উত্তম
শিক্ষক হয়ে ওঠার উপায় কী?
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আজ আমার লেখার বিষয়
উত্তম শিক্ষক।শিক্ষকগণ সাধারণত হবেন; বিষয়জ্ঞানে সমৃদ্ধ ও পাঠদান কৌশল প্রয়োগে
হবেন পটু। তবেই, সে শিক্ষককে বলা হবে,
উত্তম শিক্ষক। আর যাঁর চলন-বলন, আচার-আচরণ, পারিবারিক-সামাজিক বোধ, লেন-দেন
সবকিছুতে থাকবে সৌন্দরয বোধ; এমন শিক্ষককে বলা যায় আদশর্স্থানীয়। মাকির্ন
যুক্তরাষ্ট্রের একজন সফল শিক্ষকের ৪৫ বছরের শিক্ষতার অভিজ্ঞতার আলোকে অভিমত হলো,
উত্তম শিক্ষকের ৮ টি কৌশল আয়ত্ত্বে থাকবে। শিক্ষকদের অনেকেই আছেন, আদর্শ শিক্ষক।
কিন্তু, তাঁর বিষয় জ্ঞান এবং পাঠদানে পটু ও কৌশলী নন। তাই, সকল শিক্ষক যেমন উত্তম
শিক্ষক হন না, তেমনি আদশর্স্থানীয়ও হতে পারেন না। যাহোক, উত্তম শিক্ষক হয়ে ওঠার
জন্য এখানে ৮ টি কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
১.শিক্ষকগণ হবেন, সহযোঘিতামূলক মনোভাবাপন্ন, কতৃত্ব পরায়ণ নন: একজন
উত্তম শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানকারি হবেন না, হবেন নিজেই শিক্ষারথী। শিক্ষার্ীদের
তিনি কি পড়াতে চাচ্ছন, তার চেয়ে শিক্ষার্ীরা শিক্ষকের নিকট কি শিখতে চায়, তার ওপর
গুরুত্ব দিতে হবে। তারা শিক্ষককে কেমন দেখতে চায়, ভাবতে হবে শিক্ষককে। তারা যেভাবে
চায়, সেভাবে তাদেরকে তৃপ্ত রতে পারাই হবে শিক্ষকের প্রধান কাজ। শিক্ষক যা চান, তা
তাদের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের চাহিদা মেটানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এভাবে
শিক্ষক-শিক্ষার্ীর মধ্যকার আন্তক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষক নিজেই আবিস্কার করে নিতে
পারেন নিজেকে।তিনি কো্ন্ কৌশলে শিক্ষার্ীদেরকে শিখনফল অজর্ন করাতে সক্ষম হবেন। আর
এভাবে ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট শিক্ষক হয়ে ওঠবেন উত্তম শিক্ষক। আর ছাত্র/ছাত্রীরাও
হয়ে ওঠবে উত্তম এবং শিক্ষকের প্রতি অনুগত। অর্থাৎ সহযোগিতা দিয়ে শিক্ষার্ীর মন
পেতে হবে, কতৃত্ব প্রদশর্ন করে নয়।
২. শিক্ষক-শিক্ষার্ী সকলেই শিখছেন: শিক্ষকদের
মনোভাবে এবং কার্ক্রমে প্রকাশ পাবে যে, তাঁরা শিক্ষার্ীদের সাথে সাথে শিখে
যাচ্ছেন। তাঁরা পড়বেন, শিখবেন, লিখবেন, নিত্যই পড়াশানা কেন্দ্রিক কাজ করবেন, উপকরণ
তৈরি করবেন, নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে পাঠ দিচ্ছেন, তথ্য-প্রযুক্তি প্রয়োগ করছেন,
শিক্ষক-শিক্ষার্ী প্প্রত্যেকে হয়ে যাচ্ছেন শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় একাকার। এক
পর্যায়ে শিক্ষক নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন, তিনিই শিক্ষক; অন্যরা শিক্ষার্ী। কিন্তু,
দৃশ্যত সবাই শিখছেন, এমন একটি আবহ তৈরি করে নিতে হবে শিক্ষককে। তবেই, তিনি হবেন,
উত্তম শিক্ষক।
৩. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হবেন, যেন জাহাজের নাবিক:
শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে হয়ে যাবেন বিশাল সমুদ্রে ভাসমান একটি জাহাজের দক্ষ
একজন নাবিক। নাবিক জানেন, তার জাহাজ কোন্ দিকে ও গতিতে চালালে চলবে ভাল, গন্তব্যে
পৌঁছতে পারবে নিরাপদে ও নিশ্চিতভাবে। তেমনি শিক্ষক বুঝবেন, তার শিক্ষার্ীরা কি
পেলে বা শিখলে অনুসন্ধিৎসু হবে, আরও শিখবে। শিখন হবে, ফলপ্রসূ। জাহাজের নাবিক যেমন
উত্তম বা দক্ষ হলে, শিক্ষার্ীরাও ভবিষ্যতে উত্তম হবে, দক্ষ হবে; এটা অবশ্যম্ভাবী।
৪. শিখনে কাঠিন্য দূরকরণ: আমরা যখন অনুভব
করি যে, কোন বিষয় নিজের ও শিক্ষার্ীদের
নিকট শিখন-শেখানো কঠিন, তখন তা সত্যিই কঠিন। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে
ও পরিস্থিতিতে তার সহজীকরণ কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। আর শিখাতে হবে শিক্ষককে নিজে ভাল
করে শিখে নিয়ে।তাদের প্রতি যতটা পারা যায় সহনুভূতি দেখিয়ে শিখনে আগ্রহী করে তুলতে
হবে এবং শিখাতেই হবে, এ মনোভাব থাকতে হবে। তাদেরকে পুণ পুণ চেষ্টা করাতে হবে।
প্রয়োজনে নব নব চার্জ দিতে হবে এর্ চারজ নিতে হবে। অধ্যবসায় হবে চালিকা শক্তি, এ
ক্ষেত্রে।
৫. ঊষ্ঞ পরিবেশ সৃস্টি করতে হবে, শীতলতা দিয়ে নয়:
তাত্তিক বা জটিল কোন বিষয় সামনে আসলে অথবা গুমড় আবহাওয়া দেখা দিলে গল্প, ছড়া, গান,
নৃত্য ইদ্যাদি বিনোদনমূলক কিছু করে শিখনের দিকে ছাত্র/ছাত্রদেরেকে আকৃষ্ট করতে
হবে। ত্ত্ত্বকে তাত্ত্বিক উপায়ে শেখানো অনেকটা দুরূহ ব্যাপার।সুতর্াং ইতিবাচক
মনোভাব নিয়ে শিখালে বা কাজ করালে তা সহজ হয়ে ওঠবে এবং শিখনফল অাজর্ত হয়ে যাবে এক
সময়ে। একই ধরণের বিষয়ে নব নব কৌশলে শিখিয়ে এবং ব্যাহারিক কাজ করিয়ে নিলে তা এক
পর্ায়ে শেখা হয়ে যাবে। নেতিবাচকতা বিষ ক্রিয়ার নামান্তর। ঝুঁকি নিতে শিক্ষার্ীদের
উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষককেই সামনে থেকে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলে সবকিছু জলের মত সহজ
হয়ে ওঠবে।
৬. ভুল স্বীকার করা: শিক্ষকের ভুল হবে না,
এমন ভাবা মঙ্গলজনক নয়। অনেক সময় শিক্ষকও ভুল করে থাকেন, ছাত্র/ত্রীদেরকেও ভুর বুঝে
থাকেন। কিন্তু এ জন্য দু‘পক্ষের মাঝে বৈরিতা কাম্য হতে পারে না। শিক্ষক ভুল করলে
ছাত্র/ছাত্রীর নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়াই ভাল। তাঁকে গোঁ ধরে থাকা চলবে না। পরিবেশকে
ঊষ্ঞ করে নেয়াই উভয় পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক। এ ক্ষেত্রে অন্য শিক্ষকের ভূমিকা পালনও
সফল কৌশল হতে পারে। আর শিক্ষার্ীর ভূল হলে তাকে শুদরে দেয়াই ভাল। তাকে শাস্তি দিয়ে
বা বকা-ঝকা করা উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। সহায়তা বা ফিডব্যাক দিয়ে সংশোধন করানোই
সবচেয়ে উত্তম।
৭.শ্রেণিকক্ষে ইতিবাচকতার আবহ সৃস্টিকরণ: শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে এমন একটি
পরিবেশ সৃস্টি করবেন যেন সবকিছু ভাল হচ্ছে। ইতিবাচক মনোভাব নেতিবাচক সবকিছুকে
চাপিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সফল শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়াকে। শ্রেণি পাঠদান
কাযর্ক্রমে অনেক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে এটাই স্বভাবিক। কিন্তু, এমন পরিস্থিতিকে
আরও অস্বভাবিক করে তুল্লে ভাল ফল আসে না। তাকে জয় করে নিয়ে শিখন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
অজর্ন করাই হবে, আসল কাজ।
৮. সমন্বিত দক্ষতা অজর্ন হবে লক্ষ্য: একবিংশ
শতাব্দির শিখনরুপও বৈচিত্রেময়। যখন যে পরিস্থিতিতে যা দরকার মনে হবে, তাই করতে
হবে। যে শিশুর যে দক্ষতা আছে তাকে সামনে রেখে, তাকে তার উপযোগি শিখনই নিশ্চিত করতে
হবে। কেহ হবে চিকিৎসক, কেহ প্রকৌশলী, কেহ বা নামজাদা খেলোয়াড়। সবাই
চিকিৎসক-প্রকৌশলী হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। যার যে বিষয়ে মেধা আছে, তাকে তাতেই সেরা
করে তুলতে চাইতে হবে এবং হয়ে ওঠতে পথ দেখাতে হবে। তাদের চোখে সারা বিশ্ব আজ খোলা।
সে শুধু নিজ দেশের প্রেক্ষাপট বুঝবে না, হয়ে ওঠবে বৈশ্বিক। বুদ্ধিবৃত্তিতে
শিক্ষার্ীরা হবে বিশ্ব দরবারে জায়গা পাওয়ার উপযোগি।
আমরা দেখতে পাই যে,
আমাদের দেশে শিক্ষকরা ছাত্র/ছাত্রীদেরকে তাদের মত শিক্ষক হতে উদ্বুদ্ধ করেন বেশি।
অথবা শুধু চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার জন্য উদ্বুধ্ধ করে থাকেন। আবার, শিক্ষকের
জানা-শোনার পরিধি এবং সংক্ষীর্ণ দৃস্টিভঙ্গির অধিকারি হলে তার গড়ে তোলা শিষ্যরাও
তেমনই হয়ে ওঠে। কিন্তু এটা কখনও কাম্য হতে পারে না। শিক্ষককে হতে হবে বড় মাপের
মানুষ। তবেই তার শিষ্যরাও তার মত হবে। উপরোক্ত কৌশলগুলো অবলম্বন করলে, কোন শিক্ষক
হবেন উত্তম, আদশর্স্থানীয় এবং সফল। তার শিষ্যরাও হবে, কাংখিত মানের। জাতি পাবে,
কিছু বিশুদ্ধ ও ভাল মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন