শিক্ষকদের সৃজনশীল হয়ে
ওঠার ১০১ টি কৌশল
মোহাম্মদ
শহীদুল্লাহ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মহেশখালী,
কক্সবাজার।
সৃজনশীলতা এমনি এমনি আসে না।এটাকে লালন, পরিচর্যা ও বিকাশ
ঘটাতে হয়। এমন কি যারা সহজাতভাবে সৃজনশীল ও গতিশীল তাদেরকেও অব্যাহত প্রচেষ্টা
চালিয়ে যেতে হয়। শিক্ষকদের জন্য সৃজনশীল কার্যক্রম আরও কঠিন ব্যাপার। নিজেদের
পেশাগতভাবে সৃজনশীল হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা, মূল্যায়ন এবং শ্রেণিকক্ষে অন্যান্য
সৃজনশীল কৌশল প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদৈরও সৃজনশীল হয়ে ওঠতে অনুপ্রাণিত করা
কঠিনতম ব্যাপার। কিন্তু শিক্ষকের জন্য অসম্ভব কিছু নয়। আর শ্রেণিকক্ষকে অধিকতর প্রেরণাদায়ক,
আনন্দদায়ক ও শিক্ষক নিজে এবং তার শিক্ষার্থীদৈরকে শিখন-শেখানো শিক্ষকেরই কাজ।
বিচিত্র সব কৌশল অবলম্বন করে একজন শিক্ষক সৃজনশীল হয়ে ওঠতে পারেন। এমন কিছু কৌশলের
কথা এ নিবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
সৃজনশীল অনুপ্রেরণা
সন্ধান:
১.শিক্ষক নতুন
ধ্যান-ধারণা গ্রহনে উন্মুক্ত হবেন: অনেক সময় উন্মুক্ত মনের শিক্ষকগণও এমন হয়ে
পড়েন যে, তাঁরা ভাল কাজ করার জন্য অন্য কোন পন্থা খুঁজে পান না। সে মনোভাব পরিহার
করে নতুন ভাবনাগুলোকে গ্রহন করে নিতে হবে। প্রথম প্রথম মনে হতে পারে, নতুন কিছু পেয়ে
শিক্ষক নিজেই অবাক হচ্ছেন।
২. নিজস্ব গন্ডির বাইরে যাওয়ার কথা ভাবুন:
শিক্ষককে নিজ শ্রেণিকক্ষে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, তাঁকে বিধিবদ্ধ ছকের বাইরে আসতে
হবে, অনেক সময়। তাঁর পাঠদানকে উজ্জীবিত করে তোলার জন্য নতুন একটি সৃজনশীল পন্থা
অবলম্বন করতে হবে।
৩. উৎফুল্লতা খুঁজে নিন: নিজের সৃজনশীলতাকে
ধারালো করে নিতে নিজের মত করে আনন্দ পান, এমন কিছু আয়ত্ত্ব করে নিতে হবে। আর সেটা
এমন হবে, যা মস্তিস্ককে সজিব করে ও অনুপ্রাণিত মস্তিস্ক সক্রিয় হয় ও সৃজনশীল হয়ে
ওঠে।
৪. নিজম্ব স্বাচ্ছনদ্যবোধ থেকে বেরিয়ে আসুন:
শিক্ষকের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জায়গা হতে বেরিয়ে আসা কঠিন, কিন্তু নিজের সৃজনশীলতাকে
খুঁজে পেতে এটা খুব কাজ দিতে পারে। নতুন জায়গায় নতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে
আরম্ভ করুন। নতুন নতুন বিষয় নিয়ে অথবা যেসব বিষয়ে শিক্ষক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না,
এমন কিছু নিয়ে সচেষ্ট হবেন, তিনি। এতে কাজ হতেও পারে, নাও হতে পারে, কিন্তু সচেষ্ট
না হলে, কখনও শিখবেন না, তিনি।
৫. অনুপ্রেরণা পান এমন কিছু খুঁজে নিন: কিছু
ভাগ্যবান মানুষ থাকতে পারেন, যারা বদ্ধ ঘরেও অনুপ্রেরণা পান।কিন্তু এমন কেহ কেহ
আছেন, যাঁরা অন্য কিছুতে অনুপ্রেরণা পান। হতে পারে এটা কো পার্ক, শয়ন ক্কক্ষ অতবা
এমন কি বিদ্যালয়ের এমন কোন স্থান, যেখানে শিক্ষকের সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে।
৬. বিশ্রাম নিন, ক্লান্তি দূর করুন: চাপের
মধ্যে থেকেও কিছু মানুষ ভাল কাজ করতে পারেন, শিক্ষকদের অনেকেই আবার এতে
সৃজনশীলতাকে বিনষ্ঠ করে দেন। সৃজনশীলতাকে ধরে রাখতে, শিক্ষককে বিশ্রাম নিতে হয় এবং
নতুনত্বকে অনিচ্ছা সত্বেও স্বাগত জানাতে হয়।
৭. যে কোন উৎস হতে নতুনত্ত্ব সন্ধান করুন: সৃজনশীল
শিক্ষকের জন্য অভাবিত সব ভাবনা বা ধারণা যে কোন জায়গা হতে যে কোন সময় যে কোন কিছু
হতে উৎসারিত হতে পারে। সুতরাং সদা চোখ, কান ও মনকে উন্মুক্ত রাখুন। হতে পারে,
সেখানেই আপনার সৃজনশীল ভাবনার খোরাক পেয়ে যাবেন।
৮. শখের কোন জিনিষ বেছে নিন: অন্য জিনিষের
টানে শিক্ষকতাকে এক পাশে ফেলে রেখে কিছু মুহুর্ত, সময়, দিবস, মাসকে বেছে নিয়ে
ভিন্ন কিছু সন্ধান করুন। আর নতুন প্রেরণা ও আগ্রহ নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন।
৯. মোহময়তাকে অনুসরণ করুন: আপনি কী কোন
কিছুকে ভাল বাসেন? যদি তাই হয়, তবে তাকে খুঁজুন। হতে পারে কোন কাজ বা কোন জিনিষের
প্রতি মেহাবিষ্টতা আপনাকে উৎফুল্ল, অনুপ্রাণিত ও সৃজনশীল হতে উদ্বুদ্ধ করবে।
১০. সক্রিয় থাকুন: আপনার ভাবনাকে খুঁজে পেতে,
আপনার মস্তিস্কের প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন হবে। আর শরীর চর্চা এতে গতি বৃদ্ধি
করবে।
১১. ধ্যান বা প্রার্থনা করার কথা ভাবুন: কখনও
কখনও আপনার মন থেকে ঝেঁড়ে ফেলা প্রয়োজন হবে মনের মধ্যে জটলা পাঁকিয়ে থাকা অচল কিছু
জিনিষ। পুরনো কৌশলকে বের করে দিয়ে নতুন কিছু মনে স্থান করে দিতে বা উদ্যমী হতে
হবে।
১২. সকল শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে খেলতে বসে যান:
নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ দেয়া কঠিন, এতে ক্লান্তি আসতে পারে। নিজে সৃজনশীল জগতে
বিচরণ করে দেখুন এবং খুব সম্ভবত এতে আপনি নি:স্বাড় হয়ে পড়বেন না।
সৃজনশীলতাকে
পুঁজি করে নিন: কেহ যদি কোদাল হাতে নিয়েই সৃজনশীলতা প্রদর্শনে সক্ষম হন, তা হলে তা
নিয়েই কাজে নেমে পড়ুন।এখানেও এমন কিছু পাওয়া যেতে পারে যা আপনার কোন কোন ভাবনায়
সহায়ক হতে পারে।
১৩. আপনার সৃজনশীল ভাবনার সময় ঠিক করে নিন:
সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করতে যে সময় বা যা করার প্রয়োজন তা যদি না থাকে, তবে সৃজনশীল
হওয়া কঠিন। আপনার মুক্ত ভাবনার জন্য দিনের কোন একটা সময়কে বের করে নিন এবং নিশ্চিত
হোন যে, আপনার শিক্ষার্থীরা হোম-ওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ নিয়ে এভাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে
যে, তাদের সৃজনশীল হওয়ার সময় নেই।
১৪. সৃজনশীল ভাবনাগুলোকে বিকশিত করুন, সেগুলোকে
হারতে দেবেন না: শুধু সৃজনশীল ভাবনা থাকলেই হবে না, আপনাকে সে অনুযায়ি কাজ করে
যেতে হবে। আপনার ভাবনাগুলোকে লালন এবং সেগুলোকে বিকশিত করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু করুন
এবং তাকে অর্থবহ করুন। শিক্ষার্থীদেরকেও তাই করতে দিন।
১৫. একটি নোটবুক সাথে রাখুন:শিক্ষক হিসেবে যে
কোন সময় আপনার সৃজনশীল অনুপ্রেরণা জাগ্রত হতে পারে। সাথে সাথে তা লিখে রাখুন। আর
এজন্য প্রয়োজন একটি ডায়েরী বা নোটবুককে নিত্য সঙ্গী করে তোলা।
১৬. অন্তর্নিহীত সমালোচনামূলক ভাবনাকে সংযত রাখূন:
যখন কারও মধ্যে সৃজনশীলতা জাগ্রত হয়, অনেক সময় আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে
ওঠি। নিজের ভেতরের এ শত্রুকে রুদ্ধ করে রাখুন এবং নিজের প্রতি নির্দয় হোন ও
নির্ভয়ে নিজের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যান।
১৭. মনকে সজাগ রাখুন: নিজ দেহের পেশীগুলোর মত
আপনার মনকে সজাগ না রাখলে, মস্তিস্ক দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। পড়ুন, শিখুন এবং মনকে
সজীব-সক্রিয় রাখতে আপনার মনকে চ্যালেঞ্জ করুন। এতে আপনি শুধু সৃজনশীল হবেন না,
এজন্য একজন ভাল শিক্ষকও হয়ে ওঠবেন, আপনি।
১৮. নিজের কাজকে ভাল বাসুন: নিজের কাজকে আপনি
যতক্ষন না, সত্যিকারভাবে ভাল না বাসবেন, ততক্ষণ কোন কিছুই আপনাকে অধিক সৃজনশীল এবং
অনুপ্রাণিত করবে না। আপনি যদি চাপ বোধ করেন, তবে নিজেকে মনে করিয়ে দিন, কত মহৎ
একটি পেশায় আপনি নিয়োজিত আছেন। এ ভাবনা আপনাকে আরও বেশি সৃজনশীল এবং অনুপ্রাণিত
হতে ভাবিয়ে তুলবে।
১৯. শ্রেণিকক্ষকে নিজের একটি কাজ বা ব্যবসায়
হিসেবে কল্পনা করুন: আপনি যদি একজন শৈল্পিক কোন অনুষ্ঠানের প্রযোজক বা পরিচালক
অথবা ব্যবস্থাপক হতেন, তবে আপনার সহকর্মী বা কর্চারীদেরকে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন?
আপনার শ্রেণিকক্ষে সেসব উদ্বুদ্ধকরণ কৌশলসমূহ প্রয়োগ করুন।
২০. সাফল্য-ব্যর্থতাকে উদযাপন করুন: পাঠদান
কী বিরক্তিকর হয়ে পড়েছে, আপনার জন্য? বড় বড় ধারণাসমূহকে কাজে লাগাতে পারছেন না?
ঘাবড়ে যাবেন না, আপনি। ব্যর্থতা সৃজনশীলতার অংশ বিশেষ। আবার ব্যর্থতা কখনও কখনও
সত্যিই মহান সব সাফল্য বয়ে আনে, যদি আপনার জন্য শিক্ষণীয় হয়।
২১. নিজের ভাবনাকে নিজের মনে করুন: অন্যের
ভাবনা হতে উৎসারিত ধারণাগুলোকে নিজের করে নেয়া একটি চমৎকার কাজ, কিন্তু ধার করবেন
না, পুরোটাই ধারণ করে নেবেন।এমন কি অন্য কারও স্টাইল বা ধারণাতে যদি আপনি
অনুপ্রাণিত হন, তবে তাকে আত্নস্থ করে নিন এবং উন্নত করুন, সেগুলোকে পরিমার্জন করুন
অথবা কোনভাবে ব্যক্তিগত ভাবনায় রূপদান করুন।
২২. মতামত দেয়া হতে বিরত থাকুন: পৃথিবীতে
শ্রেষ্ঠ ভাবনাগুলোকে সব সময় পাগলামি বলে মনে হয়, প্রথম প্রথম। কোন বিষয় পুরোপুরি
না জেনে নিজ অভিমত প্রকাশ হতে বিরত থাকুন।
২৩. সকল সম্ভাবনাকে অনুসন্ধান করুন: সকল
সম্ভাবনাকে অসম্ভব মনে করে যখন লিখা বন্দ করে দেন, তখন আপনার সম্ভাবনাময়
সৃজনশীলতাকেই যেন সীমাবদ্ধ করে ফেলেন।সম্ভাবনাসমূহকে পুরোপুরি খুঁজে নিন। এমন কি
সেগুলোতে যদি অনেক সময়ও ব্যয় করতে হয়।
২৪. পরিচিত কোন কিছুকে স্বাগত জানান:
সৃজনশীলতার ব্যাপারে পরিচিতি একটি স্বভাবিক ব্যাপার।এটাকে এগিয়ে নিন।এমন কি
সেগুলোতে যদি অনেক সময়ও ব্যয় করতে হয়।এটি আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দান: শিক্ষক নিজে যদি একবার উত্তম এবং
অনুপ্রাণিত হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান, তাঁর উচিত শিক্ষার্থীদের তাদের সৃজনশীলতাকে
উৎসাহিত করা।
২৫. শিক্ষার্থীদের সামনে সৃজনশীলতার মডেল হোন:
শিক্ষক হিসেবে আপনি কী শিক্ষার্থীদেরকে মডেল রূপে গড়ে তুলতে চান? তাহলে তাদেরকে
আরও সৃজনশীল হতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
২৬. বহুমুখি মতামতকে উৎসাহিত করুন: আপনার
শ্রেণিতে যদি সব সময় নির্দিষ্ট সঠিক-বেঠিক পন্থা খুঁজতে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে
আপনার সৃজনশীল ভাবনার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়বে। বহুমুখি মতামত এবং বিচিত্র সব
ধারণাকে উৎসাহিত করুন, যদিও সেগুলো অনেক সময় আপনার নিজের গতিতে যাবে না।
২৭. বৈচিত্রতার দিকে দৃষ্টি দিন: আপনার
শিক্ষার্থীরা যদি বহুবিধ সংস্কৃতি ও জাতিরসত্ত্বার হয়ে থাকে, তবে সেই বৈচিত্রতাকে
কাজে লাগান এবং তাদের প্রত্যেকের সংস্কৃতির ধারণা ও মূল্যবোধকে সামনে নিয়ে আসুন।
এটা শুধু শিক্ষামূলক হবে না, তাদেরকে একাধিক সংম্কৃতিকে ধারণ করে কাজ করতে প্রেরণা
যোগাবে।
২৮. শিক্ষার্থীদৈরকে নিজস্ব সক্ষমতা প্রদর্শনে
সহায়তা দিন: প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিভা ও সামর্থ্য
রয়েছে।শিক্ষার্থীদের এসব প্রয়োগ করতে দিন এবং তাদের কাজে আরও সৃজনশীল হতে সহায়তা
দিন।
২৯. প্রশ্ন করুন আপনার ধারণা নিয়ে:
গতানুতিকতাকে নিয়ে এগুতে থাকবেন না। শিক্ষার্থীদেরকে সাধারণ অনুমান নিয়ে প্রশ্ন
করুন এবং শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করুন।
৩০. সৃজনশীল সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করুন:
সাধারণত কোন সমস্যা সমাধানের কয়েকটি উপায়
থাকে। সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদেরেকে সৃজনশীল হতে সহায়তা করুন। আর তাদেরকে
প্রজেক্ট জাতীয় বড় বড় সমস্যা সমাধানমূলক কাজ করার সুযোগ করে দিন, যাতে তাদের
দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৩১. নিজে পড়ুন, শিক্ষার্থীদেরকে পড়তে উৎসাহিত
করুন: বই হলো, অনুপ্রেরণা দান, তথ্য ও সৃজনশীল ভাবনা সন্ধানের চমৎকার উৎস। বই,
সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা ও কৌতুক জাতীয় সহায়ক পাঠ সামগ্রী পড়ার উপকারিতা সংবলিত
বিভিন্ন জিনিষ প্রদর্শন করুন।
৩২. উন্মুক্ত প্রশ্ন করুন: শিক্ষার্থীদেরকে
সৃজনশীল ভাবনায় নিয়োজিত করতে তাদেরকে প্রশ্নকরণ একটি চমৎকার কৌশল। শুধু মনে রাখতে
হবে, প্রশ্নগুলো হবে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ি, আপনার প্রত্যাশার মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকবে না।
৩৩. কোন বিষয়ে নিজের মত অর্থ খুঁজে নিন:
শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও আবেগের সাথে সংযুক্ত হতে সহায়তা করুন।
আর তাদেরকে কোন শব্দ বা বিষয়ের গুড়ার্থ বের করে নিতে ও সৃজনশীল হয়ে ওঠতে উৎসাহিত
করুন।
৩৪. শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ করে
দিন: শিক্ষার্থীরা তাদের সম্পাদিত কাজের প্রদর্শন করতে খূব ভালবাসে। সেটা হোক
না শ্রেণিকক্ষে বা রাজপথে। তাদেরকে তাদের কাজের প্রদর্শনীর সুযোগ করে দিন।
৩৫. স্বতস্ফূর্ত হোন: আপনার শিক্ষকতার বদ্ধ
গন্ডি ভেঙ্গে ফেলুন এবং স্বতস্ফূর্ত হতে সচেষ্ট হোন। শিক্ষার্থীদেরকে ভাবতে
উৎসাহিত করুন এবং তাদের মন:পুত করে নতুন কৌশলে পরিতৃপ্ত করুন।
৩৬. শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নের জবাব খুঁজুন:
শিক্ষার্থীদৈর প্রশ্নের শিক্ষক নিজে না দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদৈরকে তাদের প্রশ্নের
জবাব খুঁজতে দিন।
৩৭. একটি শ্রেণির মত একত্রে কাজ করুন: কখনও
কখনও কোন সমস্যার সমাধান পেতে দলে বা একত্রে কাজ করা অতি উত্তম পন্থা।
৩৮. শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক কাজগুলো
প্রচার-প্রচারনায় প্রাধান্য দিন: শিক্ষার্থীরা যখন ভাল কাজ করে, ভেবে দেখুন
তাদের কাজে আপনি কতটা খুশি হন। যে কোন বৃহত কাজ বা সমস্যা সমাধানে এটা বিশাল
ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩৯. যে কোন কাজকে আনন্দদায়ক করে তুলুন: মজার
মজার কাজে শিক্ষার্থীরা হাসে, স্বস্তি বোধ করে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা আনান্দিনত
হয়।
৪০. সৃজনশীলতার সাথে শিক্ষার্থীদৈর কাজের
মূল্যায়ন করুন: বহু নির্বাচনী প্রশ্নমালা, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি সহজ
পদ্ধতি, কিন্তু এতে সৃজনশীল ভাবনার প্রয়োগের তেমন কোন সুযোগ নেই। উত্তরগুলো হয়
শুদ্ধ অথবা অশুদ্ধ। শ্রেণিকক্ষে সৃজনশীল ভাবনার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য
শিক্ষার্থীদেরকে কাজ দিয়ে এবং এটা মূল্যায়ন করে সৃজনশীলতা যাচাই করে নিন।
৪১. সৃজনশীল ভাবনা ও প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজের জন্য
পুরস্কৃত করুন: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে তাদের সৃজনশীল ভাবনা এবং কাজের
জন্য অর্থ খরচ করুন, এমন কী তাদের ভাবনাগুলো আপনার নিকট প্রয়োজনীয় মনে না হলেও,
তাই করুন।
৪২. যুক্তিগ্রাহ্য ঝুঁকি নিতে উৎসহিত করুন
শিক্ষার্থীদেরকে: অনেক শিক্ষার্থী ব্যর্থতাকে এত ভয় পায় যে, তারা নতুন কিছু
শিখার ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। তাদেরকে এভাবে আশ্বস্ত করুন যে,
ঝুঁকিপূর্ণ ভাবনা তাদেরকে নতুন কিছু শেখায় এবং ব্যক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ করে তুলে।
৪৩. ভুলকে সহজভাবে নিন: প্রত্যেক সৃজনশীল
ভাবনা সফল হবে এমন নয়, কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, এটা উপকারি বা মূল্যবান নয়। পৃথিবীতে
অনেক বড় বড় সাফল্য বা অর্জন প্রথম প্রথম ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়েছিল। কোন ভাবনাকে
বিশ্লেষণ করে ও ভুলের মাধ্যমে এগিয়ে যান, ভুলক্রটিকে ব্যর্থতা গন্য করবেন না।
৪৪. শ্রেণিতে কৌতূহল উদ্দিপক পরিবেশ সৃস্টি করুন:
যে কোন স্থানে বা সময়ে আপনি যখন সৃজনশীল হন, তবে উদ্দিপনামূলক পরিবেশে আপনার কাজ
সহজতর হয়ে যাবে। আপনি ও আপনার শিক্ষার্থী, উভয়ে একটি সুসজ্জিত, আনন্দদায়ক ও
কর্মমুখর শ্রেণিকক্ষে উপকৃত হবেন।
৪৫. সাফল্যে উচ্চাস প্রকাশ করুন ধীরে ধীরে:
যে কোন বড় ধরণের কাজের সাফল্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না।শিক্ষার্থীদেরকে তাতে
অভ্যস্থ হতে সহায়তা করুন। তাদের সৃজনশীল কাজের সাফল্য প্রকাশ এবং দীর্ঘস্থায়ী
লক্ষ্য অর্জনের ওপর গুরত্ব দিয়ে তাদেরকে শৃংখলা ও কঠোর পরিশ্রমের মূল্য বুঝতে হবে।
৪৬. শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত
করে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা দিন: কোন কাজ করার মত মর্যাদাপূর্ণ আর কিছু
নেই।আর শিক্ষার্থীরা সন্দেহাতীতভাবে তাদের কাজের প্রতিবন্ধকতাসমূহ কাটিয়ে
ওঠবে।কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও কর্মসৃজনকে একত্রিত করে কাজ করাকে তাদের জন্য
প্রতিবন্ধক না ভেবে, এ সবকে সুযোগ মনে করে নিতে সহায়তা করুন।
৪৭. নিজে ও নিজের শিক্ষার্থীদৈরকে পুলকিত করে
তুলুন: কিছুটা স্বতস্ফূর্ততা বয়ে এনে সৃজনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার মত
গুরুত্বপূর্ণ আর কোন কিছু হতে পারে না। মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক কিছু করতে দিন,
শিক্ষার্থীদেরকে। এটা আপনার শিক্ষার্থীদেরকে নিজ পায়ের সওপর শক্তভাবে দাঁড়িয়ে
থাকতে শিখাবে এবং নিজকে ব্যর্ততা হতে রক্ষা করুন।
৪৮. কলা বা শৈল্পিক সৃষ্টিগুলোকে ধারণ রতে
শিখুন: চিরাচরিতভাবে সৃজনশীল জিনিষগুলো কলা বা শৈল্পিক বিষয়গুলোতেই সবচেয়ে
বেশি নিহীত রয়েছে। যে কোন পাঠে, হতে পারে সেটা গণিত, বিজ্ঞান বা ইতিহাস; তাতে এসব
শৈল্পিক কলা-কৌশলের সমন্বয় ঘটান। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে গান, চিত্রাংকন, সৃজনশীল
লেখালেখি এবং অন্যান্য শিল্পকলাকে ব্যবহার করে শিখনকে প্রাণবন্তু করে তুলুন।
৪৯. শিক্ষার্থীদেরকে তাদের লক্ষ্যার্জনে সহায়তা
করুন: শিক্ষক নিজে সৃজনশীল হওয়াই যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের কতৃক
সম্পাদিত বড় বড় কাজে শিখন অর্জন এবং আপনার দেয়া কাজের সাফল্য অর্জনে সহায়তা করুন।
৫০. সকল ধরণের সৃজনশীলতাকে স্বাগত জানান: শুধু
কলা বিষয়ক বিষয়বস্ততে কেন মজা বা আনন্দ পাওয়া যাবে? গণিত বা বিজ্ঞানসহ সকল বিষয়কে
আনন্দদায়ক করে তুলুন।
৫১. মিথস্ক্রিয়া বা বিবিধ জিনিষকে সমন্বিত রূপ
দান করুন: বর্তমান ও অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বিবিধি জিনিষকে মিশ্রিত রূপ দান করে
সৃজনশীল প্রচেষ্টাকে সমৃদ্ধ করে নিন। আপনার পাঠদানে পরিবর্তন আনুন, উপস্থাপনে,
মূল্যায়নে অথবা নতুন কিছু সংযোজন করুন এবং অপ্রত্যাশিত কোন ঝুঁকি সংযোজন করুন।
৫২. ফিডব্যাক বা সহায়তা দিন: শিক্ষার্থীদের
অর্জিত শিখন ফলে দুর্বলতা থাকলে, তা কাটিয়ে ওঠতে সহায়তা দিন এবং তাদের ভাবনাগুলোকে
শানিত করে তুলুন এবং বোধগম্য করে তুলুন।
৫৩. সোজা পথে প্রদর্শনকে এডিয়ে চলুন: সৃজনশীল
ভাবনা মানে, কোন কিছু করার সহজাত প্রচেষ্টাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করার ফসল। শিক্ষার্থীদের
কোন সমস্যাকে তাদের মত করে সমাধান করতে দিন। যেনতেনভাবে বা গতানুগতিকভাবে করতে
দেবেন না।
৫৪. শিক্ষার্থীদের কোন কিছু অন্ধভাবে অনুকরণ করতে
দিবেন না, নিজেও করবেন না: কিছুটা প্রথা বিরোধী না হলে, আপনার নিজস্বতা ও
স্বাতন্ত্র থাকবে না। আপনার শিক্ষার্থীদৈর প্রশ্ন করুন, কোন কোন জিনিষ বিশেষ
কোনভাবে কেন ঘটে এবং তারা যখন কোন কিছুকে তারা সঠিক মনে করবে না, সেটাকে ভেঙ্গে
ফেলতে উৎসাহ দিন।
৫৫. স্বাধীনতা দিন, কিন্তু নজরে রাখুন: সৃজনশীলতায়
এক ধরণের স্বাধীনতা প্রয়োজন হয়, কিন্তু অপরিহার্য নয়। শিক্ষার্থীদের ওপর নজর
রাখুন, যাতে তারা লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থাকে।
৫৬. স্বাতন্ত্রকে উৎসাহিত করুন: আপনি নিজেই
যদি শিক্ষার্থীদের কঠিন সব প্রশ্নের সহজে সমাধান দিয়ে দেন, তবে তাদের নিজেদের
নিজস্ব ভাবনার আলোকে জবাব দানে বা সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ হবে না।
৫৭. সহযোগিতামূরক মনোভাব পোষণ করুন:
শিক্ষার্থীরা যখন নিজে নিজে কাজ করে, সেটা যেন বড় কিছু হয়, শিক্ষার্থীরাও তাদের
কাজে অনেক সৃস্টিশীলতার সন্ধান পায়, তারা যেন তা একত্রিত হয়ে করে। তাদেরকে
উৎপাদনশীল এবং সহযোগিতামূলক দলীয় কাজ করতে সহায়তা করুন।
৫৮. নিয়ম-কানুন তৈরিতে শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত
করুন: শ্রেণিকক্ষে নিয়ম-কানুন মেনে চলা অনেক সময় যৌক্তিক হয়ে ওঠে এবং তাদের
তৈরিকৃত নিয়ম-কানুন এবং অবশ্যই যুক্তিগ্রাহ্য নিয়ম-কানুন মেনে যদি তাদের ভূমিকা
পালন করে, তবে তা অনেক বেশি কার্যকর হয়।
৫৯. শ্রেণিকক্ষকে সাজ-সজ্জায় ভরে তুলুন:
বিভিন্ন প্রকার প্রদর্শনী বোর্ড, প্রদর্শন সামগ্রী, পোস্টার এবং অন্যান্য বিচিত্র
সব জিনিষ দিয়ে শ্রেণিকক্ষকে সাজানো হলে, আপনার শিক্ষার্থীরা তা হতে ভাববার ও
সৃজনশীল হয়ে ওঠার খোরাক পাবে।
৬০. অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করুন: শ্রেণিকক্ষ বা
বিদ্যালয় ত্যাগ করে গেলেই, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা স্তব্ধ হয়ে যায় না। শিক্ষার্থীদের
প্রজেক্টমূলক বড় বড় কাজে অভিভাবকদেরকে সম্পৃক্ত করুন এবং শিখন-শেখানোতে সক্রিয়
ভূমিকা পালনে তাদেরকে উৎসাহিত করুন।
৬১. পুরস্কার-তিরস্কার উভয়ের সমন্বয় ঘটান:
কোন সাফল্যের অতি প্রশংসা, অতি তিরস্কার করারই নামান্তর। শিক্ষার্থীদের ভিতরকার
সৃজনশীলতা বের করে আনতে হলে উভয় ধরণের ক্রিয়া-কর্মকে একাত্ন করে নিন।
৬২. বিদ্যালয়ের সকল সম্পদকে কাজে লাগান: আপনার
বিদ্যালয়ে যা কিছু আছে, সব কিছুকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন। লাইব্রেরী, কম্পিউটার
ল্যাব এবং এমন কি বাগানও শিক্ষার্থীদের জন্য ষিখনে অনুপ্রেলণাদায়ক এবং শিক্ষণীয়
বিষয়ের উৎস হতে পারে।
৬৩. শিক্ষার্থীদের মাঝে বিস্ময় জাগায় এমন এক
অনুভূতি সৃস্টি করুন: শিক্ষার্থীদেরকে শিখন-শেখানো এবং সৃজনশীল করে তোলার জন্য
অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় হলো, তারা বিস্মিত হয় এমন কৌশল অবলম্বন করা। আর শ্রেণিকক্ষে
শিখন শেষ হওয়ার পরও, তারা তা নিয়ে দীর্ঘ সময় শিখতে থাকবে।
সৃজনশীল সব
কাজ: শ্রেণিকক্ষে পাঠকে
সৃস্টিশীল করে তোলার জন্য এখানে কিছু মজার মজার এবং আনন্দদায়ক কৌশল উল্লেখ করা
হলো।
৬৪. ব্রেন স্ট্রোম বা মস্তিস্ককে ঊষ্ঞ করে তুলুন:
একাকী বা অন্যদের সাথে কাজ করার সময়, সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তোলার জন্য
ব্রেন-স্টোর্মং করা যেতে পারে, এতে তাদের ভাবনায় ঝড় সৃষ্টি হবে। এটাও একটা ভাল কৌশল।
আপনার মনকে ভাবিয়ে তুলুন এবং প্রত্যেক ভাবনার সাফল্য কামনা করবেন না।
৬৫. প্রযুক্তিকে কাজে লাগান: সৃজনশীলতাকে
জাগ্রত করতে বা উস্কে দিতে প্রযুক্তি একটি অবাক যন্ত্র হতে পারে। ধারণাকে খুঁজে
পেতে, ব্রেন-স্ট্রোম এবং এমন কি চূড়ান্ত ফল পেতে এটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।এর
সম্ভাবনা অপরিসীম। সুতরাং সৃজনশীলতায় একে বিবেচনায় নিন।
৬৬. হাইপোথেথিক্যাল বা কল্পনাপ্রবণ হোন: কাল্পনিক
সাফলল্য অজর্নমূলক একটি পরিবেশ সৃস্টি করুন, যা সৃস্টিশীল হতে সহায়ক হবে। আপনি যখন
ভাববেন কী ঘটতে যাচ্ছে, সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে ও প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে,
তবে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ নতুন ভাবনার খোরাক পেয়ে যাবেন।
৬৭. শ্রেণিকক্ষ হতে বেরিয়ে পড়ুন: অনেক সময়
শ্রেষ্ঠ শিখনটি হতে পারে শ্রেণিকক্ষের বাইরে। আনন্দদায়ক ফিল্ড ট্রিপ বা একটু খানি
বিদ্যালয়ের বাহির হতে বেড়িয়ে আসলেও শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু শিখনে ও উত্তেজনাকর
শিখনে উপায় খুঁজে পাওয়া যায়।
৬৮. ধাঁধা ও গেম ব্যবহার করুন: শিক্ষার্থীরা
যখন খেলায় মগ্ন থাকে, তখন তারা শিখনের কথা ভুলে যায়। ধাঁধা এবং খেলাধুলা তাদেরকে
সৃজনশীল ভাবনায় আচ্ছন্ন করে তুলে, কিন্তু আনন্দও দেয়, যা তাদেরকে আরও বেশি
অনুপ্রাণিত করে তোলে শিখতে ও কাজ করতে উৎসাহ যোগায়।
৬৯. মাইন্ড ম্যাপ বা মন-মানচিত্র ব্যবহার করুন:
মন-মানচিত্রের ব্যবহার শিক্ষার্থীদেরকে মূল বিষয়ের ধারণা পেতে সহায়তা করে এবং
তাদের সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করে।
৭০. রুল প্লে বা ভূমিকা অভিনয় করুন: অন্যরা
কীভাবে ভাবে অথবা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেটা বুঝতে সক্ষম হলে মন সক্রিয় হয় এবং
ভালভাবে কাজ করে।
৭১. একটি গল্পের বোর্ড তৈরি করুন:
স্টোরিবোর্ড প্রদর্শন করা হলে শিক্ষার্থীরা তাদের কল্পনা শক্তিকে ছবির সাহায্যে
কাজে লাগিয়ে গল্প বলতে পারে। এটা এমন এক যোগাযোগ মাধ্যম যা সব সময় ঘটে না।
৭২. ব্যর্থতা নিয়ে পুণরায় ভাবুন: কখনও কখনও
কোন কোন ভাবনা যেটা কাজে আসেনি , সেটাই নতুন কোন ভাবনায় উপকার বয়ে আনতে পারে।
শিক্ষার্থীদেরকে অব্যবহৃত ভাবনাটিকে আবার কাজে লাগিয়ে পুণর্লক্ষ্য করে তুলতে
সহায়তা করুন।
৭৩. শ্রেণিকক্ষের বাইরে কাজ করতে উৎসাহিত করুন:
একবার শ্রেণিকক্ষ হতে বেরিয়ে গেলেই তাদের শিখনকে থামানো উচিত নয়। তাদেরকে পাঠাগারে
গিয়ে কাজ করতে উৎসাহ দিন, তাদের আগ্রহকে উসকে দিন এবং শিখনকে চালিয়ে যেতে বলুন।
৭৪. শেখা জিনিষকে নাড়া দিন ও উল্টোটাও শিখতে দিন:
শিক্ষার্থীদের শিখনে ব্যস্ত রাখতে কোন জিনিষের উল্টোটাও ভেবে দেখতে শেখান। এটি
তাদেরকে বহুমুখি ভাবনায় উদ্ধিপ্ত করে তূলবে এবং সৃজনশীল ভাবনার খোরাক যোগাবে।
৭৫. ধারণাগলোকে পরস্পর সংযুক্ত করুন: আপনার
শিক্ষার্থীরা যা কিছু শিখে কোনভাবে পরস্পর সংযোগ স্থাপন করে দিন। তাদেরকে
বিষয়গুলোর মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করুন এবং তাদের অর্জিত জ্ঞানের সাথে
বিষয়ের সংযোগ স্থাপন করে দিন।
৭৬. শিক্ষার্থীদের কোন কিছু তৈরি করতে ও উদ্ভাবন
করতে দিন: নতুন কিছু আবিস্কারের চেয়ে সৃস্টিশীল আর কি-ই বা হতে পারে?
শিক্ষার্থীদের উপকরণ ইত্যাদি হাতে দিন এবং কোন একটি সমস্যার সৃজনশীল সমাধান বের
করে আনতে বলুন।
৭৭. সাহিত্য নিয়ে পুণরায় ভাবুন: উচ্চ মার্গীয়
সাহিত্য নিয়ে কাজ করা বিশাল ব্যাপার, কিন্তু তা বুঝে ওঠা শিক্ষার্থীদের জন্য কখনও
কখনও কঠিন হয়ে পড়ে। ছবি ব্যবহার, আধুনিকায়ন অথবা অন্যান্য মজার মজার ধারণা প্রয়োগ
করে সেগুলোতে নতুন পন্থা খুঁজে পেতে দিন।
৭৮. বাস্তব সমস্যার সমাধান বের করতে বলুন,
শিক্ষার্থীদেরকে: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে এমন অনেক কিছু শেখে যা তাদের কাছে
অর্থহীন মনে হয়, যা তাদের আগ্রহকে বিনষ্ট করে দেয়। সেগুলো চিহ্নিত করে
শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যার সাথে সামঞ্জস্য খুঁজে নিয়ে তা তাদেরকে সমাধান
করতে দিন।
৭৯. গল্প বলুন: যে কোন প্রসঙ্গে গল্প শুনালে
তা প্রাণবন্তু হয়ে ওঠ। এমন কি গল্প বলে সরেস করে তোলা যায়, যদি আপনি সৃজনশীল হোন।
৮০. সকল অনুভূতিকে কাজে লাগান: শিখন হয়ে যেতে
পারে বহুমুখি অনুভূতি প্রবণ অভিজ্ঞতা, যখন আপনি যে কোন কিছু যেমন- স্পর্শ, স্বাদ,
ঘ্রাণ প্রভৃতি আপনার পোঠে সম্মিলন ঘটাবেন।
৮১. বাইরে চলে যান: বিদ্যালয়ের বাইরে চলে
গিয়ে বাহিরের পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে উপভোগ করে একগুঁয়েমী কাটয়ে ওঠুন।
৮২. পাঠদানকে আন্তক্রিয়ায় পরিণত করুন: কোন
পাঠদানে শিক্ষার্থীরা যখন সক্রিয় থাকে, তাতে শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে না।
শিক্ষার্থীরা একত্রে কাজ করার সুযোগ পেলে, তা তাদের জন্য বেশ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে
পড়ে।
৮৩. শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখিয়ে দিন:
শিক্ষার্থীদেরকে বর্তমান কাজ শেষ করার পর এমন কোন কাজের কথা বলুন, যা তাদেরকে
গৌরবান্বিত করে তুলবে।
সৃজনশীলতাকে
শানিতকরণ এবং সহযোগিতাশূলক পদ্রক্ষপ গ্রহন: উপরের ভাবনাগুলো সম্পাদন করে অন্যদের সাথে একেবারে মিশে যেতে
বলতে পারেন এবং নিন্মের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
৮৪. পিন্টারেস্ট ব্যবহার করুন: পিন্টারেস্ট
শ্রেণিকক্ষের জন্য ভাবনাগুলোকে জড়ো করার এবং অন্য শিক্ষকদের সংযুক্ত করে নেয়ার
জন্য একটি অতি উত্তম স্থান। লক্ষ লক্ষ ভাবনা জড়ো করা হলে সৃজনশীল ভাবনার উদ্রেক
করা সম্ভব।
৮৫. অন্য শিক্ষকদের সাথে ভাব বিনিময় করুন: অন্য
শিক্ষকদের সাথে মতনিমিয় এবং ধারণাগুলোকে শেয়ার করলে আপনাকে সৃজনশীলতার পথ খুঁজে
পেতে এবং আপনার কাজে অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
৮৬. অন্য
শিক্ষকদের সাথে কাজ করুন: কোন সমস্যার সমাধান খোঁজা বা সৃজনশীল সমাধান করার
ক্ষেত্রে একক প্রচেষ্টার চেয়ে দু‘জনের মন এক স্থানে মিলিত হলে অধিক লাভ হয়। অন্য
শিক্ষক, বন্ধু এবং গভীর ভাবুবকদের কাছ থেকে কি কি সহায়তা নিবেন, একটি তালিকা তৈরি
করে নিন, নিজের সৃস্টিশীলতাকে সমৃদ্ধ করে তুলুন।
৮৭. আপনার সৃষ্টিশীল ভাবনাকে অন্যের সাথে মিলিয়ে
নিন: আপনার সহকর্মীদের সাথে নিজের ভাবনা ও অর্জনগুলো শেয়ার করে তাদের
অন্তর্নিহীত সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করতে সহায়তা করুন।
৮৮. সংলাপ বা কথোপকথনে নিয়োজিত হোন: শ্রেণিকক্ষে
সৃস্টিশীলতা বয়ে আনার জন্য বিবিধ আলোচনা সভা, সংলাপ, মতবিনিময় সভা, পেশাগত আলোচনা
সভায় মিলিত হোন এবং অন্যদের অন-লাইন আলোচনায় যুক্ত হোন, তবে আপনিও শেখবেন এবং
আপনার ভাবনা অন্যরা শেখার সুযোগ পাবে।
৮৯. আপনার কাজে অন্যদের অংশীদার করুন: আপনার
সৃষস্টিশীল কাজগুলো হতে অন্যরা যেসব উপকার লাভ করেছে এবং ব্যবহার করছে, সেগুলো
আপনার শিক্ষার্থীদের প্রদর্শন করুন। তা হতে পারে সৃজনশীল কোন কাজ, কবিতা, গান,
চিত্রাংকন অথবা অন্য কিছু।
৯০. ক্লাব বা দল গঠন করুন: শ্রেণিকক্ষের
বেড়াজালে পড়ে আপনার সৃজন ভাবনা এবং কার্যক্রমগুলো প্রদর্শনের পর্যাপ্ত সুযোগ না
পেলে, আপনি একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা বা সংগঠন গড়ে তুলতে পরেন। অবকাশ বা বিদ্যালয় কার্যক্রমের
পরে সেখানে আপনি আপনার জ্ঞান এবং সৃজনশীল কাজগুলো বিকাশিত করার এবং অন্যদের জনানোর
সুযোগ পাবেন।
নিজেকে
শিক্ষিত করে তুলুন:
আপনি সৃজনশীলতা স্ম্পর্কে যথেষ্ট জানেন না? তবে শিখুন। নিচের পরামর্শগুলো আপনাকে
একজন সৃজনশীল বিকশেষজ্ঞ হয়ে ওঠতে সহায়তা করবে।
৯১. সৃজনশীল ভাবনার জন্য কৌশলগুলো নিয়ে গবেষণ্
করুন: আপনার সৃজনশীল মনকে সমৃদ্ধ করে তোলার অনেক কৌশল রয়েছে।আরও নতুন কৌশল
আয়ত্ত্ব করতে এবং আপনার কাজের শ্রেষ্টত্বকে নিরীক্ষা করতে আরও বেশি গবেষণা করুন।
৯২. বিভিন্ন ওয়েভসাইট ব্যবহার করুন:
মস্তিস্কে নতুনত্বের ঝড় তোলার জন্যেইন্টারনেট ব্রাউজিং বিশাল ভূমিকা রাখে। ওয়েভ
সাইটগুলোতে হাজার হাজার পাঠ রিকল্পনা, ভিডিও এবং প্রজেক্টমূলক শিখন-শেখানো কার্যক্রম
আছে, যা দেখে আপনি অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
৯৩. প্রক্রিয়াটি বোধগম্য করে তুলুন:
সৃজনশীলতা শুধু কোন উৎপাদিত পণ্য নয়। বস্তুত, সৃজনশীলতা হলো, অন্য যে কোন কিছুর বা
একটি প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি কিছু।
৯৪. নতুন নতুন জিনিষ নিয়মিত অনুশীলণ করুন: আপনার
সৃজনশীলতাকে শাণিত করে তুলুন এবং নতুন কিছু করে এ প্রক্রিয়ায় নতুন কিছু শিখুন। এটা
আপনাকে আপনার ভাবনায় নিয়োজিত রাখবে এবং আপনার মস্তিস্ককে সজীব রাখবে।
৯৫. সৃজনশীলতা বিষয়ে বই পড়ুন: সৃজনশীল হয়ে
ওঠার অনেক পন্থা আছে। আর এর মধ্যে একটা উপায় হলো, আপনার পাঠদান বিষয়ে বই পড়তে
আরম্ভ করা। এ নিয়ে প্রচুর বই পাওয়া যায়, যে কোনটা
বা একটা বেছে নিন এবং শিখতে শুরু করুন।
৯৬. শিক্ষার্থীদের আগ্রহকে স্বাগত জানান:
আপনি যদি আপনার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আগ্রহী ওঠেন, তবে তারা বিদ্যালয়ের প্রতি আরও
বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠবে।তাদেরকে শিখতে সহায়তা করুন এবং তাদের আগ্রহকে জাগিয়ে তুলুন।
আর তাকে মূল্যবান শিখনে রুপদান করুন ও সৃস্টিশীল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।
৯৭. সৃস্টিশীল পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন: শিক্ষার্থীদের
সহায়তা করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যা শিক্ষকগণ তাদেরকে অধিক সৃজনশীল করে তোলার
জন্য প্রয়োগ করতে পারেন। তাদের সম্পর্কে যতটা সম্ভব জেনে নিন।আপনি এমন কিছু পেয়ে
যাবেন, যা কাজে আসবে।
৯৮. আকর্ষণীয় সব ভিডিওগুলো উপভোগ করুন:
অসংখ্য ভিডিও আছে, যা দেখে আপনি শৈল্পিক হয়ে ওঠতে পারেন, সৃজনশীল হতে পারেন এবং আপনার
পাঠদান ও শিক্ষাদানেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে টেড ভিডিও চ্যানেলটি কাজে
লাগাতে পারেন।
৯৯. একজন গুরু সন্ধান করুন: এমন কি অভিজ্ঞ
শিক্ষকগণও বর্তমান ও অতীত পরিহার্য বিষয়গুলোকে ঝেঁড়ে ফেলে এবং সৃজনশীল হয়ে ওঠার
জন্য কিছু সহায়তা নিতে পারেন। আপনার পেশাগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য একজন গুরুকে বেছে
নিতে পারেন।
১০০. মস্তিস্ক নিয়ে পড়াশোনা করুন: আপনি যদি
সত্যিকারভাবে সৃজনশীলতা এবং শিখনকে বুঝতে চান, তবে মস্তিস্কের কারু-কাজ সম্পর্কে বেশি
বেশি শিখে নিন।
১০১. শুনুন বেশি বেশি: আপনার শিক্ষার্থী, সহকর্মী
বন্ধু-বাণ্ধব এবং পরিবার; আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগানো, পরামর্শ দান এবং শ্রেণিকক্ষে
সহায়তা দানের জন্য বিরাটট উৎস হতে পারেন।
উপরে
আলোচিত কৌশলগুলোর সাথে শিক্ষকগণ সাধারণত পরিচিত। তবে সৃজনশীলতার চর্চার জন্য একটু
সযত্ন প্রচেষ্টা চালালে সৃজনশীল হয়ে পথটি আরও সহজ হয়ে ওঠবে।
সৌজন্যে-
টিচ-থট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন