প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ
ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কাযর্ক্রম(পর্ব-১)
মোহাম্মদ
শহীদুল্লাহ
সহকারি
উজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।
বর্তমান সরকারের অতি
অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কাজগুলোর মধ্যে আমার মনে হয়, শিক্ষা ক্ষেত্রের ডিজিটালাইজেশণ
অন্যতম সফল ও বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। সারা দেশে এ নিয়ে যথেষ্ট সাফল্যের সংগে কাযর্ক্রম
এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, সরকার এবং জাতির আখাংখা পুরণ করতে হলে আরও অনেক গভীর
চিন্তা-ভাবনা করে ও সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক ও সক্রিয় অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাতে
হবে। এ নিবন্ধে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান এবং প্রায়োগিক
অগ্রগতি নিয়ে আলোকপাত করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে কর্মরত কর্মকরতা-শিক্ষক এবং
কর্মচারিদের একটা সুদক্ষ দল গড়ে ওঠেছে। আর, তাঁরা সাফল্যের সাথে তথ্য-প্রযুক্তিকে
কাজে লাগিয়ে মন্ত্রণালয় হতে বিদ্যালয় পযর্ন্ত সবর্ক্ষেত্রে অভাবনীয় ও ঈষর্ণীয়
গতিতে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন।সারাদেশে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসগুলো ইতোমধ্যে সকল কাজ
কম্পিউটারে সাহায্যে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এখনও কিছু কিছু প্রত্যন্ত উপজেলায়,
বিশেষত যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানকার অফিসগুলোতে সমস্যা রয়ে গেছে। আর, যেসব
বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি পাঠদান করার জন্য ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও স্ক্রিন
বিতরণ করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ে অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই তা ব্যবহার করা হচ্ছ। সরকার; এ বিষয়টা মনিটরিং করার জন্যে উপজেলা
নির্বাহী কর্মকরতাকে সভাপতি করে উপজেলা একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি
বিদ্যালয়গুলোতে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদান করা হচ্ছে কিনা, তা
পরিদর্শন ও মনিটরিং করছেন।
তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী: বিগত ১০/১৫ বছরের মধ্যে যাঁরা
শিক্ষকতায় এসেছেন, তাঁদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশপাশি
তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন এবং প্রায়োগিক দক্ষতা নিয়ে এসেছেন। তাঁদের একটা অংশ
এসব ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ ও সাবলিলভাবে সব কাজ করতে পারেন। কিন্তু অনেক শিক্ষক আছেন,
যাঁরা কম্পিউটার ধরতেও জানেন না বা প্রাথমিক ধারণাও নেই, তাঁদের। তাঁদেরকে এসব
ব্যাপারে উৎসাহিত করলে বা প্রেষণা দিলে, তাঁরা ভয় পান অথবা অনিহা প্রকাশ করেন।
আমার, অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করেন, এমন অনকেকে দেখিছি তাদের
শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি‘র নিচে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত স্নাতক
ডিগ্রী পাশ বা এসএসসির উরের স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের যখন এসব
কথা বলি, তখন তাঁরা যেসব কথা বলেন, মনে হয় যে আমরা এখনও আমাজান জঙ্গলে বাস করছি।
তাঁরা বলেন, কম্পিউটার এবং ই-মেইল-ইন্টানেট ব্যবহার করেলে নাকি খারাপ হয়ে যাবেন।
আর শিখেই বা কী লাভ! অনেক খরচ, কম্পিউটার-ইন্টানেট ব্যবহারে। এসব শুনলে তাঁদের মনে
ভেসে ওঠে নগ্নতা আর নোংরামি। আসলেই কি তাই। যাহোক, আশার কথা হলো বেশির ভাগ
শিক্ষক/শিক্ষিকাই এসব কুর্সংস্কারাচ্ছন্ন ভাবনা হতে ধীরলয়ে বেরিয়ে আসছেন। আমার মনে
হয়, আগামী ৫/১০ বছরের মধ্যে সকল শিক্ষক তথ-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবেন এবং
এর ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। কেটে দুর্ভাবনাগুলো। সরকার, বিগত ২০১৩ সালে
সর্ব্বাচ্চ ২২ টি পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যেক উপজেলায় মালিটিইমডিয়া
সামগ্রী প্রদানের জন্য তালিকা প্রকাশ করেছে। আর, এসব বিদ্যালয়ে কমর্রত শিক্ষকদের
মধ্যে ২ জন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছ। ইতোপূর্ব মডেল স্কুল এবং অপর ২ টি বিদ্যালয়ে
এস্ব জিনিষ দেয়া হয়েছে এবং ব্যবহার চলছে। আমরা যাঁরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার-সহকারি
উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে আছি, তাঁদেরকে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে ও ব্যবহারিক
দক্ষতায় অভ্যস্ত করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয এবং প্রাথমিক শিক্ষা
অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাগণকে অনেক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন উদ্বুদ্ধ করেছেন। একবার
একজন কর্মকর্তা এ ধরণের একটি প্রশিক্ষনে বলেছেন, কম্টিউটা-ই-মেইলে অভ্যস্থ হওয়ার
জন্য অন্তত পত্রিকাগওলো ওয়েভসাইটে নিয়মিত পড়ুন। এতে কাজ হয়েছে, অনেক।সকল কর্মকর্া
অন্তত কম্পিইটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাপ লাব কাজে করার চেস্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে
আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেলে, হয়তো অনেকেই উৎসাহ পাবেন এবং কম্পিউটার ও
তথ্যযুক্তি জ্ঞান অর্জন ও ব্যবহার জানতে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি
২০০৮ সালের মাঝামাঝি হতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন করছিলাম। আর এসব
বিষয়ে কয়েকটি প্রশিক্ষণও পেয়েছি। ২০১০ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখ অফিসকে একটি ডেল
ব্রান্ডের খুব ভাল ডেস্কটপ কম্পিউটার দেয়া হয়। আমি কর্মরত ছিলাম, রাঙ্গামাটি জেলার
রাজস্থলী উপজেলায়। এখানে বলে রাখা ভাল যে, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালেয় পড়ার সময়
সাংবাদিকতা করেছি, সান্ধ্যকালিন সময়ে। সে সময় ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে একটি কম্পিউটার
সেন্টার হতে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছিলাম। সে থেকে আমার আকাংখা ছিল
ব্যক্তিগতভাবে আমি একটি কম্পিটার নেব। কিন্তু ২০০০ সালের জুন মাস হতে বর্তমান পদে
আছি। আর, বিভিন্ন কারণে ব্যক্তিগত কম্পিউটার কেনা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, আমার পক্ষে।
যাহোক, অফিসে ২০১০ সালে ডেস্কটপটি পাওয়ার পর সকাল-সন্ধ্যা অনুশীলণ করা আরম্ভ করি।
বড় বড় লেখা টাইপ করেতে থাকি এবং নিজে অনেক বিষয়ে লেখা-লেখি করতে থাকি। জাতীয় ও
স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও অন-লাইন পত্রিকায় ২০১০/১১/১২ সালগুলোতে বেশ কিছু নিবন্ধ
রচনা ও প্রকাশ করি, আমি। এর মাধ্যমে কম্পিউটারে কাজ করার মার হাতযশ চলে আসে, আমার।
এরিমধ্যে সরকারি বরাদ্দে একটি মডেম কিনি এবং ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে অফিস কাজ
পরিচালনা করতে থাকি। অবশেষে, আমার ব্যক্তিগত কম্পিউটার কেনার আশাটি পূরণ সম্ভভ হয়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ডিপিএস ভেংগে ৫২,০০০ টাকায এইচপি
প্রো-বুক-২০৪০ মডেলের একটি ল্যাপটপ কিনি, স্থানীয় একজন ইলেক্ট্রনিং ব্যবসায়ির নিকট
হতে। আর এটি কয়েক মাস ব্যবহার করা হয়েছে এমন একটি ল্যাপটপ্টাক। সেটা পেয়ে
তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক যাবতীয় শিখন এবং প্রয়োগ দক্ষতা, আমার আয়ত্ত্বে চলে আসে ধীরে
ধীরে।এখনও শিখছি, নিত্যদিন একটু একটু করে। আমি সবকিছু পারি, তা কিন্তু নয়, মোমুটি
কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে জানেন বা চেনেন, তাঁরা বলতে পারবেন, তথ্য-প্রযুক্তিতে
কতটা পারদর্শী আমি। কিন্তু এ কথা নিদ্ধির্ধায বলতে পারি যে, অনেকেই আমাকে দেখে,
আমার সম্পর্কে জেনে-বুঝে মুগ্ধ হন।আমার শিখন অব্যাহতভাবে চলবে। হয়তো, বড় মাপের
সফ্টওয়্যার ইন্জিনিয়ার বা কম্পিউটার পবিশেষজ্ঞ হব না, কিন্তু আমার কাজ চালানোর
জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হতে পারব বলে, আমার বিশ্বাস। এখানে আমার কথাগুলো
বললাম; এ কারণে যে, অন্তত আমার সহকর্মী যাঁরা আছেন, তাঁরাও চেষ্টা করূন, অনেক
লাভবান হবেন। টাকা-পয়সাও আয় করার সুযোগ পাবেন। আমি নিজে এখনও সে দিকটা ভাবিনি্ এখন
ভাবছি; আউটসোরসিংসহ অন্যান্য আয়বর্ধক কাজ করার কথা। আগে শিখুন, ব্যবহারিক
দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করূন, সুনাম পাবেন, প্রশংর্সিত হবেন, পুরস্কৃত হবেন এবং
সবের্বাপরি দেখিয়ে দিতে পারবেন, আপনিও এ যুগের মানুষ। নতুন প্রজন্ম আপনাকে পেছনে
ফেলতে পারবে না। আমাদের শিক্ষকদের অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, ফেসবুকে ডুকেন।
শুধু ছবি এবং অন্যের ব্লগ-মন্তব্য পড়ে থেমে যাবেন না, আপনিও লিখুন, পড়ুন, জেনে নিন
অডিও-ভিডিও ব্যবহার করে পাঠদানের কলা-কৌশল এবং অন্যান্য কাজ। খারাপগুলো বর্জন
করুন, সুষ্টু-সুন্দর বিনোদন গান, আবৃত্তি, নৃর্ত্য, অভিনয়, খেলাধুলার চর্চার
র্ভিডিও দেখুন, এবং শুনুন। শিক্ষণীয় বিষয়গুলো বেশি বেশি উভোগ করুণ এক পর্যায়ে একটা
মান অর্জন করবেন, বুঝবেন কানটা ভাল, কোনটা মন্দ, আর কোনটা আপনার জন্য প্রযোজ্য।
সম্ভব হলে সাহস করে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনে নিন। ইন্টারনেট ব্যবহারে
অভ্যস্থ হয়ে ওঠুন। দেশে-বিদেশের অনেক শিক্ষক বাতায়ন বা শিক্ষণীয় ওয়েভ-সাইট আছে,
যেগুলো শিখন-শেখানোর কৌশল, উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার, নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের
পরিতৃপ্ত করে তোলার মত অনেক কিছু জানবেন সেখানে। আমার নিজের ফেসবুক লিংকে এরকম
অনেক ওয়েভ সাইট দেখতে পাবেন। সেগুলোরে সাথে সংযুক্ত হোন, পাবেন অনেক কিছু, সমৃদ্ধ
হতে পারবেন শিক্ষক হিসেবে, প্রশিক্ষক হিসেব। আজ এখানে শেষ করছি। ভবিষ্যতে অন্য
কিছু নয়ে লিখব। আসুন, অমরা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সবাই এগিয়ে যাই, অন্যান্য
সেক্টরে চেয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন