শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কতিপয়
অনুসরণীয় কলা-কৌশল
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।
বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, এস.এম.সি, পিটিএ সবকিছু
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে। মানসম্মত শিশু গড়ে তোলার জন্যই বিদ্যালয়-কেন্দ্রিক সকল
কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।ভাল শিক্ষার্থী তৈরি করে তোলাই শিক্ষকসহ উর্ধ্বতন সকল
কর্তৃপক্ষ এবং মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর উত্তম শিক্ষার্থী
গড়ে তোলার জন্য এবং তাদের ভবিষ্যত কর্মজীবনে সাফল্য ও সফল মানুষ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে
অনেক নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে, হচ্ছে। বিশেষত দুর্বল ও পড়াশোনায়
অমনোযোগি, অথচ প্রভিভাবান, যাদের একটু সহায়তা দিলেই ভাল করে, ভাল হয়ে ওঠে এবং পড়াশোনায়
পারদর্শী হয়। আর শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবনে সফল হয়। এমন কিছু
কৌশল নিয়ে আমার এ নিবন্ধটি সাজানো হয়েছে।
কৌশলসমূহ: ভাল শিক্ষার্থীদেরকে আরও ভাল করা
এবং দুর্বল-দুষ্ঠু শিক্ষার্থীদেরকে সবল করে তুলতে এসব কৌশল প্রয়োগ ও অনসরণ করা
যেতে পারে। সেগুলো হলো;
১.প্রজেক্ট পদ্ধতি, ২. পোর্টফোলিও, ৩.অ্যানেক্ডোটাল নোট, ৪.
ফলাবর্তন, নিরাময় ও নির্ণায়ন এবং ৫. শিক্ষার্থীর স্ব-মূল্যায়ন।
১.প্রজেক্ট পদ্ধতি:
‘প্রজেক্ট অর্থ, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের খুঁটিনাটি জানতে গভীর অনুসন্ধান। প্রজেক্ট
হলো, কোন বিষয় সম্বন্ধে আরো জানার জন্য গভীরভাবে অনুসন্ধান করা।আমাদের দেশে
প্রাথমিক বিদ্যালযগুলোতে শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলে সাধারণত ৪০ মিনিট। কিন্তু সব
ধরণের বিষয় ও শিখন এ সংক্ষিপ্ত সময়ে ভালভাবে হয় না। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো সময়
নিয়ে ব্যাপকভাবে, বিম্তৃত পরিসরে, গবেষণা করে এবং গভীর কার্যক্রমের মাধ্যমে
সমাধানের উদ্যোগ গ্রহন করা হলে শিক্ষাথীর্দের শিখনফল অর্জন আনন্দদায়ক এবং ফলপ্রসূ
হয়্ এমন একটি শিখন-শেখানো পদ্ধতি হলো, প্রজক্ট পদ্ধতি। প্রজেক্ট পদ্ধতি
শিশুকেন্দ্রিক এবং কর্মকেন্দ্রিক, যা সারা বিশ্বে গ্রহনযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
এ পদ্ধতিতে শিশুরা ব্যবহারিক কাজে নিয়োজিত থেকে এককভাবে ও দলগতভাববে কাজ করার
সুবিধার পাশাপাশি জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের সুযোগ পেয়ে থাকে। এটি অনেকটা আমাদের দেশে বিজ্ঞান-মেলা আয়োজন ও
পরিচালনা করার মত।
প্রজেক্ট পদ্ধতির
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
-একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকবে,
-সমস্যা সমাধানমূলক হবে।
-শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে।
-শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে করতে পারবে।
-সামাজিক পরিবেশ উপজীব্য হয়ে ওঠবে।
-স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবীর সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
-একক শিক্ষার্থী এককভাবে ও দলীয় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
-দলীয় চেতনা প্রতিষ্ঠা পায়।
-শিক্ষার্থীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পরায়ন হয়ে ওঠবে।
সুবিধাসমূহ: প্রজেক্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে
শিক।ষার্থীরা নিন্মোক্ত সুবিধাসমূহ পেয়ে থাকে।
১.শিশুদের সুষম বিকাশ ঘটে।
২. শিক্ষার্থীদের মাঝে কর্ম প্রেরণা সৃস্টি হয়।
৩. শিক্ষার্থীরা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়্।
৪. শিক্ষাথের্থীদের কোন অস্পষ্টতা বা সন্দেহ থাকেনা।
৬. সহজাত আগ্রহ সৃস্টি হয়।
৭. ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে।
৮. আত্ননির্ভরশীলতা ও দায়িত্বশীলতা গড়ে ওঠে।
৯. শিক্ষার্থীদের মাঝে সহযোগিতা, দল প্রীতি, আত্নত্যাগ
প্রভৃতি সামাজিক গুণাবলি বিকশিত হয়।
১০. শ্রমের মর্যাদা, শরীর চর্চা ও স্বাষ্থ্যের উন্নতি ঘটে।
১১. সর্বাপরি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রীতি ও সহজ বোঝাপড়া
প্রতিষ্ঠিত হয়।
২.পোর্টফোলিও:
আমরা জানি শিশুরা বহুমখি উপায়ে শিখে। বহুমুকি শিখন-শেখানো কার্যক্রমে পোর্টফোলিওর
ব্যবহার শিক।ষার্থীদের শিখন পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করে। প্রথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি
অনসরণ করা হয়। শিক্ষাক্রমের এক বা একাথিক বিষয়ের ওপর শিক।ষার্থীর কোন কাজের
প্রচেষ্টা ও কৃতিত্ব প্রকাশ করে এমন পরিকল্পিত সংগ্রহের সমাবেশকে পোর্টফোলিও বলা
হয়।মূলত এটি হচ্ছে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন কাজের পরিকল্পিত সংগ্রহ। অন্য কথায়, এটি
শিক্ষার্থীদের কাজের একটি প্রনিধিত্বমূলক নমুনা যাতে তাদের পারদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা
পরিলক্ষিত হয়। িএটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য আনন্দদায়ক এবং সুখকর অভিঝ্ঞতা
বয়ে আনে। সাধারণত চিত্রাংকন, রচনা প্রতিযোগতা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক
প্রতিযোগিতাসহ এধরণের বিন্নি কৃতিত্বমূলক স্বীকৃতি ও সনদপত্র সংগ্রহকরণ এবং
সেগুলোতে উৎসাহিত শিশুকে কৃতি শিক্ষাথীথীতে পরিণত করা। এগুলো তাদেরকে এগিয়ে যেতে
সহায়তা করে অনেক বেশি।
৩.অ্যানেকডোটাল নোট:
অ্যানেক্ডোটাল নোট হচ্ছে, অনানুষ্ঠানিক এক ধরণের শিশুর পারদর্শিতা
মূল্যায়ন।আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নে শিশুর সকল পারদর্শিতা ও সুসস্পষ্ট াাচরণ অনেক
ক্ষেত্রে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়না। কিন্তু আ্যানেক্ডোটাল নোট পদ্ধতি অনুসরণ করা
হলে তা সফল হয়। আর অ্যাক্ডোটাল নোট হচ্ছে কোন বিশেষ পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে
একজন শিক্ষার্থী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত লিখিত বর্ণনা। এতে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার
উল্লেখযোগ্য জ্ঞান, শারীরিক কলাকৌশলে গভীর অনুরাগ বা শিল্পকলায় নান্দনিক বোধ অথবা
সামাজিক, আবেগিক, শারীরিক ও মানসিক আচরণ।
৪.ফলাবর্তন, নির্ণায়ন
এবং নিরাময়: মূল্যায়নের জন্য ফলাবর্তন, নির্ণায়ন এবং নিরাময়; এ তিনটি
প্রক্রিয়াই একে অপরের সাথে সংশ্লিষ্ট। মূল্যায়নের মূল কাজ হল, শিশুর শিখনের সবলতা
ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা। চিহ্নিত করার এ প্রক্রিয়াকে নির্ণায়ন বলা যেতে পারে। তবে,
নির্ণায়নে সাধারণত সবলতার চাইতে দুর্বলতাগুলোর দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়। নিরাময়
প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত দুর্লতাগুলো কীভাবে দুর করা যায় তার জন্য পরিকল্পনা করে কর্ম
পদ্ধতি পরিচালনা করা হয়। এজন্য সব সময় নির্ণায়নের পর পরই নিরাময় হওয়া উচিত। আর
ফলাবর্তনের সহজ একটি সংজ্ঞা হলো, শিক্ষার্থীদের শিখন সহায়ক তথ্য প্রদান করা।সমস্যা
নির্ণয়ের সাথে সাথে ফলাবর্তন দিতে হয়।
৫.শিক্ষার্থীর
স্ব-মূল্যায়ন: যে কার্যক্রম বহুমুখী শিখন-শেখানো পদ্ধতিকে উৎসাহিত করে সে
কার্যক্রমে বহুমুখী মূল্যায়ন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা প্রযোজন। এটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ রকম মূল্যায়ন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি সম্পর্কে
এমন তথ্য দেয় যা শিক্ষার্থীকে ভালভাবে শিখতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীর শিখন
অগ্রগতির মূল্যায়নকে শূধু শ্ষিকের কাজ হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে সংশ্লিষ্ট যে কোন
মূল্যায়নকারীর জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এতে
শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের কাজের মূল্যায়কারী হতে পারে। শিক্ষার্থীর নিজেদের
মানোন্নয়নের জন্য তাদের কাজের মূল্যায়নের অনুশীলন করার সুযোগ দিতে পারলে পরবর্তীতে
তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।
উপসংহার: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে
সাধারণত অনেক ছাত্র/ছাত্রী থাকে। উপরোক্ত কৌশলসমূহ এখানে প্রয়োগ বা অনুসরণ করা
কঠিন। তবে, এসব কৌশল সীমিত পরিসরেও যদি অনুসরণ করা সম্ভব হয়, শিক্ষার্থী-শিক্ষক
সকলেই উপকৃত হবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন