বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

Is a Teacher Artist or thinks like so

শিক্ষকতা কী শিল্পকলা, না শিক্ষকতার
 কাজ একজন শিল্পীর মত ভাবা?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
                             মহেশখালী, কক্সবাজার।
শিল্পীর কাজ হলো, ভাবনা, রং ও তুলি দিয়ে ছবি এঁকে সেই ছবিতে সৌন্দর্য্য বা নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলা। আর শিক্ষকের কাজ হলো, একজন মানব শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হতে ভূমিকা রাখা। শিল্পী, তাঁর ভাবনাকে রং ও তুলি দিয়ে আঁকতে আঁকতে নতুন কিছু সৃজন করেন, চিত্র বা ছবি আঁকা-আঁকি করেন। আর শিক্ষক, কাদা মাটির জিনিষ তৈরির ন্যায় একজন মানব শিশুকে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, মানবিক, আবেগিক, নৈতিক, আধ্যাত্নিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন করে তাদের দেশাত্ববোধে, বিজ্ঞান মনস্কতায় এবং সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ করে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করেন।শিল্পী তাঁর সৃস্টির মাধ্যমে যে কারও ভাবনা ও নান্দনিক বোধের জগতকে পুলকিত করেন। আর শিক্ষক, মানব শিশুর সুপ্ত প্রতিভা ও মানবসুলভ সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলোকে সুশোভিত করে পরিপূর্ণ মানব হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন এবং এতে শ্রেষ্ঠ আনন্দ লাভ করেন। যাহোক, আমরা এখানে চিত্র শিল্পী এবং শিক্ষকের মধ্যকার মিল-অমিলগুলো অনুসন্ধান করার প্রয়াস চালাব।আর শিক্ষকগণ কীভাবে শিল্পীর মত হতে পারেন, তা নিরীক্ষা করা হবে।সভ্যতার আদিকাল হতে শিক্ষকতার কাজটি বিকশিত ও উন্নত হতে হতে অত্যাধুনিক রূপ লাভ করেছে। আজকের যুগের শিক্ষকগণ সভ্যতার কৃষি যুগ, শিল্পায়নের যুগ হতে উত্তরণ ঘটিয়ে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে শিক্ষকতা অত্যাধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে। শিক্ষকগণ এসব ভেবে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়েন। তাঁরা তাঁদের পূর্বসূরিদের শিখণ-শেখানো ও শিক্ষাদানের কথা মনে করলে বা ভাবলে, হয়ত হেসে ওঠবেন। আজকের যুগের শিক্ষকগণ যখন শ্রেণিতে পাঠদান করেন তথ্য-প্রযুক্তিত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে ও তা প্রয়োগ করে, সে মুহুর্তকে যদি আমরা ৫/১০ বছর পূর্বেকার সনাতন পাঠদানের কথা ভাবি, মনে হবে অভাবনীয় সব পরিবর্তন শিক্ষকতায় ঘটে গেছে। আর আজকের যুগের শিল্পীরা যদি আমাদের দেশের খ্যাদিমান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চোধুরী, মূর্তজা বশীরের মত শিল্পীর তুলি ও রং ব্যবহার করে ছবি এঁকে কীভাবে জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেনে, তা ভাবেন, তবে কূল-কিনারা খুঁজে পাবেন না। শিল্প জগতেও তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আঁকা-আঁকি কাজে অভাবনীয় অনেক কিছু ঘটে গেছে। বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকগণ হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন; তাঁরা কী শিল্পকলা শিখাবেন, না শিক্ষার্থীদেরকে শিল্পীর মত ভাবতে শিখাবেন? তাঁরা কী ইতিহাস শিখাবেন অথবা তাঁরা কী একজন ঐতিহাসিকের মত ভাবতে শি্খাবেন? যদি এমন জবাব হয় যে, একটি ছাড়া অন্যটি অপূর্ণ থেকে যাবে অথবা যদি সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া বা তা অনুসরণ করা হয়; তবে, কোনটাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে? একবিংশ শতকের শিক্ষকদের শিক্ষাদানে বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিখণ-শেখানো হতে শিক্ষাদান অভ্যস, প্রক্রিয়া এবং ভাবনার প্রয়োগমূলক পদ্ধতিতে পরিণত করার কথা ভাবা হচ্ছে। সাধারণত; শিক্ষকগণ একাডেমিক উচ্চতর যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। অতপর বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান কাজে লিপ্ত হন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পেশাগত দক্ষতা অর্জন এবং প্রত্যক্ষ কাজ করার মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক হয়ে ওঠেন। এভাবে কাজ করতে করতে শিক্ষকতায় পটু হতে থাকেন। হয়ে ওঠেন শিশুদের নিকট মডেল, শ্রদ্ধেয়, বিশ্বস্থ এবং সর্বোপরি মানুষ গড়ার দক্ষ কারিগর। যতদিন তিনি শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকবেন, ততদিন তিনি মানুষ তৈরি তথা মানব সম্পদ গড়ে তোলায় ভূমিকা পালন করে যাবেন। তিনি নিত্যই শ্রেণিতে সৃজনশীলতার বহি:প্রকাশ ঘটান। সুতরাং, তিনি একজন শিক্ষক ও শিল্পী। কিন্তু শিল্পীরা শুধু শিল্পীই হন, শিক্ষক হন না। হতে পারেন না।শিক্ষক হন, সক্রেটিসের মত, রবীন্দ্রনাথের মত অথবা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মত মানুষেরা।আর শিল্পীগণ হলেন, লিও নার্দো দ্যা ভিঞ্চি, ভেন গগ, বোদলেয়ার, জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসানের মত মানুষেরা। শিল্পীদের তিনটি অভ্যাস থাকে, সেগুলো হলো; তাঁরা বৈচিত্রতায় আনন্দ পান, নতুন ধারণার জন্ম দেন এবং বহু বিষয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে একক সত্তায় রূপ দেন। শিল্পী কাজ করেন, একা একা। তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে নিজ গুণে শিল্পী হয়ে ওঠেন। প্রকৃতি ‍ও পৃথিবীর যাবতীয় সৃস্টিকে তাঁদের আঁকা-আঁকির বিষয়বস্ততে পরিণত করেন। নিজস্ব ভাবনা ও সৃজন ক্ষমতা দিয়ে তাঁরা কোন সাধারণ বিষয়কে ছবিতে/চিত্রে অসাধারণত্বের রূপ দেন। মানুষ তা দেখে উপভোগ করেন, আনন্দ পান, শোরুমে-ড্রইংরুমে প্রদর্শন করেন ও সংরক্ষণ করেন। তাঁর কাজটি অনেকটা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর সে ছবি মোনালিসার ছবির মত যদি হয়, তবে তা অমর হয়ে রয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে তা উপভোগ করতে থাকে, মানুষ। কিন্তু শিক্ষক গড়েন মানুষ, যারা সব কিছুর নিয়ন্তা হয়, এ পৃথিবীতে। যারা একবার শিক্ষকের নিকট পড়তে যান, তারা হন, উন্নত মানব। আর সেই মানব নতুন নতুন মানব গড়েন। হন, দেশ-দুনিয়ার হর্তা-কর্তা। হন শিক্ষক। শিক্ষকতা ও শিল্পীর কাজ দু‘টিই মহৎ প্রচেষ্টা। শিল্পীর সৃষ্টিতে মানুষ আনন্দ পায় যেমন, শিখেও অনেক কিছু। শিক্ষকেরও একটি শিল্পবোধ এবং সৃজনসৃশীল মন থাকা চাই। সনাতন পদ্ধতির শিক্ষকতা বোধ হয় তেমন আনন্দদায়ক বা উপভোগ্য হয় না।তাই শিল্পীকেও একজন শিক্ষক বলা যায়। শিল্পী নান্দনিকতার শিক্ষক, আনন্দ-বিনোদন বিলানোর শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষক হলেন, মানব শিশুকে পূর্ণাঙ্গ ও নান্দনিক বোধ সম্পন্ন মানুষ তৈরি করেন। সে অর্থে বলা যায়, দু‘জনই শিক্ষক। আবার শিল্পী শিক্ষকের পরিপুরকও বটে। কারণ শিল্পীর অনেক সৃষ্টি শিক্ষকরে জন্য শিখণ-শেখানোর উপকরণ বা শিখণ-শেখানোর বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এগুলোর ব্যবহারে শিক্ষকের শেখানো এবং শিক্ষার্থীদের শিখণ ফলপ্রসূ হয়। অতএব, পরস্পরের নিকট হতে উভয়ের শেখার আছে।

পরিশেষে বলতে হয়, শিক্ষককে শিল্পীর মত হতে সচেষ্ট থাকতে হবে। আবার শিল্পীর মনে শিক্ষকসুলভ ভাবনাও স্থান পাবে। এটাই প্রত্যাশিত।                                                    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন