প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ
ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কাযর্ক্রম(পর্ব-২)
মোহাম্মদ
শহীদুল্লাহ
সহকারি
উজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
শ্রেণি পাঠদান ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ বিষয়ে ইতোপূর্বে একটি লেখা তৈরি করেছিলাম;
অনেকটা হালকা-চালে নিজের অভিজ্ঞতার আলোক। আজ লিখব, তথ্য-প্রযুক্তি বা কম্পিউটার
পরিচিতি এবং শ্রেণিকক্ষে সরাসরি মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠ উপস্থাপন বিষয়ে। এ
ক্ষেত্রে সহায়তা নিচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে ডিজিটাল বাংলাদেশের
অন্যতম কারিগর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ও বর্তমান শিক্ষা
সচিব নজরুল ইসলাম খান স্যারের সাবির্কক সহযোগিতায় প্রণীত শিক্ষক সহায়িকাটির।
যাহোক, প্রথমেই কম্পিউটারের ধারণা, ব্যহাহর নিয়ে লিখব। পরে মাল্টিমিডযার ধারণা
শ্রেণি পাঠদানে এর প্রয়োগ এবং কন্টেন্ট তৈরি বিষয়ক মৌলিক বিষয়গুলো এ নিবন্ধে তুলে
ধরার প্রয়াস চালাব।
কম্পিউটার কী?
সাধারণভাবে বলা যায়,
কম্পিউটার একটি গণনাকারি যন্ত্র।অর্থাৎ আমাদের অতি চেনা ক্যালকুলেটরের বৃহৎ
সংস্করণ।কম্পিউটার একটি জটিল প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত, অথচ মানুষের দেয়া নিদের্শনা
ছাড়া চলতে পারে না।
কম্পিউটার কিভাবে কাজ
করে:

কম্পিউটার সিস্টেম; হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার:
বলা হয়ে থাকে
হার্ডওয়্যার কম্পিউটারের ‘দেহ’ এবং সফ্টওয়্যার কম্পিউটারের প্রাণ।কম্পিউটার চালনায়
অপরিহার্য বিভিন্ন সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের ব্যবহার সম্পর্ক এখানে ধারণা দেয়া
হল;
সফ্টওয়্যার: কম্পিউটার পরিচালিত হয় ইলেক্ট্রনিং সংকেতের মাধ্যমে প্রেরিত
নিদের্শ অনুসারে।নির্দশ প্রেরণের জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন কম্পিউটার
ভাষা। এই ভাষা ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের জন্য যে নিদের্শনা কম্পিউটারকে দেয়া হয়
তাকে বলে সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম বা এপ্লিকেশন। যেমন লাইনাক্সস, উইন্ডোজ দুটি
অপারেটিং সিস্টেম সফ্টওয়্যার; বিভিন্ন এপ্লিকেশন সফ্টওয়্যারের মেধ্যে আছে হিসাব
রক্ষণের সফ্টওয়্যার স্প্রেডশীট, মাইক্রোসফ্ট এক্সেল প্রভৃতি; গ্রাফিক
প্রোগ্রামসশূহ, যেমন:- ফটোশপ, ইন্টারনেট ব্রাউজার, ইমেইল।
হার্ডওয়্যার: কম্পিউটারের যে সব উপরেণসমূহতক ‘দেখা’ বা ‘ধরা’ যায় সেসব
যন্ত্রাংশসমূহকেই একত্রে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের প্রধান হার্ডওয়্যারসমূহের
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; সিপিইউ, মরিটর, কী-বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, স্ক্যানার,
স্পিকার ইত্যাদি। এসব হার্ডওয়্রার সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিন্মে দেয়া হলো;
সিস্টেম ইউনিট: সিস্টেম ইউনিট কম্পিউটারের মস্তস্ক হিসেবে কাজ করে।বাক্সের
মত দেখতে এ যন্ত্রাংশের মধ্যে থাকে মাদারবোর্ড, বিভিন্ন মেমোরি ডিভাইস, কার্ড
ভিজিপ/এজিপি, সাউন্ড, নেটওযার্ক ইত্যাদি, পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট। যেই ধাতব বাক্সটির
মধ্যে যন্ত্রাংশগুলো থাকে তাকে ‘কেসিং’ বলে।

-সিস্টেম ইউনিটে প্রধান
লক্ষণীয় বিষয় হলো এতে থাকে পাওয়ার বটন। পাওয়ার বটন অন করে কস্পিউটার ওপেন করতে হয়।
-এতে থাকে সিডি/ডিভিডি রোম।
কোন সিডি বা ডিভিডি চালাতে হলে সিডি/ডিভিডি রোমের বাটনে ক্লিক করলে একটি ট্রে ওপেন
হবে।সেখানে সিডি/ডিভিডি রোমের ঢুকিয়ে াাবার বাটনে ক্লিক করলে ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে
এবং সয়ংক্রিয়ভাবে তা চালু বা ওপেন হবে।
কিবোর্ড:
কিবোর্ড ব্যবহার করে কোন
ডকুমেন্ট টাইপ করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন নির্দশ দেয়ার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।
বাংলা টাইপ করার জন্য বাংলা অক্ষর সম্বলিত কিবোর্ড এবং ‘অভ্র’ নামক বিনামূল্যের
একটি সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা যেতে ারে। কিবের্ডর শেষ কয়েকটি কী আমাদের কেশি
ব্যবহার করতে হয়।
Kx‡ev‡W©i
we‡kl K‡qKwU Kx Avgv‡`i †ewk e¨envi Ki‡Z
nq|
G¸‡jv n‡jv:
Caps Lock/ Tab Shift/ Enter /Backspace/
Windows key /Control
(Ctrl) /Spacebar
মাউস: কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ করা বা নির্দেশ দেয়ার জন্য মাউস ব্যবহার করা হয়। মাউসে সাধারণত দুটি
বোতাম থাকে। বাম ও ডান বোতাম। বলার সময় াামরা বেশি ব্যবহার করি লেফ্ট বাটন ও রাইট
বাটন কথাটি। ল্যাপটপের সাতে একটি কিপ্যাড যুক্ত করাই থাকে। তবে কাজের সুবিধার্থে
ল্যাপটপের সাথে আলাদা মাউস ব্যবহার করা যেতে পারে।
মনিটর:
টিবির মত দেখতে যে যন্ত্রাংশ কম্পিউটারের যাবতীয় কাজকে ব্যবহারকারীর নিকট
দ্যশ্যমান করে তাকে মনিটর বলে। মনিটরে একটি পাওয়ার বাটন এবং মেনু বাটন থাকে।
মডেম: টেলিফোন লাইন, ক্যাবর বা ওয়্যারলেস দ্বারা ইন্টারনেটের সাতে সংযোগ করে
তথ্য আদান-প্রদানের জন্র ডিভাইসটি ব্রবহার করা হয় তা হলো মডেম। বর্তমানে সহজে
বহনযোগ্য ইউসবি মডেম বাজারে পাওয়া যায়।
প্রিন্টার: কম্পিউটারে
প্রস্তুতর্ত কোন তথ্য বা ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা
হয় তা হলো প্রিন্টার।সাধারণত তিন ধরণের প্রিন্টার ব্রবার রা হয়, তা হলো; ডট
মেট্রিক্স এবং লেজার।
ইউএসবি ডিভাইড: এটাকে ানেকে পেন ড্রাইভ বল্ েএক কম্পিউটার থেকে কোন
ফাইর ইউএসবি ড্্রাইভে কপি করে নিয়ে কপি করে নিয়ে কম্পিউটারে ওপেন করা যায়। অর্থাৎ
কম্পিউটার থেকে ড্রাইভ কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে উউএসবি ড্রাইব বা
পেন ড্রাইব এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক।
স্ক্যনার: হাতে থাকা কোন ছবি বা ডকুমেন্টকে কম্পিউটারে ডিজিটাল
ফরম্যাটে এ সংস্করণ করার জন্য স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। এই ডিভাইসটি বিভিন্ন
ডকুমেন্ট-এর প্রিন্টেড বা ার্ কপির ছবি তুলে সেটিকে ইমেজ ফাইল হিসেবে সংরক্ষণ করে
থাকে।
স্পিকার: যেসব কন্টেন্টে সাউন্ড আছে তা শোনার জন্র স্পিকার
প্রয়োজন। ভিডিও ক্লিপ বা াডিও ক্লিপ যেমন- শিক্ষোর্থদের িইংরেজি উচ্চারণ
শিখানো,যায়ালগ, বিভিন্ন সাউন্ডযুক্ত অ্যানিমেচটড ক্লিপ, সংগীত প্রভৃতি শোনানোর
জন্য স্পিকার ব্যবহার করা হয়। প্রায় সকর ল্যাপটপের সাথে স্পিকার বিল্ট-ইন অর্াথাৎ
সেট করাই থাকে। ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এটি আলাদা কিনতে হয়।
ইউপিএস:নিরবিচ্ছিন্নভাবে
কম্পিউটারে বিদ্যুৎ প্রবাহ সরবরাহ করার জন্য ইউপিএস ব্যবহৃত হয়।অনেক সময়
কম্পিউটারে কাজ করতে থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। ইউপিএস সংযুক্ত না থাকলে
হঠাৎ করে কম্পিউটার বন্ধ হয় পলে চলতি ফাইলটি মুছে যায়।এনেক বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়।
ইউপিএস সংযুক্ত ওপেন করা ফাইল সেভ করে কম্পিউটার সঠিকভাবে বন্ধ করার সময় পাওয়া যায়।এতে
কম্পিউটারের হার্ডিস্কসমূহ ক্ষতির সন্মুখিন হয় না।
ওয়েব ক্যামেরা: ওয়েব ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি কম্পিউটারে ভিডিও বা ছবি
ধারণ করা যায়। ধরুণ ইন্টানেটে কারো সাথে চ্যাট করছেন বা কা বলেছেন এ ক্ষেত্রে ওয়েব
ক্যামেরা থাকলে সরাসরি পরস্পরের ভিডিও চিত্র দেকতে পারেন। বর্তমানে বাজারে প্রাপ্ত
প্রায় সকল ল্যাপটপের সাথেই ক্যামেরা সংযুক্ত থাকে। ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে
আলাদা ওয়েব ক্যামেরা কিনে নিতে হয়।
মাল্টিমিডিয়া
ক্লাসরুম; ানেকে মনে করেন, শিক্ষঅয় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার একটি ব্যয়বহুর পদ্ধত্
ি। আসলে কিন্তু তা নয় এজন্র দরকা একটি স্কেটপ বা ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর ও একচি
স্ক্রিন। সরকার ক্রমান্বয়ে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ প্রদানের উদোগ গ্রহন
এবং বাস্তবায়ন করেছে। তাছাড়া, দেশের অনেক উপজেলা বা এলাকায় কবত্তশালী বা
বিদ্যোৎমসাহী অনেক ব্যাক্তি আছেন, যাঁদের কাছে গেলে স্বেচ্ছায় এসব জিনিষ
বিদ্যালয়কে দিবেন, দিচ্ছেন। আর দেশের কালিয়কৈর উপজেলা, টেকনাফ-উখিয়া উপজেলাসহ অনেক
স্থানীয় সংসদ সদস্য নমহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় এবং অন্যান্যদের উদ্যোগে সব
বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে।
শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া পরিচালনা জ্ঞান
ও দক্ষতা: আসলে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার
করে শিক্ষকদেরকে শ্রেণি পাঠদান কাজ পরিচালনা করতে একেবোরে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হতে
হবে এমন নয়। কম্পিউটার অন-অফ, বিভিন্ন আইকন সম্পর্ক পরিচিতি, ফাইল ও ফোল্ডার খোলা,
এমএস পাওয়ারপয়েন্ট এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং জানলেই চলে। এমন প্রাথমিক কম্পিউটার
জ্ঞান, প্রায় সকল শিক্ষকেরই আছে। শুধু দরকার একটু সাহস এবং সময় নিয়ে অনুশীলণ করা।
আর শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার যেহেতু একটি প্রায়োগিক কাজ । তাই, এটা
শ্রেণিকক্ষে অনুশীলণ করিয়েই ধারণা পেতে বা দিতে হবে। এধরণের কিছু শ্রেণি পাঠদানের
ভিডিও দেখেই যে কোন শিক্ষক অভ্রস্থ হয়ে ওঠবেন এবং প্রয়োগ করতে পারবেন।
পরিশেষে
বলতে হয়, কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হলে আপনার হাতের কাছে একটি কম্পিটার
থাকতে হবে। আর, একটু একটু করে শিখতে শিখতে একবার আয়ত্ত্ব করে নিতে পারলে চলবে। যত
ইচ্ছা শিখতে পারবেন, প্রয়োগ করতে পারবেন এবং বিনোদনমূলক অনেক কিছু উপভোগ করতে
পারবেন। ভয় পাবেন না বা খারাপ কিছু ভাববেন না।কম্পিউটার আজ হাতের নাগালে, বেশি
দামী নয়। বিদ্যালয়ে অথবা বন্ধু-বান্ধবের
কাছে থাকলে শিখতে চেষ্টা করুন, প্রাথমিক ধারণা নিন। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধটি আপনার
জন্য সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন