শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৫

Why the Talents do not come in Teaching Professin?

মেধাবীরা কেন শিক্ষকতায় আসেন না?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকগণ হলেন, দেশ বা জাতি গঠনের স্থপতি।শিক্ষকরা মেধাবী হবেন এবং তাঁরা হবেন; জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান।মেধাবীরাই শিক্ষকতায় আসবেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু, আসছেন না। আর তাঁরা আসলেও এ মহান পেশা ছেড়ে চলে যান, চলে যেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন, কবে চলে যাবেন তা নিয়ে।বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভাল শিক্ষকের আকাল দেখা দিয়েছে।বলা হয়ে থাকে যে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা ও উন্নত জীবন-যাপন মেধাবীদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি, উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ব্যাক্তিবর্গই সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। বিশেষত: প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকগণের বেতন সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে কিন্তু শিক্ষকগণ সব সময় অবমূল্যায়িত হয়ে আসছেন এবং এখনও হচ্ছেন।পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই যে, বর্তমান অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল, ড. কামাল হোসেন, আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ, সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ড. মহি উদ্দিন খান আলমগীরের মত মেধাবী মানুষজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মহান পেশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের কেহ আমলা হয়েছেন, কেহ বা বিচারক ও প্রখ্যাত আইনজীবী বনে গেছেন।অনুরূপভাবে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরেও অনেক মেধাবী এবং দেশ সেরা ব্যক্তিগণ শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।মহান এ পেশার টানে আবার থেকেও গেছেন অনেকে। যাহোক, বিগত এক দশকে আমাদের দেশে এক ঝাঁক মেধাবী তরূণ-তরুণী প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষকতা করতে এসেছেন। মহান এ পেশার টানে তারা এসেছেন। তাঁদের আমি স্বাগত জানাই। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, তাঁদের বেতন-ভাতা ও পদ মযর্দা বৃদ্ধি করার জন্য। তাঁদেরকে ধরে রখার চেষ্টা করছে শিক্ষকতা পেশায়। সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তাঁদেরকে স্বতন্ত্র বেতন-স্কেল প্রদানের।তাঁদের মধ্যে যাঁরা উপজেলা হতে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বিবেচিত বা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, যাচ্ছেন, আরও যাবেন। আমার আজকের নিবন্ধের বিষয় শিক্ষকরা কেন এ পেশায় আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছেন, পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
কেন শিক্ষকগণ পেশা ত্যাগ করেন: আমাদের দেশে শিক্ষকদেরকে এক কালে খুব সম্মানের চোখে দেখা হত।সমাজের বিত্তশালী ও প্রভাবশালী মানুষেরা তাদেরকে আলাদা মর্যাদা দিতেন । আবার কিছুটা শ্লেষের চোখেও দেখতেন। তবে তারা শিক্ষকদের সমাদর করতেন, একথাটি সুবিধিত।যে কোন বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ করার জন্য তাঁদেরকে কাছে পেতে চাইতেন এখনও এক ধরণের চাওয়া হয়।শিক্ষকদের আরও কাছে পাওয়ার জন্য তারা মেয়ে বা নিকটাত্নীয় স্বজনের মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে আত্নীয় বা পরিবারের সদস্যভুক্ত করে নিতেন। সে সময়কার বিত্তশালী ও প্রভাবশলীগণ ছিলেন, এক একটা রাজ্য বা বিশাল ভূ-সম্পত্তির মালিক।তাঁদের বিত্ত ছিল বটে, কিন্তু চিত্ত ছিল না বলা যায়। ফলে, তারা শিক্ষক বা শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ অথবা আলেম-ওলেমাগণকে পারিবারিক সম্পর্কর বন্ধনে আবদ্ধ করে নিয়ে নিজেদের বিদ্যা-শিক্ষার শূন্যতা গুছানোর চেষ্টা করতেন। পাশাপাশি নিরক্ষর বা অশিক্ষিত রাজা-রাজড়াদের দরবারে শিক্ষকদের উপস্থিতি রাজ দরবারের শোভা বর্ধণ করত। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পর দেশ-বিদেশে যখন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে এবং আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে, তখন শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর মানুষজন সিংহাসনে আরোহন করা আরম্ব করেন। অতপর শিক্ষকসহ ভদ্র-সুধিজনেরা তাঁদের নিকট অপাংতেয় হয়ে পড়তে থাকেন। কেহ কেহ এসব দরবারে স্থান পেলেও, তারা হয়ে যেতে থাকেন, সাক্ষী গোপাল ও চাটুকার।সে আঠার শতক হতে শিক্ষকদের সামাজিক-পারিবারিক অবস্থান এবং মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে থাকে। তাঁরা হয়ে যেতে থাবেন, অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন। রাষ্ট্র পধান এবং সরকার প্রধানগণ হতে সমাজের বিত্তশালী-ক্ষমতাশালী বা এলাকাভিত্তিক ভিত্তিক প্রভাব-প্রতিপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ আর বুদ্ধি-পরামর্শর জন্য শিক্ষক সমাজের হাত বাড়ান না, বলে চলে।তবে একেবারে করেন না তা কিন্তু নয়। তাঁরা এখন খুঁজেন, সম্রাট আকবরের মত নবরত্নের অন্যতম রত্ন আবুল ফজল বা কৌটিল্য অথবা বীরবলের মত মানুষদের পরিবর্ত খয়ের খা, চাটুকার, মো-সাহেব, বশংবদ প্রভৃতি চরিত্রের লোকদের। আর রাজ দরবারের বীড় এড়িয়ে শিক্ষিত-বিদ্যান বা সম্মানিত মানুষ-জন তাঁদের নিকটে পৌঁছতে পারেন না, শিক্ষকমন্ডলী তো দূরের কথা। এ চিত্র এখন গ্রাম-গঞ্জ-শহর সর্বত্র। বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র এটি।প্রতিবেশি দেশগুলোতেও অনেকটা একই রকম চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালযগুলোতে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন, এক ঝাঁক শিক্ষিত-ভদ্র-যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের চলন-বলন, পোশাক-পরিচ্ছদ রুচিশীল। আর মাসে মাসে বেতন-ভাতা পেয়ে একটু স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে জীবন যাপন করে থাকেন, তাঁরা। বেতন-ভাতা কম পেলেও তাঁরা সমাজে একটু স্বতন্ত্র ও কর্মস্থলে অফিসিয়াল পোশাক-আশাক পরিধান করে থাকেন। কিন্তু অন্য পেশার মানুষেরা তাঁদের চেয়ে যারা অনেক বেশি আয়-রোজগার করেন, তারা শিক্ষকদের জীবন-যাত্রায় ঈর্ষা পোষণ করেন। আবার অনেক সমাজপতি-রাজনৈতিক কর্মী-নেতা আমাদের সমাজে আছেন, যারা শিক্ষক সমাজকে দেখলে চোখ বড় করেন। তাদের ভাবখানা এমন যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে ছেঁড়া জামা-কাপড় পরিধান ও সেন্ডেল পায়ে সাধা-সিধা ভদ্র লোক হবেন।আবার রাষ্ট্র বা সরকার; শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন একজন গাড়ি চালকের চেয়ে কম। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকগণকে মর্যাদা দেয়া হয় সাধারণ এক সরকারির সমান। মূলত এসব কারণেই মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসতে চান না বা আসলেও চলে যেতে পারলে বেঁচে যাবন এমন দোলাচালে আছেন।যাহোক, এতক্ষণ যা লিখলাম, আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে। এখন আমরা দেখব মার্কন যুক্তরাষ্ট্রে কেন একজন শিক্ষক ২০ বছর সুনামের সাথে শিক্ষকতা করে পেশা ত্যাগ করেছেন, তাঁর গল্প।তিনি অত্যন্ত চমৎকার একজন মহিলা শিক্ষক। সুদীর্ঘ বিশ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করে এসেছেন, । তিনি কয়েক বছর পূর্বে তাঁর এলাকায় একজন শ্রেণ্ঠ শিক্ষক হিসেবে সম্মানিত হয়েছিলেন।তিনি ছাত্র/ছাত্রীদের অত্যন্ত দরদ দিয়ে পড়াতেন। তাঁর শিক্ষার্থীরা দরিদ্রতম অঞ্চলের। তিনি প্রতিদিন খুব সকালে বিদ্যালয়ে যেতেন এবং শেষ বিকেলে ফিরে আসতেন।তিনি ঘরে আসার সময় নিয়ে আসতেন সম্পাদন করার জন্য বিদ্যালয়ের এক গাধা কাজ। তিনি বেশ প্রস্তুতি গ্রহন এবং পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করে শ্রেণি পাঠ দান কাজ পরিচালনা করতেন। শিশুদের সাথে সারাক্ষণ কাজ করতেন ও তাদের কাজ করাতেন।তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠের বিষয়বস্ত হতে শিখণ ফল অর্জন করানোর জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা চালাতেন, শিক্ষার্থীরাও মজা করে তাঁর পাঠ দান উপভোগ করত।তবে কেন তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিলেন, সেটাই প্রশ্ন। আসলে তিনি তা ছেড়ে দিয়েছেন, তার প্রাপ্য মর্যাদা পচ্ছেন না বলে। এছাড়া তাঁর ওপর সমাজ-শিক্ষার্থী-পরিবার সবার চাহিদা এত বেড়ে গেছে যে, তিনি আর পেরে ওঠছেন না বলেই শিক্ষকতা ত্যাগ করেন। অন্য কারণগুলোর মধ্যে আছে;
 ১. একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা নিয়ে তাঁকে ঐ শিক্ষার্থীর অভিভাবক কতৃক অপদস্থ হতে হয়েছে।
২.বাড়ি ও বিদ্যালয়ের বিশাল কাজের বোঝা তাঁকে ক্লান্ত করে তুলেছিল।
৩. নতুন নতুন শিখণ-শেখানোর ধ্যাণ-ধারণা আয়ত্ত্ব করতে গিয়ে তিনি হাঁপিয়ে ওঠেছিলেন।
৪. রাষ্ট্র-সমাজ-এলাকাবাসীর নিকট হতে প্রত্যাশিত মূল্যায়ন পান নি, তিনি।
৫. তাঁর ওপর প্রত্যাশাটা অপরিসীম হয়ে ওঠেছিল।
৬. তাঁর পরিবার, তাঁর সময় বা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছিল।
উপরে আমরা, মেধাবীরা কেন শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, চলে যেতে চান অথবা আসতে চান না, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এতে হালকা চালে সেই প্রাচীন কাল, মধ্য যুগ, আধুনিক যুগ এবং উত্তর আধুনিক যুগে শিক্ষকদের পারিবারিক-সামাজিক মান-মর্যাদার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সাবেক প্রধান বিচারপতি সদ্য প্রয়াত মোস্তফা কামাল-এর একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন; শিক্ষকতার জীবন, গরিবী জীবন। তাই, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় না গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ে ওকালতি করেছেন।পরে তিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। আসলেই কিন্তু শিক্ষকগণ গরিব নন। তাঁরা যে সব কোটিপতি বিভিন্ন পেশার মানুষ তৈরি করেছেন, তারাই তাঁদের টাকা বা সম্পদ। এসব কোটিপতিরা যখন তাঁদের পা ছুঁয়ে সম্মান করেন, তখন তাঁদের মনে কোটি টাকা পাওয়ার মতো সম্মান পান ও গর্বে বুক ভরে যায়। আসুন আমরা সবাই শিক্ষকদের সম্মান দিই, সম্মানিত করি। তবেই, তাঁরা এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট হবেন এবং শিক্ষকতা অব্যাহত রাখার উৎসাহ পাবেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন