সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সহায়ক
পাঠ সামগ্রী
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।
শিশুদের মননশীলতার চর্চা শুরু হয়, শৈশবকাল থেকে।শিশু মনে এর
প্রভাব থাকে, জীবনব্যাপী। প্রত্যেক জাতি আদিতে ছিল কৃষি ভিত্তিক। পরে হয়েছে
শিল্প-কারখানা ভিত্তিক। এখন যে ব্যক্তিগতভাবে যত বেশি জ্ঞান ও তথ্য ধারণ করে, সে
তত বেশি শক্তিশালী ও সফল। সুতরাং জ্ঞান এবং তথ্যজ্ঞ ব্যক্তিতে পরিণত করতে হলে
প্রত্যেক শিশুকে সহায়ক পরিবেশ এবং সুযোগ করে দিতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে
সাধারণত ১ম শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ১১ টি বিষয়
পড়ানো হয়ে থাকে। আর সেগুলো হলো; বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব
পরিচয়, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা (৪ ধর্মাবলম্বীদের জন্য) সংগীত, চারু-কারু এবং শারীরিক
শিক্ষা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সকল কার্যক্রম যেন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ
হয়ে পড়েছে। শিক্ষার আবহটা ভালভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না। কিন্তু আধুনিক শিশু শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব কিছুর কেন্দ্র-বিন্দু হলো শেখন-শেখানোর আনন্দদায়ক একটি
পরিবেশ। যেদিকেই দেখেন দেখতে পাবেন, বই-পত্র, সহায়ক পাঠ সামগ্রী, তথ্য-প্রযুক্তির
যন্ত্রপাতি, সাংস্কৃতিক চর্চার যন্ত্রপাতি, খেলনা সামগ্রী প্রভৃতিতে বিদ্যালযগুলো
ভরপুর।বিদ্যালয় প্রাঙ্গনগুলো হয়; শিশু বান্ধব, নিরাপদ পরিবেশ সম্মত, স্বাস্থ্য
সম্মত, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, বাগান, শিশু পার্কসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কল-কাকলীতে মুখরিত।
আমরা কী আমাদের সনাতন বা হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে
এভাবে রূপ দিতে পারি না? সবাই চাইলে পারব। এক সময় বিদ্যালযগুলো বকাটেদের উৎপাতের
কেন্দ্র হয়ে যেত, ছুটির পরে। এখন কিন্তু মানুষ তা আর করে না।রাত-দিন নৈশ প্রহরী
এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষার্থীদের পদচারণা থাকে এখন বিদ্যালয়ে।যাহোক, আমার আজকের
লেখার বিষয় ‘শিখন আবহ বা শিখন পরিবে সংবলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়।’
বিদ্যমান পরিস্থিতি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো
প্রতিদিন সকাল ৯ টায় ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষক/শিক্ষিকাগণের পদচারণায় কোলাহলপূর্ণ হয়ে
ওঠে। বিকেল ৪.৩০ পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে। শিক্ষকগণ একটার পর একটা শ্রেণিতে প্রবেশ
করেন ও শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু শিক্ষক ও শিশুদের মাঝে শিখন
আবহ বা পড়ালেখা কেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলোতে আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক আবহটা তেমন একটা
পরিলক্ষিত হয় না। পাঠদান ছাড়াও শিক্ষকগণ ছাত্র/ছাত্রীর ভর্তি, হাজিরা, উপবৃত্তি
বিতরণ, বিস্কুট বিতরণ, অভিভাবকগণের সাক্ষাৎ, গমনাগমনসহ নিত্যদিন অনেক কার্যক্রম
পরিচালনা করে থাকেন। এসব কাজই ঘুরেফিরে চলে।আমরা যারা প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন
প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই কী আর কী কী করা যায় বিদ্যালয়ে, তা নিয়ে একটু
ভাবতে পারি না? শিশুরা মননশীল হয়ে ওঠার সুযোগ পায় এবং জীবনব্যাপী শিখতে আগ্রহী হয়
ও নিবীড পাঠচর্চায় অভ্যস্থ হয়ে ওঠতে পারে, এমন কিছু কী আমরা করতে পারি না?
বিদ্যালয়গুলোকে
শিখন সহায়ক করে তোলার কৌশলসমূহ:
.
লাইব্রেরী গড়ে তোলা: প্রত্যেক সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে একটি করে লাইব্রেরী কর্ণার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু
শিশু সহায়ক পাঠ সামগ্রী বা বই-পুস্তক দিয়েছে। সেগুলো প্রায় বিদ্যালযেই এলোমেলোভাবে
পড়ে আছে। সেগুলোকে সাজিয়ে-পুছিয়ে একটা লাইব্রেরী গড়ে তুলতে পারি, আমরা। মীনা কার্টুনের
বই, শিশু তোষ ছড়া, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, জীবনী, ইতিহাস, ভূগোল,
তথ্য-প্রযুক্তিসহ হরেক রকম বইও পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন নিয়ে লাইব্রেটি সাজানো
হবে। আরও থাকবে ছবি, চিত্র, সুন্দর সুন্দর সব প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বৈজ্ঞানিক
আবিস্কারের ছবি প্রভৃতি। শিশুরা মজা করে এসব বই পড়বে, দেখবে, কাজ করবে, ছবি দেখবে।
.
খেলনা সামগ্রীর কর্ণার: এখানে থাকবে সব ধরণের শিশু খেলনা
সামগ্রী। শিশুদের সৃজনশীল সব কাজ-কর্ম। মাটির খেলনা, স্থানীয় খেলনা, নানা জাতের
খেলনা সামগ্রী।
.
উপকরণ কর্ণার: সহজলব্য এবং তৈরি ও সংগৃহীত
সুলভ-দুর্লভ সব ধরণের উপকরণ ও মাটির তৈরি জিনিষপত্র, এখানে থাকবে। আর শিশুরা যখন
মনে করবে, এগুলো ব্যবহার করবে এবং খেলবে।শিখন-শেখানোর কাজ করবে।
.
সাংস্কৃতিক যন্ত্রপাতি বা জিনিষপত্র:, সাংস্কৃতিক সরঞ্জামাদি ও
যন্ত্রপাতির যাবতীয় সব আইটেম এখানে শোভা পাবে।থাকবে হারমোনিয়াম, পিয়ানো, ঢোল-তবলা
প্রভৃতি।
.
তথ্য-প্রযুক্তি কর্ণার: কম্পিউটার-লেপটপ, মোবাইল, প্রিন্টার,
পেন-ড্রাইব, মডেম, অডিও-ভিডিও সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিসহ সব কিছু এখানে
থাকবে।
.
বিদ্যালয় প্রাঙ্গন হবে শিশুবান্ধব: বিদ্যালয়ে বাগান থাকবে। থাকবে শিশু
পার্ক। থাকবে স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট, থাকবে খেলার মাঠ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, থাকবে
মেয়ে শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ। শিশুরা বিদ্যালয় ও শিক্ষকদেকে মনে করবে নিজ নিজ বাড়ির
চেয়ে ভাল, নিরাপদ ও আবর্ষণীয় কিছু।
উপরে আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযগুলোকে শিশু-বান্ধব এবং
শিশু শিখন সহায়ক করে গড়ে তোলার বিষয়ে আলোকপাত করেছি। উপরোক্ত কৌশলগুলা অনুসরণের
মাধ্যমে আমাদের দেশের এসব ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাইলেই
আধুনিক রূপ দিতে পারি। আর সেগুরৈাকে পরিণত করতে পারি এক একটা শিশু শিখনের আলো ঘরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন