শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৫

Media and Primary Education

প্রচার মাধ্যম ও প্রাথমিক শিক্ষা
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী, কক্সবাজার।
প্রচার মাধ্যম দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।তারা দেশ-বিদেশের সব বিষয়ে খবর বা সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু তারা উচ্চ শিক্ষা স্তরের বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম এবং ঘটনাক্রম ফলাওভাবে তুলে ধরলেও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ইতিবাচক খবরগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরেন না তেমন একটা।প্রচার মাধ্যমের উচিত নেতিবাচক খবরের পাশাপাশি ইতিবাচক বা উন্নয়নমূলক খবরগুলোও প্রচার করা। সাধারণত আমরা দেখতে পাই যে, সারা দেশের উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, বিভাগীয় শিক্ষা অফিস এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং কর্মরত কমর্র্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়, বেশি বেশি। দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় যে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেছে তা সঠিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। আর তা করা হলে অচিরেই দেশে এ ক্ষেত্রে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনা সৃস্টি হবে। প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলা আরও সচল এবং সক্রিয় হতো এবং দেশ এগিয়ে যেত কাংখিত লক্ষ্যে আরও এক ধাপ। চ্যানেল আই এবং অন্য কিছু পত্র-পত্রিকায় কিছুদিন ধরে প্রাথমিক শিক্ষা চিত্র ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে বেশ কাজ হচ্ছে। মানুষ জানতে পারছে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সাফল্য-ব্যর্থতাগুলো এবং দুর্বলাতাগুলো কাটিয়ে ওঠারে ক্ষেত্রে বাধাগুলো কাটতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা আর অবহেলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বা মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা নয়।সুতারাং প্রচার মাধ্যমের বর্তমানে সীমিত প্রচারণা যথেষ্ট নয় বলে আমার মনে হয়্। এ স্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের খবরা-খবর পড়ে সাধারণ মানুষ খুশি হয়। আর শিক্ষকরা পান অফুরন্ত উৎসাহ এবং প্রেরণা।এবার আমরা প্রচারমাধ্যম ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে পরিচিত হব।
প্রচার মাধ্যম কী? প্রচার মাধ্যম বলতে আমরা বুঝি দেশ-বিদেশের তাবত সব বিষয়ের খবর বা সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের বাহনকে। আবার প্রচার মাধ্যম দু‘ধরণের ; যথা- ইলেক্ট্রনিক প্রচার মাধ্যম এবং পত্র-পত্রিকা। প্রচার মাধ্যমের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো নেতিবাচক বিষয়গুলো এবং ঘটনাক্রম ফাঁস করে দেয়া বা প্রকাশ করা। আর প্রচার মাধ্যমে অবজেকটিভ জার্ণালিজম বা ইতিকবাচক ও উন্নয়নমূলক খবরা-খবর প্রচার এবং প্রকাশ করাও যে সাংবাদিকতার অংশ; তা কিন্তু এতে কম গুরুত্ব পেয়ে থাকে। জার্ণালিজম শব্দের শব্দের একটা অর্থ ফাঁস করে দেয়া, সেটা ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক হোক।মানুষ বা সাধারণ পাঠক সমাজ শুধূ নেতিবাচক খবর জানতে চায় না, দেশ-বিদেশে ইতিবাচক কি হয় বা হচ্ছে, তাও জানতে চায়। শিক্ষা, শিণ্প-সাহিত্য, ক্রীড়া, রাজনীতি, আন্তজাতির্ক রাজনীতি-কূটনীতি, ঘটনা-দুর্ঘটনা, সুসংবাদ-দু:সংবাদসহ সবকিছু প্রকাশ ও প্রচার করাই প্রচার মাধ্যমের কাজ।সেসাথে জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিযে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকা তো পালন করতেই হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম: একটি দেশের শিক্ষা স্তরগুলোকে সাধারণত তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা স্তর, মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর এবং উচ্চ শিক্ষা স্তর। এগুলোর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হলো; অন্য দু‘টি শিক্ষা স্তরের মূল ভিত্তি বা সূচনা স্তর। শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এ স্তরে শিক্ষা আবর্তিত হয়। শিশু শ্রেণির উদ্দেশ্য হলো; শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার যাত্রা ঘটানো।প্রথম শ্রেণি হতেই মূলত প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হয়। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে সারা প্রৃথিবীতে অধিক গুরক্ব দেয়া হয়ে থাকে। শিক্ষকদের আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এবং সম্মানজনক বেতন-ভাতা দেয়া হয়। বতর্মান সরকার এ শিক্ষা স্তরের সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশে অনেক কাজ এবং সফল কাজ করেছে এবং করছে। আরও অনেক কিছু করার জন্য এ সরকার হাতে নিয়েছ। পূর্ববর্তী সরকারগুলোও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরকে গুরুত্ব দিয়েছে ও অনেক কিছু করার প্রয়াস নিয়েছিল।কোমল মতি শিশুদের মানসে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি রচনা করা হয় প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে। আর এ শিক্ষা স্তরের প্রসার ঘটেছে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে সর্বত্র। প্রায় প্রত্যেক গ্রামে অন্তত একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়। কোন কোন গ্রামে বিদ্যালয় না থাকলেও অন্তত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত একজন শিক্ষক আছেন। তাছাড়া, সরকার এসব গ্রামে পৌঁছতে সক্ষম না হলেও এনজি বা অন্যান্য সংস্থা অথবা স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশের সর্বত্র এ শিক্ষা স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষক/শিক্ষিকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্র নেই। সুতরাং, প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রা-উন্নয়ন এবং অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সব বিষয়ের খবরা-খবর আরও অনেক বেশি প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়া উচিত।
বর্তমান পরিস্থিতি: সাধারণত বিশ্ব বিদ্যালয় শিক্ষকগণ ও প্রচার মাধ্যমের মাঝে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষকগণকে বেশি বেশি সামনে নিয়ে আসে প্রচার মাধ্যম। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকগণ এবং প্রাথমিক স্তরের দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ শিক্ষকগণ প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছেন, খুবই কম। উচ্চ শিক্ষা স্তরের অধ্যাপক-শিক্ষকগণ যেমন পান্ডিত্য প্রকাশ করে থাকেন সব বিষয়ে, প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরেও এমন সব বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ ও পন্ডিত শিক্ষক আছেন, যাঁরা মাঠ পর্যায়ে এবং শিক্ষা নিয়ে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা হতে এ দু‘টি শিক্ষা স্তরের বিষয়সহ সামাজিক-রাজনৈতিক সব বিষয়ে ভাল মতামত ব্যক্ত পারেন,তাঁরা। তাঁদের মাঝে অনেকেই মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী ছিলেন এবং চিন্তা-গবেষণা করেন এমন সব ব্যক্তিত্ব আছেন। বিশ্ববিদ্যালয শিক্ষকগন গবেষণালব্দ বা অন্য সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং শিক্ষকাক্রম-শিক্ষাক্ক্রম বিষয়ে অভিমত বা মতামত প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু সবার জানা আছে যে, একই মানের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের সাথে সরাসরি জড়িত থেকে গবেষণা ও পড়াশোনা করে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা-দক্ষতার আলোকে অভিমত-মতামত তুলে ধরতে পারেন। গবেষণা বা র্দ্বিতীয়-তৃতীয়সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কোন কিছু বিশ্লেষণ করার চেয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্যে পার্থক্য অনেক। তাছাড়া, কৃতি শিক্ষক এবং সফল সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা বেশি বেশি তুলে ধরা হলে, অন্যরা অনেক বেশি উৎসাহ নিয়ে কাজ করবেন, শিখাবেন এবং মানসম্মত শিশু গড়ে তুলবেন। প্রচার মাধ্যমকে এ দিকগুলো ভেবে দেখতে বলব। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খবর বা মতামত প্রচারের ক্ষেত্রে এখন থেকে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে কর্মরত শিক্ষক- কর্মকর্তাগণের মতামত-অভিমতকেও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা উচিত। অনেকেরই জানা আছে, হয়তো বা নেই যে, অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী বর্তমানে মাধ্যমিক-প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষকতা করছেন এবং তাঁরাও বেশ পড়াশোনা করেন, জানেন ও গবেষণা করে থাকেন। তাঁদের ভাবনা-গবেষণালব্ধ চিন্তা-ভাবনা সবাই জানতে পারলে, জাতি বেশ উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে বলব, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকতা-কর্মচারিদের উচিত, প্রচার মাধ্যমের সাথে নিবীড ও ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রচার মাধ্যমের প্রতি ভয়-ভীতি পাওয়া বা দূরত্ব বজায় চলার প্রবণতা ভাল ফল বয়ে আনবে না। আর, প্রচার মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট সুপ্রিয় সংবাদকর্মীগণের উচিত, এসব স্তরে কর্মরত শিক্ষা চিন্তকবৃন্দের মতামত ও কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য এগিয়ে আসা। শুধু উচ্চ শিক্ষা স্তর নিয়ে মাতামাতি না করে দেশের সকল শিক্ষিত মানুষ এবং শিক্ষকদের মতামতকেও গুরুত্ব দিন। শিক্ষাসহ সব বিষয়ে প্রামে-গঞ্জে ও শহরে অবহেলিত এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা অনেক কিছু জানেন, বুঝেন। তাঁরা আগের যুগের নন-মেট্রিক, মেট্রিক পাশ করে এবং গুরু ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষকতা করেন না। তাঁরা অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত এবং অনেক জ্ঞানী-পন্ডিত। অন্তত:  প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তব চিত্র বুঝার জন্য প্রচার মাধ্যমের উচিত হবে, প্রাথমিক প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-অফিস বানন্ধব হওয়া।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন