each and every school should be impressive and environmentally good-looking.
9. Quality of all the activities must be paid heed to improvement of schools.
10. In fact, government primary schools are the main light-house of education.

Finally, this article is one of my primary education thinking. I have already written a series of writings on the topic. This is the fourth one. If the K.g schools can bring good name working for a few students, then why not the government primary schools. We must have to do it, near future.    


Professionalism of Primary School Teachers: An World View


শিককদের পেশাগত মানোন্নয়ন:
একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
মহান সব শিক্ষক সারা বিশ্বে কাজ করছেন।কিন্তু, তাঁদেরকে পেশাগতভাবে আরও সমৃদ্ধ এবং দক্ষ হয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তা সর্বত্র ভাবা হচ্ছে।এ লক্ষ্যে পৃথিবীর অনেক দেশে উন্নত মানের শিক্ষক দল গড়ে তোলার জন্য পেশাগত মানোন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও শিক্ষকদেরকে পেশাগতভাবে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য অব্যাহতভাবে প্রশিক্ষণ চলছে। বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষকতা পেশাকে একদা মনে করা হত; সবচেয়ে সম্মানজনক, স্থায়ী ও দীর্ঘ পেশা। কিন্তু মানুষের সে বিশ্বাসে পরিববর্তন ঘটেছে। আর শিক্ষকতা এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।অনেক দেশের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং জনগোষ্ঠীর নিকট শিক্ষকগণ; আর অত পছন্দনীয় বা শ্রদ্ধেয় নন। অনেক পাশ্চাত্য দেশে শিক্ষকদেরকেও এক প্রকার সরকারি আমলা বলে গণ্য করা হয়, যাঁরা পুরনো সব ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, যা শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটানোতে সক্ষম নয়।তথ্য-প্রযুক্তির এ অত্যাধুনিক যুগে শিক্ষার্থীরা অনেক অগ্রসর হয়েছে, শিক্ষকগণ, সেই সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানকারি শিক্ষকতার যুগে থেকে গেছেন। এটা শিক্ষকের ব্যক্তিগত কোন দুর্বলতা নয়, পদ্ধতিগত সমস্যা এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা শিখণ-শেখানো এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে রাতারাতি পরিবর্তন সাধন করা অসম্ভব প্রায়। মানসম্মত বা উত্তম শিক্ষা অর্জন করতে শিক্ষকতা পেশার মানোন্নয়নে একটি রূপকল্প তৈরি ও পরিকল্পনা নিয়ে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এশিয়া সোসাইটি কতৃক আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এসব অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। এত আরও বলা হয় যে, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে দুর্বল শিক্ষকদের দিয়ে কাজ পরিচালনা না করা বা তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করার কথা না ভেবে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রদান, তাদের প্রশিক্ষণ দান এবং পেশাগতভাবে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
শিক্ষকদের পেশাগতভাবে দক্ষ করের তোলার জন্য করণীয়সমূহ: এসিয়া সোসাইটি আয়োজিত উক্ত সেমিনারে শিক্ষকদের পেশাগতভাবে সমৃদ্ধ ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা এবং সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য
উত্তম শিক্ষক নিয়োগ দান: অতি কেন্দ্রিভুত শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনাকারি দেশগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ে বা মাঠ পর্যায়ে কিছুটা দায়-দায়িত্ব এবং কর্তব্য হস্তান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনকারি দেশগুলোতে বিদ্যালয় ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কোন কোন দেশে ভাল শিক্ষকদের অন্য পেশা হতে এনে নিয়োগদান করা হচ্ছে।
নতুন শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন: বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, নব-নিযুক্ত শিক্ষকগণ প্রথম ৫ বছর শিক্ষাদানে তেমন দক্ষতা প্রদর্শণে সক্ষম হন না। তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। অনেক দেশে নব-নিযুক্ত শিক্ষকদেরকে ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ বা শিক্ষানবীশকালীণ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।নতুন শিক্ষকদের জন্য মেন্টরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। অধিকতর অভিজ্ঞ ও দক্ষ সহকর্মীগণ, নতুন সহকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সহযোগিতা ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করার প্রক্রিয়া হলো; মেন্টরিং। যিনি মেন্টরিং করেন, তিনি হলেন মেন্টর। আর নতুন সহকর্মী যিনি মেন্টরের সহযোগিতা নেন, তিনি হলেন, মেন্টী। মেন্টর ও মেন্টীর মধ্যকার আন্তক্রিয়াকে মেন্টরিং বলা হয়। বাংলাদেশে বিগত ১০/১৫ বছরে বিপুল সংখ্যক নতুন শিক্ষক/শিক্ষিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। ডি.পি-এড, সি-ইন-এড বা অনুরূপ পেশাগত ডিপ্লোমা অথবা সার্টিফিকেট কোর্স গ্রহণ করার পূর্বে শিক্ষকতার কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম করে তোলার জন্য তাঁদেরকে ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ এবং মেন্টরিং পদ্ধতি অনুসরণ এবং তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়ন: অধিকাংশ দেশে শিক্ষাদান চলাকালে শিক্ষকদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং তাঁরা বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। বাংলাদেশে শিক্ষকগণ; ডিপি-এড, সি-ই-এড প্রশিক্ষণ, সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আবার বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কাজে সম্পৃক্ত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি শিক্ষক-অভিভাবক কমিটি ও স্লিপ কমিটির অন্তর্ভুক্ত সদস্যবৃন্দকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। আর বিদ্যালয় পরিচালনা বা আর্থিক কার্যক্রম সম্পাদন এবং উপবৃত্তিসহ অন্যন্য অর্থ বিতরণ বা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ বিষয়েও প্রশিক্ষণ-কর্মশালার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এতসব প্রশিক্ষণের আয়োজন সত্বেও সুসমন্বয়ের অভাব এবং প্রশিক্ষণসমূহের মধ্যকার সুসাঞ্জস্যতা রক্ষা না হওয়ায়, পেশাগত উন্নয়নের প্রশ্নটি রয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ি তাঁদেরকে উত্তম পাঠদানে সক্ষম করে তোলাই হওয়া উচিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচনের সময় অগ্রাধিকার দেওয়া।আর যেসব শিক্ষককে পেশাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলা যাবে, শুধু তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়াই ভাল। দুর্বল শিক্ষক বা যাঁদের পেশাগতভাবে সামর্থ্যবান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাবাপন্ন করে তোলার সম্ভাবনা কম, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিলেও, তেমন উপকার বয়ে আনবে না। আর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।এসিয়া সোসাইটি আয়োজিত উক্ত সেমিনারে শিক্ষকগণের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য নিন্মোক্ত সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। এ সেমিনারে উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশের প্রতিনিধি, মন্ত্রী, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ থাকেন। তাঁরা প্রতিবছর এ ধরণের সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। এ সেমিনারে অংশগ্রহণকারি আলোচকগণ সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেন যে, তাঁরা নিজ নিজ দেশে পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়ন এবং মানসম্মত শিক্ষার বিকাশে আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দেন। শিক্ষকদেরকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধকরণ ও কাংখিত সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং মর্যাদা প্রদান করে তাঁদেরকে আত্নপ্রত্যয়ী ও যোগ্য করে তোলার মাধ্যমে শিক্ষা ও শিক্ষকতার মানোন্নয়ন কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত রাখতে হবে। সেমিনারে অংশগ্রহণকারিগণ আগামী দিনের জন্য শিক্ষকতা পেশার মানোন্নয়নে নিন্মোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশমালা পেশ করেন।
.         শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন পেশাগত উন্নয়নমূলক অর্জনগুলো জোরদার করতে হবে।
.         উচ্চতর যোগ্যতাসম্পন্ন ও উদ্যমী শিক্ষক নিয়োগ দান করতে হবে। আর যেসব জাতিস্ত্ত্বার শিশুদের জন্য স্ব-ভাষার শিক্ষক নেই এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকার লোকদের শিক্ষকতায় নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
.         শিক্ষকদেরকে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং শ্রেপিণকক্ষে পাঠদান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
.         শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ি প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে হবে।
.         প্রধান শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর ও উন্নত প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে, যাতে তাঁরা সহকারি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিখণ-শেখানো কার্যক্রম সার্থক ও সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হন।
.         পেশাগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের শিখণ বা শিখণফল অর্জন করানোর প্রক্রিয়া সফলভাবে পরিচালনায় সামর্থ্য বৃদ্ধিকরণের জন্য শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
.         সরকার, কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মাঝে একটি সৃদৃঢ় ও সুমন্বয়মূলক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে।

উপসংহার: মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চতর দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক অপরিহার্য। এটা সারা পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই উপলব্ধি করে থাকে। ইতোমধ্যে, অনেক দেশ শিক্ষকদেরকে ভাল সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং পেশাগত উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক গড়ে তোলে সুফল পাচ্ছে। এসিয়া সোসাইটির মেমিনারে আলোচনার আলোকে বর্তমান নিবন্ধটি তৈরি করা হয়েছে। নিবন্ধটি পড়ে সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।





মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

Teaching is the best job in the world

শিক্ষকতা কী বিশ্বসেরা পেশা?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। পেশাটির প্রতি সম্মান বোধ করেন না, এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে, এ জগতে। আর যাঁরা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন, তাঁদের মনে একটি নিস্পাপ-নিস্কলুষ সততা ও মানসিক বোধ কাজ করে বলেই তাঁরা এ পেশায় এসেছেন। যাহোক, সমাজে বা দেশ-বিদেশে সর্বত্র দেখা যাবে, শিক্ষকতা পেশার প্রতি ভাল মনের মানুষদের একটি আকর্ষণ বোধ রয়েছে। এ নিবন্ধে শিক্ষকতাকে একটি বিশ্ব সেরা পেশা হিসেবে পর্যালোচনা করার প্রয়াস চালানো।আমরা কখনও কখনও দেখতে পাই যে, মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। আবার, বিশ্বব্যাপী শিক্ষা সচেতনতা এবং তথ্য-প্রযুক্তির উদ্ভাবনী সব ভাবনা-কৌশলের প্রয়োগ ও নতুন নতুন কলা-কৌশল প্রয়োগে শিক্ষকতা একটি আকর্ষণীয় ও সেরা পেশা হয়ে ওঠেছে। আমরা নিন্মোক্ত কারণে এ পেশা অন্যতম বিশ্ব সেরা পেশায় পরিণত হওয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যা সন্ধান করব।
.          সফল জীবনের সম্ভাবনা: যে কোন শিক্ষককে যদি প্রশ্ন করা হয়, তিনি কী কোন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করেছেন, কিনা? হতে পারে, তা শিক্ষাদান বা শিখণ-শেখানো অথবা অন্য কোন ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে। উক্ত শিক্ষকের জবাব হবে; শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি শুধু ভাল কাজই করেন নি, অভাবনীয় সব মঙ্গলময় ভূমিকাও পালন করেছেন।
.          শিক্ষকতা অবিরাম সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ বয়ে আনে: শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত এবং জবাবদিহির মুখোমুখি হন বটে। কিন্তু প্রতিটি শ্রেণি পাঠদানেই তাঁরা সুষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এমন কী শ্রেণি পাঠদান পর্যবেক্ষণেও তাঁরা সৃস্টিশীল হন। বস্তুত, সকল প্রকার পর্যবেক্ষণে পাঠদানকে সৃজনশীল হতে উৎসাহ যোগানো হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে শিখণ-শেখানোতে নিয়োজিতকরণে আগ্রহী করে তোলে।শিক্ষকদের নতুন নতুন ভাবনার উদ্রেগ ঘটানোর অবাধ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আরও রয়েছে, সর্বোত্তম শিখণ পরিবেশ সৃস্টি নিশ্চিতকরণের আন্তক্রিয়ামূলক প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য অবারিত উপায় বা পন্থা।
.          অব্যাহত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ বয়ে আনে শিক্ষকতা: শিক্ষকগণ শুধু অব্যাহত পেশাগত মানোন্নয়ন ঘটান না, তাঁরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায়ও থাকেন, যাতে তাঁরা পেশাগতভাবে সমৃদ্ধ হন। আর এ কাজটি সম্পাদন বা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন; সংশ্লিষ্ট অধিকতর দক্ষ অভিজ্ঞ শিক।ষক-সহকর্মীবৃন্দ। খুব কম পেশা আছে, যেখানে অব্যাহত পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ থাকে। এটা শিক্ষকতা পেশার ভিত্তিকে মজবুত করে।
.          শিক্ষকতা একটি বিনয়-নম্রতামূলক পেশা: সত্যিকার অর্থে শিক্ষকগণ যে পরিমাণ কাজ সম্পাদন করে থাকেন, প্রতিদান বা পারিশ্রমিক তাঁরা সে পরিমাণ পান না। তাঁদের কাজের পরিমাণে কতটা প্রতিদান পাওয়া উচিত, আর কতটা পান না, তা হিসেব করে বের করাটা খুব কঠিন ব্যাপার। আমাদের সমাজে তাঁদের কাজগুলো সৃস্টিশীলতা ও গুরুত্বের বিবেচনায়ও অতুলণীয়। আসলে শিক্ষকগণ শিক্ষকতা করেন, এসব অনেকটা বিবেচনায় না নিয়ে। খুব কম শিক্ষক আছেন, যাঁরা টাকা-পয়সার জন্য এ পেশায় নিয়োজিত হন।
.          শিক্ষকগণ সদা সন্তুষ্ট থাকেন: শিক্ষকতা এমন এক পেশা, যাতে মনের ডাকে সাড়া দেযা হয়। মনের মণি কৌঠায় কোন না কোন তাগিদ বা খুশিই কাউকে শিক্ষকতায় টেনে নিয়ে আসে। কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও, অধিকাংশ শিক্ষক এ পেশায় আসেন, পবিত্র একটি মন নিয়ে। আর তা কতটা শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালবাসা হতে উৎসারিত, তা একটু ভেবে দেখার বিষয় বৈ কি!
.          একবিংশ শতাব্দীর উপযোগি প্রজন্ম গড়ে তুলছেন শিক্ষগণই: শিক্ষকগণই বিশ্ব সেরা সব নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার মূল ভূমিকায় নিয়োজিত। নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তি বিস্তরণ করছেন, শিক্ষকগণই। তাঁদের মাধ্যমে গড়ে ওঠছে নব প্রজন্ম। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ শিক্ষকগণ শিশুদের শিক্ষাদান করছেন, তাদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, বদলে দিচ্ছেন বিশ্বকে। গড়ে তুলছেন জ্ঞানমূলক সমাজ, দেশ ও জাতি। এমন সুযোগ অন্য পেশায় আছে কী?
.          কোমলমতি শিশুযদের মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক: নিস্পাপ-নিরীহ সব শিশুদের জ্ঞানের আলো বিতরণ এবং জ্ঞান জগতের দর্শন করানোর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন, শিক্ষকগণ। বলা হয়ে থাকে যে, যিনি জ্ঞান অর্জন করেন এবং শিক্ষাদান করেন, তিনিই সবার সেরা মানুষ। আর শিক্ষকগণই এধরণের সেরা মানুষ।
.          শিক্ষকেই সব মানুষের ভরসা: শিক্ষককে বিশ্বাস করেন না, এমন মানুষ খুব কম আছে সমাজে। আবার, শিক্ষকের মাঝে এমন কেহ কেহ আছেন, যাঁদের কারও কারও ওপর সত্যিই আস্থা রাখা যায় না। আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রামে-গঞ্জে, সমাজ, পরিবার, বিচার-শালিস প্রভৃতি কাজে শিক্ষকের ভূমিকাকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আর তাঁর মতামতকে স্বসম্মানে মেনে নেয়া হয়।
.          শিক্ষক সম্মানের পাত্র: সমাজের সকল প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষকের নিকট অক্ষর জ্ঞান শিখেছেন। তাই, তাঁরা যত বড়ই হোন না কেন, শিক্ষকগণকে সামনে পেলে পা-ছুঁয়ে সালাম করেন। এটা একজন শিক্ষকের জন্য অনেক বড় পাওনা।
.          শিক্ষক হন, দুর্নীতিমুক্ত-নির্দোষ: শিক্ষকতা এমন এক পেশা যেখানে দুর্ণীতি বা কলুষিত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। তাঁরা ওপরি পাওনা পাওয়া বা কাউকে হয়রানি/ঠেকিয়ে টাকা-পয়সা কামাই করার জন্য কোন কুপ্রবৃত্তি প্রদর্শণ করেন না। আবার, সুযোগ পেলে, শিক্ষকও কিছুটা কলুষিত হন না, এমন নয়। তবে তাঁদের সংখ্যা খুব নগন্য।

উপসংহার: শিক্ষকতা একটি বিশ্ব সেরা পেশা; এ নিয়ে কোন দ্বিমত আছে কী? থাকতেও পারে। তবে এ পেশা যে একটি মহান-মহৎ পেশা তা নিয়ে বোধহয়, কেহ প্রশ্ন তুলবেন না। আজকাল অনেকেই শিক্ষকতাকে একটি আকর্ষণীয় ও সম্মআনজনক পেশার মর্যাদা দিতে চান না। কর্পোরেট পেশাগুলোই এখনকার মেধাবীদের প্রধান আকর্ষণ। যাহোক, শিক্ষকতা পেশাকে অবমূল্যাযন বা হীন চোখে দেখার অবকাশ নেই। শিক্ষকই বিশ্বসভাকে আলোর পথ দেখান। তাদের দেখানো পথেই অন্যরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে মর্যাদা-সম্মান-পদ-পদবী লাভ করছেন। জগৎ জোড়া খ্যাতিমান হচ্ছেন, সাধারণ থেকে অসাধারণ হচ্ছেন। অতএব, শিক্ষকতা যে, জগৎ শ্রেষ্ঠ একটি পেশা, তা অস্বীকার উপায় নেই।



রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

Constructivism Learning Theory: A critical discussion

কন্স্ট্রাক্টিভিজম একটি শিখন তত্ত্ব:
বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োগ
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।

মানব শিশুর শিখন-শেখানো পদ্ধতি এবং শিক্ষা গ্রহন নিয়ে অনেক তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। এখনও, এনিয়ে নতুন নতুন সব ভাবনা উদ্ভাবন করা হচ্ছে।বিশেষত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদান এবং শিক্ষা গ্রহণের নতুন ভাবনা ও প্রায়োগিক প্রেক্ষাপটে কোন্ শিখণ তত্ত্বটি বেশি সহায়ক, এসব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।কন্স্ট্রাক্টিভিজম এমন একটি নতুন ভাবনা।এটি একটি শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিখণ-শেখানো পদ্ধতি। এনিবন্ধে কন্স্ট্রাক্টিভিজম শিখণ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হবে।জ্যাক্যুলিন গ্রেনম্যান ব্রুকস নামক একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী বলেন,“মানুষ যখন থেকে এক অপরকে প্রশ্ন করে কোন কিছু জানার জন্য চেষ্টা করে আসছে, তখন হতে কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শ্রেণিকক্ষের সূচনা ঘটেছে। কন্স্ট্রাক্টিভিজম হলো, শিখণের ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করা, কীভাবে আমরা আমাদের জগতকে অনুভব করি এবং যা সত্যিই পরিবর্তন হয়নি।” এ ধারণাটি সক্রেটিসের অনুসারিদের সাথে সংলাপ করার প্রক্রিয়া হতে উৎসারিত।অনুসারিদের প্রশ্নে কোথায় চিন্তন দুর্বলতা প্রকাশ পেত, তা সক্রেটিস শুধরে দিতেন। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শিক্ষাবিদগণ, সক্রেটিসের এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শিখণ মূল্যায়ন এবং নতুন বিষয়ে শিখণ অভিজ্ঞতার ব্যাপারে পরিকল্পনা তৈরির জন্য অনেক খোরাক খুঁজে পান। এক বিংশ শতাব্দীতে জাঁ পিঁয়াজে এবং জন ডিউই শিশু শিখণ এবং শিক্ষা গ্রহণ বিষয়ে প্রগতিশীল ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছেন এবং কনস্ট্রক্টিভিজমকে বিকশিত করেছেন। নিন্মের আলোচনাটি মূলত উল্লেখিত শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী জ্যাক্যুলিন গ্রেনম্যান ব্রুকসের একটি সেমিনার পেপারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
কন্স্ট্রাক্টিভিজম কী?
কন্স্ট্রাক্টিভিজম মূলত: এমন এক শিখণ তত্ত্ব, যাতে মানব শিশু কীভাবে শিখে তা পর্যবেক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা ভিত্তিক পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়। এর বালা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় কাটামোবদ্ধকরণবাদ।এ তত্ত্ব অনুযায়ি মানুষ তাদের নিজস্ব বোধগম্যতা ও পৃথিবীর জ্ঞান অর্জন করে থাকে, কোন জিনিষের অভিজ্ঞতা এবং সেসব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটানোর মধ্য দিয়ে।আমরা যখন কোন কিছুকে মোকাবেলা করি, হতে পারে, আমাদের বিশ্বাসে পরিবর্তন ঘটাবে তা, অথবা অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে নতুন তথ্য অপরিহার্য হবে।উভয় ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের নিজস্ব জ্ঞানের সক্রিয় স্রস্টা। এটা করতে হলে, আমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে, অনুসন্ধান করতে হবে এবং আমরা যা জানি তা মূল্যায়ন করতে হবে।
কন্স্ট্রাক্টিভিজম শিখণ অভিমত অনুযায়ি শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন শিখণ-শেখানো অনুশীলণ করা হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা বুঝানো হয় যে, অধিক জ্ঞান সৃস্টি এবং তার প্রফিলন ঘটে ও তারা যা করছে এবং তাদের বোধগম্যতায় পরিবর্তন ঘটছে, তা কথা বলা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদেরকে সক্রিয় কৌশল প্রয়োগে উৎসাহিত করা। শিক্ষক নিশ্চিত করেন যে, তিনি শিক্ষার্থীদের পূর্ব ধারণা সম্পর্কে বুঝেন এবং সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ও তার ওপর অবিচল থাকতে নির্দেশনা দেন। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শিক্ষকগণকে, শিক্ষার্থীরা তাদের শিখনে কতটা সক্রিয় তা নিত্যই মূল্যায়ন করতে হবে।শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে প্রশ্ন করে ও তাদের নিজস্ব কৌশল অনুসরণ করে দক্ষ শিক্ষার্থী হয়ে ওঠে।এ প্রক্রিয়া তাদের শিখণকে অব্যাহত রাখতে অনুপ্রাণিত করে থাকে। একটি সুপরিকল্পিত শ্রেণি পরিবেশে শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিখতে হয়, তা মেনে নেয়। এটাকে মনে হতে পারে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা একটা বোধগম্যতা কাঠামো। এটা যখন অব্যাহতভাবে তাদের অভিজ্ঞতায় পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষর্থীরা তাদের ধারণাগুলোকে জটিলতা ও শক্তি লাভ করতে দেখতে পায় এবং নতুন নতুন তথ্যক সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা দিতে ক্রমান্বয়ে শক্তি-সামর্থ্য অর্জন করে। এতে শিক্ষকদের একটি প্রধান ভূমিকা হয়ে দাঁড়ায়, শিখণে ও শিখণ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন প্রক্রিয়ায় উৎসাহিত করা।দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, বিজ্ঞান বিষয়ক একটি শ্রেণি পাঠদানে একদল শিক্ষার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ক সমস্যা সমাধানে নিয়োজিত রয়েছে।শিক্ষক যদিও সমস্যাটির সমাধান জানেন, কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদেরকে দিয়েই সমাধানটি বের করে নেন। তিনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাদের নিজ নিজ শিখণের প্রতিফলন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের বর্তমান জ্ঞানের আলোকে।যখনই একজন শিক্ষার্থী প্রাসংগিক কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে, শিক্ষক তা গ্রহণ করবেন এবং দলীয় কাজে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদেরকে জানাবেন। প্রশ্নটি তাদের সমস্যার সমাধান পেতে সহায়ক হবে। তারা এটাকে সূত্র হিসেবে নিয়ে প্রাসংগিক পরীক্ষা চালাবে। অতপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের শিখণ ফল নিয়ে পর্যালোচনা করবে এবং তাদের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে; সমস্যা বা ধারণাটি বুঝতে কতটা সহায়ক হয়।
কনস্ট্রাক্টিভিজম-এর সমালোচনা: কনস্ট্রাক্টিভিজম-এর সমালোচকগণ বলেন যে, এতে শিক্ষকের সক্রিয় ভূমিকা পালন এবং অথবা বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের অবদানকে নাকচ করা হয় না, বরং কাঠামোবদ্ধকরণ তত্ত্বে শিক্ষকের ভূমিকাকে সুদৃঢ় করা হয়, যাতে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদেরকে নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেয়ে তাদের জ্ঞানকে কাঠামোবদ্ধ রূপ দেয়। কাঠামোবাদী শিক্ষকগণ, সমস্যা-সমাধানমূলক এবং অনুসন্ধানমূলক শিখণ-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে, পরিসমাপ্তিতে হস্তক্ষেপ বয়ে আনে।আর সব মিলে একটি সহযোগিতামূলক শিখণ পরিবেশ সৃস্টি করে দেয়। কাঠামোবদ্ধকরণ শিক্ষার্থীদেরকে শিখণ প্রক্রিয়ায় পরোক্ষ শিখণ হতে প্রত্যক্ষ শিখণে সক্রিয় করে তোলে। শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নিকট হতে পাঠ্যবই থেকে সনাতন জ্ঞান অর্জন করার চেয়ে তাদের জ্ঞানকে গঠন করে নেয়। কাঠামোবদ্ধকরণ মতবাদকে শিখণ তত্ত্ব হিসেবে প্রায়ই ভূল ধারণা পোষণ করা হয় যে, এতে শিক্ষার্থীদেকে একই বৃত্তে ঘুরপাক খেতে হয়। বস্তুত কাঠামোবদ্ধকরণ শিক্ষার্থীদের বিশ্ব জগৎ এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে অনুসন্ধানে ও অন্তর্নিহীত শক্তিকে কাজে লাগাতে উৎসহিত করে। শিক্ষার্থীদের একই বৃত্তে আবদ্ধ রাখা হয় না, এতে তাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি পায় ও কার্যকর শিখণ চলে। তারা তাদের বর্তমান জ্ঞান এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা, শিখণকে কল্পনায় রূপদান, তাদের তত্ত্বকে যাচাইকরণ করে এবং তাদের অনুসন্ধান হতে প্রাপ্ত বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে শিখনে নিয়োজিত হয়।
কন্স্ট্রক্টিভিজম ও সনাতন শিখণ তত্ত্বের মধ্যকার পার্থক্য: এ তত্ত্বের মূল কথা হলো; শ্রেণিকক্ষে শিখণ-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষক-কেন্দ্রীয় চরিত্র না হয়ে, শিক্ষার্থীরাই কেন্দ্রেবিন্দু হবে। শ্রেণিকক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীরা আর কর্মবাচ্য হবে না, তারাই হবে কর্তৃবাচ্য বা কর্মতৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষকগণ জ্ঞান বিতরণ করবেন, শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবেন, তা আর হবে না। এ তত্ত্বে শিক্ষার্থীদেরকে তাদের শিখণে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত হতে বলা হবে। শিক্ষক কাজ করবেন, সহায়ক হিসেবে, মধ্যস্থাকারি হিসেবে, পরামর্শ দেবেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে শিখণ ফল বুঝতে ও প্রয়োগ করতে সহায়তা দেবেন এবং শিক্ষার্থীরা শিখবে।শিক্ষকের অন্যতম কাজ হবে, শিক্ষার্থীদেরকে ভাল ভাল প্রশ্ন করে শিখণকে ফলপ্রসূ রূপদান করা। আর কাঠামোবদ্ধকরণবাদে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ে জ্ঞান নিয়ে চিন্তা করবে, মুখস্থ করবে না, বরং একজন গতিশীল শিক্ষার্থী হবে, পৃথিবীকে পাল্টে দেয়ার কথা ভাববে এবং অর্জিত জ্ঞানকে সফলভাবে বিস্তরণ করবে ও তা অনুসন্ধান করে যাবে। নিন্মে শ্রেণিকক্ষে শিখণ-শেখানো কার্যক্রম সম্পর্কে সনাতন পদ্ধতি ও কন্স্ট্রক্টিভিস্ট তত্ত্বের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো। জ্ঞান, শিক্ষার্থী ও শিখণ-শেখাণোর মাঝে এতে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট তত্ত্বে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব পায়, শিক্ষক নন।
সনাতন শ্রেণিকক্ষ
কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শ্রেণিকক্ষ
-শিক্ষাক্রম আরম্ভ হয়, সমগ্রকের অংশ বিশেষ দিয়ে। মৌলিক দক্ষতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
-নির্দিষ্ট শিক্ষাক্রমকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং এর ওপর অবিচল থাকা হয়।
-প্রাথমিকভাবে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, পাঠ্যবই ও খাতাপত্র।
-পুণরাবৃত্তি ভিত্তিক শিখণ-শেখাণো কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
-শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদেরকে তথ্য দেন, শিক্ষার্থীরা হয় জ্ঞান অর্জনকারি।
-শিক্ষকদের ভূমিকা থাকে নির্দেশনামূলক, কতৃত্ববোধ থেকে উৎসারিত।
-মূল্যায়ন করা হয়, পরীক্ষার মাধ্যমে।
-জ্ঞানকে স্থির বা অবিচল গণ্য করা হয়।
-শিক্ষার্থীরা প্রধানতঃ একাকী কাজ করে।
- শিক্ষাক্রমকে বৃহত ধারণা হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয়, সমগ্রক দিয়ে শুরু হয় না এবং অংশ বিশেষকে বিস্তরণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
-শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নকরণ এবং তাদের আগ্রহকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
-উপকরণের প্রাথমিক উৎস এবং মূল উপকরণও উপরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-শিখণ-শেখানো চলে আন্তক্রিয়া ভিত্তিক; শিক্ষার্থীরা এর মধ্যে যা শিখেছে, তার ওপর ভিত্তি করে।
-শিক্ষকগণ, শিক্ষার্থীদের সাথে সংলাপে লিপ্ত হন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞানকে কাঠামোগত রূপ দিতে শিক্ষকদের সহায়তা নেয়।
-শিক্ষকের ভূমিকা থাকে আন্তক্রিয়ামূলক, ভিত্তি থাকে আলোচনা-সমালোচনামূলক।
-শিক্ষার্থীদের কাজ, পর্যবেক্ষণ এবং তাদের মতামত ও পরীক্ষা বা মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকে। শিখণফল অর্জনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াও গুরুত্ব পায়।
-জ্ঞানকে গতিশীল অভিজ্ঞতার সাথে পরিবর্তমান মনে করা হয়।
-শিক্ষার্থীরা প্রধানত দলীয়ভাবে কাজ করে।


শ্রেণিকক্ষে কন্স্ট্রাক্টিভিজম-এর ভূমিকা: হতে পারে বর্তমানে ব্যবহৃত বা জনপ্রিয় অনেক কৌশল শ্রেণি শিখণ-শেখানোতে প্রয়োগ হচ্ছে, যা অনেকটা কন্স্ট্রাক্টিভিজমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাঠামোবদ্দকরণ তত্ত্বে শিক্ষকগণ প্রশ্ন করেন এবং সমস্যা তুলে ধরেণ। অতপর শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজেদের উত্তর বা সমাধান পেতে সহায়তা করে থাকেন। শিক্ষাদান বা পাঠদান প্রক্রিয়ায় তাঁরা অনেক কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। যেমন-হতে পারে তাঁরা নি্ন্মোক্ত প্রক্রিয়া মেনে চলেন।
-শিক্ষার্থীদেরকে তাদের ‍নিজস্ব প্রশ্ন বা অনুসন্ধান পন্থা বের করে নিতে বলেন।
-শিখণ-শেখানো চলাকালে বিষয়বস্তু বা শিখণফলের বহুমুখি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার সুযোগ করে দেয়া হয়।
-দলীয় কাজে উৎসাহিত করা হয় এবং সহযোগিতামূলক শিখণ-শেখানো পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া হয়।
কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শ্রেণিকক্ষ্যর শিখণ-শেখঅনো বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১.কন্স্ট্রাক্টেড বা কাঠামোবদ্ধ হবে: শিক্ষার্থীরা খালিপাত্রের ন্যায় হবে না, যাতে জ্ঞান বিতরণ করে ভর্তি করে দেয়া হবে। তারা ইতোমধ্যে অর্জিত জ্ঞান, ধারণা ও বোধগম্যতা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে থাকে। তাদের পূর্ব জ্ঞান নতুন জ্ঞান সৃস্টিতে কাঁচা মালের ন্যায়। যেমন-একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রেণিতে একটি সমস্যা উপস্থাপন করে কোন ফুলের রং চিহ্নিত করতে বা দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে দেবেন। তিনি নিজে ধারণা না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে সুযোগ করে দেবেন। এবং নিজস্ব উপায়ে সমস্যা সমাধান করতে দেবেন। কোন শিক্ষার্থী একাশ করবে যে, ডাক্তার বলেছে, সে ৪ ফুট দীর্ঘ। অন্যজন বলবে, ঘোড়াকে হাত দিয়ে মাপা হয়। শিক্ষার্থীরা এভাবে তাদের জানা বা শোনা অন্যান্য পদ্ধতিগুলো প্রকাশ করবে। আর শিক্ষেকের উত্থাপিত প্রশ্নটি সমাধানে সিদ্ধান্ত নিবে।
২.এক্টিভ বাসক্রিয় খাকা: শিক্ষার্থীরা এমন হবে যে, যারা নিজেরাই নিজেদের নতুন নতুন বোধগম্যতা সুজন করে নেবে। শিক্ষক পশিক্ষণ দেন, সংশোধন করেন, পরামর্শ দেন, কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা করতে, প্রশ্ন করতে, চেষ্টা করেন, পারেন না, এমন সব কাজ করতে শিক্ষকগণ সুযোগ করে দেন। শিখণ-শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি অংশগ্রহণ প্রয়োজন হয়। শিখণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্তপূর্ণ অংশ হলো, তাদের কার্যক্রমের প্রতিফলন ঘটানো ও কথা বলা। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য ও উপায় ঠিক করে নেয়।
৩.প্রতিফলণমূলক: শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের শিখণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, এবং তারা তা করে তাদের অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে এগিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এমন পরিস্থিতি সৃস্টি করতে সহায়তা করে থাকে, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রশ্নকরণে নিরাপত্তা বোধ করে এবং তাদের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটায়; এককভাবে ও দলীয়ভাবে। শিক্ষকেরও উচিত এমন কার্যক্রম সৃজন করা, যা শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পূর্বজ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় প্রতিফলন ঘটায়।শিক্ষার্থীদের শিখণ নিয়ে আলোচনা করা এবং তা তারা কীভাবে শিখেছে সেটা সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ।
৪.কোলাবোরেটিভ বা সহযোগিতামূলক পরিস্থিতি: কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সহযোগিতামূলক মনোভাবের ওপর ভিত্তিশীল।সহযোগিতামূলক মনোভাব শিখনে ভূমিকা পালনের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট পদ্ধতিতে এটার ব্যবহারের প্রধান কারণ হলো, এখানে শিক্ষার্থীরা যখন পর্যালোচনা করে এবং শিখণ প্রকিয়ায় একত্রে তার প্রতিফলন ঘটায়, তাদের কৌশল এবং পদ্দতি একে অপরের সহায়তায় বের করে নিতে পারে।
৫.ইন্কুয়ারি বা অনুসন্ধানমূলক শিখণ: কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শিখণ কার্যক্রমে প্রধান লক্ষ্য হবে, সমস্যা সমাধান করা। শিক্ষার্থীরা অনুসন্ধান পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে প্রশ্ন করতে, কোন বিষয়বস্তু তদন্ত করতে এবং কোন সমস্যার সমাধান ও উত্তর পেতে বিবিধ উপকরণ প্রয়োগ করে থাকে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু বিষয়বস্তু বা শিখণ অনুসন্ধান করে, তারা সিদ্ধান্তে উপণীত হয়, আর যেহেতু অনুসন্ধান অব্যাহত থাকে, তার প্রাপ্ত সমাধানগুলো আবার পুণরালোচনার সুযোগ আসে। প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে গিয়ে এতে অধিক প্রশ্নের উদ্রেক হয় এবং আরও শিখণ হয়।
৬.ইভল্বিং বা শিখণকে সুদৃঢ়করণ: নতুন অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করার সময়, শিক্ষার্থীদের এমন ধারণা হতে পারে যে, যা শিখেছে তা অকার্যকর, অশুদ্ধ বা অপর্যাপ্ত। জ্ঞানকে সমন্বয় করতে এসব ধারণা অস্থায়ী পদক্ষেপ। দৃস্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়, একটি শিশু বিশ্বাস করতে পারে যে, সকল বৃক্ষের পাতা শীতকালে ঝরে পড়ে। যতক্ষণ না, সে দেখে পত্র-পলল্লবে চির সবুজ অন্য একটি বৃক্ষ। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শিক্ষকগণকে শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান ধারণাকে ও জ্ঞানের ভিত্তিতে তা বিবেচনায় নেয়া হয়।

কোন শিক্ষার্থী নতুন তথ্য পেলে কী ঘটে? কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট তত্ত্বে বলা হয় যে, শিক্ষার্থী প্রাপ্ত তথ্যকে ইতোমধ্যে অর্জিত জ্ঞান ও বোধগম্যতার সাথে তুলনা করে নেবে। আর এতে নিন্মের পরিস্থিতির যে কোনটা ঘটতে পারে।
-নতুন তথ্য তার পূর্বে অর্জিত জ্ঞানের সাথে বেশ সামঞ্জ্যস্যপূর্ণ হতে পারে। তাই শিক্ষার্থী তার বোধগম্যতায় তা সংযুক্ত করে নিতে পারে। এতে আরও কাজের প্রয়োজন হতে পারে।
-নতুন প্রাপ্ত তথ্যটি তার পূর্বজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। শিক্ষার্থী তার পূর্ব বোধগম্যতাকে পরিহার করে নতুনটি প্রয়োগ করে নিতে পারে।  একাজটি কঠিনতম হতে পারে।
-নতুন তথ্যটি পূর্বজ্ঞানের সাথে নাও মিলে যেতে পারে এবং অবহেলিত হতে পারে। কিছুটা সংশোধন করে নিয়ে শিক্ষার্থী তা গ্রহণ নাও করতে পারে। অথবা সে তথ্যটি পাশেই থাকতে পারে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী তা পরে গ্রহণ করতেও পারে।
কনস্ট্রাক্টিজম বা কাঠামোবদ্ধকরণ তত্ত্বের উপকারিতাসমূহ:
-শিশুরা অনেক বেশি শিখে এবং তারা সক্রিয়ভাবে শিখণ-শেখানোতে লিপ্ত হয় বিধায় শিখণকে অধিক উপভোগ করে থাকে, যা তারা পরোক্ষ শিখণে পারে না।
-শিখণ তখনই সবচেয়ে ভাল হয়, যখন এতে চিন্তন ও বোধগম্যতার ওপর মনোনিবেশ করা হয়। কন্সট্রাক্টিভিজমে কীভাবে চিন্তা করতে হয় ও বোধগম্যতা অর্জন করতে হয়, তা শিখনের ওপর মনোনিবেশ করে।
-কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শিখণ স্থানান্তরযোগ্য। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা সংগঠিত নীতিমালা সৃজন করে থাকে, যা তাদেরকে অন্যান্য শিখণ ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যায়।
-কন্স্ট্রাক্টিজিম শিক্ষার্থীদেরকে তাদের শিখনের মালিকানাবোধ জাগ্রত করে। যেহেতু শিখণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্নমালা ও অনুসন্ধান এবং প্রায়ই শিক্ষার্থীরা মূল্যায়নেও ভূমিকা পালন করে থাকে। কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোগ গ্রহণে নিয়োজিত করে থাকে এবং তাদের জার্ণাল তৈরি, গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি, দৈহিক মডেল তৈরি এবং উপস্থাপনে ব্যক্তিগতভাবে নিয়োজিত করা হয় এবং তাদের শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব করে। শিক্ষার্থীরা সহজাত সৃস্টিশীলতা নিয়ে বিবিধ উপায়ে তাদের অর্জিত জ্ঞান প্রকাশে তাদের সামর্থ্যের বহিপ্রকাশ ঘটায়।

-একটি নির্ভরযোগ্য, বাস্তবভিত্তিক বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কনস্ট্রাক্টিভিস্ট শিক্ষার্থীদেরকে একাত্ন করে এবং কার্যক্রমে নিয়োজিত করে। কনস্ট্রাক্টিভিস্ট শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে এবং বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে শিখে।
-কন্সট্রাক্টিভিজম তত্ত্ব শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশ ঘটায়, এমন এক শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ সৃস্টি করার মাধ্যমে যাতে সহযোগিতামূলক মনোভাব ও ধারণা বিনিময়ের ওপর জোর দিয়ে থাকে। শিক্ষপার্থীদের অবশ্যই তাদের ভানাকে সুস্পষ্টভাবে সুসংহত করতে জানতে হবে এবং দলীয় কাজের অংশিদারদের মাধ্যমে কার্যক্রমকে সফলভাবে সহযোগিতা করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই তাদের ধারণাসমূহ বিনিময় এবং প্রকাশ করতে পারতে হবে। অতএব, অবশ্যই সংলাপে নিয়োজিত হতে শিখতে হবে এবং গ্রহণযোগ্যতার সাথে অবদান রাখতে শিখতে হবে। এটা বাস্তব জীবনে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।


উপসংহার: উপরে বহুল আলোচিত ও অনুসৃত কনস্ট্রাক্টিভিজম শিখণ ত্ত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাঁ পিঁয়াজে এবং জন ডিউইসহ প্রখ্যাত সব শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীগণের শিখণ তত্ত্বগুলো বিশ্বব্যাপী শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করা হয়ে আসছে। বর্তমানে শিক্ষক-কেন্দ্রিক শিখণ-শেখানোর পরিবর্তে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক পদ্ধতি সর্বত্র অনুসৃত হচ্ছে।আর কন্স্ট্রাক্টিভিস্ট তত্ত্বে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিখণকে মূলত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই, এ পদ্ধতি প্রাথমিক স্তরে কর্মরত শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ, ডিপি-এড প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কোর্সে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছ।শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীগণের শিখণ তত্ত্বগুলো নিয়ে ইতোপূর্বে আমি কয়েকটি নিবন্ধ রচনা করেছি। যেমন-বেঞ্জামিন ব্লুম, হাওয়ার্ড গার্ডনার, ইবনে সিনা প্রভৃতি।বর্তমান নিবন্ধটি পড়ে সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন বলে মনে করি। 

বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৫

Adhinath GPS of Moheshkhali: A School named after a famous Shrine

Adhinath GPS and Teachers
Dated: 07/12/2014
Adhinath Government Primary School is well-known to all, who knows Moheshkhali and comes to visit here. We all know that there is a famous Shrine of Hindu Religion believer here at Moheshkhali of Coxsbazar. This is one of the temples, most popular throughout the Indian sub-continent. A large number of Hindus as well as visitors of different religion believers come to visit here and bow their deep respect, honor,  say prayer etc here. Every year there is hosted a fair named `Shiva Chaturdoshi Mela’ known as `Adhinath Mela’ and thousands of devotees and general people gather here to show their respect and pray, specially. The fair turns into a huge gathering and the visitors can buy various attractive and rare things. The visitors enjoy the surrounding scenes of the prayer hall and the special Naval Jetty of it, which was built with the assistance of Nepalese Government.  The Adhinath Temple was built at the top of Moheshkhali Moinak Valley. Moheshkhali is named after the Hindu God Moheshar, whose another name is Shiva. Also it’s named as Adhinath and the Shrine is named after the God Shiva. An aristocratic landlord, late Nur Mohammad Sikder of Chuta Moheshkhali Union had a famous cow, which used to give milk daily by itself without  a calf. The cow used to go to the valley and keep her standing at the Temple spot everyday. There she gived milk automatically and it was seen by the cowboy who was appointed by the famous land lord late Sikder. One night, he saw a dream that he had to establish a Hindu temple and it would be named Adhinath on the Moinak Valley. I have mentioned here a brief history of the Adhinath Temple, while writing on Adhinath Government Primary School and it`s teachers as well as it`s performances; because there is a close relationship between the school and the temple as they are named as same. The school has become famous for being near by the temple and as the name is same one.  High Profile visitors of the Ministry of the Primary and Mass Education and the Directorate of Primary Education, who come to Cox`sbazar and Moheshkhali, they would like to visit the Adhinath Government Primary School, usually, while they were visiting the Temple. Ms. Purnima Rani Dey is the head teacher of the school. The school has a strong team of teachers and they have been working hard, having utmost sincerity. The name of the other working teachers are; 1. Monju Rani Das, 2. Sajeda Yeasmin, 3. Tapan Kanti Dey, 4. Pijush Paul, 5. Shambhu Charan Dey, 6. Anwara Begum and 7. Md Hefajuddin. Among the teachers Mr. Tapan Kanti Dey is my focus of the topic today. He is a good teacher as well as highly qualified one. He is an M.sc in Botany from Chittagong Government College. He had also completed his professional teaching course, C-in-ed. He is a subject trainer for teachers, too. His subject is Mathematics. He can teach the students well, can train the teachers with expertise in almost all subjects taught at primary school level. He knows a lot about many subjects; like primary curriculum, characteristics of subjects taught at primary schools, supplementary reading materials, teaching materials, new concepts and so on, but he is not good at technology based teaching-learning methods. He is accused to be, not being active and utilizing his utmost honesty in performing his duties and responsibilities at the school. The head teacher of the school Ms. Purnima Rani  Dey should be more adept in Maintaining school records and registers, having more managerial capacity and leadership skills. She must master the art of leading and controlling her teachers with iron-handedly and think out how to make the school works well. In the very beginning of the coming year, she should make a SMART plan and act accordingly. The school, at which has a teacher like Tapan Kanti Dey, but it can’t speak; isn’t acceptable.         


Cometency based Primary Primary Education

যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা ও মূল্যায়নঃ
একটি পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবতার চিত্র
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিখন ফল অর্জন নিশ্চিত করার জন্য যোগ্যতা ভিত্তিক শিখন-শেখানো পদ্ধতি একটি বিশাল উদ্যোগ। যেহেতু এ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও নিজস্বতার বহি:প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ থাকে এবং শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে সহায়ক ও বাস্তবসম্মত, তাই সবার জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন, উন্নত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে এটি একটি অন্যতম কার্যকর উদ্যোগ। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের সাফল্যে প্রতিফলন ঘটবে। যোগ্যতা ভিত্তিক শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের ও সমাজে তারা কী শিখে এবং কী করবে; তার আচরণিক এবং প্রত্যাশার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মানসম্মত শিখনে নিন্মোক্ত দিকগুলো বিবেচনা করা হয়; যেমন- পঠন-পাঠন ও গাণিতিক জ্ঞান, জীবন দক্ষতা, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক দক্ষতা প্রভৃতি। যেহেতু, যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের সর্বক্ষেত্রে, (যেমন- পাঠ্য বই, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন); প্রতিফলিত হবে, এটা নির্ধারণ করা প্রয়োজন যে, একজন শিক্ষার্থী প্রতি শ্রেণিতে এবং প্রাথমিক শিক্ষা চক্র সমাপনান্তে কি যোগ্যতা অর্জন করবে। তাই যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা; শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শ্রেণি ভিত্তিক যোগ্যতার ওপর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে নিতে হবে। অধিকন্তু, শিক্ষার্থীদের শিখন ফল মূল্যায়ন করতে হবে অর্জিত যোগ্যতার ভিত্তিতে। অতএব, শিক্ষকদেরকে এ জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে এবং শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বর্তমান প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে যোগ্যতা ভিত্তিক শ্রেণি পাঠদান, শিখন ফল অর্জন করানো এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার আলোকে পরিবর্তন সাধন করতে হবে।
যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা: সাধারণভাবে যোগ্যতা বলতে কোন বিশেষ কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য কারও প্রয়োজনীয় মানসম্মত সামর্থ্যকে বুঝায়। শিক্ষাগত যোগ্যতার উদ্দেশ্য হলো; মানব সন্তানের বিশেষ দক্ষতা অর্জন। এটা আসলে, জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত রূপ। আশা করা যায় যে, শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি; পড়া, লেখা, হিসাব কষা, চিন্তা, সংশ্লেষণ, বিশ্লেষণ, শোনা, উপস্থাপন করা, নির্দেশনা দান, মূল্যায়ন, তুলানাকরণ, প্রয়োগ ক্ষমতায় প্রতিফলন ঘটবে। যোগ্যতাগুলো অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে ব্যবস্থা থাকবে। যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গহুলো হলো; প্রান্তিক ও শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগি যোগ্যতাসমূহ্। প্রত্যেক শিক্ষা স্তরের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল থাকে। বাংলাদেশে ৫ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা স্তর চালু রয়েছে। এ ৫ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যেগুলোকে বলা হয়, আবশ্যকীয শিখনক্রম।এ পাঁচ বছরের শিক্ষা গ্রহনকালীন সময়ে একজন শিক্ষার্থী কি শিখবে, তা সুনির্দিষ্ট। আর এগুলো হলো, প্রান্তিক যোগ্যতা, যেমন- একটি শিক্ষার্থী গল্প পড়তে পারেবে, এটি একটি প্রান্তিক যোগ্যতা। একইভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী সাধারণ বাক্য পড়তে পারবে। এগুলো পদ্ধতিগতভাবে হতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এসব প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। তারা প্রথম শ্রেণিতে কিছু যোগ্যতা অর্জন করবে, দ্বিতীয় শ্রেণিতে আরও কিছু যোগ্যতা অর্জন করবে এবং অনুরূপভাবে ৫ম শ্রেণি শেষে ২৯ টি নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতার সবগুলো অর্জন করবে।পাঁচ বছরের প্রাথমিক সশিক্ষা সমাপন করে শিক্ষার্থীরা যে সকল যোগ্যতা অর্জন করবে, সেগুলোকে প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা বলে অভিহিত করা হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে এবং সেগুলোকে বলা হয় শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগি যোগ্যতা।
যোগ্যতার বৈশিষ্ট্যসমূহ: যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।এক কথায় এটাকে সহজ করে ইংরেজি SMART শব্দের মাধ্যমে ব্যাখা করা যেতে পারে। অর্থাৎ
S-Specific, M-Measurable, A-Achievable, R-Realistic, T-Time bound।
১. স্পেসিফিক বা সুনির্দিষ্ট: একটা পাঠ হতে শিক্ষার্থী কী শিখবে, তা সুস্পষ্ট হবে। যেমন- কীটনাশক ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব শিক্ষার্থীরা শিখবে।
২. মিজারেবল বা পরিমাপযোগ্য: সকল যোগ্যতা পরিমাপযোগ্য হবে। যেমন- শিক্ষার্থীরা নারীর আইনগত অধিকারের ৩ টি ধারা শিখবে।

৩. এচিভেবল বা অর্জনযোগ্য: সকল যোগ্যতা অর্জনযোগ্য হবে। যেমন- শিক্ষার্থীরা সেতু নির্মাণের ১০ টি উপাদানের নাম বলতে পারবে। আর যদি বলা হয়, শিক্ষার্থীরা একটি সেতু নির্মাণ করবে, তবে তা অর্জনযোগ্য হবে না।
৪.রিয়েলিস্টিক বা বাস্তধর্মী হবে: সকল যোগ্যতা হবে বাস্তবধর্মী। যেমন- শিক্ষার্থীরা সত্য কথা বলার ১০ টি উপকারিতা বলতে পারবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জীবনব্যাপী শিথ্যা কথা বলবে না, এমনটা হলে, তা বাস্তবধর্মী হবে না।
. টাইম-বাউন্ড বা সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে: যোগ্যতা অর্জনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে।
যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে, শিক্ষকদেরকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে এবং শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে মূল্যায়ন করতে হবে।তাই, প্রাথমিক শিক্ষায় বর্তমানে অনুসৃত কিছু বিষয়ে পরিবর্তন সাধন করতে হবে। সুতরাং শ্রেণি কক্ষে যোগ্যতা ভিত্তিক পদ্ধতিতে পাঠদান করতে এবং শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়ন করতে এ যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে বা উপযোগি করে নিতে হবে। এখানে যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দান এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে এ নিবন্ধে আলোকপাত করা হলো।
যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ: মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষকগণ হলেন, মূল চালিকাশক্তি।  শিক্ষকদের কাজ হলো, পাঠ্য বই হতে জ্ঞান বিস্তরণ এবং শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখণ ফলের মাত্রা যাচাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করা। শিক্ষকদের কার্যকর শিখন-শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে; যেমন- শিক্ষকদের পাঠদানের মান, যার দ্বারা শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা চিহ্নিত করতে পারেন কিনা, পূর্ব জ্ঞান, বিভিন্ন শিখণ মাত্রা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও আচরণগতভাবে উদ্বুদ্ধকরণ এবং কৌতূহল জাগ্রতকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিস্থিতি, উপকরণ ব্যবহার, সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদেরকে শিখনে নিয়োজিত রাখা। শিক্ষকতা; সাফলের সাথে করতে হলে শিক্ষকদের জন্য চাকুরিপূর্ব এবং চাকুরিকালীন প্রশিক্ষণ গ্রহন অপরিহার্য। চাকুরি পূর্ব শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হবে, শিক্ষাক্রম, এর লক্ষ্য, পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন কৌশল সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। তাছাড়া, শিক্ষকগণ আরও জানবেন, শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কৌশলসমূহ এবং চাকুরি পূর্ব প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে শিক্ষকগণ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুযোগ পাবেন। চাকুরিকালীন পেশাগত প্রশিক্ষণে শিক্ষকগণ; তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ পাবেন ও পাঠদানকালে সাধারণত তাঁরা যেসব সমস্যা মোকাবেলা করেন, তা জানবেন। বর্তমানে শিক্ষকদের পাঠদানকালে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়; যথা- পাঠ্য বই কেন্দ্রিক, পরোক্ষ এবং বক্তৃতা পদ্ধতিতে শিক্ষাদান, দুর্বল উপস্থাপনা, অনমনীয়তা, অতি তাত্ত্বিক আলোচনা, শিক্ষাক্রম ও বাস্তব পাঠদানের মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থতা। আরও উল্লেখ্য যে, চাকুরিপূর্ব প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেয়ে তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দেয়া হয়, বেশি।আর শিক্ষকদের কার্যকর ও উদ্ভাবনী আচরণের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রকৃত চাহিদার মাঝে গ্যাপ থেকে যায়। শিক্ষকদের চাকুরিপূর্ব এবং চাকুরীকালীন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এমনভাবে সাজাতে হবে যে, শিক্ষকগণ যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ও পদ্ধতিগুলো বুঝতে সক্ষম হবেন। তাদেরকে শ্রেণি ভিত্তিক অর্জন উপযোগি যোগ্যতা এবং প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ বুঝতে সক্ষম হতে হবে। পাঠ উপস্থাপনের সময় তাদেরকে পাঠের শিখণ ফল সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাদেরকে শিক্ষার্থীদের পূর্বে অর্জিত যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষার জন্য মূল্যায়ন প্রক্রিয়া: কার্যকর যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগি যোগ্যতাকে বিবেচনায় রাখতে হয়, তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিয়মিত মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। শিকর্থীদের মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হবে, তাদের যোগ্যতা অর্জনকে যাচাই করা। যেমন- এ যোগ্যতা ভিত্তিক মূলল্যায়ন প্রক্রিয়ায় একটি পাঠ্যাংশ পড়ে অনুরূপ পঠন-পাঠন সংবলিত বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দানে সক্ষম হবে, শিক্ষার্থীরা। এতে মুখস্থকরণকে নিরুৎসহিত করা হয় এবং শুধু জ্ঞানমূলক প্রশ্ন করা হয় না।
যোগ্যতা বিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিবন্ধকতাসমূহ: যোগ্যতা ভিত্তিক পাঠদান ও মূল্যায়ন/পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ নিন্মোক্ত সমস্যসমূহ মোকাবেলা করে থাকেন।
.         ১.যেহেতু এটি একটি নতুন পদ্ধতি; যোগ্যতা ভিত্তিক শিখণ-শেখানোর ধারণাটি আত্নস্থ করে নিতে বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। শিক্ষকগণকে পাঠের উদ্দেশ্য ও শিখণ ফলকে সুনির্দিষ্ট করে নিতে হবে। পূর্বের ন্যায় বক্তৃতা পদ্ধতিতে পাঠদানের পরিবর্তে পাঠ্য বিষয়বস্তুর আলোকে পাঠদান করতে হবে।
.         ২. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। যোগ্যতা ভিত্তিক পদ্ধতিকে এসব কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে এবং শিক্ষকদেরকে সেভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর বেশ কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা অনেক পূর্বে পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন, তাঁরা এসব ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচিত নন।
.         ৩. যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষায় চিরাচরিত মূল্যায়ন বা পরীক্ষা গ্রহন পদ্ধতি হতে যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা ভিন্নধর্মী।। সহজাতভাবেই, অনেক দেশেই মুখস্থকরণ বা মুখস্থ করে পরীক্ষা দেয়ার পদ্ধতি প্রচলন ছিল।কাজেই, যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতিতে মুখস্থকরণ ও শুধু জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিকে অনুমোদন করা হয় না। এতে বরং যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেয়া হয়। তাই, শিক্ষকদেরকে নতুন এ পদ্ধতি অনুশীলণের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে।
.         ৪. সকল শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে হলে, নিয়মিত রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন হয়, শ্রেণিভিত্কি অর্জন উপযোগি যোগ্যতাগুলো অর্জন করে ধাপে ধাপে অর্জন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আবার, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে বিরাট পার্থক্যও এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।

উপসংহার: প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে যোগ্যতা ভিত্তিক শিখণ-শেখানো এবং পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ে উপরে আলোচনা করাপ হয়েছে।বিষয়গুলো নিয়ে বিগত ৩/৪ বছর ধরে বেশ আলোচনা চলছে এবং শিক্ষকগণকে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষক এখনও বিষয়টি বুঝে ওঠতে পারছেন না। আসলে এটা একদিন/দুদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে  আয়ত্ত্ব করা সম্ভবপর হবে না। শিক্ষকদেরকে নিত্যই যোগ্যতা ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে পড়তে ও অনুশীলণ করতে হবে। ইতোপূর্বে বর্তমান নিবন্ধকার বেনজামিন ব্লুম এবং যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়ন এ শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আগ্রহী পাঠকগণ দু‘টি নিবন্ধ মিলিয়ে পড়লে বেশ উপকৃত হবেন।