ভাল শিক্ষকের ২৫ টি অনুসরণীয় কৌশল
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
কোন শিক্ষার্থীকে যদি প্রশ্ন করা হয়;
বিদ্যালয়ের কোন জিনিষটি তার শিখনে সাফল্য বয়ে আনে? সম্ভবত এর উত্তর হবে না যে, কোন
ভাল বই বা ভিডিও বক্তৃতা। খুব সম্ভবত, এ প্রশ্নের উত্তর হবে, গিয়াস স্যার বা তপন
স্যার। শিক্ষার্থীরা কোন শিক্ষক কতৃক উত্তম পাঠদান বা শিখানোর পদ্ধতিকেই তাদের
সবচেয়ে পছন্দনীয় মনে করে। বই বা ভিডিও দেখানোকে সহায়ক ও আনন্দদায়ক জিনিষ হিসেবেই
বিবেচনা করে, তারা। যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে আদর-যত্ন-দরদ দিয়ে এবং অনুপ্রেরণা
যুগিয়ে শিখন ফল অর্জনে ভূমিকা পালন করে থাকেন, তিনিই তাদের নিকট সবচেয়ে বেশি
উপকারি মনে হয়।তবে, সফলভাবে পাঠ উপস্থান করে তোলার বিষয়টি পরিমাপ করা কঠিন
ব্যাপার। বিশ্বব্যাপী শিক্ষাবিদ, শিক্ষক সকলেই শিখনের পরিমাণ নির্ধারণের প্রক্রিয়া
অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন। অবশ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, শিক্ষকগণ কী
শিক্ষার্থীদের নিকটে পৌঁছতে পারছেন? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, নিন্মোক্ত ২৫
টি সফল শিক্ষকের কৌশল অবলম্বনকে কেন্দ্র করে।
১.সফল শিক্ষকের
সুস্পষ্ঠ উদ্দেশ্য থাকবে; গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় চালক সঠিক দিকে যাচ্ছে কিনা, সে কীভাবে
বুঝবে? এক্ষেত্রে চালক সড়ক সংকেত বা ম্যাপ ব্যবহার করে থাকে। বর্তমান শিক্ষা জগতে
শিক্ষকের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যই শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। শিক্ষকের
পরিকল্পনা হবে, গাড়ি চালকের ম্যাপ ব্যবহারের মত। পাঠদান পরিকল্পনা অনুসরণে
শিক্ষকের সৃজনশীলতায় ঘাটতি থকে না, বরং শিক্ষকের অনুশীলণ এবটি কাঠামোহত রূপ নেয়,
যা কোন একটি বিষয় শিখনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২.সফল শিক্ষকের
লক্ষ্যানভূতি থাকে:
শিক্ষক সব সময় ভাল করে পাঠদান করবেন, এমন নয়। কখনও কখনও জীবন বিরক্তিকর ও
নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে, অনেকটা। শিক্ষকগণের মধ্যে এমন এক লক্ষ্য বোধ থাকে যা তাকে
বিরক্তিকর বা ক্লান্তিকর দিনেও সতেজ করে রাখতে ও
ভূমিকা রেখে যেতে প্রেরণা যোগায়।
৩.সফল শিক্ষকগণ
তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক না দিয়েও, পাঠদানকে জীবন্ত করে তুলতে পারেন: শিক্ষার্থীদের শিখন অতৃপ্তি রেখে
শ্রেণিকক্ষ হতে বেরিয়ে পড়ার মত শিক্ষকের জন্য মন্দ কাজ আর হতে পারে না। শতভাগ উজাড়
করে শেখানো ও শিখন ফল অর্জিত হওয়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিক বুঝা কঠিন। যেসব শিক্ষক
তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে চান, তাঁরা হতাশ ও ভেঙ্গে পড়বেন। শিখন, সম্পর্ক ও শিক্ষার
কাজগুলো হলো; বাগান পরিচর্যা করার মত। এতে সময় প্রয়োজন হয়ে এবং পিচ্ছিল পথে হেঁটে
সফলতা বয়ে আনতে হয়।
৪.সফল শিক্ষ জানেন,
কখন শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে হয়, আর কখন না শুনতে হয়: শিক্ষার্থীদের শিখন সহায়ক তথ্য
দেয়ার ক্ষেত্রে বা ফিডব্যাক দেয়া যখন শিক্ষক যথার্থ মনে করবেন, তখনই দেবেন। যে
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কথা কখনও শুনেন না বা বুঝেন না, তিনি নি:সন্দেহে ব্যর্থ
হবেন। আবার যে শিক্ষক সব সময় শিক্ষার্থীদের কথা শুনেন, তিনিও ব্যর্থ হবেন।
শিক্ষার্থীর কথা শুনবেন এবং মানবেন, শিক্ষকের জন্য এটা কোন সরল ব্যাপার নয়। কারণ
শিক্ষকই জানেন, কখন কী করতে হবে এবং তিনিই ঠিক করবেন শেষ পরিণতি।
৫.সফল শিক্ষকের থাকবে
ইবাচক দৃষ্টিভঙ্গি:
নেতিবাচক প্রচেষ্টা সৃজনশীলতার জন্য প্রতিবন্ধক এবং এটা ব্যর্থতার বীজ বপন করে
দেয়। ভাল শিক্ষকের থাকে স্বতস্ফূর্ততা, গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি এবং শক্তি। আর
লক্ষ্যে পৌঁছানোর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকেন, তাঁরা। ইতিবাচকতা সৃজনশীলতা বয়ে
আনে।
৬.সফল শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের
সাফল্য প্রত্যাশী হবেন:
প্রত্যেক বাবা-মা যেমন সন্তানের সাফল্য কামনা করেন, শিক্ষকগণও তাই করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন এমন শিক্ষক যাঁকে তারা বিশ্বাস করতে পারে। তাদের দরকার
অধিকতর জ্ঞানী ও বয়সে বড় এমন ব্যক্তি, যিনি তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে
সামর্থ্যবান।তাদের সামনে কোন বিষয়কে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে শিক্ষককে, এবং শিখনের
এমন এক পরিবেশও তিনিই সৃষ্টি করবেন, যাতে তারা ব্যর্থ না হয়। এতে শিক্ষার্থীরা
তাদের শিখন ফল অর্জনে যা শিক্ষক কতৃক ঠিক করে দেয়া হয়েছে, তাতে তারা অব্যাহত
চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
৭.সফল শিক্ষক হবেন,
রসিক জন: রস বোধ
এবং বুদ্ধিদীপ্ত আনন্দ দানে শিক্ষার্থীদের চাপ বোধ এবং হতাশা কেটে যায়। আর
শিক্ষার্থীরা নতুন বা জটিল কোন বিষয়ের প্রতি মনোবিশবেশ করার অনুপ্রেরণা পায়। সহস্র
ছাত্র/ছাত্রীকে প্রশ্ন করা হলে, তাদের ৯৫ শতাংশই উত্তর হবে, রসবোধ ও বুদ্ধিদীপ্ত
আনন্দ দানে সক্ষম এমন শিক্ষককেই তারা বেশি পছন্দ করবে।
৮.সফল শিক্ষক,
শিক্ষার্থীদের কাজের অকৃত্রিম প্রশংসা করবেন: শিক্ষার্থীরা প্রশংসা চায়, সত্যিকারের প্রশংসা। যেসব
শিক্ষার্থী ৫০ ভাগ শিখে, তাদের প্রশংসা করলে, তেমন উপকার বয়ে আনে না, শিক্ষক চান
না, এমন কোন পরিবেশ সৃস্টি হোক, যেখানে কোন স্বীকৃতি প্রশংসা থাকবে না।তিনি চাইবেন,
এমন কিছু, যাতে ন্যায্যতই শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করা যায়।
৯.সফল শিক্ষক জানেন,
কীভাবে ঝুঁকি নিতে হয়:
সফল শিক্ষক জানবেন, তিনি যতদূর প্রয়োজন ততদূর যেতে, যখন প্রয়োজন হবে। সাফল্য পেতে
হলে, ঝুঁকি নিতে হবে, এটা একটি প্রচলিত প্রবাদ বাক্যও বটে। শিক্ষার্থীরা বুঝবে যে,
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে নতুন কিছু করতে হবে, আর শিক্ষার্থীরা নিবীডভাবে দেখতে পাবে
যে, শিক্ষক কীভাবে ঝুঁকি নিয়ে ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠতে পারেন। এটা শিক্ষকের
শিখন-শেখানোর মতই গুরুত্বপূর্ণ।
১০.সফল শিক্ষক
আত্নপ্রত্যয়ী হবেন:
আত্নপ্রত্যয়ী অর্থ; কোন প্রতিবন্ধকতা আসলে, ঘাবড়ে যাওয়া নয়। আত্নপ্রত্যয় বলতে
বুঝাবে, শিক্ষক যা বলবেন, করবেন, অভিব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে শিক্ষকের নীতি
পরিবর্তন হবে না। আর, শিক্ষার্থীরা যখন প্রয়োজন মনে করবে, শিক্ষকের ওপর নির্ভর
করবে। শিক্ষকগণ তাঁদের গোঁড়া মনোভাব নিয়ে গর্ববোধ করতে পারেন এবং অটল থাকতে চেষ্টা
করতে পারেন। তবে, প্রয়োজনে বুদ্ধিমত্তার সাথে এমন পরিস্থিতি কেটে ওঠাই শিক্ষকের
জন্য উত্তম।
১১.সফল শিক্ষক কাজের
প্রতিফলন দেখতে চান:
বিব্রতকর ও কাজে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন পরিবেশ মোকাবেলায় শিক্ষকগণ সময়
নেন, তাঁর পদ্ধতি, বলার ঢং-এর প্রতিফলন দেখতে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে,
তাঁর অনুসৃত কৌশলের প্রতিফলন দেখতে চান।
১২.সফল শিক্ষক নিজেই
মেন্টর বা গুরুকে খুঁজে নেন: নিজের অনুসৃত পদ্ধতির প্রতিফলন দেখতে চান, এমন শিক্ষকগণ, বিশ্বাসভাজন,
অথচ অধিক অভিজ্ঞ ও বয়স্ক কাউকে নিকটে না পেলে সহজেই ভেঙ্গে পড়েন।শিক্ষক কখনও
মেন্টরকে অতিক্রম করে যেতে পারেন না। মেন্টর বা গুরুগণ এমন হতে পারেন যে, যাঁরা
বলেন, ‘শিক্ষকের অনুসৃত পদ্ধতি সঠিক বা বেঠিক তার জন্য ভিন্ন পন্থা অবলম্বনই
উপকারি হতে পারে।
১৩.সফল শিক্ষক, অভিভাবকগণের
সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করেন: একজন শিক্ষার্থীর সাফল্যে অভিভাবক এবং শিক্ষকের মধ্যকার সহযোগিতাশূলক
সম্পর্ক খুবই উপকার বয়ে আনে। শিক্ষক, অভিবাবকদের সাথে এমন এক নিবীড যোগাযোগ
সম্পর্ক স্থাপন করবেন, যাতে তারা সহজেই তাদের উদ্বেগের কথা শিক্ষককে জানাতে পারেন
এবং শিক্ষকও তাই করবেন। শিক্ষক-অভিভাবক যখন এমন এক ঐক্যবদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করতে
পারবেন যে, শিক্ষার্থীর ব্যর্থতা কোন মতেই ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
১৪.সফল শিক্ষক তাঁর
কাজকে উপভোগ করবেন:
যে শিক্ষক শিক্ষকতা বা তাঁর কাজকে উপভোগ করেন, তাঁকে ফাঁদে ফেলা সহজ। তাঁদেরকে মনে
হতে পারে বিষাক্ত জ্বালানী বা শক্তি নি:স্বরণ করতে সক্ষম। এমন কি জটিল কোন বিষয়কে
তিনি প্রাণবন্তু করে তুলতে পারেন। শিক্ষক যদি তাঁর কাজকে বা বিষয়কে ভাল না বাসেন,
তাঁর প্রতিফলন শিখন-শেখানোতে পড়বে। শিক্ষককে খুঁজে বের করতে হবে, কেন তিনি এত
হতোদ্যম এবং নিস্প্রভ হন। এটা হয়ত বিষয়গত ব্যাপার নয়, কিন্তু তাঁর প্রত্যাশার গলদ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিকে মেনে নিতে হবে তাঁকে, তবেই কর্ম প্রেরণার বন্যা ফিরে আসবে।
১৫.সফল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের
সাথে একাত্ন হয়ে যান:
শ্রেণি কক্ষ যেন একটি চির সচল শিখন-শেখানোর ক্ষেত্র। দৈনন্দিন পরিস্থিতি,
উপস্থিতির হাজিরা ডাকা এবং চন্দ্রের অবস্থান ভেদে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ি
শিক্ষক তাঁর পরিকল্পনা বা পাঠদান সূচি পরিবর্তন সাধন করেন।
১৬.সফল শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে
পরিবর্তনকে স্বাগত জানাবেন: এটাও শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়ার মতই অনেকটা। শিক্ষক
কী কখনও তাঁর বাস স্থান, শোবার ঘর এলোমেলো দেখে পুণরায় সাজানোর জন্য বিরক্ত বোধ
করেন? আর নতুভাবে গুছিয়ে নেন? উত্জেনা ও দু:সাহসিক মনোভাব নিয়ে শিক্ষককে কখনও কখনও
শ্রেণিকক্ষকে পুণর্বিন্যাস করকে হবে। আসবাবপত্র এদিক-সেদিক করলেই হয়ত শ্রেণিকক্ষে
শিখন-শেখানোতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে।
১৭.সফল শিক্ষক নতুন
নতুন কৌশল ঠিক করতে সময় নেন: তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতি, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষাক্রমে নব নব কৌশলে কার্যক্রম
পরিচালনার বেশ সুযোগ বয়ে আনে। নি:সন্দেহে শ্রেণিকক্ষে এমন শিক্ষার্থী থাকবে, যারা
প্রযুক্তির ব্যবহারে দেখেছে এবং শিখেছে, যা হয়ত শিক্ষক নিজে এখনও শিখেন নি। শ্রেণিতে
মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে শিক্ষককে ইতস্তত: করা চলবে না। দুনিয়া জুড়ে এর ব্যবহার অনেক
বেশি। সবকিছুতে পরিবর্তন বয়ে এনেছে। সুতরাং শিক্ষকদের এসব আয়ত্ত্ব করতেই হবে।
১৮.সফল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আবেগজনিত বিষয়ে সহায়তা দেন: শিক্ষার্থীদের আবেগগত এমন অনেক সময়
ও বিষয় শিক্ষকের সামনে উপস্থাপিত হবে যে, যার প্রতি শিক্ষক সহানুভুতিশীল না হলে,
বড় কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষককে শুধু বিষয়টি জেনে বা বুঝে কিছু
একটা বলা বা পরামর্শ দিলেই হবে না, পুরো বিষয়টি জেনে-বুঝে শিক্ষার্থীদেরকে তা কাটিয়ে
ওঠতে সহায়তা করে যেতে হবে। শিক্ষকের এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা শিক্ষার্থীকে বড় বিপদ বা
দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করতে পারবে। শিক্ষককে এক্ষেত্রে শিক্ষকসুলভ ভূমিকার চেয়ে গুরুর
বা মেন্টরের ভূমিকাই বেশি পালন করতে হবে।
১৯.সফল শিক্ষক অজানা বা অপরিচিতজনের সাথেও কথা বলবেন নি:সন্কুচে: কোন কাজের অর্থ সংস্থান না জেনে,
অভিভাবকদের অবস্থান অথবা শিক্ষকের কঠোর পরিশ্রমের প্রতিদানপ্রাপ্তি সম্পর্কে ধারণা
না পেয়ে, কাজে হাত দেয়া খুবই কঠিন। আবার দর্শনগত বিবেচনায় শিক্ষকদেরকে এমন কোন কাজ
করতে বা কোন বিষয়ে পাঠ দান করতে হতে পারে, যা তাঁর অজ্ঞাত বা তাঁর জন্য সহজ নয়।
এমন সব প্রশ্নের উত্তর দানে শিক্ষকগণ কতটা সফল হতে পারেন? কিন্তু সফল শিক্ষকগণ এসব
পরিস্থিতিকে নির্ভয়ে ও নি:সন্কুচে সাফল্যের সাথে উৎরে যেতে পারেন।
২০.সফল শিক্ষক অভিভাবকগণের সৃষ্ট জটিলতাকে ভয় পান না: কোন কোন সময় এমন পরিস্থিতি হতে
পারেয যে, শিক্ষক-অভিভাবক পরস্পরের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ান। এমন পরিস্থিতি কোন মতেই
কাম্য হতে পারে না। কিন্তু এতে ঘাবড়ে যাওয়া চলবে না। উভয়ের মধ্যকার তিক্ততা না
বাড়িয়ে, তা কাটিয়ে ওঠতে হবে, বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল অবলম্বন করে। সফল শিক্ষকের জন্য
এটা কঠিন কোন কিছু নয়। আবার, অভিভাবকও সন্তানের কথা ভেবে যে কোন সমাধান মেনে
নিবেন।
২১.সফল শিক্ষক শ্রেণিকক্ষকে আনন্দদায়ক করে তুলেন: প্রতিদিনের শিখন-শেখানো কার্যক্রমে
শিক্ষককে অত কাঠিন্য বা ভয়-ভীতির সঞ্চার করা উচিত নয়। কখনও কখনও বিশেষ দিবসকে করে
তুলতে হবে মজার ও আনন্দঘন পরিবেশ সম্বলিত। শিক্ষার্থীরা যখন অনুভব করবেন যে, তাদের
এখন কোন শেণিকক্ষে আঁটকা না পড়ে শিক্ষকের নিকট হতে আনন্দ-বিনোনমূলক কিছু পেতে
চাইছে, চাইতে পারে। আর শিক্ষক যদি তাদের অনুভূতি ও আবদারকে গুরুত্ব দেন, তবে তাঁর
প্রতি শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা গভীরতর হয়ে পড়ে। আনন্দ ও শিখন-শেখানো
কার্যক্রম পরস্পরের মাঝে নিবীড সম্পর্কযুক্ত। আনন্দদায়ক ও কৌতুক-গল্প-গান শুনিয়ে
অনেক সময় অনেক জটিল বিষয়ও শিক্ষার্থীদের নিকট সরেস ও সফল করে তোলা যায়।
২২.সফল শিক্ষক শিক্ষা দানকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের বাণীতে পরিণত করতে পারেন: শূন্য মাজারে শিখন-শেখানো ভাল হয়
না। বিমর্ষতা, দু:শ্চিন্তা এবং মানসিক চাপের মধ্যে থেকে শিখন-শেখানো কার্যক্রম
পরিচালনায় মারাত্নক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কোন শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির ওপর
পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা একজন শিক্ষকের জন্য সহজ কাজ নয়। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে যে
কোন বিষয়কে যত মজা বা আনন্দদায়কভাবে উপস্থাপন করুন না কেন, শিক্ষার্থী যদি
মা-বাবার পারিবারিক বিচ্ছেদজনিত সমস্যায় ভুগেন, তবে কোন কাজ হবে ন।
২৩.সফল শিক্ষক কখনও নিজের শিখন বা পড়াশোনা বন্ধ করেন না: ভাল শিক্ষকগণ নিজের অনেক ব্যস্থতার
মাঝেও তাঁদের শিখন সময় বা অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে নেন। এ শিখন প্রচেষ্টা
শিক্ষকের শূধূ জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে না, অধ্যয়নশীল শিক্ষার্থীতেও পরিণত হন, তিনি।
এতে শিক্ষকের ভীষণ উপকার হয় এবং শূধূ শিক্ষকতার কাজ করে গেলে নিত্য-নতুন
ধ্যান-ধারণাগুলো আয়ত্ত্বে নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তাতে আপ-ডেট থাকা যায়।
২৪.সফল শিক্ষক নিজস্ব গন্ডি হতে বেরিয়ে পড়েন: কখনও কখনও শিক্ষকের মনে হতে পারে
শিক্ষক হিসেবে তিনি অনেক দক্ষ, যোগ্য এবং সমৃদ্ধ। এভাবে তিনি একটি বাক্সে বন্দি
হয়ে পড়তে পারেন। আবার তিনি ভাবতে পারেন, এর থেকে বেরিয়ে গেলে বা অন্য উপায় খূঁজলে,
বাক্সটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, শিক্ষকের নিজস্ব কিছু কিছু অভিজ্ঞতা, জ্ঞান-গরিমা,
দক্ষতা ও সর্বোপরি, গৌরব বোধ থাকবে। কিন্তু ভাল শিক্ষক বাক্সে বন্দি করে রাখা
জিনিষ বের করে নতুন নতুন বিষয় ও জ্ঞানকে নিজের বাক্সে গ্রহণ করে নিবেন এবং সমৃদ্ধ
করে নিবেন।
২৫.সফল শিক্ষক হন,
তাঁর বিষয়ের মাস্টার বা পটু: ভাল শিক্ষককে হতে হবে,
নিজস্ব শৈল্পিক কলা-কৌশলে পটু ও নিপুণ। তাছাড়া, তিনি যে বিষয়ে পাঠ দানের দায়িত্ব
পালন করেন, সে বিষয়ে হবেন, অত্যন্ত উ৭চু মাপের শিক্ষক। ভাল শিক্ষকের কাজ হবে তাঁর
বিষয়ে নিত্যই শিখছেন, পড়ছেন, অনুশীলণ করছেন; এমন। তিনি যখনই সুযোগ পান, শিখছেন,
শিখনকে কখনও পরিত্যাগ করছেন না। সফল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন