শিক্ষার্থীদের মনোযোগী
করার কৌশল ও
শিক্ষামুলক কিছু ভিডিও ওয়েভসাইট
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
আজকের বিশ্বের শিশুদের বলা যায়, হাই-টেক শিশু, বৈশ্বিক শিশু।তারা
তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক কিছুই সহজাতভাবে শিখে নিচ্ছে। সুতরাং যাঁরা শেখান বা
শিখন-শেখানোর দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদেরকেও এসব শিশুর উপযুক্ত হতে হবে। শুধু
গতানুগতিক কৌশলগুলোর প্রয়োগে তাদের শিখন তৃপ্তি মিটবে না, মিটে না। তাই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীগণও
নতুন নতুন শিখানো কৌশল নিয়ে ভাবছেন এবং প্রয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন কিছু
কৌশল এখানে তুলে ধরা হেলো।এখানকার যুগে শিশুদের শিখন-শেখানো কাজে ব্যস্ত বা নিয়োজিত
রাখাই প্রধানতম চ্যালেন্জ এবং এটাই শিক্ষকের মূল কাজ। শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখনই
আজকের চাহিদা। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে নিজেকে কম ব্যস্ত রেখে শিক্ষার্থীদেরকেই বেশি
বেশি কাজ করাবেন। আর তাদের কাজের মধ্য দিয়ে অর্জিত শিখনই হয় ফলপ্রসূ। আমরা সাধারণত
দেখতে পাই যে, শিক্ষক-কেন্দ্রিক শিখনই বেশি বেশি হয়ে থাকে, শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক
কো কাজই না। আধুনিক শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ও
বাইরে যত কাজ করবে, তত বেশি শিখবে ও ভালভাবে শিখবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী,
শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী শিখন-শেখানোই বেশি কাযর্কর। এতে তাদের
শিখন ফল অজির্ত হয় কার্যকরভাবে। এ ধরণের শিখনের ৫ টি কৌশল এখানে তুলো ধরা হলো।
শিক্ষকগণ কৌশলগুলো জেনে নিবেন এবং শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে তা প্রয়োগ করবেন। মার্কিন
শিক্ষা মেনোবিজ্ঞানী ড. রোনাল্ড রিয়োজ এ কৌশলগুলোর প্রবক্তা।
শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিখন-শেখানোর
কাজে নিয়োজিত রাখার কৌশলসমূহ: ফিলিপ স্কিলেচির মতে পাঁচটি
(০৫) উপায়ে শ্রেণি পাঠ দান ও শিখনের কাজে শিশুদের মনোযোগী করে তোলা যায়। তবে মূল
কৌশলগুলো উদ্ভাবন করেন, ড. রোনাল্ড। দু‘জনই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী এবং শিক্ষক
প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে থাকেন।
১.এন্গেজমেন্ট বা কাজে নিয়োজিতকরণ:
এ স্তরটি শিশুদের নিবীড মনোযোগ-দৃঢ় অঙ্গীকারের সাথে সম্পৃক্ত।শিক্ষার্থীরা কাংখিত
ফল বা শিখনফল অর্জনের জন্য এমন কাজে নিয়োজিত হবে এবং তা হবে তাদের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কাজটি করার জটিলতা অতিক্রম করতে করতে শিক্ষার্থীরা উচ্চস্তরে ও
গভীরতা অনুধাবন করে লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
২.স্ট্রাটেজিক কম্পলায়েন্স বা
কৌশলগত অনুগত্য: এ স্তরে শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে কাজে ডুবে যাবে, কিন্তু তাদের
অঙ্গীকার হবে কম মাত্রার। এটি তাদের জন্য এমন এক কাজ হবে, যেটিতে পূর্ব শিখনের
ধারাবাহিকতা অথবা সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু পরবর্তী শ্রেণিতে তাদের কাজের বা
শিখনের জন্য খুব উপকার বয়ে আনবে। তারা কাজটি শেষ পযর্ন্ত করতে থাকবে। আর পরিশেষে
সাফল্য না পেলে পরিহার করবে।
৩. রিট্যুয়াল কম্পায়েন্স বা
প্রথাগত আনুগত্য: এ স্তরের কাজ হবে কম মনোযোগ-কম অঙ্গীকারপূর্ণ। নেতিবাচক
ফলাফল পরিহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থী শিখনফল অর্জনের জন্য যে কোন উপায়ে সাফল্য পেতে
সচেস্ট থাকবে।তার কাজ হবে সাফল্য অর্জনে অদম্য থাকা। এ স্তরে শিক্ষার্থী অর্জন হবে
কম এবং ভাসা ভাসা।
৪. রিটিরিটিজম বা পলায়ন প্রবণতা:
এধরণের কাজে শিক্ষার্থীর শিখন প্রেচেষ্টা হবে হালকা চালে বা পরিত্যাগমূলক।এটা হবে
চাহিদাপূরণমূলক, কিন্তু তা বাধাগ্রস্থ করা বা এটা পাওয়ার জন্য অন্য কাজের বিকল্প
সন্ধান করবে না। এতে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে না এবং কম শিখন হবে অথবা একদম কোন
শিখন হবে না।
৫. রিভেলিয়ন বা বিদ্রোহী মনোভাব:
এ স্তরে শিক্ষার্থীর মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হবে-কোন অঙ্গীকার থাকবে না।কাজটি
হবে এমন যে, শিক্ষার্থী করতে চাইবে না, এভাবে আচরণ করবে যাতে অন্যরাও না করে, অথবা
বিকল্প কিছু করতে বাধ্য করবে সে যার প্রতি তার কোন অঙ্গিকার নেই। আনুষ্ঠানিক শিখন এবং
বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থাকলে থিক্ষার্থী কম কাজ করবে বা কোন
কিছুকে গুরত্ব দিবে না।
শিক্ষামূলক ওয়েভসাইট পরিচিতি: শিখন-শেখানো কার্যক্রম উপভোগ করা
এবং তা থেকে কৌশল ইত্যাদি আয়ত্ত্ব করার জন্য নিন্মে কিছু ওয়েভসাইটের নাম দেয়া হলো।ওয়েভসাইটগুলো
আমার সহকর্মী শিক্ষকমন্ডলী উপভোগ করে করে তাঁদের শ্রেণি পাঠ দান কার্যক্রম
রেডিক্যাল পরিবর্তন কামনা করব।
১.ইউটিউব: এটি ভিডিও দেখার
একটি ওয়েভসাইট। যত ইচ্ছা যে কোন বিষয়ে ভিডিও উপভোগ করতে পারেন। তবে আমাদের লক্ষ্য
হবে, দেশ-বিদেশের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানগুলোর ভিডিও।
২.স্কুল টিউব:
শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য স্কুল টিউবে রয়েছে বিশাল ভান্ডার। এতে আছে শত শত
প্রযুক্তিগত শিখন-শেখানো কৌশল, শিশুবান্ধব ভিডিও, পাঠ-পরিকল্পনা ইত্যাদি।
৩. টিচার্স টিভি: এটি
শিক্ষকদের জন্য সহায়ক বিশাল শিক্ষণীয় বিষয় ও জিনিষে সমৃদ্ধ একটি ভিডিও
ওয়েভসাইট।শ্রেণিকক্ষে উপকরণ ব্যবহার, প্রয়োগ, পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি ও অনুসরণ করে পাঠ
দান করার কলা-কৌশল জানার জন্য এটাও খুবই উপকারি সাইট।
৪. নেক্সট ভিসটা: এটা
শিক্ষকদের জন্য উপযোগি সব শিক্ষামূলক উপকরণ সংবলিত একটি ওয়েভসাইট।
৫. একাডেমিক আর্থ: এটা মহান সব
খ্যাতিমান শিক্ষকদের প্রদর্শনী পাঠ সংলিত ভিডিও প্রদর্শনী ওয়েভসাইট।
৬. স্ন্যাগ ফিল্মস: এ
ওয়েভসাইটে শিক্ষামূলক ডকুমেন্টারি তথ্যচিত্র বা চলচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
৭. হাউ স্টাফ ওয়ার্কসৃুডপ এটি
একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভিডিও ওয়েভসাইট। এতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ শিক্ষামূলক
দু:সাহসী সব ভিডিওচিত্র ও উপকরণ আছে, যা উপভোগ করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
৮. ভিডলার: এটা এমন ভিডিও
মাধ্যম যার সাহায্যে ভিডিও চলাকালে বিভিন্ন মন্তব্য করা যায়।আর ক্যামেরার সাহায্যে
তা ধারণ করে নেয়া যায়।
৯. সিএনএন স্টুডেন্টস নিউজ:
ছাত্র/ছাত্রীদের শিখনের জন্য এটি একটি কার্যকর ভিডিও অনুষ্ঠান।
১০. খান একাডেমী: বাংলাদেশী
বংশোদ্ভুত আমেরিকা প্রবাসী জনাব সালমান খানের খ্যাতি দুনিয়া জুড়ে। তিনি গণিত ও
বিজ্ঞানের জটিল সব বিষয়ের ভিডিও তৈরি করে তা উপস্থাপন এবং শিক্ষা দান করে এখন
কোটিপতি, এ সালমান খান। এককালে তিনি ছিলেন একজন বেকার যুবক। তাঁর ভিডিও প্রদর্শনের
উদ্যোগ তাঁকে বিশাল জনপ্রিয়তা ও আর্থিক সাফল্য এনে দিয়েছে।
এছাড়াও ভিমিও, বিলিপ ডট টিভি, ডট সান, হুলু, টেড এডু, দ্যা ফ্যাকাল্টিজ,
বিগ থিং ইজ, লার্নার্স টিভি ইত্যাদি অনেক শিক্ষামূলক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহায়ক
ভিডিও ওয়েভসাইট রয়েছে।
উপরে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিখন-শেখানোর আধুনিক কিছু কলা-কৌশল এবং
শিক্ষামূলক কিছু ভিডিও চ্যানেলের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।আশা করি আমরা প্রাথমিক
শিক্ষা পুরবারে সকল সদস্য খুবই উপকৃত হবো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন