এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষক/শিক্ষিকা ও
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে
শিক্ষকতা পদে এসছেন, এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষক/শিক্ষিকা। পুরুষ শিক্ষকগণ সবাই ন্যুনতম
স্নাতক ডিগ্রী পাশ। আর, মহিলা শিক্ষকগণও কম পক্ষে এস.এস.সি বা এইচ.এস.সি পাশ। আবার
পুরুষ-মহিলা শিক্ষক/শিক্ষিকাগণের মাঝে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক িআছেন, যাঁরা সম্মানসহ
স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী। যাহোক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এখন চলন-বলন,
পোশাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা, সাংস্কৃতিক মানস, রুচিশীলতা,
তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসহ সব কিছুতে অনেক বেশি মানানসই। এসব শিক্ষক আন্তরিক ও
সক্রিয়ভাবে চাইলে, আগামী ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে একবিংশ
শতাব্দীর উপযোগি করে গড়ে তুলতে পারবেন।শিক্ষার্থীরা সবাই হয়ে ওঠবে মানসম্মত ও
বিশ্বমানের। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল শিক্ষা ভাবনাকে সামনে রেখে কাজ করলে, সহজেই এ
লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে।শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী এবং প্রথমিক শিক্ষা স্তরে দেশ-বিদেশের
সাম্প্রতিক ভাবনা এবং ধ্যারণ-ধারণাসমূহ আত্নস্থ করে যদি শিক্ষক-কর্মকর্তা সবাই কাজ
করে যান, তবে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যে চেহারা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা
অচিরেই আরও উজ্জ্বলতা পাবে। এ নিবন্ধে প্রাথমিক শিক্ষাকে আমি কেমন দেখতে চাই, তার
কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো।
.
একবিংশ শতাব্দীর উপযোগি শিক্ষক: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল
শিক্ষক হবেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি পেশাগত ও বিষয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ। তাঁদের
প্রত্যেকের হাতে থাকবে, একটি করে ল্যাপটপ।তাঁরা পেশাগত অনুশীলণে হবেন, সিদ্ধিহস্ত।আর
তাঁদের একটি পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি বা মূল্যবোধ থাকবে।বিশেষত প্রাথমিক স্তরের
শিক্ষাক্রম, পাঠ্য বিষয়গুলো, উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার, উত্তম পাঠদান, মাল্টিমিডিয়ার
ব্যবহার করে পাঠদান, শিশুর আচার-আচরণ, চাকুরি বিধি-বিধান, বিদ্যালয় সম্পর্কিত
যাবতীয় নিয়ম-কানুন সব কিছুতে শিক্ষকগণ হবেন, সুদক্ষ।উচ্চতর শিক্ষাগত আছে কোন
শিক্ষকের, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে দক্ষ নন, এমন হলে কাজ হবে না। ভাল শিক্ষক
হওয়ার জন্য নিরন্তর আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
.
শিক্ষার্থীরাও হবে একবিংশ শতকের
উপযোগি: আমাদের মত
দেশে চাইলেই রাতারাতি কাংখিত মানের শিশু তৈরি হবে এমন ভাবনা অবাস্তব। তবে, আমরা
বিশ্বস করি শিশুরা হলো; কাদা মাটির মত। তাদের শিক্ষকরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই
হবে।শিক্ষক সকল আন্তরিক প্রচেষ্টা, শ্রম, মেধা, নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও প্রয়োগ এবং
যে শিশুর জন্য যে কৌশল প্রযোজ্য সেসব কৌশল প্রয়োগ করে চেষ্টা করলে, সাফল্য অনিবার্য।
বিশেষত প্রফেসর হাওয়ার্ড গার্ণারের ৮ বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক পাঠদান, উপকরণ ব্যবহার
এবং মূল্যায়ন করার কৌশলসমূহ অনুসরণ করা হলে, প্রত্যেক শিশু কোন না কোন বিষয়ে দক্ষ
হয়ে ওঠবে এবং সকল বিষয়ে ভাল হবে।
.
উন্নত মানব সম্পদ গড়ে তোলা: শিক্ষকদের সবার লক্ষ্য হবে,
শিশুদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শন করানো। তাদেরকে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক,
সামজিক, মানবিক, আধ্যাত্নিক, নৈতিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন করে এবং তাদেরকে
দেশাত্নবোধে, বিজ্ঞান মনস্কতায় ও সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করাই হবে প্রত্যেক শিক্ষকের
ব্রত।আর এ শব্দগুলোর প্রত্যেকটির অন্তর্নিহীত ও গুঢ় অর্থ ধারণ ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বস
করে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে হবে। কেন বাংলাদেশের শিশুরা অন্তত
উপমহাদেশীয় শিশুদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হয়, এমন হবে না? আপনাদের
মত শিক্ষকগণই তো বঙ্গবন্ধুর মত বড় মাপের রাজনীতিবিদ, জিয়াউর রহমানের মত সেনা নায়ক,
ড. ইউনুসের মত নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, সিয়ার্স টাওয়ারের নকশাকার প্রখ্যাত প্রকৌশলী
ফজলুর রহমান খান, ডা. নুরুল ইসলামের মত চিকিৎসক, ড. জাফর ইকবালের মত
শিক্ষাবিদ-কম্পিউটার বিজ্ঞানী-লেখক, বিশ্ব বিখ্যাত ভিডিও শিক্ষক সালমান খান,
সাকিবুল হাসানের মত ক্রিকেট খেলোয়াড় তৈরি করেছেন এবং এমন বড় মাপের মানুষ তৈরি
করছেন।
.
জাতীয়তাবোধ এবং দেশপ্রেম: এ পৃথিবীতে দর্শন-বিশ্বাসের অভাব
নেই। আমার কাছে স্বদেশ প্রেম, স্ব-জাতীয় বোধ এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা বোধের চেয়ে
বড় কিছু আছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেক শিশুর মাঝে এ বোধ জাগ্রত হবে যে, তারা এক
একজন মনুষ্য সন্তান, নিজেদেরকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার উপযোগি করে গড়ে তুলবে,
কিন্তু তার মধ্যে কাজে-কর্মে সবকিছুতে দেশপ্রেম ও স্ব-জাতির মান-মর্যাদা উঁচু করে
তুলে ধরাই হবে, জীবনের লক্ষ্য।
.
সবাই সাক্ষর ও শিক্ষিত হবো: প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর
লক্ষ্য হবে, সবাইকে সাক্ষর এবং শিক্ষিত করে তোলা। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক হবে
সুনাগরিক। সবাই শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর ও উন্নত হবে, এমন ভাবনা সবার মধ্যে কাজ
করবে। দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই হবো, একে অন্যকে উন্নত করে তোলার মানসিকতা
সম্পন্ন। তবেই, জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে বুক ফুলিয়ে বলতে পারব, আমরাও উন্নত
ও সভ্য।
.
উপসংহার: চলার পথে অনেক বাধা-বিপত্তি এবং
চাওয়া-পাওয়ার বেদনা থাকবে।বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরে কর্মরত শিক্ষকদেরও অনেক
অপূর্ণ দাবি-দাওয়া এবং মান-মর্যাদার বিষয় আছে। তবে সব চাওয়া-পাওয়া এবং সীমাবদ্ধতার
উর্ধ্বে ওঠে এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষক-শিক্ষিকা যদি আন্তরিক ও সক্রিয় প্রচেষ্টা চালিয়ে
একটি উন্নত জাতি গড়ে তুলতে পারেন, তাতে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন