বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়: একটি পর্যালোচনা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, ককস্বাজার।
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইটি নিয়ে আজ লিখব।তৃতীয়
হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি শ্রেণিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং প্রথম ও দ্বিতীয়
শ্রেণিতে অনানুস্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে।শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা গণিত বা
ইংরেজি পাঠদানের সাহস পান না বা বযস্ক হয়ে গেছেন অথবা কিছুটা দুবর্ল তাঁরা এ
বিষয়টি পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ফলে, পাঠদান
কার্যক্রম যা হবার তাই হয়ে থাকে।আসলে একাটি বিষয় হিসাবে এ বইটি অত ফেলনা নয়।কিন্তু
সব সময় দেখে আসছি বিদ্যালয়গুলোতে তাই হযে আসছে। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিকেও
এভাবে হালকা করে পাঠদান করা হয়। কিন্তু সকল বিষয় যেগুলো প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের জন্য
পাঠ্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সবকটি সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কারণ গণিত, ইংরেজি,
বাংলা, বিজ্ঞান যেমন কোমলমতি শিশুদের মস্তিস্কে শৈশব হতে পরবর্তী শিক্ষা স্তরের
ভিত্তি হিসাবে গেঁথে দেয়া প্রয়োজন তেমনি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়টিও শিশুদের
পারিপাশ্বির্ক বিষয়সহ দেশ-বিদেশ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ঘটনা পরাম্পরা, জাতীয় ও বিশ্ব
আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উথ্থান-পতনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এ বিষয়ের মাধ্যমে।
তাই এ বিষয়টাকে প্রত্যেক শিশুকে গুরুত্ব দিয়ে শেখানো উচিত বলে আমার মনে হয়। দেশের
খ্যাতনামা রাস্ট্রবিজ্ঞানী-সমাজবিজ্ঞানীগণের একটি প্যানেল বইটি রচনা, সংকলন ও
সম্পাদনা করে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পাঠ্য বইটি তৈরি করে থাকেন। তাঁরা প্রাথমিক
স্তরের শিশুদের উপযোগি করে এ বিষয়টি সাজিয়েছেন্। আমার বিবেচনায় এ বইটিতেই সবচেয়ে
বেশি তথ্য ও পরিসংখ্যান থাকে, যা মুখস্থ করা ঘটনাক্রম ধারণ করার ক্ষেত্রে শিশুদের
বেশ বেগ পেতে হয়। আর পরীক্ষায় ভাল করা শিশুদের জন্য বেশ কঠিন। অন্যান্য বিষয়গুলো
বুঝা ও ধারণ করা যেমন এ স্তরে শিশুদের জন্য কঠিন, ঠিক তেমনি এটি আত্নস্থ করা এবং
স্মরণ রাথাও খুব সহজ নয়। সুতরাং শিশুদের এ বিষয়টিও ভালভাবে শেখাতে হবে। জাতীয়
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্র্ডর চেয়ারম্যান মহোদয় প্রফেসর মো: আবুল কাসেম মিয়া
বইওয়র মুখবন্ধে যা উল্লেখ করেছেন. তার অংশ বিশেষ এখানে উদ্ধৃত করছি;---‘‘বাংলাদেশের
সমাজ ও পরিবেশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মৌলিক চাহিদা,
শিশুদের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য, সমাজে সকল মানুষের সাথে সহযোগিতা ও সহমর্মিতাবোধ,
সুনাগরিক হয়ে ওঠার গুণাবলি অর্জন, অন্যের সংস্কৃতি ও পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া,
সম্পদের সুষ্টু ব্যবহার ও সংরক্ষণ, সামাজিক পরিবেশ ও দুর্েযাগ জনসংখ্যা ও জনসম্পদ ইত্যাদি বিষয়গুলো বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতির পিতার জীবনী, মুক্তিযুদ্ধের
প্রকৃত ইতিহাস ও তথ্যসমূহ সংবিধান সম্মতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র জাতি
সত্তার বিষয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রেও সংবিধান অনুসৃত হয়েছে।এছাড়া বইটির (তৃতীয়
শ্রেণির)পাঠ দানের জন্য নির্দেশনা অংশে বলা হয়েছে;-- ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’;
পাঠ্যপুস্তকটি শিশুদের পারিপার্শিক জগৎ সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা
হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে এ বিষয়টির মাধ্যমে মূল্যবোধ, জ্ঞান ও দক্ষতা অজর্ন করতে
পারে সেদিকে লক্ষ রেখেই শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে।
-বাংলাদেশের
সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও রাজনৈতিক ভূখন্ড সম্পর্কত পাঠ শিক্ষার্থীদের
মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক হবে।
-ভূগোল,
ইতিহাস ও সমাজ পরিচিতি শিক্ষার্ীদের এ বিষয়গুলোতে জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করবে।
-একইসাথে
সামাজিক আচরণ ও প্রাকৃতিক অবস্থা সম্পরকিত তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে
শিক্ষার্থীরা অনুসন্ধান ও গবেষণা করার দক্ষতা অর্জন করবে।
দক্ষতা ম্যাট্রিক্স: তৃতীয় জন্য প্রণীত বাংলাদেশ ও
বিশ্ব পরিচয় বইটিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজণী। যেসব শিক্ষক এ বিষয়টি পড়াবেন
তাঁরা এটি ভালভোবে দেখে ও বুঝে পড়ালে বেশ উপকৃত হবেন।
এবার
আমরা তৃর্তীয় হতে পঞ্চম শ্রেণির বইগুলোতে সংকলিত অধ্যায়গুলো এখানে পুণলির্খনের
মাধ্যমে তুলে ধরব। আমার নিবন্ধের উদ্দেশ্য প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত
শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ যেন অন্তত পাঠ্য বিষয়বস্তুর সাথে মোটামুটি পরিচয় লাভ করতে
পারেন।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
তৃতীয় শ্রেণি
রচনা ও সম্পাদনা
ড. মাহবুবা নাসরিন/ড. আব্দুল মালেক/ড. ঈশানী চক্রবর্তী/ড.
সেলিনা আক্তার
১.
প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ/২.মিলেমিশে থাকা/৩.আমাদের অধিকার ও দায়িত্ব/৪.সমাজের
বিভিন্ন পেশা/৫.মানুষের গুণ/৬.সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন/৭.পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ও
সংরক্ষণ/৮.মহাদেশ ও মহাসাগর/৯.আমাদের বাংলাদেশ/১০.আমাদের জাতির পিতা/১১.আমাদের
ইতিহাস ও সংস্কৃতি/১২.বাংলাদেশের জনসংখ্যা/নমুনা প্রশ্ন/ শব্দ ভান্ডার
নীতি
বাক্য-প্রতিবেশীর প্রতি ভাল ব্যবহার কর।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
চতুর্থ শ্রেণি
রচনা ও সম্পাদনা
ড. মাহবুবা নাসরিন/ড. আব্দুল মালেক/ড. ঈশানী চক্রবর্তী/ড.
সেলিনা আক্তার
১.
আমাদের পরিবেশ ও সমাজ/২.সমাজে সহাবস্থান ও সহযোগিতা/৩.বাংলাদেশের ক্ষুদ্র
জাতিসত্তা/৪.নাগেরিকের অধিকার/৫.সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ/৬.বিভিন্ন পেশার
মর্যাদা/৭.পরমতসহিঞ্ষুতা/৮.নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলি/৯.এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড/১০.দুর্যোগ ও দুর্যোগ মোকাবেলা/১১.বাংলাদেশের
জনসংখ্যা/১২.এশিয়া মহাদেশ
/১৩.আমাদের
মুক্তিযুদ্ধ/১৪.আমাদের ইতিহাস/১৫.আমাদের সংস্কৃতি/১৬.আমাদের বাংলাদেশ
নীতি
বাক্য-গাছ মানুষের পরম বন্ধু।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
চতুর্থ শ্রেণি
রচনা ও সম্পাদনা
ড. মাহবুবা নাসরিন/ড. আব্দুল মালেক/ড. ঈশানী চক্রবর্তী/ড.
সেলিনা আক্তার
১.আমাদের
মুক্তিযুদ্ধ/২.আমাদের বাংলাদেশ: ইংরেজ শাসন/৩.বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও
নিদর্শন/৪.বাংলাদেশের অর্থনীতি: কৃষি ও
শিল্প/৫.বাংলাদেশের জনসংখ্য/৬.জলবায়ু এবং দুর্যোগ/৭.মানবাধিকার/৮.আমাদের দায়িত্ব ও
কর্তব্য/৯.আমরা সবাই সমান/১০.গণতান্ত্রিক মনোভাব/১১.নারী-পুরুষ সমতা/১২.বাংলোদেশের
কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও তাদের সংস্কৃতি/১৩.বাংলাদেশ ও বহি্বির্শ্ব।
নীতিবাক্য-ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
উপসংহার: উপরে আমরা প্রাথমিক স্তরের
পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অনুমোদিত বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইগুলো আলোচনা করেছি।বইগুলো
অত্যন্ত উন্নত মানের। পাঠ্য বিষয় হিসেবে বইয়ে অন্তভুর্ক্ত বিষয়গুলোর নির্বাচন
মৌলিক শিক্ষণীয় বিষয় এবং শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বের আর্থ-সামাজাকি-রাজনৈতিক-আন্তজার্তিক
বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে।আশা করব, সংশ্লিষ্ট সবাই বইগুলো অধ্যয়ন করে
বিষয়গুলো আত্নস্ত করে নেবেন এবং শিশুদের তা আত্নস্ত করাব দরদ ও আন্তরিকতার
সাহোয়্যে। এতে তারা ব্যক্তি জীবন, পরবর্তী শিক্ষা স্তর এবং কর্মজীবনেও উপকৃত হব অনেক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন