মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতার ইতিকথা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
শিক্ষকতা একটি জনপ্রিয় পেশায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষকতা এখন
সাধারণ পড়াশোনা কার্যক্রম হতে আকর্ষণীয় একটি পেশায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে।শিক্ষা.
শিক্ষার্থী, যুবক, বয়স্কদের মনকে বিকশিত করে এবং তাদেরকে সমাজে নাগরিকদের সেবা
দেয়ার জন্য প্রস্তুত করে তেলে। ৫৬১
খ্রীস্টাব্দপূর্ব সময়ে চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে
যাত্রা ঘটান। তিনিই হলেন, সর্বপ্রথম বিখ্যাত ব্যক্তিগত শিক্ষক। প্রাচীন গ্রীচে,
অনেক লোক তাদের শিশুদের পড়ানোর জন্য ব্যক্তিগত শিক্ষক নিয়োগ করতেন। মধ্যযুগে
ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা
হয় এবং শিক্ষকদের প্রয়োজণীয়তা দেখা দেয়।
ঔপনিবেশিক যুগে
শিক্ষকতা: মার্কিন
ঔপনিবেশিক যুগের প্রারম্ভে গৃহবধূ এবং ধর্মযাজকগণ শিক্ষকতা করতেন। তীর্থযাত্রীরা
১৬৩৫ সালে, আমেরিকায় প্রথম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং এর পরই
মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করা হয়। অতপর ছেলেদের জন্য মাধ্যমিক স্তরে ল্যাটিন
গ্রামার স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাসুসেটস রাজ্যে প্রতি ৫০
টি পরিবারের জন্য ১ টি করে প্রাথমিক
বিদ্যালয় এবং প্রত্যেক ১০০টি পরিবারের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি করে ল্যাটিন
গ্রামার স্কুল গড়ে তোলা হয়। শিক্ষকগণ; পড়তে, শিখতে ও ধর্ম বিষয়ে শিক্ষা দিতেন, এ
সব বিদ্যালয়ে। আবার, বেশির ভাগ শিখন-ষশখানো কার্যক্রম চলত মুখস্থকরণ পদ্ধতিতে।
১৮০০ শতকে শিক্ষকতা: এ শতকে শিক্ষকতা পেশায় পরিবর্তন
ঘটে। এ পর্যায়ে ম্যাসাসুসেটস রাজ্যের সকল শহরে প্রতি ৫০০ সপরিবারে জন্য একটি করে মাধ্যমিক
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৪০ সালের দিকে ম্যাসাসুসেটস ও কানেক্টিকাট রাজ্যে
বিদ্যালয শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। এসময় শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং বেতন-ভাতা প্রদান
ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে। অধিকাংশ রাজ্যে এসময় শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণ চাহিদা দেখা দেয় এবং
তাদেরকে সনদপত্র দেয়ার পদ্ধতি প্রচলন ঘটানো হয়।১৮৫৭ সালে, ন্যাশনাল টিচার্স
এসোসিয়েশন গঠিত হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটাই ছিল সবচেয়ে বৃহৎ পেশাজীবী
সংগঠন্। এ সংগঠন শিক্ষকদের অধিকারের জন্য লড়াই করে এবং তাদের পেশার মান উন্নয়ন
ঘটে।
১৯০০ শতকে শিক্ষকতা: এ শতকে শিক্ষকতা পেশার মানোন্নয়ন ঘটার
ফলে এবং শিক্ষকতা অধিক উন্নত ও কাংখিত
পেশায় পরিণত হলে, অনেকেই শিক্ষকতায় আসেন। ১৯৫৪ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে
সকল বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ এবং বেসকারি
উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করার জন্য সরকারকে
নির্দেশনা দেন।পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নতুন শিক্ষা চাহিদাকে সমন্বয় করার জন্য
শিক্ষাদান পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটানোর ওপর শিক্ষকতা পেশাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
শিক্ষকতা বর্তমানে: শিক্ষকতা এখন টেলিভিশন এবং
কম্পিউটার-প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে, যা শিক্ষকতাকে আরও সমৃদ্ধ এবং আকর্ষণীয় করে
তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কতৃক গৃহীত শিক্ষা
সংস্কারমূলক কর্মসূচি‘ নো চাইল্ড লেফ্ট বিহাইন্ড’ বা কোন শিশুই পিছনে পড়ে থাকবে
না; একবিংশ শতকের যাত্রা ঘটিয়েছে শ্রেণিকক্ষে মৌলিক দক্ষতা গড়ে তোলার অঙ্গীকারকে
চ্যালেঞ্জ দিয়ে এবং শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় পেশার মর্যাদা দিয়েছে। শিক্ষকদের
বেতন-ভাতা এখন অনেক গুণ বেড়েছে আর বিদ্যালয়গলো শিক্ষার্থীতে ভরে গেছে। প্রশিক্ষণে
একটি সুনির্দিষ্ট কাজ বা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির ওপর জোর
দেয়া হয়। শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণকে অনেক সময় একই বলে মনে হতে পারে। বস্তুত: তাদের
মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কোন কোন পরিস্থিতিতে উভয়য়টির সামঞ্জস্যতা যথার্থ মনে
হলেও, কখনও কখনও একটির উপস্থিতিতে অন্যটিকে অবহেলিত মনে হয়। উভয়টির মথ্যে একটি
ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। শিক্ষকতাকে বলা যেতে পারে কোন কিছু জানা বা জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা
অথবা উদাহারণ বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া। আর প্রশিক্ষণ হলো, শিক্ষাদান করার
শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা।অথবা কোন মান যাচাই বা দক্ষতা গঠন করা। প্রশিক্ষণে, শিক্ষকতার
চেয়ে সাধারণত কোন বিষয়ে অধিক দৃষ্টিপাত করা হয়, যাতে দীর্ঘ সময় ধরে গভীরতর কিছু
সন্ধান প্রচেষ্টা চলে। তাছাড়া, প্রশিক্ষণে কোন সুনির্দিষ্ট দক্ষতা বা দক্ষতা
নির্ধারণ করতে প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সহায়তা করা হয়, যতক্ষণ না তারা তা দক্ষতার সাথে
প্রয়োগে সক্ষম হয়। প্রশিক্ষণ চলে সাধারণত একটা সময়ে বা স্বল্প সময়ের জন্য, চাকরির
পাশাপাশি।
প্রায়োগিক দক্ষতার
পার্থক্য: শিক্ষকতা
চলে প্রশিক্ষণের চেয়ে বড় পরিসরে। এটা সাধারণত তাত্ত্বিক বিষয়। আর প্রশিক্ষণ হলো,
জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ। শিক্ষকতায়ও নতুন জ্ঞান অর্জন হয়, আর প্রশিক্ষণে কোন সুনির্দিষ্ঠ
দক্ষতার বিকাশেষ কিছু কৌশল প্রয়োগ ও উপায় অবলম্বন করে ইতোমধ্যে অর্জিত ঞ্জানকে
সমৃদ্ধ করে। শিক্ষকতার একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো, মনকে সমৃদ্ধ করা। আর প্রশিক্ষনের
উদ্দেশ্য হলো, অভ্যাস অথবা দক্ষতা বৃদ্ধি করা। শিক্ষকতা একাডেমিক পরিমন্ডলে হয়ে
থাকে, কিন্তু প্রশিক্ষনণ সাধারণত ব্যাসয়িক উদ্দেশ্য কাজ করে।
শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণ: কখনও কখনও এমন সময় আসে, যখন শিক্ষকতা
ও প্রশিক্ষণ; অবশ্যই একাত্ন হয়ে যায়।দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়, কোন নাম করা
শিল্পীকে ভালভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে. কিন্তু সংগীত শিল্পী হিসেবে তাত্ত্বিক
কোরন বিষয়ে তাঁকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নাও দেয়া যেতে পারে। হতে পারে, তিনি গান করার
সময় দেহের কোন পেশির অংশ বিশেষের ব্যবহার করতে পারেন নেআ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
হলো, দৈহিক ভাষা প্রয়োগের জন্য তাঁকে কঠোর সাধনা অবশ্যই থাকতে হবে, যাতে তিনি
সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রদর্শনে সক্ষম হন। যাহোক. এক্ষেত্রে প্রশিক্ষরণের সংশ্লিষ্টতা
হবে আবশ্যক। তাকে আবশ্যকভাবে বিশেষ ধরণের গান গাইতে হলে, বিভিন্ন কৌশল জানতে হবে,
যাতে তিনি তার প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। এ
ক্ষেত্রে এটা লক্ষণীয় হবে যে, শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। কাজেই প্রশিক্ষণের
প্রক্রিযা, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর জন্য অনেক উপকার বয়ে আনতে পারে।
শিক্ষকতা যখন
প্রশিক্ষণকে প্রভাবিত করে: এমন আকাংখা সব সময় থেকে যায় যে, প্রশিক্ষণ শিক্ষকতাকে হস্তক্ষেপ করতে
পারে, যেমন- যখন অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মাঝে শ্রেণি পাঠদান নিয়ে কোন ঝামেলা হতে
পারে, যেটা মনে হতে পারে মান সম্মত পরীক্ষা গ্রহনের জন্য স্রেফ শিক্ষার্থীদেরকে
প্রশিক্ষিত করে তোলা নিয়ে। একইভাবে সংগীত শিল্পীর ব্যাপারেও এমন হতে পারে, একথা
ভেবে যে, সে যা করছে বা শিশ্লেষণ করছে তা যখন তিনি শিখছেন বা করছেন, তাৎক্ষণিতভাবে
তা তাকে বিচ্যুত করে দিতে পারে। তিনি শারীরিক দক্ষতা প্পদশণকালে মস্তিস্ক যেভাবে
কাজ করে, সেটা জ্ঞান অর্জনে যা প্রয়োজন তা হতে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যখন যা কিছু
করেন, তার বিশ্লেষণ করতে পারেন, তখন তার কর্ম প্রবাহ হারিয়ে যেতে পারে। তঁ৭কে
অবশ্যই প্রশিক্ষণে মনোনিবেশ করতে হবে, যাতে দৈহিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রের বিকাশ
গুরুত্ব পাবে।
দু‘য়ের মধ্যে
ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা: শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণ; উভয়টির কিকাশ ঘটানো পরস্পরের জন্ন্য
প্রয়োজনীয়। কারও যদি একাডেমিক বা তাত্ত্বিক জ্ঞানকে শানিত করতে হয়, কোন পদে, অথবা
কোন কাজে, তাঁকে কোন না কোন পর্যায়ে দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হবে।
অপরদিকে, প্রশিক্ষণ তাকে দক্ষ করে তুলবে। সে অনুযায়ি তাঁকে গভীরতর কোন জ্ঞান
অর্জন, দীর্ঘ মেয়াদী জ্ঞান অর্জন অব্যাহতভাবে এবং দক্ষতা অর্জন করে যেতে
হবে।শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণ; উভয়টি কেউকে শুধু বুঝতে সহায়তা করে না, কোন কিছু
আবিস্কার এবং কোন সমস্যার সমাধান বের করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতেও সক্ষম করে তোলে।
উপরে, আমরা শিক্ষকতা ও শিক্ষকতার এবং
শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণের বিকাশ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে কীভাবে ঘটেছে, তা তুলে ধরার
প্রয়াস চালিয়েছি। এটা কোন গবেষণাধর্মী লেখা নয়. বরং অত্যন্ত সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে
শিক্ষকতার ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন