প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও
রাজনৈতিক-সামাজিক ভাবনা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।
দেশের
অন্যান্য পেশার মানুষের ন্যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণও
রাজনীতি এবং সমাজ সচেতন। তাঁরা এসব হতে বিচ্ছিন্ন কেহ নন। সামাজিক প্রত্যেকটা
অনুষ্ঠানাদি বা সমস্যাদিতে তাঁদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শিক্ষকতা যাঁরা করছেন, তাঁরা এসেছেন,
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্য হতে। তাঁদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ
শিক্ষকতায় এসেছেন; মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণি হতে। ইদানিং, বেশ কিছু শিক্ষক/শিক্ষিকা
এখানে আসছেন, সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত সব ধনীক শ্রেণি-রাজনৈতিক পরিবার হতে।
আবার, দেশের অন্যান্য পেশাজীবীদের ন্যায় প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষকগণও
শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেহ আওয়ামী
লীগ, কেহ বিএনপি, কেহ জামায়াতে ইসলামী, আবার কেহ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী-সমর্থক ছিলেন। যাহোক, দেশের সব পেশার
মানুষের ন্যায় প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষকগণেরও নিজস্ব পেশাগত সংগঠন বা শিক্ষক
সমিতি আছে। তাঁদের মাঝে কিছুটা বিভক্তি থাকলেও, তাঁরা পেশাগতভাবে এক হবেন, এমনটাই
কাম্য।তবে, তাঁরা যেহেতু সরকারি চাকুরিজীবী, চাকুরি বিধি-বিধান মেনেই তাঁদের
সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
রাজনীতি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক: প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকতায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণকালে যিনি, যে দলের কর্মী-সমর্থক হোন না কেন, চাকুরিতে
প্রবেশের পর তাঁদের আর সে পরিচিতি ধারণ করা উচিত নয়।কিন্তু তাঁদের প্রবণতা ও
কর্মজীবন বা কর্মস্থলে এর প্রভাব দৃশ্যতই পরিলক্ষিত হয়।যেহেতু শিক্ষকগণও
সমাজ-রাজনীতির বাইরে নন, তাঁদেরও দেশের রাজনীতির প্রতি সমর্থন বা মতামত থাকবে, এটা
স্বভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাঁরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করবেন কিনা বা সক্রিয়ভাবে
কোন দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা? সরকারি কর্মচারি (আচরণ) বিধিমালা,
১৯৭৯-এর বিধি-২৫ এ (রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কত বিধান) বলা হয়েছে;
“কোন
সরকারি কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের কোন অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হইতে অথবা অন্য কোনভাবে
উহার সহিত যুক্ত হইতে পারিবেন না, অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোন রাজনৈতিক
কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করিতে বা কোন প্রকারেই সহায়তা করিতে পারিবেন না।”
আবার,
৩০-৩১ বিধি (রাজনৈতিক বা অন্যরূপ প্রভাব খাটানো সম্পর্কত বিধান)-তে বলা হয়েছে যে,
“কোন
সরকারী কর্মচারী তাঁহার চাকুরী সংক্রান্ত কোন দাবীর সমর্থনে অথবা পরোক্ষভাবে সরকার
বা কোন সরকারি কর্মচারীর উপর কোন রাজনৈতিক বা অন্য কোন বহি:প্রভাব খাটাইতে পারিবেন
না।”
শাস্তি (বিধি-৩২):
“উপরোক্ত
যে কোন বিধান লংঘন ‘সরকারী কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫’-এর আওতায়
অসদাচরণ বলিয়া গণ্য হইবে এবং কোন সরকারী কর্মচারী এই বিধিমালার কোন বিধান লংঘন
করিলে তিনি উক্ত বিধিমালার আওতায় শৃঙ্খলামূলক শাস্তির জন্য অভিযুক্ত হইবেন।”
উল্লেখিত
বিধিমালার মর্মার্থ বুঝেই সরকারি কমর্চারি হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
কর্মরত শিক্ষকগণ রাজনৈতিক বিষয়ে সতর্ক থাকবেন এবং কাজ করবেন, এটাই কাম্য।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী ও
সমাজ-সামাজিকতা: গ্রামে-গঞ্জে-শহরে
দেশের সর্বত্রই, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কমর্রত শিক্ষকমন্ডলী আছেন। আর,
শিক্ষকমন্ডলী যেহেতু সমাজের অংশ, তাঁরাও সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান
করবেন। তাঁরা এটা করবেন, তা অত্যন্ত স্বভাবিক ব্যাপার।কিন্তু এমন কোন কাজ তাঁরা
করবেন না, যাতে ফৌজদারি কোন অপরাধ বা বিভাগীয় চাকুরি বিধি-বিধানের পরিপন্থী হয়ে
যায়। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অফিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় স্বাক্ষরিত এক
পরিপত্রে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণকে বিয়ে-শাদী পড়ানো বা এর স্বাক্ষী
হওয়া হতে বিরত থাকতে বলেছেন। তাছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণের একটা
অংশ মসজিদে ইমামতি করেন, বিয়ের ঘটকালি করেন এবং বিয়ে-শাদী, জমি কেনা-বেচাসহ
বিভিন্ন শালিসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। আবার, অনেকে জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলা
ইত্যাদিতে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা দিন দিন এত জটিল বা
প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে পড়ছে যে, ভাল-মন্দ নিবির্চারে সবাই এর শিকার হয়ে পড়ছেন।অনেক
শিক্ষক, আবার এসব অনুষ্ঠানাদিতে যোগদান করতে বেশ মজা পান। যাহোক, আমার কথা হলো,
শিক্ষকগণ সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করবেন, তাতে কোন সমস্যা নেই।কিন্তু খেয়াল
রাখতে হবে, বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ের কথা। এসময়ে বিদ্যালয়ের কাজ ব্যাহত হয়, এমন কোন
অনুষ্ঠানে যোগদান করা যাবে না। আবার, কোন সামাজিক বিচার-আচার বা বিয়ে-শাদী
সংক্রান্ত কাজে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে শিক্ষকগণ খুবই সতর্ক থাকবেন বলে, প্রত্যাশিত।
কারণ, এতে কোন জটিলতা দেখা দিলে বা মামলা-মোকদ্দমা রুজু হলে, চাকুরিজীবী হিসেবে
খুব মারাত্নক একটি পরিস্থিতি হয়ে যেতে পারে। আর, নারী নির্যাতন জাতীয় মামলা বা ফৌজদারি
অপরাধজনিত কারণে গ্রেফতার ইত্যাদি হলে, চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়াসহ অনেক
সমস্যা হতে পারে।
উপরে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকগণের
রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের
রাজনৈতিক-সামজিক বাস্তবতায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও অন্য পেশার মানুষ বা
চাকুরীজীবী হতে আলাদা কেহ নন। তবে, সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে সীমাবদ্ধতাসমূহ
বুঝে-শুনে রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকান্ডে সংযৃক্ত হওয়া বাঞ্চনীয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন