শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৫

Learning Inside-Outside of School

বিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরে শিখন:
একটি একবিংশ শতাব্দীর ভাবনা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
বর্তমান যুগে শুধু বিদ্যালয়ে শিখনে কেন্দ্রিভুত নয়। শিক্ষার্থীর এখন বিদ্যালয়ের বাইরেও অনেক কিছু শিখে। তারা শিখে নিজে নিজে। শিখে, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং প্রচার মাধ্যমের শিক্ষামূলক আলোচনা হতে। বিশ্বব্যাপী শিখন-শেখানো এখন আর শ্রেণিকক্ষে বা বিদ্যালয়ে একমাত্র শিখন হিসেবে গণ্য করা হয় না। শিখন উৎস অনেক। শিক্ষার্থী নির্ভরযোগ্যভাবে সনাজের শিখন-শেখানোতে অংশ সেবে। আর তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিখন উৎসকে কাজে লাগাবে, গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে শিখবে এবং প্রচার মাধ্যমের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো আয়ত্ত্ব করে নেবে। সমাজ, জনগোষ্ঠী এবং বিদ্যালয়; শিশুদের শিখনে একাকার হয়ে পড়বে। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নিকট যেমন জবাবদিহি হবে, তেমনি হবে বিদ্যালয় বহির্ভুত অভিভাবক-জনগোষ্ঠীর নিকট। পরিবার, ব্যবসায়ী সমাজ, মানবিক সংস্থাসমূহ প্রতিবেশী, গুরুজন, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্তরের মানুষ ও সংস্থা শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করবে। বিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরে শিখন-শেখানোর এমন কিছু কৌশল নিন্মে আলোচনা করা হলো।
১. লার্ণিং একচুয়েশন বা শিখন সক্রিয়তাসমূহ: সক্রিয় শিখনে নিচের কৌশলগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে;
.          প্রজেক্ট পদ্ধতিতে শিখন,।
.          নির্দেশনা ও ইচ্ছামত খেলার মাধ্যমে শিখন।
.          ভিডিও গেমস এবং শিখন সামগ্রী প্রদর্শন করে শিখন।
.          নিবীড গুরু-শিষ্য শিখন, ও
.          একাডেমিক বা শিখন-শেখানোর মাধ্যমে অনুশীলণ।

২. চেন্জিং হেবিটস বা পরিবর্তনশীল অভ্যাস:
   . উদ্ভাবনীমূলক এবং নকশা বা পরিকল্পনামূলক কাজে সহায়তা দান।
   . সীমাবদ্ধতা এবং সীমা-পরিসীমাকে স্বীকার করে নেয়া।
   . আত্ননির্ভরতার প্রতিফলন ঘটানো্
   . অনিশ্চয়তাকে মেনে নেয়া।
   . পূর্ববর্তী কাজের ধারাক্রমকে গ্রহন করে নেয়া।
   . পদ্ধতিগত ও চিন্তনের বৈচিত্রকে সহায়তা করা্
   . পুরস্কার প্রদান, এবং
   . পরিবর্তনের মুখে বৈচিত্রতা আননয়ন।
৩. ট্রান্সেপারেন্সী বা স্বচ্ছতা:
   . জনগোষ্ঠী, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের মাঝে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ।
   . শিখনের মান, শিখন ফল, প্রকল্প দলিল, দৃশ্যমান দক্ষতা, পরিমাপক, প্রকাশযোগ্য বিষয়কে জনগোষ্ঠীকে      অবহিতকরণ, ও
   . খেলাধুলা আয়োজন ও এর ফলাফল প্রকাশ।
৪. সেল্ফ-ইনিসিয়েটিভ ট্রান্সফার বা স্ব-উদোগে রূপান্তরকরণ:
   . নিত্য পরিবর্তনশীলতায় পুরনো ভাবনাকে প্রয়োগ এবং অপিরিচিত পরিস্থিতিতে নিত্য অনুশীলনযোগ্য বিষয়কে কাজে লাগানো।
   . শিখন-শেখানো পরিমন্ডলে জটিলতা সৃস্টির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলো হতে অগ€ধিকার বিষয়গুলো বেচে নিয়ে নিয়মিত অনুশীলণ করা।
   . প্রজেক্ট ভিত্তিতে শিখন, অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে শিখন এবং অত্যন্ত গঠনমূলকভাবে স্থান বিশেষে শিখন।
৫.মনিটরিং এন্ড কমিউনিটি বা তদারকি ও জনগোষ্ঠী:
.          প্রজেক্ট পদ্ধতি ভিত্তিক ধারণাগুলোকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেশ-বিদেশের প্রেক্ষিতে বাবদিহিতা।
.          দেশীয় কাজের মাধ্যমে বৈশ্বিক নাগরিকত্ব বৈশিষ্ট্য।
.          দৈহিক ও ডিজিটাল যোগাযোগ, শিক্ষানবীশী, কর্মভিত্তিক শিখন এবং শিক্ষা সফরের মাধ্যমে সক্রিয় মেন্টরিং বা পরামর্শ-নির্দেশনা দান।
.          জনগোষ্ঠীর গঠনমূলক ভূমিকা, উচ্চতর জ্ঞানমূলক প্রশিক্ষণ এবং বহুমুখি কৌশল ব্যবহার করে শিখন চর্চা করা।
৬. চেন্জিং রুলস বা পরিবর্তমান ভূমিকাসমূহ:
   . শিক্ষার্থীরাই হবে জ্ঞান সৃস্টির উৎস।
   . শিক্ষকগণ হবেন, মূল্যায়ন ও সমৃদ্ধ বিশেষজ্ঞ।
   . শ্রেণিকক্ষগুলো হবে, চিন্তা-গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু।
   . জনগোষ্ঠী শুধু শ্রোতা-দর্শক এবং নিস্ক্রীয় অংশগ্রহনকারি হবেনা।
   . পরিবারগুলো হবে, পরিকল্পনাকারি, নিরাময়কারি ও বিষয়বস্তু জ্ঞানে সমৃদ্ধ।
৭. ক্লাইমেট অব এসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন পরিবেশ:
   . আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার পরিবর্তে পুণ পুণ মূয়ল্যায়ন।
   . তথ্যরাশি ব্যবহারে অগ্রগতি এবং পরামর্শমূলক প্রশ্ন প্রদর্শনকে অবগত করানো।
   . পড়াশোনার মানকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং তা অব্যাহত রাখা হবে।
   . শিখন ফল, পারস্পরিক অর্জিত শিখন ফল মূল্যায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক পরিমন্ডল হতে পরিশুদ্ধ ভববনাতে ভূমিকা পালন করবে।
৮. থট এন্ড এ্যাবস্ট্রাকশন অথবা চিন্তা এবং অন্তর্নীহীতার্থ খুঁজে বের করা:
   . এ মডেলে ক্রমবর্র্ধমান জটিলতা ও বাস্তব বিশ্বের অনিশ্চয়তার প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনের জন্য সংগ্রাম ও গুঢ়ার্থ বের করা।
   . এ অনিশ্চয়তাকে মেনে নিতে এবং জটিলতা ও জ্ঞানমূলক সহিঞ্সুতা সত্যিকারের মডেল হবে এবং বিপরীতটাও হবে।
   . কোন বিষয় বা জিনিষের অন্তর্নিহীতার্থকে শুধু একটি কৌশল হিসেবে নয়, দর্শন এবং অন্যান্য মানবিক বিষয়কে ধারণ করে নিতে হবে, কিন্তু তা হবে অনিশ্চিত, অসম্পূর্ণ এবং জ্ঞানের বিস্তৃত রূপ।
৯.এক্সপেন্ডিং লিটারেচি বা নতুন নতুন সাহিত্য বা ভাবনাকে ধারণ করে নেয়া:
    . বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন বস্তনিষ্ঠ তথ্যকে সন্নিবেশকরণ।
    . প্রচার মাধ্যম এবং ভাবনাসমূহের আন্তনির্ভরতার চিন্তামূলক জরিপ।
    . নিত্য বিকাশমান প্রচার মাধ্যম কাঠামোর ব্যবহার করা।
    . নির্ভরযোগ্য উদ্দেশ্যের জন্য প্রচার মাধ্যম পরিকল্পনা।
    . প্রযুক্তিগত এবং পযুক্তি বহির্ভুত বিষয়ের স্বনিয়ন্ত্রিত উৎস।
    . শৈল্পিক ও কার্যকর ডনিরাময়মূলক ব্যবস্থা।
পরিশেষে বলা যায়, বিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরে শিখন মডেল একটি কেন্দ্রিয় শিখন তত্ত্ব এবং কৌশলসমূহকে পরিস্থিতি অনুযায়ি শিখন, অগ্রাধিমূলক শিখন, জনগোষ্ঠীর গঠনমূলক ভূমিকা, সম্ভাব্য উন্নয়ন ও অন্য কিছুতে অধিক জ্ঞানমূলক শিখন চক্র, রূপান্তরমূলক শিখন, মানসিক অভ্যাস, সামগ্রিক কার্যক্রমে শিখন, প্রভৃতি শিখন তত্ত্বগুলোর সমন্বিত রূপ হলো, বিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে শিখন মডেল।
.           



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন